ঢাকা বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫

মনপুরা উপকূলে আজও দগদগে ৭০ এর ১২ নভেম্বর


মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, মনপুরা photo মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, মনপুরা
প্রকাশিত: ১২-১১-২০২৫ দুপুর ৩:১১

আজ ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা এই ভূখণ্ডে আঘাত হেনেছিল শক্তিশালী একটি ঘূর্ণিঝড়। যার নাম ছিল ‘ভোলা সাইক্লোন’। সেই আঘাতে হাজারো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়-প্রাণহানি ঘটে। অসংখ্য গৃহপালিত ও বন্য পশু মারা যায়। নষ্ট হয় কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি।লন্ডবন্ড হয়ে যায় ঘরবাড়ি, জীবন ও জনপদ। সেদিন মনপুরা দ্বীপের মানুষের মৃত্যুর মিছিলে কেঁদেছিল সারা বিশ্ব। সেই বন্যায় জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর কেউ কেউ বেঁচে আছে। যারা তখন তরুণ ছিলেন, তারা এখন বৃদ্ধ। মনের মধ্যে দগদগে এই দিনটিকে এখনো আতঙ্কে বয়ে বেড়ান মনপুরা উপকূলে বসবাসরত সেসব মানুষ। এই উপকূলে আজও এই দিনটিকে মনে করে।

মনপুরা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোঃ শামসুদ্দিন আহমেদ মোল্লা এর নির্দেশনায় উপজেলা যুবদলের উদ্যোগে আজ ১২ নভেম্বর উপকূলীয় ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় পালিত হয় ‘উপকূল দিবস’। 

১৯৭০-এর ১২ নভেম্বরের প্রলয়ঙ্করী ‘সাইক্লোন’ প্রাণহানি ঘটিয়েছিল প্রায় কয়েক হাজার মানুষের। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখণ্ডে রেকর্ড করা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ।

আবহাওয়া তথ্য সূত্রটি বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হয়। ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটারে পৌঁছায়। সেই রাতেই উপকূলে আঘাত হানে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপগুলো প্লাবিত হয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল ভোলার তজুমদ্দিন থানা ও মনপুরা থানা দ্বীপে । সেখানকার ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। মনপুরা দ্বীপসহ চর গুলোর বহু এলাকার ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়। উপকূল অঞ্চলের বহু এলাকা মানবশূন্য জনপদে পরিণত হয়। ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসেন ঢালচর, তজুমদ্দিন, চর কচ্ছপিয়া, চর পাতিলা, মনপুরা, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। ধ্বংস হয় কোটি কোটি টাকা মূল্যের পশু, মৎস্য, ফসল, রাস্তা, কালভার্ট, বাড়িঘর, স্কুল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর উপকূলবাসীর জন্য স্মরণীয় দিন। তারা ভুলে যাননি, সেইসব দিনগুলোতে যারা হারিয়েছেন তাদের স্বজন। ঘরের মেঝেতে বসে সেই মা আজও সারারাত কাঁদেন, সেদিন তার সন্তানকে হারিয়েছে। এই দিন আসলেই চোখের ঘুম চলে যায় সেসব বোনের, যার চোখের সামনে দিয়েই জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নিয়েছিল তার একমাত্র আদরের ছোট ভাইটিকে।

ভোলার মনপুরা উপজেলায় চর ফৈজউদ্দিন গ্রামের বাসিন্দা কাদের মিয়া। ১৯৭০ সালে তার ঠিকানা ছিল ভোলার মনপুরা দ্বীপে । এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে কেঁদে ফেলেন কাদের মিয়া । 
তিনি বলেন, ‘নিজের ভাইয়ের লাশটা সেদিন টোগাই পাইনো, তয় শত শত লাশ মাডিচাপা দিছি হেই বোইন্যায়। কতো মানুষ যে পাগলের নাহান (মতো) তাগোর স্বজনগুলারে খোজ্জে (খুঁজছে) সেই দিনের কতা কই (বলে) বুঝান যাইতো (যাবে) না। মনে হইছে যেন কোনো কেয়ামতের মাঠ।’ 

এখনো অরক্ষিত মনপুরা উপকূল। তাছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মনপুরা উপকূলীয় জীবনযাত্রা। উপকূলীয় মানুষের জীবনধারার উন্নয়ন, সংকটের উত্তরণ এবং সম্ভাবনাময় উপকূলকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশীদার করা এখন সময়ের দাবি। এসব কারণে হলেও একটি উপকূল দিবস ঘোষণা প্রয়োজন বলে মনে করছেন উপকূলে বসবাসরত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। 

এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোঃ শামসুদ্দিন আহমেদ মোল্লা জানান, দেশ, মানুষ, সরকার, রাজনীতি, সমাজনীতিকে কেন্দ্র করে হাজারটা দিবস পালনের রেওয়াজ থাকলেও উপকূলের জন্য আজও ঘোষিত হয়নি কোনো বিশেষ দিবস। রাষ্ট্রীয় অনেক আয়োজিত দিবসগুলোর মতোই উপকূলবাসীর জন্য একটি দিবসের আয়োজন এখন সময়ের দাবি। তিনি আরও জানান, "৭০ এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লক্ষ নিহতদের স্মরণে উপকূলের সমস্যা, সংকট, সম্ভাবনা এবং উপকূলের মানুষের ন্যায্যতার দাবিতে ১২ নভেম্বর " উপকূল দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে মনপুরা উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা হারুন বলেন, অন্তত একটি দিনকে কেন্দ্র করে হলেও দেশের সরকার, সুশীল সমাজ, মিডিয়া ও উন্নয়ন সংগঠনগুলোর নজর পড়তে পারে দুঃখগাঁথা উপকূলের দিকে। আর ১৯৭০-এর ১২ নভেম্বরের প্রলয়ঙ্করী ভোলা সাইক্লোনকে স্মরণ করে উপকূলবাসীর জন্য সবচেয়ে শোকের দিন হিসেবে পরিচিত ১২ নভেম্বর হতে পারে ‘উপকূল দিবস’। 

এত দিবসের ভিড়ে উপকূলের জন্য একটি পৃথক দিবস প্রসঙ্গে ‘ জোবায়ের হাসান রাজিব বলেন, মনপুরা উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত বহুমুখী দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করেন। কেবল দুর্যোগ এলেই এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খবরাখবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বাভাবিক সময়েও তাদের জীবন যে কতোটা অস্বাভাবিক, সে বিষয়ে খুব একটা খোঁজ রাখা হয় না। উপকূলের দিকে গণমাধ্যম ও নীতিনির্ধারকদের নজর বাড়িয়ে উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ঘটানোই উপকূলের জন্য একটি দিবস প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য।
উপকূল দিবসের যথার্থতা প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে এমন একটা দিন উপকূলবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেদিন সবাই মিলে একযোগে বলবে উপকূল উন্নয়নের কথা। ১২ নভেম্বর দিনটির ইতিহাস উপকূলের অসংখ্য মানুষের জীবনের পাতায়। দিনটির ভয়াল সেই ছবি এখনো চোখ ভাসিয়ে দেয় চিরতরে স্বজন হারা হাজারো মানুষের। তাছাড়া অক্টোবর-নভেম্বরের এই মৌসুমটাতেই বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এইসব বিবেচনায় ১২ নভেম্বরই হোক ‘উপকূল দিবস’। শুধু বাংলাদেশে জন্যই নয়, এই দিনের ভয়াবহতা স্মরণে বিশ্বের কাছে দাবি করা উচিত দিনটিকে ‘ওয়ার্ল্ড কোস্টাল ডে’ হিসেবে ঘোষণার।

এমএসএম / এমএসএম

পটুয়াখালীর ৭০'-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের ৫৫ বছর আজ, উপকূলের মানুষ আজও বয়ে বেড়াচ্ছে সেই দুঃসহ স্মৃতি

কুড়িগ্রাম ৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী তাসভীর উল ইসলামের প্রচারণা

পি আর বাস্তবায়ন না হলে জনগনের অধিকার ফিরে আসবে না মহম্মদপুরের জনসভায় এম বি বাকের।

মাধবপুরে রাতভর অবৈধ বালু পাচারবিরোধী অভিযান

ধামইরহাটে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পানি ও বর্জ্য ব্যস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতামুলক স্কুল ক্যাম্পেইন

বিএনপির নেতা ফরহাদ আর নেই

কুড়িগ্রাম -১ আসনে এনসিপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহফুজুল ইসলাম কিরণ

রাজশাহীতে নারী নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে সভা অনুষ্ঠিত

বাঘা বাজারে চুরি আটক ৫

বেনাপোলে হাকর নদীরপাড় থেকে ছেলে নবজাতক উদ্ধার

জয়পুরহাটে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২৯ নভেম্বর ভোট

বিজয়নগরে গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়েছে দুবৃর্ত্তরা

মনোহরগঞ্জে নাশকতার মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার