ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে তিস্তা পাড় বাসীর প্রত্যাশা


প্রফেসর মীর্জা মো: নাসির উদ্দিন photo প্রফেসর মীর্জা মো: নাসির উদ্দিন
প্রকাশিত: ২২-৪-২০২৫ দুপুর ১২:২৫

চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ঘোষণায়  তিস্তা পাড়ের মানুষ  সহ রংপুর বিভাগের  প্রত্যেকটি জেলার মানুষের  মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল। সুখকে ধরে রাখতে হলে শরীর ও মন দু’টোরই সূস্থতার প্রয়োজন রয়েছে। সূস্থতার বিপরীত অবস্থা অসূস্থতা আর এ অসূস্থতাই রোগের মাধ্যমে ডেকে আনে মৃত্যু। বিশ্বজুড়ে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী কয়েকটি অসংক্রামক ব্যাধি যেমন- হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগ (সিও পিডি)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও দূষণ প্রভৃতির কারণে  ৩০% হৃদরোগে, ২৬% উচ্চ রক্তচাপে, ১২% ক্যান্সারে, ১০% শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায়, এককভাবে ডায়াবেটিসে ৩% ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগে ১২% মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ ও স্ট্রোকের (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কোনো না কোনো ধরণের কিডনি জনিত রোগে ভুগছেন, দেশে এমন মানুষ আছেন প্রায় ২ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) তথ্যে বলা হয়েছে বছরে ০৯ ধরণের কিডনি রোগ যেমন- টাইপ-২ ডায়াবেটিস জনিত কিডনি রোগে ৪৪৯৯ জন, বেশ কিছু অনির্দিষ্ট কারণে কিডনির রোগে ৪৩৭০ জন, উচ্চ রক্তচাপজনিত দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগে ৩০১২ জন, দীর্ঘস্থায়ী কিডনির প্রদাহে ২১৭৯ জন, টাইপ-১ ডায়াবেটিসজনিত দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগে ১১১৫ জন, মূত্রতন্ত্রের কিছু সমস্যাজনিত কিডনির রোগে ৮৫০ জন, কিডনির ক্যানসার রোগে ৮১৩ জন, , কিডনির পাথর রোগে ২১৮ জন এবং তীব্র কিডনির প্রদাহ জনিত রোগে ২২ জন লোক মারা যায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর  জরিপে দেখা যায়, মূলত ১১টি রোগের চিকিৎসায় মানুষ বিদেশে যান। এই তালিকায় রয়েছে- ক্যানসার, হৃদ্‌রোগ, কিডনির রোগ, বন্ধ্যাত্ব, ডায়াবেটিস, সড়ক বা অগ্নিদুর্ঘটনা, হাড় ও মেরুদন্ডের  সমস্যা, চোখের সমস্যা, স্নায়ুরোগ, মানসিক রোগ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ ইত্যাদি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের তিন বছর আগের এক গবেষণা বলছে ক্যান্সার রোগী ২১%, হৃদরোগী ১৮%, কিডনি রোগী ১৪.৫%, অর্থোপেডিক সার্জারির জন্য ১১.৫%, স্নায়ুর রোগী ৯%,পরিপাকতন্ত্র ও প্রস্রাবের সমস্যায় ভোগা রোগী ৬%, নাক,কান,গলা রোগী ৫% এবং স্ত্রীরোগে আক্রান্ত রোগী ৪% বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায়। সাধারণভাবে মেডিকেল চেকআপের জন্য বিদেশ যাচ্ছে ৫ %, মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিতে ২ %, ওবেসিটির জন্য ১. ৩৩ %  আর অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে ৪ % মানুষ।

সাধারণভাবে ধারণা করা হয় বিত্তবান বা অর্থ সম্পদশালী নাগরিকরা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায়। কিন্তু জীবন বাঁচাতে সবশ্রেণীর মানুষ, এমনকি খেটে খাওয়া মানুষও সহায় সম্বল বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমান।এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিদেশগামী রোগীদের ২৫% ব্যবসায়ী, ১২.৫৩%  বেসরকারি চাকরিজীবী, ১২% দিনমজুর, ৯.৪৮% সরকারি চাকরিজীবী, ৭. ৫৩ % শিক্ষক রয়েছে। অবাক করা একটি তথ্য যে, বিদেশগামীদের  ৫% চিকিৎসকও রয়েছে। এ ছাড়া এ তালিকায় সাংবাদিক, পুলিশ ও শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। ২০২১ সালে বিডার সর্বশেষ তথ্যমতে, চিকিৎসার জন্য ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে গেছে ৭ লাখ রোগী। এর মধ্যে ভারতে গেছে ২ লাখ ৩৫ হাজার, যা মোট রোগীর ৩৪ শতাংশ। আর এতে খরচ হয়েছে ৪০০ কোটি ডলার বা ৪৪ হাজার কোটি টাকা। বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া আর বাংলাদেশের অবস্থান দশম।

বিশাল সংখ্যক মানুষ কেন বিদেশ যাচ্ছে?
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের গবেষণায় বিশাল সংখ্যক রোগীর বিদেশ যাবার ক্ষেত্রে ০৮ টি কারণ নির্ধারণ করেছে। কারণগুলো হলো-১.অভিজ্ঞ চিকিৎসক, ২.মানসম্মত চিকিৎসা, ৩. চিকিৎসকদের রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, ৪.চিকিৎসা পেতে কম সময় অপেক্ষা, ৫.পরীক্ষায় সঠিক রোগ নির্ণয়, ৬. চিকিৎসা  ব্যয়, ৭. চিকিৎসা চলাকালে নানা ধরনের স্বাস্থ্যবিষয়ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়  সুযোগ-সুবিধা আর ৮. স্বাস্থ্যসেবার গুণগত উন্নত মান ইত্যাদি। বিদেশ যাবার ক্ষেত্রে আরো দু’টি গুরুত্ব পূর্ণ কারণ রয়েছে- একটি সামাজিক ভীতি ও অপরটি ক্লিনিক্যাল দূর্ঘটনা । বিষয় দু’টি পরিস্কারভাবে বোঝার জন্য কয়েকটি সত্য ঘটনা তুলে ধরছি।

সামাজিক ভীতি: জনাব বকুল (ছদ্ম নাম), তিনি কুড়িগ্রামের একটি বেসরকারি কলেজের  শিক্ষক। তিনি অসুস্থ হলে মেডিসিনের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তিনি কিছুদিন চিকিৎসা প্রদানের পর কতগুলো মেডিকেল টেস্ট দেন। টেস্টগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে  তাঁকে হার্টের রোগী হিসেবে রংপুরের একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার্ড করেন। রংপুরে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করানোর পর আরোগ্য লাভ না করায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকার চিকিৎসক তাঁকে দ্রæত অপারেশনের পরামর্শ প্রদান করেন। চিকিৎসা করাতে ইতোমধ্যে তাঁর অনেক টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। ব্যাংক থেকেও তাকে লোন দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। অবশেষে তিনি বসত- বাড়ির কিছু জমি বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য ভারতের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: দেবী শেঠীর নিকট গমন করেন। সেখানে তাঁর রোগের হিস্ট্রি শুনে ডাক্তার দেবী শেঠীর একজন সহকারি কিছু মেডিকেল টেস্ট দেন। টেস্টগুলো করানোর পর ঐ চিকিৎসক জানান তাঁর হার্টের কোন সমস্যা নেই এবং ডাক্তার দেবী শেঠীর দেখা করারও কোন প্রয়োজন নেই। তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে ভ‚ল ঔষধ এত বেশি খাওয়ানো হয়েছে যে তাঁর যে কোনো  মুহুর্তে স্ট্রোক করার সম্ভাবনা আছে এবং  আঙ্গুল গুলো বাঁকা হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্ধা যে ডাক্তার দেবী শেঠীর সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত দেশে ফিরবেন না। পরে ডাক্তার দেবী শেঠীর সাক্ষাৎ করলে তিনিও একই কথা বলে সান্ত¡না স্বরুপ কিছু ট্যাবলেট লিখে দেন। তিনি এখনও দিব্যি সূস্থভাবে চলাফেলা করছেন।
ভ‚রুঙ্গামারি উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষিকার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ায় রংপুরের একটি ক্লিনিকে দ্রæত অপারেশন করে স্তন কেটে ফেলা হয়। রোগীর অবস্থা ক্রমশ: খারাপ হতে থাকলে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানকার চিকিৎসকরা বলেন স্তন কেটে ফেলা সঠিক হয় নি। স্তন কাটার ফলে ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে এবং চিকিৎসা করালেও রোগী বাঁচবে না। কয়েকদিন পর ঐ রোগী দু’টি স্কুল পড়–য়া সন্তান রেখে মারা যান।
আমার এক সুপরিচিত ছাত্রীকে গাইনিজনিত সমস্যায় ঢাকার একটি হাসপাতালে অপারেশন করা হয় কিন্তু সে মারা যায়। লাশ কুড়িগ্রামে নিয়ে এসে জানাজার সময় গোসল দানকারি এক মহিলা জানান নির্দিষ্ট অপারেশন ছাড়া শরীরের আরো একটি অংশে অপারেশনের সেলাই রয়েছে। শরীরের উক্ত সেলাইয়ের জায়গাটি কিডনির অবস্থান নির্দেশ করে। ধারণা করা হচ্ছিল তার কিডনি কেটে নেয়া হয়ে থাকতে পারে। পারিবারিক মান-সম্মান বাঁচাতে ঘটনাটি গোপন রাখেন পরিবারের সদস্যরা। এরকম কিছু কিছু দৃষ্টান্ত সামাজিকভাবে মানুষের মাঝে অনাস্থা ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে। চিকিৎসকরা যখন জটিল কোনো রোগের নাম বলেন কিংবা কোনো অপারেশন করাতে চান তখন  ঘটনাগুলো লোকমুখে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে চিকিৎসক ভুল রোগ নির্ণয় করেছেন কিংবা অপারেশনের প্রয়োজন নেই তাও অপারেশন করতে চাচ্ছেন। এমতাবস্থায় রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।

ক্লিনিক্যাল দূর্ঘটনা : রোগীর পেটে গজ রেখেই সেলাই, সিজারের পর নারীর মৃত্যু-অবহেলার অভিযোগ পরিবারের, নাকের পলিপ অপারেশন করাতে গিয়ে রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি  হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার কারণে এক রোগীর মৃত্যু, কুড়িগ্রামে ‘ভুল চিকিৎসায়’ এক প্রসূতি নার্সের মৃত্যুর কারণে বিভিন্ন ওয়ার্ডে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছে তার সহকর্মীরা, কুড়িগ্রামে আঙ্গুল অপারেশন করার কথা বলে পেটে সেলাই-শিশুর মৃত্যু ।  এ রকম হাজারো ঘটনায় চিকিৎসা নিয়ে মানুষের মাঝে ক্লিনিক্যাল আতঙ্ক রয়েছে। রোগী বা তার পরিবারের সদস্যরা তটস্থ থাকনে, না জানি অপারেশন করার সময় চিকিৎসকের কোনো ভুলে রোগীর ক্ষতি হয়। এ রকম ক্লিনিক্যাল ভীতি থেকে মানুষ  শেষ বারের মতো বাঁচার জন্য বিদেশে যাবার চেষ্টা করে।

কোনো রোগের  মৃত্যু হারের সাথে একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র ফুটে ওঠে। বাংলাদেশ থেকে লোকজন যে কয়টি দেশে বিশেষ করে ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং চীনে  কয়েকটি অসংক্রামক ব্যধির চিকিৎসার জন্য গমন করে সে কয়েকটি দেশের সাথে আমাদের পরিসংখ্যানগত ডাটা তুলে ধরছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগে ৭১% লোক আক্রান্ত হয় যা উদ্বেগজনক ও চিন্তার বিষয়।

World Health Rankings-2022 (ALL CANCERS DEATHRATE BY COUNTRY) এর মতে প্রতি লাখে ক্যান্সারে ভারতে ৮০.১২ জন (সূস্থ্যতার হার ৬০.৪%), বাংলাদেশে ৮৬.৪১ জন, সিঙ্গাপুরে ৯০.৮১ জন(সূস্থ্যতার হার ৮০.৩%), মালয়েশিয়ায় ১০০.২০ জন (সূস্থ্যতার হার ৬৭.৮%), থাইল্যান্ডে ১১৬.১৫ জন (সূস্থ্যতার হার ৭১.১৩%), চীনে ১৩৩.৭২ জন (সূস্থ্যতার হার ৮৩.২%), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০২.৫৫ (সূস্থ্যতার হার ৮৮.৬%) জন লোক মারা যায় (সর্বোচ্চ মঙ্গোলিয়া ১৪৯.৩৩ এবং সর্বিনিম্ন সৌদি আরব ৪৯.৩৪)। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঢাকার বিএসএমএমইউ তে ক্যান্সার রোগীর সূস্থ্যতার হার ৪৮% এবং দেশের অন্য মেডিকেল কলেজ গুলোতে সূস্থ্যতার হার মাত্র ২০%। সূস্থতার হারের ক্ষেত্রে ৩৮ ধরণের ক্যান্সারের মধ্যে শুধুমাত্র ব্রেস্ট ক্যান্সারের আরোগ্য লাভের হার তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সকল ক্যান্সারের মধ্যে পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যানসার সূস্থতার হারে ১ম, মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের সূস্থতার হার ২য় এবং পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ফুসফুস ক্যান্সারের সূস্থতার হার খুবই কম কিংবা মৃত্যু হার বেশি।

World Health Rankings- 2022 (CORONARY HEART DISEASE DEATHRATE BY COUNTRY) এর মতে প্রতি লাখে হার্ট অ্যাটাকে থাইল্যান্ডে ৪৬.৮০ জন, সিঙ্গাপুরে ৬০.৮০ জন, বাংলাদেশে ৯৪.২৭ জন, চীনে ৯৭.৫৭ জন, মালয়েশিয়ায় ১৩৬.২১ জন, ভারতে ১৪০.৭২ জন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩.৪৯ জন লোক মারা যায়।(সর্বোচ্চ তাজিকিস্তান ৩৮৯.৭৫ জন এবং সর্বনিম্ন দক্ষিণ কোরিয়া ২৭.৭৮ জন।) করোনারি হৃদরোগ (ঈঐউ), অথবা করোনারি ধমনী রোগ (ঈঅউ) সত্যিকার অর্থে "নিরাময়" হয় না।  তবে, এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পারে, লক্ষণ এবং জটিলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। যদিও এর কোনও নির্দিষ্ট প্রতিকার নেই, চিকিৎসার অগ্রগতি ঈঅউ আক্রান্ত অনেক ব্যক্তির বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি করেছে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।

World Health Rankings- 2022 (KIDNEY DISEASE DEATHRATE BY COUNTRY) এর মতে প্রতি লাখে কিডনি জনিত রোগে বাংলাদেশে ৯.১৪ জন, চীনে ১০.৩৯, সিঙ্গাপুরে ১২.০৪ জন,ভারতে ১৯.৯০ জন,মালয়েশিয়ায় ২৪.২৫ জন, থাইল্যান্ডে ২৫.১৩ জন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৩.০৮ জন। (সর্বোচ্চ মাইক্রেনেশিয়া ৭৭.০১ জন এবং সর্বনিম্ন ফিনল্যান্ড ২.০৫ জন) মৃত্যুবরণ করে।

World Health Rankings- 2022  (DIABETES MELLITUS DEATH RATE BY COUNTRY)  এর মতে ডায়াবেটিস রোগে প্রতি লাখে সিঙ্গাপুরে ১.২৮ জন, চীনে ৮.৫৬ জন, থাইল্যান্ডে ১৭.৭৮, বাংলাদেশে ২৫.৪৯ জন, ভারতে ২৫.৪৯ জন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০.৫৮ জন। (সর্বোচ্চ ফিজিতে ২৪৩.৬১ জন এবং সিঙ্গাপুরে ১.২৮ জন।)

উপরোক্ত চারটি রোগের বিভিন্ন তথ্য থেকে দেখা যায় রোগ গুলোতে আমাদের দেশের মৃত্যু হার অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছুটা কম। আমাদের অবস্থান সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন নয়। কিন্তু কতগুলো কারণে আমাদের মৃত্যুহার বেশি। এখন সে বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন।

Household Income and Expenditure Surveys (HIES) এর এক গবেষণায় দেখা যায় যে দেশের ৫৩ শতাংশ মানুষ চিকিৎসার জন্য ফার্মেসী গুলোতে যায়। কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই একজন রোগী ফার্মেসীতে গিয়ে তার সমস্যা বলে এবং ফার্মেসীর ঔষধ বিক্রেতা নিজের ধারণা অনুসারে ঔষধ প্রদান করে থাকে। রোগী বা তার পরিবারের নিকট এটি চিকিৎসার সবচেয়ে সহজ উপায় কারণ ফার্মেসিতে চিকিৎসা সেবা পেতে গড় অপেক্ষার সময় ৮.২২ মিনিট এবং এখানে চিকিৎসকের ফি, পরীক্ষা-নীরিক্ষার খরচের কোন ঝামেলা নেই। মাত্র ১১ শতাংশ মানুষ যোগ্য ডাক্তারের কাছে যেতে পছন্দ করেন। সরকারি হাসপাতাল বা রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা পেতে একজন  রোগীর গড়  সময় লাগে ৪৮ মিনিট। মেডিকেল কলেজ গুলোতে কর্মরত ডাক্তারের কাছে সেবা পেতে ৬ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় লাগে। রাজধানীতে চিকিৎসা পেতে গেলে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়।
আমাদের রংপুর বিভাগে কেন একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালের প্রয়োজন তা একটি উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরছি। দূরারোগ্য ব্যধি ক্যান্সারের মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপন করছি। সাধারণত সব ধরনের ক্যান্সারের চারটি ধাপ থাকে, ০ থেকে ৪। পর্যায় ০: এটি আসল টিউমারকে বোঝায় যেখানে আর বিস্তারের কোন চিহ্ন নেই। এই পর্যায়ে ক্যান্সারের সার্জারির মতো নিবেদিত চিকিৎসা প্রক্রিয়া রয়েছে। ধাপ ১: এখানে, ক্যান্সার কোষগুলি অন্য টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়েনি। কোষগুলি রক্তপ্রবাহ বা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে প্রবেশ করেনি এবং ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে বলে মনে করা হয়৷ পর্যায় ২-৩: ক্যান্সারের এই ধাপগুলি পার্শ্ববর্তী টিস্যুতে এবং লিম্ফ নোডগুলিতে ক্যান্সার কোষের মাঝারি বৃদ্ধি দেখায়৷পর্যায় ৪: এই পর্যায়ে ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। স্টেজ ৪ ক্যান্সার মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার নামে পরিচিত, যার মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ধরা যাক,কুড়িগ্রাম বা লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন রোগীর ক্যান্সারের পর্যায় জিরো। তিনি প্রথমে চিকিৎসার জন্য গেলেন ফার্মেসীতে। সেখান থেকে ০১ মাস বিভিন্ন ঔষধ সেবন করে কোন আরোগ্য হলো না। এরপর গেলেন জেলা শহরের চিকিৎসকের কাছে সেখানেও ক্যান্সার সনাক্ত হলো না। নানাভাবে চিকিৎসা চললো ০৬ মাস। অনেক টাকা-পয়সা ও দীর্ঘ রোগ যন্ত্রণা ভোগার পর গেলেন রংপুর মেডিকেল কলেজে। সেখানে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর ঢাকা কিংবা বিদেশে যাবার সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসা চললো আরো ০৩ মাস। কিন্তু রোগী যখন কোনোভাবেই আরোগ্য হচ্ছেনা তা দেখে পরিবার পরিজন সিদ্ধান্ত নিল এবার ভিটে-মাটি বিক্রি করে হলেও রোগীকে নিয়ে যাবেন ভারতে। টাকা যোগাড় ও ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আরো সময় লাগল ০২ মাস। এভাবে রোগ শুরু থেকে ০১ বছরে ক্যান্সার পৌছে যায় পর্যায়-৪ এ। এ ধরণের রোগীর বাঁচার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। ‍উদাহরণ হিসেবে ক্যান্সারের কথা বলা হলেও অন্য সকল রোগের ক্ষেত্রেও  রংপুর বিভাগের মানুষের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান না থাকায় চিকিৎসা নিয়ে বাঁচার সুযোগ থাকে না।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য সেবার ৭৩ শতাংশ ব্যয় মানুষের পকেট থেকে মেটাতে হয়। চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে দারিদ্র‍্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে ৩.৭ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ প্রায় ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দরিদ্র হতে বাধ্য হচ্ছে। তাই রংপুর বিভাগে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের বিশেষ প্রয়োজন। আর সেই হাসপাতাল নির্মাণে প্রত্যেকটি জেলার ভিন্ন ভিন্ন দাবি থাকতেই পারে। 

সবচেয়ে বড় কথা হলো একটি উন্নত মানের হাসপাতাল রংপুর বিভাগে হচ্ছে সেটিই বড় আনন্দ সংবাদ।  বিভিন্ন খবরে জানা গেছে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্থান নির্বাচনে কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে নীলফামারি,রংপুরের গঙ্গাচড়া,কাউনিয়ার টেপামধুপুর ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী হায়বত খাঁ এলাকা পরিদর্শন করেছে। আমরা আশা করছি যথাযথ কর্তৃপক্ষ মেডিকেল কলেজ নাই এমন তিনটি জেলা লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধার সংখ্যাধিক্য চরাঞ্চলের এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা অবশ্যই বিবেচনা করবেন। এ তিনটি জেলার কুড়িগ্রামের  তিস্তা পাড়ের চিলমারীর হরিপুর,গাইবান্ধার সুন্দরগজ্ঞের বেলকা কিংবা লালমনিরহাটের তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে প্রতিষ্ঠার আশা ব্যক্ত করে এ অঞ্চলের মানুষ।
লেখক: অধ্যক্ষ,কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ,কুড়িগ্রাম।

এমএসএম / এমএসএম

চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে তিস্তা পাড় বাসীর প্রত্যাশা

বিশ্ববাণিজ্যে বড় চ্যালেঞ্জ ট্রাম্পের শুল্কনীতি

রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমী নেত্রী খালেদা জিয়া

সমুদ্রসীমা রক্ষা এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব

ইউরোপ, আমেরিকার ফাটল এখন কাঠামোবদ্ধ রূপ পাচ্ছে

কর্মসংস্থানের বিষয়টি দেশের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত

গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে বেকারত্বের তথ্যচিত্র এবং পরিসংখ্যানগত তুলনামূলক বিশ্লেষণ!

শুভ নববর্ষ ১৪৩২

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর ও আমাদের প্রত্যাশা

আর কত রক্ত, আর কত সময় দিলে সুন্দর হবে বাংলাদেশ?

বিশ্ব নেতৃত্বের পালাবদল ও গণতন্ত্রের অবনমন

নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হোক ঈদযাত্রা

বাঙালি সংস্কৃতিতে দোল উৎসব সার্বজনীনতা লাভ করে কবিগুরুর কল্যাণে