কার্গো ভিলেজ এখনও ধ্বংসস্তূপ: অভিযোগ উঠেছে সংস্থা গুলোর সমন্বয়হীনতার নিয়ে
হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এলাকা এখনো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে আছে। দৃশ্যমান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরসন কিংবা কার্যক্রম সচল করার উদ্যোগে ধীরগতি এগুচ্ছে বেবিচক কর্তৃপক্ষ বলে গুঞ্জ উঠেছে সর্ব মহলে।
গত ১৮ অক্টোবর দুপুরে কার্গো ভিলেজে আগুন লেগে পুড়ে যায় আমদানি করা মালপত্রের বড় অংশ। আগুন নেভানোর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গুলি কার্গো হাউসের স্ট্রং ভল্টে রেখে সিলগালা করে নজরদারিতে রাখা হয়। এ কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থেকে সেই আগ্নেয়াস্ত্র চুরি ঘটনা ঘটেছে। যা প্রকাশ পায় গত ২৮ অক্টোবর। পরপর দুটি ঘটনায় সর্ব মহলে প্রম্ন উঠেছে ঘটনাগুলো কি কাকতালীয় নাকি অন্য কিছু।
এদিকে একধিক সূত্র বলছে , দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক সংস্থা গুলো —বেবিচক (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও কাস্টমস- দায় সারা জবাবে আঙুল তুলছে পরস্পরের দিকে । দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজে দীর্ঘ ২৭ ঘণ্টার অগ্নিকাণ্ডে শত শত কোটি টাকার পণ্যদ্রব্য পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় পদক্ষেপ নিতে দেরি হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে বেবিচকসহ দুই সংস্থা কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএন্ডএফ নেতা বলেন,আগুন লাগার পর প্রায় ৪৫ মিনিট পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়াও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আগুন নিভানোর কাজে যোগ দেন প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পরে। দ্রুত পদক্ষেপ নিলে হয়তো বেঁচে যেতো শত শত ব্যবসায়ীর পণ্য দ্রব্য। যদিও ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে ১৪ হাজার কোটি টাকা বলা হচ্ছে। তবে প্রকৃত ক্ষতি আরও অনেক বেশি।
অগ্নিকাণ্ডে বহু ব্যবসায়ীর স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে। এক গার্মেন্টস উদ্যোক্তা বলেন, আমাদের কয়েক কোটি টাকার ইকুইপমেন্ট ছিল, যা বাংলাদেশে প্রথম আমদানি করা হয়েছিল। সব শেষ হয়ে গেছে। এটা পুনরুদ্ধার করা এখন প্রায় অসম্ভব।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস (বলাকা) ও ঢাকা কাস্টমস—এই তিন সংস্থারই নিজস্ব নিরাপত্তা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও জনমনে বড় প্রশ্ন উঠেছে তাদের কার্যকারিতা নিয়ে। তাঁদের কি কাজ ছিল।
এছাড়াও বেবিচকের নিজস্ব অত্যাধুনিক ফায়ার কন্ট্রোল বিভাগ আছে। আগুন লাগার সময় কার্গো ভিলেজের কর্মীরা বারবার ফায়ার স্টেশনে সাহায্যের জন্য কল করলেও ফায়ার টিম কোন কর্ম দক্ষতা দেখাতে পারে নি। যদিও ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার স্টেশন মাত্র ৩০০ মিটার দূরে ছিল। আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে অগ্নি নির্বাপনে অত্যাধুনিক পোশাক থাকার কথা সেটাও দেখা যায় নি। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ কর্মীদের সাপোর্ট না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতে দেরি হয়েছে বলে আক্ষেপ করে বলেছেন এক রপ্তানিকারক। তিনি আরও বলেন ফায়ার কন্ট্রোলের গাড়ি নষ্ট নাকি যোগ্য জনবল না থাকায়, এতো বড় ক্ষতি রোধ করতে ব্যর্থ্য হয়েছে বেবিচক।
এবিষয়ে ফায়ার কন্ট্রোল বিভাগের কর্মকর্তা আবু সালেহ মোঃ খালেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে কোন উত্তর মেলেনি।
একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে সংস্থাগুলোর ভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এক সংস্থা বলছে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে, অন্য সংস্থা বলছে ধাতব পদার্থের অতিরিক্ত তাপে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছিল। স্কাই ক্যাপিটাল কোম্পানির দক্ষিণ পাশের এলাকা থেকে।
বেবিচক জানিয়েছে, তাদের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন কয়েক দিনের মধ্যে জমা দেওয়া হবে।
এদিকে তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এখনো পরিষ্কার করা হয়নি। ভেতরে পোড়া মালামাল, কালো হয়ে যাওয়া দেয়াল ও গলিত পণ্য পড়ে আছে আগের মতোই। শ্রমিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, এবং কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম সাময়িকভাবে অন্য অংশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বেবিচক বলছে, ভবনের মালিকানা তাদের হলেও কার্যক্রমের দায়িত্ব ছিল বিমানের ও কাস্টমসের হাতে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বলছে, কার্গো ভিলেজে জমে থাকা ‘অমুক্ত পণ্য’ অপসারণের দায়িত্ব কাস্টমসের।আমরা চিঠি দিয়েছে পণ্য অপসারণের জন্য। কাস্টমস তা করেনি।
অন্যদিকে কাস্টমস বলছে, তাদের কাজ শুধু শুল্ক আদায়—অগ্নিনিরাপত্তা বা পরিষ্কার কার্যক্রম বেবিচক ও বিমানের দায়িত্ব। পণ্য সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিমান যে চিঠি দিয়েছিল বিমানকে তার জবাব কাস্টমস দিয়েছে।
এই দায় এড়ানোর প্রবণতার কারণে এখনো কোনো সমন্বিত পদক্ষেপ দেখা যায়নি। খোলা আকাশের নিচে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পণ্য পড়ে থাকায় বিপাকে ব্যবসায়ীরা।
তাঁরা বলছেন, কার্গো ভিলেজের স্থবিরতা ইতিমধ্যেই রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে বড় ধাক্কা দিয়েছে। বিশেষ করে দ্রুত নষ্ট হওয়া পণ্য—ফলমূল, ফার্মাসিউটিক্যাল ও পোশাক শিল্পের স্যাম্পল—আটকে আছে বিভিন্ন পর্যায়ে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, বিমানবন্দরের এই জটিলতা দূর করতে বিলম্ব হলে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা কমে যেতে পারে।
বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অগ্নিকাণ্ডের পর তিন সপ্তাহে ধ্বংসস্তূপ না সরানো প্রশাসনিক অদক্ষতার বড় উদাহরণ। একে নিঃসন্দেহে ‘ফায়ার ম্যানেজমেন্ট ফেইলিউর’ বলা যায়। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে তদন্তটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, বহুমুখী ভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত। “এ ঘটনা শুধু ব্যবসায়িক ক্ষতি নয়, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় দুর্বলতাকেও প্রকাশ করেছে। প্রশাসন যদি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তবে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।”
এমএসএম / এমএসএম
কার্গো ভিলেজ এখনও ধ্বংসস্তূপ: অভিযোগ উঠেছে সংস্থা গুলোর সমন্বয়হীনতার নিয়ে
সময় টেলিভিশনের নামে ৫ কোটি টাকার মানহানি মামলা, তদন্ত পেল সিআইডি
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে এএসআই গোলাম রসুলের উদ্যোগে মাদকবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম
বাড্ডায় গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত
নতুন জমি অধিগ্রহণে ডেমরাবাসীর আপত্তি ও মানববন্ধন
'শয়তানের নিশ্বাস' প্রয়োগে অর্থ ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের মূলহোতা মালামালসহ রূপনগর থানায় গ্রেপ্তার
বনানী আবাসিক এলাকায় রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান
সূত্রাপুরে গুলিতে নিহত মামুনের খুনের মাস্টার মাইন্ড শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন, নিহত পরিবারের দাবী
শেরেবাংলা নগরে এশিয়ার পঞ্চম বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন
ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে বাসে আগুন
জিয়া পরিবারের আদর্শ ধরে রাখতে জীবন দিতেও পিছু হটবো না: এস এম জাহাঙ্গীর
পুরান ঢাকায় ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ১