ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

ধান চাষে কৃষকের পাশে ব্রি, ২৪ ঘণ্টার কলসেন্টার সেবা চালু


আবিদ হোসেন বুলবুল, গাজীপুর photo আবিদ হোসেন বুলবুল, গাজীপুর
প্রকাশিত: ২৫-৬-২০২৫ বিকাল ৬:৫৬

ধান উৎপাদনে সার ব্যবস্থাপনা, আগাছা দমন, বালাই ব্যবস্থাপনা কিংবা সেচ সংক্রান্ত যাবতীয় পরামর্শ দিতে ২৪ঘণ্টার সার্বক্ষণিক কলসেন্টার সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা (ব্রি)। দেশের যেকোন প্রান্তের কৃষকরা ধান চাষের নানা বিষয়ে সপ্তাহের যে কোন দিন ২৪ঘণ্টা হেল্পলাইনে ফোন করে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারবেন। বুধবার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কার্যালয়ে 'আবহাওয়ার পূর্বাভাসভিত্তিক কৃষি পরামর্শ প্রচারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা' শীর্ষক কর্মশালায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সেবা চালু করা হয়।

ব্রি’র পরিচালক গবেষণা ও ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের চিফ ড. মো. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের কো-অর্ডিনেটর (সমন্বয়ক) ড. এবিএম জাহিদ হোসেন। ব্রির ঊধ্বর্তন যোগাযোগ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমিন এর উপস্থাপনায় কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের পিএসও এবং এগ্রোমেট ল্যাবের সদস্য নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, আবহাওয়ার বৈরি পরিস্থিতির কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষক ভাইয়েরা ধান উৎপাদনে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এসব সমস্যা সমাধানে করণীয় সম্পর্কে জানাতে ধানের হেল্পলাইন নামে ২৪ ঘণ্টার কল সেন্টার চালু করা হলো। এই (০৯৬৪৪৩০০৩০০) নম্বরে কল করে কৃষক তাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান পাবেন এবং এই সেবা প্রদান করবেন সরাসরি ব্রি’র এগ্রোমেট ল্যাবের বিজ্ঞানীরা। ফলে এসব তথ্য উপাত্ত ও পরামর্শ পেতে কৃষকদের আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।
মহাপরিচালক বলেন, ব্রি ১৯৭০ থেকে এখন পর্যন্ত ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যার মধ্যে ৮টি হাইব্রিড। ব্রি উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকের দৌড়গোড়ায় পৌছানোর ফলেই বর্তমানে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়। এসব প্রযুক্তির প্রচারে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার পর বিআর-৩ বা বিপ্লব ধানের জাতের মাধ্যমে ধান উৎপাদনে সত্যি সত্যি বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৯৪ সালে ব্রি ২৮ ও ২৯ জাতের ধান উদ্ভাবন করে, যা ব্যাপক ফলনের কারণে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। 

তিনি বলেন, ব্রি’র ৩৭টি জাত রয়েছে যা বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন বৈরি পরিবেশেও উচ্চ ফলনশীল। ব্রি উদ্ভাবিত সবশেষ ৬টি জাতের মধ্যে ৫টিই বৈরি পরিবেশ সহনশীল। তিনি বলেন, আগে একটি জাত উদ্ভাবনে ১৫-২০ বছর সময় লাগতো তবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই সময় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এটি বর্তমানে ১০ বছরে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে ধানের ফলন বাড়াতে হলে সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কাজ করছে ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের সদস্যরা।

ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ধান চাষ শুধু কৃষকের জীবন-জীবিকা নয়, এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি। কিন্তু কৃষকের সামনে চাষাবাদের প্রতিটি ধাপে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আসে যেমন-আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন, রোগবালাই, পোকামাকড়ের আক্রমণ কিংবা সারের সঠিক প্রয়োগ এসবের সমাধানে সময়োপযোগী পরামর্শ জরুরি। ব্রি’র ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন/কলসেন্টার চালুর মাধ্যমে আমরা কৃষকের দোরগোড়ায় সেই পরামর্শ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।
ব্রি’র পরিচালক গবেষণা ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল ২০ শতাংশ এখন তা ১০শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময়ে লোকসংখ্যা আড়াই গুণ বেড়েছে কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ। তিনি বলেন, দেশে এখনো ২৫ শতাংশ এলাকা পতিত পড়ে আছে, এসব জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর দেশের বর্তমান ধান উৎপাদনের ধারা বজায় রাখতে হলে কোন ক্রমেই ধানি জমির পরিমাণ ৬.২ মিলিয়ন হেক্টরের নিচে আনা যাবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রথম ফেজে ব্রি মাত্র ৩৭টি জাত উদ্ভাবন করে কিন্তু ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে দ্বিতীয় ফেজে ব্রি ৮৪টি ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। বর্তমানে আমরা জিংক, আয়রন ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জাত উদ্ভাবনে মনোযোগ দিচ্ছি। তা ছাড়া আমাদের কাছে ৯ হাজার ৬০০ দেশি ধানের জাত সংরক্ষিত আছে যা গবেষণার রশদ হিসেবে আমরা কাজে লাগাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি ও প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদের যুগে প্রবেশ করতে হলে কৃষকদের হাতের নাগালে তথ্য ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের এগ্রোমেট ল্যাব অত্যন্ত কার্যকর একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। শুধু হেল্পলাইন নয়, আমরা ভবিষ্যতে অ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে আবহাওয়াভিত্তিক চাষাবাদ তথ্য পৌঁছে দিতে চাই। এ লক্ষ্যে ব্রি গত ৫ বছরে ৫০,০০০ বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।
এ সময় তিনি গণমাধ্যম, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয় কৃষকের সব চাহিদা পূরণ করা। তাই মিডিয়ার মাধ্যমে এই সেবার তথ্য ছড়িয়ে দিলে দেশব্যাপী কৃষকেরা উপকৃত হবেন। সবাই মিলে কাজ করলে প্রযুক্তিনির্ভর টেকসই কৃষি বাস্তবায়ন সম্ভব।

ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের সমন্বয়ক ড. এবিএম জাহিদ হোসেন তার মূলপ্রবন্ধে বলেন, ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে শীতের তীব্রতা কমেছে। বর্ষাকাল সম্পর্কে বলেন, ২০০০-২০১০ সাল পর্যন্ত বর্ষা ১০-১৫ দিন দেরিতে শুরু হচ্ছে। এটির সাধারণ নিয়ম জুনের প্রথম সপ্তাহে হওয়ার কথা। নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান বলেন, প্রাক শিল্প (১৮৫০-১৯০০) যুগের চেয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৪৭ ডিগ্রি। বাংলাদেশে গত ৫৪ বছরে কৃষকের কোন ডিজিটাল তথ্য-ভাণ্ডার তৈরি হয়নি যার মাধ্যমে যে কোন দ্রুত সময়ে কৃষকের কাছে পৌঁছানো যায়। বাংলাদেশ ডেল্টাপ্লান-২১০০ মোতাবেক স্মার্ট এগ্রো-এডভাইজরি ডেসিমিনেশন সিস্টেমের আওতায় দেশকে ৬ভাগ করে ২৯হাজার ৩৫৪জন কৃষক, গনমাধ্যম এবং সম্প্রসারণ কর্মীদের তথ্য-ভাণ্ডার ইতিমধ্যে তৈরি করেছে ব্রি। এটিকে আমরা দেড় লাখ পরিণত করবো। যাতে কৃষকদের কাছে সরাসরি তথ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।

এমএসএম / এমএসএম

লাকসাম পৌরসভার ১৯৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষনা

মাগুরা পৌরসভার ২০২৫ - ২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে চৌগাছায় শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মানববন্ধন

নাচোলে বিনামূল্যে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে রাসায়নিক সার ও বীজ বিতরণ

কাপ্তাই ১০ আরই ব্যাটালিয়ন কতৃক সহায়তা প্রদান

পটুয়াখালীর বাউফলে কেটে কেটে আ.লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন

বাঁশখালীতে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে আমন ধানের বীজ ও সার বিতরণী উদ্বোধন

বাকেরগঞ্জ গৃহবধূ আসমার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিবকে কুপিয়ে জখম

গোপালগঞ্জে পলিথিন বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

টাঙ্গাইলে অর্ধকোটি টাকার লুন্ঠিত ৭৫ ড্রাম তেল'সহ ২ ডা/কা'ত গ্রেফতার

দাউদকান্দিতে মাইথারকান্দি খালের আবর্জনা অপসারণ উদ্বোধন

সীতাকুণ্ডে সরকারী জায়গা দখলকৃত শিপইয়ার্ড উচ্ছেদ করলো প্রশাসন