যানজট নিরসনে পঁচিশটি সংস্থাকে সাথে নিয়ে মহা পরিকল্পনা

সম্প্রতি রাজধানীতে যানজটে অতিষ্ঠ মানুষ বিভিন্ন সুরাহা খুঁজছে, এর থেকে নিস্তারের জন্য খুঁজছেন বাহনের বিভিন্ন পন্থা। কর্মজীবীদের জন্য যানজট একটি ভয়াবহ ধকল যা প্রতিদিন তাঁকে মোকাবেলা করতে হয়। এই যানজট নিয়ে সকালের সময়ের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ডিএমপি’র অতিঃ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার এর সাথে তাদের যানজট সংক্রান্ত মহা কর্মপরিকল্পনা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় হয়। তিনি বলেন অনেকেই মনে করেন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি না হওয়ার জন্য শুধু পুলিশই দায়ী, আসলে তা সঠিক নয়।
গবেষণায় দেখা গেছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাতে না পারার অন্তরায় ২৫ টি সংস্থা। পুলিশের ভূমিকা মাত্র ১৫ শতাংশ, আর বাকি ৮৫ শতাংশের জন্য দায়ী অন্যান্য সংস্থা, গাড়িচালক, পথচারী ও যাত্রী। কিছুদিনের মধ্যে ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ সবার সাথে সমন্বয় করে এ নিয়ে একটা ওয়ার্কশপ এর আয়োজন করবে বলে তিনি দৈনিক সকালের সময়কে জানান। বিগত দিনগুলোতে ট্টাফিক ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রনে সনাতন পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। যেমন ট্রাফিক পুলিশ, সার্জেন, টি আই, এডিসি, ডিসি-সহ সবাই মিলে শারিরীক কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমানে বহির্বিশ্বে ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনা করতে তারা পাঁচ ছয়টি কর্মপোযোগী আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। তিনি যোগদানের পর নতুন চারটা পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন বলেও তিনি জানান। যা এখানে আলোকপাত করা হয়েছে। যেমন অটোমিশন ইকুইপমেন্ট, লজেস্টিকস, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার। ইতিমধ্যে বেশকিছু ডিভাইস চলে এসেছে, দ্রুতই বাকিগুলো চলে আসবে। যেমন সিগন্যাল লাইট (পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য) সিটি কর্পোরেশন বাইশটি দিয়েছে, বাকিগুলো তিনি অর্ডার করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি মিরপুর হার্ট ফাউন্ডেশন, রমনা থানা, লাভরোডে কয়েকটি সিগন্যাল লাইট স্থাপন করেছেন।
এখন স্থাপন করবেন ব্রাক ইউনিভার্সিটির সামনে। পজ মেশিন এর সীমাবদ্ধতা ছিল, তার ব্যবস্থা করেছেন। পুলিশের বডি ক্যামেরা, হুইল লক ইত্যাদি ইকুইমেন্টগুলো ও চলে আসবে। রাস্তা সুরক্ষার জন্য কাঁটাতারের ব্যবস্থা করেছেন নিজস্ব ডিএমপি’র ফান্ড থেকে। যদিও তা সিটি কর্পোরেশন এর দায়িত্বে ছিল। ডিজিটাল মোশন সেনসর ক্যামেরার মাধ্যমে গাড়ির গতিবিধি অনুসরণ করা, ফাঁকা রাস্তায় এক্সিডেন্ট হলে প্রকৃত দোষিকে দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনতে পারা যা সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটরিং করা। ফলে ওই সকল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকলেও কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি মনে করেন। এতে করে কাজের আউটপুট ও ভালো আসবে, মামলার সংখ্যা ও বাড়বে। ফলস্বরূপ রাস্তার নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।
এ জন্য পুলিশ ফোর্সদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা শুরু করবেন। তিনি আরও বলেন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয় বৃদ্ধি করা যা ছিল বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে জটিল প্রক্রিয়া, যা ইতিমধ্যে তিনি শুরু করে দিয়েছেন। ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়ন ঘটানোর জন্য পুলিশের ১৫ শতাংশের শতভাগ দিতে প্রস্তুত আছে। বাকি ৮৫ শতাংশ কাজ অন্যান্য সংস্থার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কিভাবে একটা বৈপ্লবিক পরির্তন আনা যায় তার জন্য সবার সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বলে তিনি জানান। তারা ও আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন, যা ইতিপূর্বে সম্ভব ছিলো না। তিনি উল্লেখ করেন রোড ইঞ্জিনিয়ারিং যানজট নিরসনে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাতে দুই সিটি কর্পোরেশন এর সম্পর্ক ও কর্মপরিধি সবচেয়ে বেশি।
এছাড়াও বিআরটিএ, বিআরটিসি, ডেসকো, ওয়াসা, ডিপিডিসি, রাজউক, বিটিসিএল, রেলওয়ে মন্ত্রণালয়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, যাদের বেশির ভাগই রাস্তা কাটা, খুড়া খুড়ির প্রয়োজন হয়। যেমন গত কিছুদিন আগে একটা সংস্থা দিনের বেলায় রাস্তা কাটাকাটি করছিল ট্রাফিক পুলিশ তাতে বাধাঁ দেয় ও রাতের বেলায় রাস্তা কাঁটার পরামর্শ দেয়। সংকিত হয়ে তিনি জানান কিছু সংস্থা একসপ্তাহ এর কাজ একমাস যাবত করতে থাকেন। যার জন্য যানজট ও ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। তিনি তাদের সাথে বৈঠক করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন, এতে ওনারা একমত ও হয়েছেন। এর ফলে ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম এর ভয়াবহতা কমতে শুরু করছে এবং তার প্রভাব ঢাকা শহরে যাতায়াতে পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। তিনি রাস্তায় পর্যায়ক্রমে কিছু কার্যক্রম শুরু করেছেন। রাস্তার ঘনঘন সিগন্যাল কমিয়ে আনা, যেখানে চার টা সিগন্যাল ছিল সেখানে তিনটায় কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি জানান ধোলাইপাড়ে মেড়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে রাস্তার মাঝখানে একটা গোলচত্ত্বর আইল্যান্ড ছিলো। যা প্রায় পনের মিটার ব্যাসার্ধের। যার পাশ দিয়ে ঘুরে গাড়িগুলো গন্তব্যে যেতে হতো যার সমাধান ছিল ট্রাফিক বিভাগের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই গোলচত্বর এর ব্যাসার্ধ কমিয়ে পাঁচ মিটারে নামিয়ে আনা হয়েছে। যার ফলে হানিফ ফ্লাইওভারে উঠতে ও নামতে গতি কমাতে হয় না, সোজা যানবাহনগুলে চলাচল করতে পারে গতি স্বাভাবিক রেখেই। এর জন্যে তাকে কয়েকবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যেতে হয়েছে। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ল্যাফটেনেন্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ।যিনি ধোলাইপাড়ে দুইবার পরিদর্শনে এসেছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
রোডস এন্ড হাইওয়ে’র ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং তিনি তাদেরও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সময় ও লেগেছিলো প্রায় চার মাস। তিনি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ব্যাখ্যা করে জানান। তারমধ্যে যানজট নিরসনে চিটাগাং রোডে দুই লেন রাস্তা মডিফাইড করিয়েছেন। পুরান ঢাকার তাঁতী বাজার রাস্তার পাশে কয়েকটি দোকান সরানোর জন্য তিনি তিন মাস যাবত সিটি কর্পোরেশন এর সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। রামপুরা-বাড্ডা ইউলোপে জ্যাম এর মূল কারণ তিনি বর্ণনা করে, অপরিকল্পিত ও ভুল লেন রোড সংযোগ প্লানিং যেটির উদঘাটন করেছেন এবং তা বাস্তবায়নের কাজ চলমান। তিনি সিটি মেয়র এর নিকট সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন রামপুরা ব্রিজ এর উপর ও ব্রাক ইউনিভার্সিটির পাশে দুইটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করার। তিনি বৌদ্ধ মন্দিরের সামনের অসমাপ্ত সার্ভিস রোডটি চওড়া করে আফতাব নগর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া, আফতাব নগর-বনশ্রী খালের উপর একটি বেইলি ব্রিজ স্থাপন ও আলাদা রিক্সা লেন তৈরী করা, আফতাবনগরের স্পিড ব্রেকার অপসারণ, সকল ফুটপাতে ফেঞ্চ স্থাপন, রাস্তার ডিভাইডারের উপর ফেঞ্চ তৈরী করা যাতে কেউ জেব্রা ক্রসিং উপেক্ষা করে রাস্তা পার হতে না পারে।
প্রত্যেক এলাকার বাস স্টপিজ নিশ্চিত করা, বাশঁ এর ব্যাবসা স্থানান্তর করা, রাস্তার মাঝখানে নার্সারী উচ্ছেদ করা, পথচারী পারাপারে সিগন্যাল লাইট স্থাপন করা, শহরে জ্বালানী পাম্পে সিএনজি বিক্রি না করা, হাতিরঝিল হতে রামপুরা রাস্তা চওড়া করা-সহ প্রায় চৌদ্দটি যুগান্তকারী প্রস্তাব মেয়রকে দিয়েছেন। যা বাস্তবায়ন হলে বাড্ডা-এয়ারপোর্ট রোড, রামপুরা-বনশ্রী-স্টাফ কোয়ার্টার রোড, হাতিরঝিল লিংক রোড এর জ্যাম নিরসনে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে তথা ঢাকা শহরের মানুষ বাধাঁহীনভাবে ও নিরাপদে চলাফেরা ও বসবাস করবে বলে মো. সরওয়ার (অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যা ঢাকাবাসির স্বপ্ন এবং এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তিনি ঢাকাবাসী তথা সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে অহ্বান জানান।
এমএসএম / এমএসএম

মিরপুর কাঁচাবাজার উচ্ছেদযোগ্য মাটি ভাড়ার আদেশ বাতিল করে চিঠি

সাহসী সাংবাদিক সম্মাননা পেলেন নয়ন কুমার বর্মন

ছাত্রদলের সমাবেশে পরিপূর্ণ শাহবাগ

৩৭তম বিসিএস পুলিশ ব্যাচের নতুন কমিটি গঠিত

মাদক ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে র্যাবের সেমিনার অনুষ্ঠিত

পিআইবি’র গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

উত্তরার বিদ্যাপিট নওয়াব হাবিবুল্লাহ এর এসএসসি উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান- ছাত্রনেতা মাইদুল হাসান সিয়াম

সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে

রাজধানীর গুলিস্তানে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে আগুন

স্টেডিয়াম এলাকায় সেনাবাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান

তুরাগে রাজউকের খালি প্লট দখলের অভিযোগ সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে
