হারিয়ে গেছে এক সময়ের আভিজাত্যের প্রতীক ল্যান্ডফোন

একসময়ে বাড়িতে ল্যান্ডফোন (টিএন্ডটি) কানেকশন মানেই আভিজাত্যে ছোঁয়া। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কারও বাড়িতে ল্যান্ডফোন (টিঅ্যান্ডটি) লাইন থাকাটা আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে গণ্য ছিল। আর উপজেলা পর্যায়ে কারও বাড়িতে ল্যান্ডফোন থাকলে তো কোন কথাই নেই তার বাড়ির মূল্যায়নই আলাদা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মোবাইল প্রযুক্তির প্রভাবে সেই আভিজাত্য এখন শুধুই অতীত।
একুশে পদক প্রাপ্ত জনপ্রিয় গায়িকা পাপিয়া সারোয়ারের গাওয়া- 'নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম' গানটির অর্থ বর্তমান প্রজন্ম খুঁজে না পেলেও ৯০ দশকের মানুষের মনে আজও দোলা দেয় এ গানের সুর। বর্তমান ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পেয়ে আগেকার দিনের (টিএন্ডটি) টেলিফোনের গুরুত্ব অনেকেই ভুলে গেছেন। ফলে অনেক আগেই কিছু সংখ্যক সরকারি অফিস ছাড়া সব বাসাবাড়ির অব্যবহৃত টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। একসময়ে যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টেলিফোন সেটের জায়গা এখন স্টোর রুমের বস্তায় অথবা ভাঙারির দোকানে। তবে সারা বাংলাদেশের মতো বারহাট্টা উপজেলার কয়েকটি সরকারি অফিসে এখনও টেলিফোন লাইনের সংযোগ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ব্যবহার করা হয় না। বর্তমান ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোনের দাপটে ল্যান্ডফোনের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বাসায় ল্যান্ডফোন রাখাটা এখন অনেকে উটকো ঝামেলা বলে মনে করেন।
সরেজমিনে বারহাট্টা উপজেলা সদরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস ঘুরে দেখাগেছে, সংযোগ থাকলেও প্রায় সব অফিসের ল্যান্ডফোনই অকেজো হয়ে সো-পিস হিসাবে টেবিলের উপর সাজানো আছে।
উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী তনু মিয়া বলেন, আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলার জন্য ১৯৯৮ সালের দিকে বাসায় ল্যান্ডফোনের (টিএন্ডটি) সংযোগ নিয়েছিলাম। তখন কারও সাথে কথা বলার জন্য উপজেলা টিঅ্যান্ডটি অফিসের নাম্বারে কল দিয়ে অপারেটরের কাছে কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি দিয়ে কথা বলার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম, সংযোগ স্থাপনের পর কথা বলতাম। সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক ছিল মাসের বেশিরভাগ সময়েই লাইন নষ্ট থাকা। অভিযোগ দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যেতাম। অনেক তদবিরের পর ঠিক করলেও ক’দিন পর ফের নষ্ট। দিনের পর দিন এভাবেই চলতো গ্রাহকদের ল্যান্ডলাইন (টিএন্ডটি) সেবা। বর্তমান ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোন ব্যবহারে বাসার সেই ল্যান্ডফোনটি এখন ধুলোর আস্তরে ঢাকা পড়ে আছে।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সত্যব্রত চন্দ’র সাথে কথা বললে তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাংকেও ল্যান্ডফোনের ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে। বছর পনেরো আগেও ল্যান্ডফোনের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল সবারই। কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগে মোবাইলেই যাবতীয় যোগাযোগ হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিটি ব্যাংকে এখন মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়ার কারণে গ্রাহকের সঙ্গে সেভাবেই সমন্বয় করছে। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রধান শাখার কর্মকর্তাদের যোগাযোগও মোবাইল ফোনেই হচ্ছে।
গোলাম সারোয়ার নামের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, অফিসে ল্যান্ডফোন (টিঅ্যান্ডটি) লাইন থাকলেও সেটি এখন আর ব্যবহার হয় না। সহকর্মীদের কিংবা অফিসের অন্য কারও সঙ্গে আলাপ করতে মাঝে-মধ্যে ব্যবহার করি। এ ছাড়া সবসময়ই মোবাইল ফোনে কথা বলি। ল্যান্ডফোন এখন সম্পুর্ন অকেজোই বলা চলে।
বারহাট্টা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, টেলিফোন একটি দূরভাষী বা দূরালাপনী যোগাযোগ মাধ্যম। তারের মাধ্যমে কয়েক গজ থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরের মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য টেলিফোন ছিল এক অভিনব যন্ত্র। বর্তমানে এর অনেক উন্নতি হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে। অথচ একসময়ে সহজ যোগাযোগের ক্ষেত্রে টেলিফোনই ছিল একমাত্র মাধ্যম। বর্তমান আধুনিক যুগে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ায় মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আজকাল মোবাইল-ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষের শুধু কথা বলাই সহজ হয়নি, হয়েছে একে অপরকে ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখার সুযোগও।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ল্যান্ডফোনের কলরেট সর্বনিম্ন। এর পরও যত দিন যাচ্ছে, বিটিসিএলের এই ল্যান্ডফোন ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা তত বাড়ছে। এর নেপথ্যে সেলফোন প্রযুক্তির প্রভাব যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিটিসিএলের সেবার মান দিন দিন হ্রাস পাওয়া। বাধ্য হয়েই গ্রাহকরা ল্যান্ডফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বারহাট্টা টিএন্ডটি অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী বীণা সরকার জানান, এক সময়ে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ল্যান্ডফোন (টিএন্ডটি) কানেকশন। তখন সংযোগের ভীষণ চাহিদা ছিল। এলাকার প্রভাবশালী গ্রাহকেরা সংযোগ নিতে অফিসে ভীড় করতেন। তখনকার সময়ে (দুই গ্রাহকের মাঝে সংযোগ স্থাপন, নতুন সংযোগ দেওয়া, লাইন মেরামত) ইত্যাদি কাজে আমাদের স্টাফদের ব্যস্ততার মাঝে দিন কাটতো। এখন টিএন্ডটি অফিসের খোঁজ আর কেউ নেয় না, সবার হাতে হাতে এখন শুধুই মোবাইল ফোন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন ফোনকে শুধুমাত্র কথা বলার মাধ্যম হিসেবে দেখে না৷ এখন তারা এটাকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে দেখছে৷ এর ডাটা বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রত্যন্ত গ্রামেও সমানভাবে পাওয়া যায়৷ আর এটা সম্ভব করেছে মোবাইল ফোন। এটা মানুষের অর্থনীতি, শিক্ষা, বিনোদনসহ জীবনের প্রায় সবদিকে ভূমিকা রাখছে৷
এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার শ্যামল দে বলেন, আগে রেল স্টেশনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ল্যান্ডফোন (টিএন্ডটি) ফোন। তখনকার সময়ে অনেক চেষ্টার পর পূর্ববর্তী স্টেশন মাষ্টারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ট্রেনের অবস্থান সম্পর্কে জেনে ট্রেন আসার সিগন্যাল দিতাম। এখন মোবাইল যোগাযোগ ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে ট্রেনের অবস্থান সম্পর্কে খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি জানা যায়। সব স্টেশনেই টিএন্ডটি ফোন এখন অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
এমএসএম / এমএসএম

বাঁশখালীতে ৫ মাস বয়সী শিশু অপহরণ, ১৬ ঘন্টার পুলিশি অভিযানে উদ্ধার, গ্রেফতার-১

কুমিল্লা নামেই বিভাগ হবে, লাকসাম হবে জেলা: আবুল কালাম

ধামইরহাটে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালিত

নারী নির্যাতন ও নাশকতা মামলায় তাঁতীলীগ নেতা রিয়াদ আটক

আদমদীঘিতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাংবাদিক মতি গুরুতর আহত

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ৩ দফা দাবী বাস্তবায়ন ও শিক্ষকদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন

কুড়িগ্রামে বিশ্ব হাত ধোঁয়া দিবস ২০২৫ পালিত

জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণ

বাংলাদেশের ৩য় শহর হিসেবে জয়পুরহাটে স্টারলিংক ইন্টারনেট এর উদ্বোধন

মাদারীপুরে পিআরসহ পাঁচ দফা দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের মানববন্ধন

কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন ১৩ বিডিআর জোয়ান

মানিকগঞ্জে ব্র্যাকের স্বপ্নসারথি গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান সম্পন্ন
