কর্মকর্তারা নীরব!
রাজউকের জোন ৫ এলাকায় অনিয়ম: অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছড়াছড়ি

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জোন ৫-এর আওতাধীন এলাকায় রাজউকের বিল্ডিং কোড না মেনে যত্রতত্র উঁচু-নিচু বহুতল ভবন গড়ে উঠছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এসব অনিয়মের বিষয়ে রাজউকের কর্মকর্তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে। জোন ৫/১, ৫/২ এবং ৫/৩-এর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নকশাবহির্ভূতভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো আনাচে-কানাচেতে ভবন নির্মাণ হচ্ছে, যেখানে রাজউকের বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, এসব অনিয়ম দেখেও রাজউক কর্তৃপক্ষ চুপ থাকছে। অভিযোগ দায়ের করলেও লোকদেখানো নোটিশ পাঠানো হয় ভবন মালিকদের কাছে, কিন্তু কিছুদিন না যেতেই মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অভিযোগটি ধামাচাপা পড়ে যায় এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের নকশার ওপর ভিত্তি করে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও, অধিকাংশ জমির মালিকই ছাড়পত্র পেলেই নিয়মানুযায়ী রাজউককে লিখিতভাবে অবহিত না করেই নির্মাণ কাজ শুরু করে দেন। রাজউকের নীতিতে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মোট জমির ওপর "ফার (ফ্লোর এরিয়া রেশিও)" অনুযায়ী জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না।
জানা গেছে, কোনো ভবন নির্মাণে কমপক্ষে ৮ ফিটের রাস্তা থাকতে হবে। কিন্তু রাজউকের জোন ৫ এর আওতাধীন এলাকায় এমন অনেক উঁচু ভবন গড়ে উঠেছে যেখানে ৬ ফিট রাস্তাও সঠিকভাবে নেই। এর ফলে ভবিষ্যতে প্রাণহানির মতো ভয়াবহতা ও ঝুঁকি থেকে যায়। এমনকি এ ধরনের জমির মালিকরা বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মানছেন না। ইমারত নির্মাণ সম্পর্কিত গেজেটে নিয়ম-নীতি থাকলেও জমির মালিকরা তা তোয়াক্কা করছেন না। এসব ভবন নির্মাণের সময় অথবা নির্মাণের পরেও রাজউক কর্তৃপক্ষের কেউ পরিদর্শন করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মাঝে রাজউকের ইন্সপেক্টররা পরিদর্শনে এলেও এবং ভবনের মালিকদের ভুল ধরতে পারলেও তা আবার টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দিয়ে বিচারহীন থাকেন বলে একটি অভিযোগের তথ্যে উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৭৬ কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিরা বাজার-এ একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মিত হচ্ছে। এই ভবনের একপাশে কার পার্কিং এবং অন্যপাশে গ্রাউন্ডফ্লোরে সাইকেল তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে, যা কোনো প্রকার অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে জনজীবনে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি করবে। কয়েক কদম সামনে এগোলেই আরও একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দেখা মেলে - ২৯/৩০ কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিরা বাজার। এই ভবনটিতে আবাসিক ব্যবহারের অনুমোদন নিলেও ভবন মালিক এটিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার ও ভাড়া দিয়েছেন। রাজউক থেকে এই ভবনটিতে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়, কিন্তু তারপর আর কোনো প্রকার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০ নং চানখার পুল লেন, বংশাল-এ একটি ভবন নির্মাণের জন্য কোনো প্রকার অনুমোদন বা ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। এছাড়াও ৯৩ আবুল হাসনাত রোড, বংশাল, ১৭০ কবরস্থান রোড, বংশাল সহ অসংখ্য এমন ভবন রয়েছে। শানাজ আব্দুল গং, ৪৮/বি পশ্চিম রায়ের বাজার, ৫২/৩ ইন্দিরা রোড, পশ্চিম রাজাবাজার, তেজগাঁও, ২৯ খাজে দেওয়ান ২ নং লালবাগ লেন, ৩ নং খাজা দেওয়ান রোড, লালবাগ, মস রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, ১০৭/২ হাজারিবাগ আজিমপুর, ২৩৬/২ লালবাগ রোড, ১৩ এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট-এর মিসেস নাজমা গং-এর সাথে কথা বলে জানা যায় যে, অনুমোদন নেওয়ার পরে রাজউকের কোনো প্রকার ভূমিকা থাকে না এবং ইমারত পরিদর্শক পরিদর্শনেরও প্রয়োজন পড়ে না। কিসের উপরে ভিত্তি করে ভবন মালিক এই সব কথা বলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। এছাড়া ২৩/জে/২ ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কাঠালবাগান, কলাবাগান-এও অনিয়ম দেখা গেছে।
এলাকার অনেকেই বলেন, "আমরা দেখেছি, কোনো এলাকায় যদি ভবনে আগুন লাগে বা দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে রাস্তার স্বল্পতার কারণে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেই ভবনটির কাছে যেতে পারে না। যার কারণে ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়। এমনকি যদি ভবিষ্যতে কখনো ভূমিকম্প হয়, তাহলে এই বহুতল ভবন (৮/১০তলা) গুলোর অবস্থা কী হবে তা কি কেউ একবার চিন্তা করে দেখেছেন?" সমাজের সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, "যাদের চক্রান্তে আজ দেশে এ ধরনের অবৈধ ও বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেই অসাধু ব্যক্তিদের আইন মানতেই হবে। অন্যথায় তাদের জন্য প্রকাশ্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।"
আবার এমন ঢাকা শহরে, যেসব স্থানে ৭/৮ তলার বেশি অনুমোদন হয় না, সেসব স্থানে অসাধু ভবন মালিকরা ৫ তলার পরিবর্তে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ১০/১২ তলা ভবন নির্মাণ করছেন। এমনকি ৪ ফিটের রাস্তা আছে এমন স্থানেও বহুতল ভবন তৈরির গোপন রহস্য কী? ছাড়পত্র সেকশনের ব্যক্তিরা অনিয়ম করে ও ফায়দা লুটে অনায়াসে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে কিভাবে? অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা দরকার।
এলাকার অনেক সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, "মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে খেলা করার অধিকার কারোর নেই। তাই দুর্নীতিবাজ ভবন মালিক, প্রকৌশলী, কন্ট্রাক্টরদের প্রতি সংশ্লিষ্ট রাজউকের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি রাখা উচিৎ। এখনই সময় এসেছে।" আরও জানা গেছে, অনেক অসাধু জমির মালিকেরা গোপনে রাজউকের কর্মীদের সহায়তা ও অনৈতিক সখ্যতার মাধ্যমে ভবন নির্মাণে অনিয়ম করছেন।
মন্তব্য আছে, ভবিষ্যতে এই সব ভবনে বসবাসরত মানুষের প্রাণের ঝুঁকি থেকেই যায়। দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও তখন আর এগুলো দেখার বা জবাবদিহিতা কারোর কাছে থাকছে না। জনমনে প্রশ্ন থেকেই যায় এতো অনিয়মের সমাধান কোথায়? অনিয়ম প্রমাণের পরেও বিচারহীন কিভাবে থাকছে? কোন অপশক্তির বলে নতুন-পুরাতন অবৈধ ভবন নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে? কোন ক্ষমতাধরদের অবৈধ কালো হাতের ইশারায় আড়ালে চলছে অবৈধ ভবন নির্মাণ? আর কতকাল এই অনিয়মের জয়জয়কার চলবে? আদৌ যদি অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে অবৈধ ভবনের ছড়াছড়ি কেন? এসব কথা কি নিছক আলাপ, নাকি প্রলাপ?
এই সকল উল্লেখিত ভবন সম্পর্কিত বিষয়ে জোন ৫ এর পরিচালক হামিদুল ইসলাম 'সকালের সময়'কে বলেন, প্রতিটি ভবনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তিনি তার অথরাইজ অফিসার, সহকারী অথরাইজ অফিসার এবং ইমারত পরিদর্শককে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলেছেন।
এমএসএম / এমএসএম

সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে

রাজধানীর গুলিস্তানে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে আগুন

স্টেডিয়াম এলাকায় সেনাবাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান

তুরাগে রাজউকের খালি প্লট দখলের অভিযোগ সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে

ই-কমার্স খাতে বিশেষ অবদানের জন্য বাফেসাপ আইকনিক অ্যাওয়ার্ড পেল ই-ক্রয় ডটকম

পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় নারীর অংশগ্রহণ শীর্ষক আলোচনা সভা

জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্র পরিষদের আলোচনা সভা

বাড়তি টাকা দিলে কাগজপত্র ছাড়াই বাসায় পৌঁছে যায় ট্রেড লাইসেন্স

অডিট আপত্তির ভিত্তিতে রেলওয়ে মহাপরিচালকের অপসারণ বেআইনি : রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি

জুলাই সনদের দাবি নিয়ে শাহবাগ অবরোধ

আড়াইহাজারে বিএনপি'র অফিসের ভাড়া চাওয়ায় ঘর মালিককে হত্যা

ডেমরায় জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কর্মসূচি
