আ’লীগের ঘাঁটি শান্তিগঞ্জে অস্তিত্ব সংকটে বিএনপি

রাজনীতির উর্বর ভূমি সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা। উপজেলাটি সুনামগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হওয়ায় এর রাজনীতি, কৃষ্টি- কালচারের দিকে সব মানুষের নজর একটু বেশিই। এক সময় এ উপজেলায় বেশ দাপট ছিল আওয়ামী লীগ, বিএনপি দু‍ই দলেরই। তবে সময়ের পরিক্রমার রাজনৈতিক চিত্র পরিবর্তন হয়েছে এই উপজেলায়। এক সময়ের অবহেলিত এই উপজেলা এখন উন্নয়নের আলোয় আলোকিত। আগে এই অঞ্চলের মানুষ যা কল্পনাই করতে পারেনি, তার বাস্তবায়ন হচ্ছে এখানে। ফলে রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে শান্তিগঞ্জ৷ 

সময়ের পরিক্রমায় বিএনপি জৌলুস হারাতে বসলেও এখানে শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের নিজ আসন হওয়ায়  আওয়ামী লীগের দাপট এখানে একচেটিয়া। টানা শাসন ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবমান উন্নয়নে কাজ করায় এবং দেশের যে কোনো সংকটে মানুষের পাশে থাকায় জনগণের আস্থার প্রতীক হয়েছে উঠেছে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দলীয় কোন্দল, সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় এবং দুর্যোগ-দুর্ভোগে মানুষের পাশে না থাকায় ইতোমধ্যেই এই উপজেলায় বিএনপি জনআস্থা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, সুবিধাবাদী নেতাদের আগমন আবির্ভাবসহ নানা কারণে নেতাকর্মীদের কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় হওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে বিএনপির। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যকর না থাকায় নেতৃত্ব শূন্যতায় বিএনপি। এখন জনআস্থা অর্জন করে পুরনো জৌলুসে ঘুরে দাঁড়ানোই বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে এসব কথা মানতে নারাজ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশীদ আমিন। তিনি বলেন, আমরা মানুষের পাশেই আছি। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছি। করোনা দুর্যোগে মানুষের পাশে ছিলেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোকালীন আমরা দলীয়ভাবে ত্রাণ বিতরণ করেছি৷ এছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ নিয়ে মানুষের পাশে আছি।

তবে তার এসব কথার সাথে অসঙ্গতি প্রকাশ করেছেন খোদ সাধারণ জনগণই। তারা বলছেন, বিএনপি আছে কি-না সেটাই তো আমরা জানি না। এত দুর্যোগ, দুর্বিপাক গেল; তাদের তো দেখাই মিলল না। তাদের আছে শুধু কথার ফুলঝুরি, আর কিছু নেই।

এদিকে শান্তিগঞ্জে আ’লীগের রাজনৈতিক পটভূমি ভিন্ন। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আ’লীগের হাল ধরতেই প্রাণের সঞ্চার ঘটে আ’লীগের রাজনীতিতে। মন্ত্রীকে ঘিরে উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মীরা। সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের কার্যক্রমে প্রাণবন্ত তারা। পরিকল্পনামন্ত্রীর নির্দেশে উপজেলার প্রতিটি জায়গায় উন্নয়নের বার্তা নিয়ে পদচারণা করছেন দলের নেতাকর্মীরা। যেখানে যা প্রয়োজন তাই করছে এই সরকার। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন শুধুই এই আ’লীগের নাম। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে দলটি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দলীয় কার্যক্রম ও রাজনৈতিক চর্চা থাকায় আওয়ামী লীগের অবস্থান শক্ত। এই সরকারের হাত ধরে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে শান্তিগঞ্জে। মানুষের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করায় মানুষের বিশ্বাসের জায়গা দখল করেছে দলটি। বিশেষ করে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ শান্তিগঞ্জ আ‘লীগ।

এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রীর একান্ত রাজনৈতিক সচিব ও উপজেলা আ’লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক হাসনাত হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আলহাজ এমএ মান্নান এমপি মহোদয়ের রাজনীতিতে আগমনে এ অঞ্চলে আওয়ামী রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। অবহেলিত এ অঞ্চলকে সমতায় নিয়ে আসার জন্য মন্ত্রী মহোদয় জননেত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করছেন। তাই এ অঞ্চলের মানুষ আওয়ামী লীগকে সাদরে গ্রহণ করেছে এবং এটি এখন আওয়ামী লীগের উর্বর ভূমি।

দুই দলের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে কথা হলে উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সভাপতি রাধিকা রঞ্জন তালুকদার বলেন, আমাদের চোখের দেখা এই শান্তিগঞ্জ উপজেলায় কিছু ছিল না। মান্নান সাহেব আ‘লীগের প্রার্থী হয়ে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই পাল্টে গেছে শান্তিগঞ্জের চিত্র। ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এখানে। আগামীতে আরো যে কত উন্নয়ন হবে এটা কল্পনার বাইরে। কাজেই উন্নয়নের বার্তা নিয়ে জনআস্থায় পরিণত হয়েছে দলটি। অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বশূন্যতা আর ঐক্যবদ্ধতার অভাবে জনআস্থা হারিয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় বর্তমানে বিএনপির হ-য-ব-র-ল অবস্থা।