অপহরণের শিকার ৩০০জন
টেকনাফে তিন বছরে ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় নেপথ্যে কারা

টাকার বিনিময়ে অপহরণকারীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে সেখানকার একটি স্থানীয় সিন্ডিকেট। যাদের সাথে সখ্য গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের।টেকনাফে গত ৩ বছরে ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে সন্ত্রাসীরা। কেবল তাই নয়, এই সময়ের ভেতর অন্তত ৩০০ জনের মতো স্থানীয় নাগরিক অপহরণের শিকার হয়েছেন। যাদের ভেতর নারী-পুরুষ থেকে শিশুও রয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, এই অপহরণ চক্রের সাথে আসলে কারা জড়িত?
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, টাকার বিনিময়ে অপহরণকারীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে সেখানকার একটি স্থানীয় সিন্ডিকেট। যাদের সাথে সখ্য গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের। এতে অপহরণ দিন দিন বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে উখিয়া-টেকনাফের ১০ লক্ষাধিক মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া -টেকনাফে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের প্রধান ব্যবসা এখন অপহরণ। এর সাথে মাদক আর ইয়াবার কারবার তো রয়েছেই। কাউকে ধরে নিয়ে গেলেই টাকা। দুর্গম পাহাড়ে আস্তানা গেড়ে সেখানেই অপহরণকারীরা পরিচালনা করছে নানা অপকর্ম। আর তাদের সাথে গোপনে কাজ করছেন মহেশখালীর অস্ত্র তৈরির কারিগররা।
স্থানীয়রা জানান, টেকনাফ বাহার ছড়া অপহৃত জসিম ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পেয়েছেন। নাম বলতে অনিচ্ছুক জসিমের আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় অনেকে জানান, সন্ত্রাসীরা খবর পাঠান, পাহাড়ের রাস্তাঘাট চিনেন— এমন দুজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে টাকা নিয়ে পাহাড়ে যেতে বলে। জসিমের পরিবার স্থানীয় দুজন ব্যক্তিকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রাপ্ত অনুযায়ী পাহাড় যায়। তাদের কাছ থেকে সন্ত্রাসীরা হাতে হাতে টাকা বুঝে নিয়ে জসিমকে দুজন বৃদ্ধের হাতে তুলে দেন। তখন জসিম নির্যাতনের শিকার হন। হাঁটতে না পারায় বৃদ্ধ দুই ব্যক্তি জসিমকে কোলে করে নিয়ে আসেন।
টেকনাফের হোয়াইক্যাং, হ্নীলা, টেকনাফ সদর বাহার ছড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় কিছু লোক টাকার জন্য সন্ত্রাসীদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের জন্য খাবারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র বাহারছড়ার বিভিন্ন দোকান থেকে ক্রয় করে সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারছি না।
স্থানীয়দের মধ্যে কারা এ কাজে জড়িত গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হলেই অপহরণ অনেকাংশ বন্ধ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।‘টেকনাফের প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকলেও সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে কেউ মুক্তিপণ না দিয়ে ছাড়া পাইনি। পাহাড়ে রোহিঙ্গা স্থানীয়সহ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত অপহরণ, মাদকব্যবসা, অস্ত্র তৈরি, বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে উখিয়া-টেকনাফর পাহাড়ি অঞ্চলে।’— অভিযোগ স্থানীয়দের।
অপহৃত ও মুক্তিপণ আদায় গত বছরের ২৮ এপ্রিল শিশু মো. সাইফ (৯) দুইদিন পর ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। পরে ২১ আগস্ট টেকনাফ মোছনী গ্রামের দুদু মিয়ার দুই ছেলে ৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ ছাড়া পেয়েছেন। এভাবে ২৫ সেপ্টেম্বর হ্নীলার মোচনী এলাকায় মোহাম্মদ আতিক ৫ দিন পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পেয়েছেন।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর টেকনাফের হোয়াইক্যং ২ কৃষক নুরু ৪ দিন পর ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। টেকনাফের বাহারছড়া থেকে অপহৃত বেলাল উদ্দিনকে (৩২) ৫ দিন পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করেছে। ২ নভেম্বর ৯ জন অপহরণ ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পেয়েছেন। ৩০ নভেম্বর শামলাপুর বাহারছড়া ঢালায় অপহৃত ৩ শ্রমিক ৩ লাখ টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।গত ৫ ডিসেম্বর টেকনাফে হোয়াইক্যং জাকির হোসেন ও মোহাম্মদ জহিরকে তুলে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। একসাথে অপহৃত ১৮ জন ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। জসিমসহ ৯ জনকে অপহরণ করে, ৩৭ লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পেয়েছেন। ফজর নামাজে যাওয়ার সময় শাকের আহমদ (৬০) প্রবাসীকে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানের মুখে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
টেকনাফ বাহারছড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ উল্লাহ বলেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে অবস্থান করে বিভিন্নভাবে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে মুক্তিপণ নিচ্ছে, কাউকে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র রয়েছে।
অপহৃত সাইফুল ইসলামের বাবা জুহুর আলম বলেন, আমার ছেলের মুঠোফোন থেকে ফোন করে মারধর করে করে মুক্তিপণ দাবি করে, টাকা কোথায় পাবো— বললেই আরো বেশি ছেলেকে মারধর ও নির্যাতন করে। র্যাব, পুলিশ নিয়ে ঝামেলা করলে ‘তোমার ছেলের লাশ হবে’— বলে হুমকি দিয়ে থাকে।
পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপহরণের শিকার হয়েছে স্থানীয় রোহিঙ্গা নাগরিকসহ অন্তত ৩০০ জন। এর মধ্যে মুক্তিপণ দিতে না পেরে ৩৪ জনকে মেরে ফেলা হয়েছে। তারা টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও বাহারছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে অপহরণ হয়েছিলেন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫০ জনের অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৯১ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ৫৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
গত এক বছরে টেকনাফ মডেল থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে ১৯টি, অপহরণের শিকার ৬২ জন, উদ্ধার করা হয়েছে ৬০ জন, গ্রেফতার হয়েছে ২৯ জন
এমএসএম / এমএসএম

সাজিদা ট্রেডিংয়ের প্রোপাইটর মোঃ লিয়াকত হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে মামলা

শান্তিগঞ্জে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নাফনদীর মোহনায় ট্রলার ডুবি, ৭জেলে উদ্ধার

বালিয়াকান্দিতে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

বাউফলে চেয়ারম্যান পরিবহন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

আদমদীঘিতে সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

জয়পুরহাটে পৌর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিতের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান

দৌলতপুরে মুখ বাঁধা অবস্থায় নারীর মরদেহ উদ্ধার

কমিউনিটি পুলিশিং সভা ও উদ্ধারকৃত মোবাইল-অর্থ হস্তান্তর: মেহেরপুর জেলা পুলিশের জনবান্ধব উদ্যোগ

ভূরুঙ্গামারীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবজাতক শিশুদের জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করছে উপজেলা প্রশাসন

পাবনায় ট্রিপল মার্ডারের রায়ে একজনের মৃত্যুদন্ড

গলাচিপা সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে জামায়াতের এমপি পদ প্রার্থীর মত বিনিময় সভা
