চা-বাগানের কুঁড়ে ঘর থেকে আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক:কবি সংগীতা বোনার্জীর সংগ্রাম ও সফলতার গল্প
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের নূরজাহান চা-বাগানের এক ছোট কুঁড়ে ঘরে জন্মেছিলেন এক মেয়ে। নাম তাঁর সংগীতা বোনার্জী। পিতা শ্যামল বোনার্জী, চা কোম্পানির গাড়িচালক; মাতা রাসমণি বোনার্জী, গৃহিণী ও প্রাক্তন চা শ্রমিক। দরিদ্রতা ছিল নিত্যসঙ্গী, তবু সেই অভাবই যেন গড়ে দিয়েছে এক অন্য মানুষকে—একজন কবি, শিক্ষিকা ও সংগ্রামী নারীকে।
মাত্র সাত মাস বয়সে বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারটি চলে আসে বিদ্যাবিল চা-বাগানে। সেখানেই কেটেছে সংগীতার শৈশব ও কৈশোর। বাবার একার উপার্জনে সংসার চলতো টানাটানিতে। কখনো বই-খাতার অভাব, কখনো কেরোসিনের বাতির আলোয় পড়াশোনা—তবু থেমে থাকেননি তিনি। চা-বাগানের নির্জন চাঁদরাতে লিখেছেন কবিতা, মাটির ঘরের ম্লান আলোয় বুনেছেন স্বপ্ন।
সংগীতা বলেন,ছোটবেলা থেকেই লিখতাম। স্কুলে পড়াকালীন সময়েই কবিতার প্রতি ভালোবাসা জন্মে। লেখাই ছিল আমার আশ্রয়।
শ্রমজীবনের কষ্টই দিয়েছে শক্তি
সংগীতার বাবা এখন অবসরপ্রাপ্ত। ছোট ভাই পড়াশোনা করছে। সংসার সামলায় ভাই। সংগীতা নিজেও একসময় শ্রমিকের কাজ করেছেন চা-বাগানে।
'আমি নিজে শ্রমিকের কাজ করেছি, জানি কেমন কষ্টে দিন কাটাতে হয়। সেই কষ্টই আমাকে শক্ত করেছে,” — বললেন তিনি।
পরবর্তীতে বিয়ে হয় রাজঘাট চা-বাগানের এক কর্মচারীর সঙ্গে। স্বামীও তাঁর পাশে থেকেছেন প্রতিটি পদক্ষেপে। সংগীতা বলেন,
> “আমার এই স্বর্ণজয়ী সফলতা আমার স্বামীর ত্যাগ আর ভালোবাসার ফল। উনি আমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। প্রতিটি নারীর জীবনে এমন সঙ্গী থাকলে তারা নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।
অবিরাম লড়াই, অবশেষে জয়
বর্তমানে সংগীতা রাজঘাট চা-বাগানে বসবাস করেন। তিনি একজন শিক্ষিকা, পাশাপাশি ডিপার্টমেন্ট অফ আর্কাইভস অ্যান্ড লাইব্রেরি–র অন্তর্ভুক্ত সরকারি লেখক, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক এবং লালন সাহিত্য পরিষদ–এর শিশু বিষয়ক সম্পাদক।
তাঁর সাহিত্যচর্চার পথ মোটেও সহজ ছিল না। জীবনের একপর্যায় বিনা বেতনে চাকরি, অসুস্থতা ও আর্থিক সংকটে পথ প্রায় থেমে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি।
'জীবনের কষ্টই আমাকে আরও দৃঢ় করেছে,” — বললেন সংগীতা।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতি
২০২৫ সালে ঢাকার মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সার্ক শীর্ষ মানবাধিকার সম্মেলনে কবিতা ও সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সংগীতা পান আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক ও মর্যাদাপূর্ণ ‘সার্ক কবি ও সাহিত্যিক–২০২৫’ সম্মাননা।
এর আগেও তিনি জাতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদসহ একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
চা-বাগানের মেয়েদের অনুপ্রেরণা
স্থানীয়ভাবে এখন সংগীতা তরুণদের প্রেরণার প্রতীক। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে দেখে নতুন স্বপ্ন বুনছে। শিক্ষক ও সাহিত্যপ্রেমীরা বলছেন, সংগীতার সাফল্য প্রমাণ করেছে—মেধা, অধ্যবসায় ও ইচ্ছাশক্তির কোনো বিকল্প নেই।
সংগীতা বলেন,
'এই স্বর্ণপদক শুধু আমার নয়—এটি আমার মা-বাবার ঘাম, স্বামীর ত্যাগ, আর সমাজের বিশ্বাসের প্রতীক। আমি চাই, চা-বাগানের প্রতিটি মেয়ে জানুক—তারাও পারে।”
একসময় যে মেয়ে চা-বাগানের সরু পথে হাঁটতেন হাতে বই নিয়ে, আজ তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। চা-বাগানের সেই কুঁড়ে ঘর থেকে শুরু হওয়া যাত্রা আজ আলো ছড়াচ্ছে দেশজুড়ে।
সংগীতা বোনার্জীর এই স্বর্ণপদক এখন আর শুধু একটি পদক নয়—এটি এক সংগ্রামী নারীর জীবনের প্রতীক, যা শেখায়—স্বপ্ন বড় হলে পথ কখনোই বন্ধ থাকে না।
এমএসএম / এমএসএম
জামায়াত যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল ভারতের বিরুদ্ধে : আমির হামজা
বিজয় দিবসে কসবা কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির পুষ্পস্তবক অর্পণ
যথাযথ মর্যাদায় বোদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন
পাবিপ্রবিতে ক্লিন ক্যাম্পাস কর্মসূচি, নিজেদের ক্যাম্পাস পরিষ্কার করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা
যথাযথ মর্যাদায় পাবিপ্রবিতে মহান বিজয় দিবস উদযাপন
আত্রাইয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা
রৌমারীতে ১৬ ডিসেম্বর ৫৫তম মহান বিজয় দিবস পালিত
বিজয় দিবসে শহিদদের প্রতি জেলা পুলিশের শ্রদ্ধাঞ্জলি
আমরা চাই একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা - তাসভীর উল ইসলাম
শেরপুরের গারো পাহাড়ে ভিডিও করতে গিয়ে বন্য হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু
রাজস্থলী তে যথামর্যাদায় নানা আয়োজনের মহান বিজয় দিবস পালিত
নাঙ্গলকোট রায়কোট উত্তরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া