ঢাকা সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

টেকনাফে মাদক সাম্রাজ্য: কাদের নিয়ন্ত্রণে ভয়ংকর চোরাচালান চক্র


শাহেদ ফেরদৌস হিরু photo শাহেদ ফেরদৌস হিরু
প্রকাশিত: ১-৯-২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

বাংলাদেশের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ বর্তমানে মাদক, অস্ত্র, মানবপাচার এবং চোরাচালানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পাহাড়, সমুদ্র, নদী ও বৈচিত্র্যময় সীমান্ত এলাকার সুবিধা কাজে লাগিয়ে একাধিক সুসংগঠিত সিন্ডিকেট এই ভয়ঙ্কর সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও সিন্ডিকেটগুলো আরও শক্তিশালী ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফের ৩০টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, আইস এবং বিভিন্ন ধরনের মারণাস্ত্র প্রবেশ করছে। এই চোরাচালানে জড়িত রয়েছে চিহ্নিত অস্ত্রধারী মাদক কারবারী, রোহিঙ্গা, রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং জনপ্রতিনিধিরা। অভিযোগ রয়েছে যে, কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও তাদের সোর্সও এসব অবৈধ কার্যক্রমে সহায়তা করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না, কারণ প্রতিবাদ করলে গুম বা মিথ্যা মামলার শিকার হওয়ার ভয় থাকে।

প্রশাসনের তৈরি করা একটি তালিকা থেকে জানা যায়, কারা বর্তমানে এই মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। অনুসন্ধানের প্রথম পর্বে কিছু মাদক ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট, তাদের অস্ত্রের ব্যবহার ও সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে।

শাহপরীর দ্বীপ ও সাবরাং এলাকার নিয়ন্ত্রণকারীরা:

শাহপরীর দ্বীপের মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন সাবরাং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মান্নান, যিনি স্থানীয়ভাবে 'ইয়াবা সম্রাট' হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ফজল হক প্রাক্তন হলেও তার প্রভাব এখনো অটুট। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তিনি ফিশিং ট্রলার, জমি ও বাড়িসহ প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এছাড়া, ৮নং ওয়ার্ডের দেলোয়ার ডাকাত তার শক্তিশালী অস্ত্রধারী বাহিনীর মাধ্যমে নৌপথে ইয়াবা ও অস্ত্র আনেন।

মুন্ডার ডেইল ও আলীর ডেইল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করেন সাবরাং ১নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন দানু ও বিএনপি নেতা বাইট্টা মার্কিন। দানুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং তার নামে-বেনামে প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ আছে। বাইট্টা মার্কিনও মাদকের টাকায় কক্সবাজার শহরে ফ্ল্যাট, নিজ এলাকায় বাড়ি এবং বিভিন্ন স্থানে জমি কিনেছেন।

নাইট্টং পাড়া সীমান্তে সক্রিয় একটি মাদক চক্রের মূল নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন সাবেক জনপ্রতিনিধিরা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন গুরা মিয়া, সাবেক কমিশনার শাহআলম, সাবেক কমিশনার দুলু, মো. ইকবাল ও সরওয়ার। এদের মধ্যে গুরা মিয়ার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তার প্রায় ১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে এবং ভারী আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথাও জানা গেছে।

টেকনাফ সদর ও বাহারছড়ার মাফিয়ারা:

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের তুলাতলী সীমান্তে মাদক ও মানবপাচার নিয়ন্ত্রণ করেন কাদের ও আব্দুল আজিজ। কাদেরের বিরুদ্ধে মানবপাচারসহ একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি অবৈধ টাকায় বিলাসবহুল বাড়ি ও জমি কিনেছেন। আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে এবং তার মেরিন ড্রাইভে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।

বাহারছড়া ঘাট, লম্বরী ঘাট, মহেশখালীয়া পাড়া ঘাট ও খুরের মুখ নৌ ঘাট পর্যন্ত মাদক নিয়ন্ত্রণ করেন জাফর প্রকাশ বেজি জাফর, জসিম, মাহমুদুল হক, আজিজুল হক প্রকাশ আরজু, গোদার বিল এলাকার মো. কাশেম ও তার ভাই ছৈয়দ কাশেম, সেবর আলম। একটি সূত্র জানিয়েছে, এদের প্রত্যেকের কাছেই অবৈধ অস্ত্র রয়েছে এবং প্রায় ৫০ জনের একটি অস্ত্রধারী সিন্ডিকেট তাদের হয়ে মাদক কারবার ও মাদক ছিনতাই করে থাকে।

জিরো পয়েন্ট ও অন্যান্য এলাকার চক্র:

টেকনাফের জিরো পয়েন্ট ও সাবরাং বাজারকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায় সক্রিয় রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র, যার মধ্যে রয়েছেন মো. ইসমাইল, একরাম এবং শমসু মেম্বার। শমসু মেম্বারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও কোটি টাকার সম্পদ থাকার অভিযোগ রয়েছে। একই চক্রের সদস্য মো. একরামের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে এবং তার ৩০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার কথা জানা গেছে।

কোস্ট গার্ডের সোর্স মিজানকে টেকনাফের বাসিন্দারা অস্ত্র ও ইয়াবার অঘোষিত গডফাদার হিসেবে চেনেন। তিনি টেকনাফের কেরুনতলী সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করেন এবং মিয়ানমার থেকে মাদক ও আধুনিক অস্ত্র (একে-৪৭, জি থ্রি রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তল) নিয়ে এসে সন্ত্রাসী ও মাদক সম্রাটদের কাছে সরবরাহ করেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও তিনি কোস্ট গার্ডের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন হ্নীলা রঙ্গিখালীর শাহ আজম সরকার, যিনি মাদকের টাকায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন এবং ১৫ জনের একটি অস্ত্রধারী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। লেদার জাহাঙ্গীর রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে মাদক ব্যবসা করে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে দুদক মামলাও করেছে। হ্নীলা ৮নং ওয়ার্ডের নুরুল হুদা মেম্বার ইয়াবা বেচে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, যার বিরুদ্ধেও দুদক মামলা করেছে।

হ্নীলার বিভিন্ন সীমান্তে ভয়ংকর মাদক সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। এসব পয়েন্টের প্রায় প্রতিটিই মাদক পাচারের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এসব কারবারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন হ্নীলা পূর্ব সিকদার পাড়ার বিএনপি নেতা আতর সাইফুল, হ্নীলা ২নং ওয়ার্ডের বেলাল মেম্বার, কোনার পাড়ার রমিজ উদ্দিন, ওয়াব্রাংয়ের মোস্তাক, সেলিম ও নওশেদ, ঝিমংখালীর মামুন, কানজর পাড়ার জামাল, সাদ্দাম হোসেন, মৌলভীবাজারের বেলাল মেম্বার ও সাদ্দাম, নুরুল হুদা মেম্বার, হোয়াইক্কং নয়া বাজারের শমসু উদ্দিন এবং উনচিপ্রাং বাজারের আনোয়ার।

দমদমিয়া সীমান্তের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন আইয়ুব নামের এক ব্যক্তি, যিনি মাদকের গডফাদার হিসেবে পরিচিত। এইসব চক্র শুধু মাদক পাচারই করছে না, বরং মিয়ানমারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাঠিয়ে বিনিময়ে মাদক এনে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলা এই ব্যবসা বন্ধে এখনও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেই। বরং অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের সহায়তায় এই চক্র আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন জানান, পুরাতন মাদক গডফাদারদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে এবং নতুন ও পুরাতন মাদক গডফাদারদের মিলিয়ে প্রত্যেকের জন্য আলাদা প্রোফাইল তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তাদের গতিবিধি নজরদারির মধ্যে রাখা যায়।

এমএসএম / এমএসএম

ধামইরহাটে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

বিজয়নগরে আসামী গ্রেফতার করায় অতর্কিত হামলায় এএসআই শেখ সাদী আহত

টেকনাফে মাদক সাম্রাজ্য: কাদের নিয়ন্ত্রণে ভয়ংকর চোরাচালান চক্র

হিট প্রজেক্ট প্রাপ্ত যবিপ্রবির জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের দুই শিক্ষককে সংবর্ধনা প্রদান

রাণীনগরের সেই শিক্ষক আনোয়ারকে সাময়িক বরখাস্ত

মাদারীপুরে ১৮০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ১৬ জন

টাঙ্গাইলে ৩৩১২ প্রার্থী থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে ১২০ টাকায় ৫০ জনের পুলিশে চাকরি

উত্তরবঙ্গ সেচ্ছাসেবী সংগঠনের অফিস উদ্বোধন

নতুন শপথের মাধ্যমে বরগুনায় বিএনপি'র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

শ্রীনগরে রেলওয়ে আন্ডারপাস থেকে নারীর কাটা লাশ উদ্ধার

হাটহাজারীতে জশনে জুলুছ উদযাপিত

গলাচিপায় প্রকল্প বিষয়ক অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত

বাউফলে ড. মাসুদের প্রচেষ্টায় মুক্তি পেল ৩ ইউনিয়নবাসী