ঢাকা বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

শ্রীপুরে জাতীয় ফুলে জীবিকা


নাঈম মেহেদী, শ্রীপুর photo নাঈম মেহেদী, শ্রীপুর
প্রকাশিত: ১৫-৯-২০২১ দুপুর ২:১৭

একমাত্র পরিশ্রমকে পুঁজি করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নলগাঁও, প্রহলাদপুর, ডুমনী, লক্ষ্মীপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ জাতীয় ফুল শাপলা বিক্রি করে বছরের কিছু সময় জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্ষা শুরুর পর শ্রাবণ থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত ওই সব গ্রামের কমপক্ষে ৩০০ পরিবার শাপলা বিক্রি করে অর্থ ‍উপার্জন করেন। বিল থেকে সংগ্রহ করেন পরিবারের পুরুষরা আর শাপলা প্রক্রিয়াকরণের সিংহভাগ কাজ করেন নারীরা। সাদা শাপলা স্থানীয় বাজারগুলোতে খাদ্য ‍উপকরণ হিসেবে বেচা-কেনা হয়। লাল শাপলা বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকার বিভিন্ন ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়।

এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির পাশে বাঁশের আড়ায় কাঁচা শাপলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কুচি কুচি করে কাটা শাপলা গ্রামীণ সড়ক আবার বাড়ির উঠানে রোদে শুকাতে দেয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া করা শুকনা শাপলাগুলো বড় ব্যাগে ভর্তি করে বসতঘরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর গ্রামের গৃহিণী অঞ্জনা দাস বলেন, পুঁজি বলতে চার হাজার টাকায় একটি নৌকা কিনেছেন। শাপলা তুলে বিক্রি করে প্রতি মৌসুমে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। দুটি ছেলের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের অন্য খরচও মেটাতে পারেন শাপলা বিক্রির টাকায়।

একই গ্রামের গৃহিণী দিপালী রানী জানান, নৌকা দিয়ে নদী থেকে শাপলা তুলে এনে কেটে রোদে শুকিয়ে বিক্রি করেন। ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারেন। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে বা পঁচে গেলে দাম কম পান।

গৃহিণী আশানন্দ রানী বলেন, নিজস্ব নৌকা না থাকলে বিল থেকে শাপলা উঠাতে গেলে দীর্ঘক্ষণ পানিতে থাকা, গা চুলকানিসহ নানা ধরনের সমস্যা হয়। একটা করে বাছাই করে তুলতে হয়। বৃষ্টি হলে পঁচে যায়। সব এলাকায় শাপলা থাকে না। তাদের এলাকায় আছে বলে তারা সৌভাগ্যবান। এখন অনেকেই এ ফুল তোলেন। গত বছর সর্বোচ্চ ১২০ টাকা কেজি দরে ১৬০ কেজি বিক্রি করেছেন। 

গৃহিণী রীনা রানী বলেন, তার ছেলে ও স্বামী ভোর থেকেই বিলে শাপলা তোলার কাজ শুরু করে। একটি নৌকা পর্যায়ক্রমে একাধিক পরিবার ব্যবহার করে। শুকনা শাপলা সর্বোচ্চ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। গত ১০ বছর যাব‍ৎ তারা শাপালা বিক্রি করে আসছেন। তবে তাদের বিক্রিতে বাজারমূল্য সঠিক পান কিনা, সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নন। এলাকায় উঁচু মাঠ-ঘাট না থাকায় রাস্তায় রোদে আবার বাঁশ বেঁধে তার ওপর আঁটি বানিয়ে ঝুলিয়ে রোদে শুকাতে দেন। একজন নারী প্রতি মৌসুমে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। ময়লা ফুলের দাম কম। সক্ষমতা অনুযায়ী ৫ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেন। বিলের জায়গা মালিকানা থাকলেও কেউ শাপলা তুলতে বাধা দেন না।

নলগাঁও গ্রামের গৃহিণী শেফালী রানী বলেন, কমপক্ষে চার মাস পর্যন্ত শাপলা সংগ্রহ করতে পারেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে শাপলা কেটে রোদে শুকাতে বিক্রিযোগ্য করতে কমপক্ষে পাঁচ দিন সময় লাগে। বিলে যতদিন পানি থাকে ততদিন শাপলা পাওয়া যায়।

প্রহলাদপুরের কৃষক লিটন দাস বলেন, গত ১০ বছর যাবৎ এসব এলাকায় লাল শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রি করা হচ্ছে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একজন ব্যক্তি একসাথে অনেকগুলো শাপলা সংগ্রহ করতে পারেন, যেগুলো শুকানোর পর কমপক্ষে পাঁচ কেজি হয়। সাধারণত পুরুষরা শাপলা সংগ্রহ করেন। শুকানোর প্রক্রিয়া করেন নারীরা। মাস দেড়েক পর পর ঢাকা থেকে লোকজন এসে ট্রাকযোগে শুকনা শাপলাগুলো নিয়ে যান। বর্তমানে শাপলা ফুলের বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় এলাকার প্রায় সকলেই শাপলা সংগ্রহের কাজ করেন। কমপক্ষে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়। 

লক্ষ্মীপুর গ্রামের ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লোকনাথ মণ্ডল ও তার ভাই রৌদ্র মণ্ডল জানায়, ছৈত্যের ডোপ বিলে লাল, সাদা ও নীল শাপলা হয়। সাদা শাপলা খাওয়ার জন্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। মনসা পূজায়ও সাদা শাপলা ব্যবহার করা হয়।

চতর বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল কাদির (৫৬) জানান, এক কেজির আঁটি সাদা শাপলা প্রতি মুড়ি (আঁটি) ৭ টাকায় কিনে ১০ টাকায় বিক্রি করেন। এক দিন পরপর স্থানীয়রা শাপলা তুলে বাজারে নিয়ে আসেন।

ক্ষেত্র মোহন মণ্ডল (৯০) জানান, তিনিই প্রথম শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রি শুরু করেন। শুকনা শাপলা পাইকাররা ওষুধ বানানোর জন্য বাড়ি থেকে এসে কিনে নিয়ে যান। তিনি এক মণ ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। বারো পাইয়া বিল, পারুলী নদীর চারপাশ থেকে স্থানীয়রা শাপলা তোলেন।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসার এএসএম মূয়ীদুল হাসান বলেন, পারুলী নদী ও পাশের বিলগুলোতে বর্ষকালে প্রচুর শাপলা ফোটে। গত প্রায় ১০ বছর যাবৎ এলাকাগুলোর শত শত পরিবার শাপলা ফুল সংগ্রহের কাজ করছে। ঔষধি উপাদান হিসেবে শাপলা ব্যহার হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। শাপলা সংগ্রহকারীরা ঢাকার ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে শাপলা বিক্রি করেন। সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি শাপলা এখন ফুলের বিপরীতে জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এর সাথে জড়িতরা কৃষিতে নতুন একটা দিগন্ত সৃষ্টি করার মতো উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।

জামান / জামান

কোন লুটেরা, চাঁদাবাজ ও বল প্রয়োগকারীকে ভোট দেবেন না; গণসংযোগে রাশেদ খান

খানসামা টিটিসিতে ধর্মীয় বৈষম্য–নির্যাতনের অভিযোগ: জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিতে তদন্ত আবেদন

কেরুজ ভোটের দাবীতে আন্দোলনের শুরুর দিনেই দুপক্ষের মারামারি

নওগাঁয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ধলু’র উদ্যোগে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল

কালিগঞ্জ থেকে ভেটখালী পর্যন্ত রাস্তা ৩৪ ফুট প্রশস্ত করার দাবিতে মানববন্ধন

নৈয়াইর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগ প্রত্যাহার

রামগঞ্জে যুবদল কর্মীর ছুরিকাঘাতে বিএনপি কর্মী খুন

ঠাকুরগাঁওয়ের ফকিরপাড়া থেকে মটরসাইকেল চুরি : মামলা

কলাবাড়িয়া ইউনিয়নে দিনব্যাপী গণসংযোগে সরব জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সার

কর্ণফুলী'তে হত্যা'সহ একাধিক মামলার এজাহার ভূক্ত আসামি সাজু হাসান গ্রেপ্তার

শীতের আগমনে লেপ তোষকের ব্যস্ততা; পলাশবাড়ীতে জমে উঠেছে ধুনকরদের শীতের বাজার

কাপ্তাই ১০ আর ই ব্যাটালিয়ন কর্তৃক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান

আত্রাইয়ে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে সেনা সদস্য নিহত