ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

তানোর বরেন্দ্র অঞ্চলে ধানের দাম নিম্নমুখি: কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ফিকে


তানোর প্রতিনিধি photo তানোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৫-১২-২০২৫ দুপুর ১:৪৩

বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়ে আমন কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। নতুন ধান ঘরে উঠলেও কৃষকের মনে নেই কোন উৎসাহ। ডিসেম্বর মাস চলছে। সার-কীটনাশকসহ সব দোকানে দোকানে চলছে হাল খাতা।। বর্তমানে আমন ধানের দর বাজারে একেবারে নিম্নমুখি। এতে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছে। বাজারে দাম কম হওয়াই হতাশায় ভুকছেন পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা।
আমনের কাটা-মাড়ায়ের শুরুতেই সরকার আমনের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রতি মণ এক হাজার ৩৬০ টাকা দরে। সরকারী ভাবে আমন কেনাও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্ত সরকারের বেধে দেয়া দর বাজারে প্রভাব পড়ছেনা। বর্তমানের বাজারে প্রতিমণ ধান এক হাজার ১০০ টাকা হতে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। যা গত বছর এ সময় প্রতিমণ ধানের বাজার ছিল এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। গত বছরের তুলনাই চলতি বছর প্রতি মণে দুইশত টাকা কম পাচ্ছে কৃষক।কৃষকেরা বলছেন, ডিসেম্বর মাসে সর্ব দোকানে হালখাতা শুরু হয়। এ সময় কৃষকের ধান বিক্রি করে তা পরিশোধ করে থাকেন। কিন্ত ধান ব্যবসায়ীরা ধান কিনতে অনেকটা অনেহা দেখাচ্ছেন। এদিকে একাধিক স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী বলছেন,পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলের ধান কেনে থাকেন মিলমালিকেরা। কৃষকের ধান কেনে মিলমালিদের দিয়ে থাকেন তারা। কিন্ত চলতি আমন মৌসুমে মিলমালিকেরা কচ্ছপের গতি ধান কিনচ্ছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীর (আড়ত) ঘরে অনেক ধান আটকা পড়ে থাকায় তারা কৃষকের ধান খুব বেশি কেনতে পারচ্ছেনা।
স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, সরকার নাম মাত্র ধান ক্রয় করেন। দেশের ৯০ ভাগ ধান কেনে থাকেন অটো মিলমালিকেরা। তাই দামও নির্ধারণ করেন মিলমালিকেরাই। তাদের ইচ্ছা মত দামে ধানের দর নির্ধারণ করে ক্রয় করেন। মিলমালিকেদের একটি বড় সিন্ডিকেট কাজ করেন। এতে মিলমালিদের লাভের পাল্লা ভারি হলেও হাজারে কৃষকের কষ্টের ফসল চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে।চলতি ২০২৫-২৬ আমন মৌসুমে, সরকার প্রতি কেজি সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা, আতপ চাল ৪৯ টাকা এবং ধান ৩৪ টাকা দরে কিনবে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি, এবং এই ধান ও চাল সংগ্রহ ২০২৫ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে, যার লক্ষ্যমাত্রা মোট ৭ লাখ টন।তবুও সরকারের দেয়া দরের প্রভাব পড়ছেনা বাজারে। এক সপ্তহের ব্যবধানে বাজারে আবারো ধানের দাম নিম্নমূখী। এতে বড় লোকসারের শঙ্কায় করা হচ্ছে। সঙ্গে ক্ষোভ বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে।
বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ (৪০ কেজি ) ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, যা গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত।। এর এক সপ্তহ আগে ও প্রতিমণ ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এক হাজার ২৩০ থেকে এক হাজার ২৬০ টাকায়। মাত্র কয়দিনের ব্যবধানে আবারো মণ প্রতি কমেছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা।বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ৮০ ভাগ ধান ক্রয় করে থাকেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার মিল মালিকেরা। স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল-মালিকেরা ধান ক্রয় করতে যে দর বেধে দিচ্ছে সে দর দিয়ে কেনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
আর কৃষকেরা বলছেন, সরকারে দেয়া দর বাজারে কোন প্রভাব নেই। বর্তমানে যে দরে ধানের বাজার চলছে তাতে করে উৎপাদ খরচ তো উঠবেনা,বরং ঘর থেকে অন্য কিছু বিক্রি করে গচ্ছাা দিয়ে মাহাজন পরিশোধ করতে হবে।কৃষকেরা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে উচু-নিচু ক্ষেত প্রায় ৭০ ভাগ জমি বৃষ্টিপানির উপর নির্ভর করে আমন চাষাবাদ করে থাকে কৃষকেরা। আমনের মাঝামাঝি সময়ে পোকা আক্রমন দেখা দেয়। তাই অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষকদের দ্বিগুন খরচ হয়েছে।এছাড়া কার্তিক মাসে ঘুর্নিঝড় বড় একটি বৃষ্টিতে ধান নুনে পড়ে যায়। এখন ঘরে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। ঘরে ধান উঠলেও পর্যপ্ত ফলন ও হচ্ছেনা। বাজানে নতুন ধানের দামও কয়েক বছরের তুলনায় কম থাকায় চিন্তায় পড়েছে তারা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা জানান, প্রতি বিঘায় গড়ে ধান ফলন হচ্ছে কেজির মাপে ১৪ থেকে ১৬ মণ করে। গত বছর হয়েছিল ১৮ থেকে ২০ মণ।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের, রাজশাহী, নঁওগা, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে আরো ৪ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের উপরে।রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক সাহা আলম। ১৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চলতি মৌসুমে আমন চাষাবাদ করেছিলেন তিনি। মাঠে ধান ভাল থাকায় বুকে অনেক স্বপ্ন বেঁধেছিলেন তিনি। জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে । সে হিসাব করে দেখেন তার বিঘাপ্রতি ১৬ মণ করে ফলন হয়েছে। আর মাহজনকেই দেয়া লাগবে প্রতি বিঘায় ১০ মণ ধান। যে টুকু থাকে বাজারে ধানের দরের যে অবস্থা তাতে বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারবো না। ঘর থেকে গচ্ছা দেয়া লাগবে।
গোদাগাড়ী উপজেলার চানন্দালায় গ্রামের কৃষক তসিকুল বলেন, চলতি বছর কীটনাশক প্রয়োগে আমন উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। এমতেই ফলন কম হচ্ছে তার পরে বাজারে ধানের দান পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসে কীটনাশক দোকানে হালখাতা। ধান বিক্রি করে পরিশোধ করা লাগবে।সম্প্রতি সরেজমিন এক সপ্তহ যাবত রাজশাহীর অঞ্চলের মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলার কাকন হাট তানোর উপজেলার কালিগঞ্জ হাটেও নওগাঁর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখা যায় হাটে নতুন ধান ভরপুর হয়ে উঠেছে। কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে এসেছেন। কিন্ত ধানের ক্রেতা নেই বললেই চলে। মণ প্রতি এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ মধ্যে দাম ঘুরপাক খাচ্ছে।অনেক স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীর ঘরে বাইরে অনেক বস্তা ভর্তি ধান পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে কথা হয় কয়েকজন ধান ব্যবসায়ী সাথে। তারা বলেন,তারা মুলত মাঠ পর্যায়ে কৃষকের ধার কেনে মিলমালিকদের দিয়ে থাকেন। কিন্ত ডিসেম্বর মাসে মিলমালিকেরা ধান কেনতে আগ্রহী নয়। তাই বাজারে ধানের দাম নিম্নমুখি অবস্থান করছে।
তবে না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক মিলমালিক বলেন,আমনের ভরা মৌসুমে সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানী শুরু করেছে। তাই বাজারে ধানের দাম কমতে শুরু করেছে। আমাদের কিছুই করার নাই। সরকার দুইমাস চাল আমদানী বন্ধ করলে কৃষকেরা ভাল দাম পাবে।রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, সরকারে বেধে দেয়া ধানের দর বিষয়ে তিনি বলেন ডিসেম্বর মাসে ধানের দাম কম থাকে। তাই একটু  ধৈর্য ধরে ধান বিক্রি করতে কৃষকদের অনুরোধ করেন তিনি।

এমএসএম / এমএসএম

বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে পিস এওয়ার্ড পেলেন শামীমা নাইস

ত্রিশালে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি

ফাইনাল সিলেকশনেই স্পষ্ট হবে প্রার্থী নগরীতে গণসংযোগকালে হাজী ইয়াছিন

বালিয়াকান্দিতে অবৈধ ভাবে বালু মজুদের পায়তারা

৪৮ ঘণ্টা পরও প্রচারণামূলক উপকরণ অপসারণ না করায় পটুয়াখালী‌তে প্রশাসনের অভিযান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ৪টি বিদেশি পিস্তল ও গোলাবারুদ জব্দ

বাঁশখালীতে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৮ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার -২

জাতীয় হিফয প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছাত্র-শিক্ষককে আনোয়ারায় ঘোড়ার গাড়িতে সংবর্ধনা

চাঁদপুরে আলু বপনে ব্যস্ততা, লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার হেক্টর

বাংলাদেশে প্রথম ডিজিটাল সোশ্যাল প্রেসক্রাইবিং ইকোসিস্টেম উদ্বোধন

রায়গঞ্জে ছাত্রদলের কার্যক্রম জোরদারে নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধন

মহেশখালী ডাম্পার চাপায় প্রাণ গেল শিশুর

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় চোলাই মদের ট্রাকে আগুন দিয়েছে স্থানীয় জনতা, প্রায় চার হাজার লিটার মদ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ