ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

শিল্পকলা একাডেমির স্বায়ত্তশাসন ও সৈয়দ জামিল আহমেদ-এর শাসনামল


হাসান মাহমুদ photo হাসান মাহমুদ
প্রকাশিত: ১১-৩-২০২৫ দুপুর ৪:৩৭

শিল্পকলা একাডেমির স্বায়ত্তশাসন নিয়ে গত চার বছর যাবৎ লড়াই করে যাচ্ছি। মানসিক ও আইনি লড়াই এখনো চলছে। ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালে একাডেমির পরিষদে একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের কিছু কিছু ক্ষমতাকে মন্ত্রণালয়ের কাছে দেওয়ার জন্য পরিষদ সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও একাডেমির পরিষদের সভাপতি ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাডেমির আইন বহির্ভূত সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় হলো, শিল্পকলা একাডেমির স্বায়ত্তশাসন নষ্ট করা এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সভায় উপস্থিত বেশিরভাগ সদস্য ছিলেন বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। এটাতো একটা উদাহরণ, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের এরকম শতশত উদাহরণ দিতে পারবো। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বিধিবহির্ভূত নির্দেশ বা চাপ সামলানোর জন্য হেডম লাগে। যেটা সবার থাকে না। 

এবার আসল কথায় আসি, পরিষদের আইন বহির্ভূত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক পত্রপ্রেরণ করা হয়েছিন। কিন্তু সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন না হওয়ায় বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আমরা ১১জন কর্মকর্তা বাদি হয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করি। উচ্চ আদালতে একাধিক শুনানির পর পরিষদের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। রিট পিটিশনটি বর্তমানে চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছে।

অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদেরকে মামালাটি প্রত্যাহার করতে বলেছেন। আমাদেরকে রাজি করাতে না পেরে তিনি পৃথক আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। এর চেয়ে আর কষ্টের কিছু হতে পারে না। বিষয়টা দাঁড়িয়েছে ‘যার জন্য করলাম চুরি সে কয় চোর’। আমরা বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে, এই মামলা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষে আমরা করেছি, শিল্পকলা একাডেমির স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখার জন্য। তিনি তার একরোখা স্বভাব বজায় রাখলেন। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের কবলে পড়ে তিনি এরকম আরো অনেক আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেক অবৈধ কাজের বৈধতা দিয়েছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে একাডেমির নিয়োগ বিধির বাহিরে গিয়ে কাজ করেছেন। বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে, অনেক অপরাধির সাজা মাফ করে দিয়েছেন। কিন্তু অধ্যাপক জামিল আহমেদ যাদের জন্য এসব বিধি বহির্ভূত কাজ করেছেন তারাই তাঁকে জিম্মি করে অনেক অপকর্মে ও অপতৎপরতায় লিপ্ত আছেন।

শিল্পকলা একাডেমিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়েছে কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সৈয়দ জামিল আহমেদ-কে বেকায়দায় ফেলে সমালোচনার মুখে ফেলা এবং পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য তার যোগদানের আগে থেকেই একটা মহল সবসময় তৎপর ছিলো। তারাই শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক বন্ধ করা এবং শিল্পকলার গেটে শ্রদ্ধেয় মামুনুর রশিদসহ সংস্কৃতি কর্মীদের উপর হামলা করার জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদেরকে পাঠিয়েছিলো। তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। পক্ষান্তরে যারা শিল্পকলা একাডেমির স্বায়ত্তশাসনের জন্য কয়েকবছর যাবৎ সংগ্রাম করছেন, সেসব দায়িত্ববান দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের তিনি সাবেক সরকারের দোষর আখ্যা দিয়ে সরিয়ে রেখেছিলেন। আমি বলেছি, যদি কোন দুর্নীতি অনিয়মের প্রমাণ মিলে, তাহলে দ্রুতই নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি তার কোন কিছুই পাননি বরং আমাকে হেনস্তার স্বীকার হতে হয়েছে।
আমরা তাকে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত অবগত করেছি। বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তার সাথে স্বাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছি কিন্তু তিনি সময় দেননি। একজন কর্মকর্তা হয়ে তিন মাসে একবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করতে পারিনি। এ সব কিছুরই দালিলিক প্রমান আছে।
গত সাত বছরে মন্ত্রণালয়ে ৩জন মন্ত্রী, ২জন উপদেষ্টা এবং বেশ কয়েকজন সচিবের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। মন্ত্রণালয় সবসময় চাপ প্রয়োগ করে। এটাই স্বাভাবিক। একটা কথা মনে রাখতে হবে, স্বায়ত্তশাসিত হওয়া মানেই কিন্তু আপনি রাষ্টের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারি না। আমলাতন্ত্রে, স্বায়ত্তশাসনের এক পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এভাবেই সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বিধিবহির্ভূত কাজ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করার সুযোগ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আছে। যা চার বছর আগে আমরা কয়েকজন কর্মকর্তা করেছি। কিন্তু অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ তার কোন মূল্যায়ন করেননি প্রকারান্তরে তিনি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছেন। আর মহাপরিচালকের মন মতো সবকিছু হয়ে যাবে এমনটি মনে করা অমূলক। ভালো কিছু করার ইচ্ছা থাকলে সুকৌশলে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। বড় বড় কথা বলে মিডিয়া কাঁপানো যায়, সফল হওয়া যায় না।
এবার বোজেটের কথায় আসি। সৈয়দ জামিল আহমেদ-এর চাহিদামতো বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বাজেট বরাদ্দ পেলে যে কেউ বড় কাজ করে দেখাতে পারবে। তিনি কি জানেন অর্থনীতি হচ্ছে অসীম অভাবের মাঝে সীমিত সম্পদের ব্যবহার। পৃথিবীর কোন প্রতিষ্ঠানেই এক বছরে বাজেট ৫০% বাড়ে না। ১০০ কোটি টাকা বাজেটের একটা প্রতিষ্ঠানে কিভাবে এক বছরে ১৫০ শত কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ আশা করেন। এটা একটা অবৈজ্ঞানিক ও হাস্যকর চাওয়া। শিল্পকলা একাডেমির গত ১০ বছরের বাজেট কি কেউ বিশ্লেষণ করেছেন? অনুষ্ঠান প্রতি ব্যায় কত? বেতন-ভাতাসহ পরিচালন ব্যায় ও অনুষ্ঠান ব্যায় কত? এটা পাবলিক ডকুমেন্টস কেউ চাইলে শিল্পকলা থেকে তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারেন। তবে অর্থনীতির হিসাব নিকাশ কি এতই সহজ? অর্থনীতিবিদরা ভালো বলতে পারবেন। তিনি অবশ্য এসব মানতে নারাজ। তিনি এতোটাই পান্ডিত্য দেখান যে, একবার তথ্য প্রযুক্তি নিয়েও আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। পরে উপযুক্ত জবাব দিয়েছি। যাহোক তিনি হয়তো মহাজ্ঞানী তাই এমনভাবে অর্থনীতি বা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে ভাবেন। এটা ভালো।
বড় করে বলেছিলেন সবকিছু স্বচ্ছ রাখবেন, ওয়েবসাইটে দিবেন কিন্তু কয়টা অনুষ্ঠানের বাজেট ওয়েবসাইটে দিতে পেরেছেন আপনারা চেক করে দেখেন। তিনি বলেছেন, আগে শিল্পকলায় অনেক দুর্নীতি হয়েছে। তাই যদি হয় তাহলে গত পাঁচ মাসে তার সময়কার প্রতিটি অনুষ্ঠানের বাজেট কেন আগের চেয়ে অনেক বেশি? এর কোন জবাব তিনি দিতে পারবেন না কারণ তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল তিনি শুরু থেকেই আপোষ করেছেন। বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, আপোষ করবেন না; আদতে তিনি সেটিই করেছেন বেশি। তার সময়কার সকল অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির ব্যয় বিভাজন প্রকাশ্যে আনা উচিত, তিনি তো বড় বড় কথা বলেছেন। অনেকের কাছে এসব শুনে অবাক লাগতে পারে। এসব কিছুর দালিলিক প্রমাণ রয়েছে। কেউ চাইলে শিল্পকলা একাডেমির নথিপত্র চেক করে মিলিয়ে নিতে পারেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে যারা সৈয়দ জামিল আহমেদ-কে গালাগালি করেছে, সমালোচনা করেছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদেরকেই তিনি পুরস্কৃত করেছেন। আর তারাই তাকে জিম্মি করেছে, ফাইল গায়েব করেছে, এর প্রমাণ গত ৫ মাসে শিল্পকলার ঘটনা প্রবাহে দৃশ্যমান। এসব শুনে অনেকে মর্মাহত হবেন কিন্তু এটাই বাস্তব পরিস্থিতি।
তবে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছেন তিনি অন্যথায় শিল্পকলার মঞ্চে নাটক বন্ধ করার যে দায়ভার তিনি নিয়েছেন তার জবাব দিতে পারতেন না? যে অন্যায় কাজ, অনিয়ম, দুর্নীতি তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে হয়েছে তার কি জবাব দিবেন জামিল আহমেদ? সবকিছু প্রকাশ্যে আসুক, এটা সময়ের দাবি! 
--চলমান

এমএসএম / এমএসএম

চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে তিস্তা পাড় বাসীর প্রত্যাশা

বিশ্ববাণিজ্যে বড় চ্যালেঞ্জ ট্রাম্পের শুল্কনীতি

রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমী নেত্রী খালেদা জিয়া

সমুদ্রসীমা রক্ষা এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব

ইউরোপ, আমেরিকার ফাটল এখন কাঠামোবদ্ধ রূপ পাচ্ছে

কর্মসংস্থানের বিষয়টি দেশের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত

গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে বেকারত্বের তথ্যচিত্র এবং পরিসংখ্যানগত তুলনামূলক বিশ্লেষণ!

শুভ নববর্ষ ১৪৩২

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর ও আমাদের প্রত্যাশা

আর কত রক্ত, আর কত সময় দিলে সুন্দর হবে বাংলাদেশ?

বিশ্ব নেতৃত্বের পালাবদল ও গণতন্ত্রের অবনমন

নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হোক ঈদযাত্রা

বাঙালি সংস্কৃতিতে দোল উৎসব সার্বজনীনতা লাভ করে কবিগুরুর কল্যাণে