কৃতজ্ঞতাবোধ

অবিন্যস্ত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ গুলোকে ইচ্ছে করলেই হাতের তালুতে নিয়ে খেলা করা যায়।অবসর প্রাপ্ত আসফাক খান বহুতল ভবনের অনেক উপরের তলার জানালা থেকে তাই মনে হচ্ছে। অনেকটা স্বপ্ন ধরা কিংবা স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার মতো। Grandpa please give me my ball.নাতি মাহির এর কথায় সম্বিত ফিরে পায় আশফাক খান। বলটি কখন তাঁর কোলের উপরে এসে পরেছে খেয়ালই করেনি। মাহির একটু দুরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে আছে বলটি লুফে নেওয়ার জন্য।
Chatch it! বলে ছুঁড়ে দেওয়ায় মাহির বলটি নিয়ে আবার ছোটাছুটি করে খেলতে শুরু করলো। মার্বেল পাথর বসানো মেঝেতে প্রায় সাড়ে সাত বছর বয়সী নাতির ছোটাছুটি করা পা দুটোর দিকে চোখ আটকে গেল আশফাক খানের।কেমন নরম তুলতুলে পা দুটো যেন মেঝের আভিজাত্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বয়সী ঝাপসা চোখ কিছু খুঁজে ফিরছিলো। ঘাড় ঘুড়িয়ে চোখ চলে গেল জানালার বাইরে। মসৃন রাস্তায় গাড়ি গুলোকে কেমন গুবি পোকার মতো আর হেঁটে যাওয়া মানুষ গুলো কে কেমন অন্যরকম লাগছিলো। রাস্তার দুপাশের সারি সারি গাছ গুলোকে উপর থেকে কেমন ছবির মতো মনে হচ্ছে।
আশফাক খানের মনের পর্দায় ভেসে উঠলো, ছোট ছোট দুটি পায়ে একজোড়া স্যান্ডেল আর গায়ে ক্যারোলিন এর চকচকে শার্ট পরা প্রায় নয় বছরের ছেলেটা গ্রামের কাচা রাস্তায় ঈদের দিন এতোটাই মুগ্ধতা নিয়ে নিজের স্যান্ডেল জোড়ার দিকে তাকিয়ে হাঁটছিল যে সামনে কাদা,গর্ত কিছুতে পরে যাবে কি না, সেটা তার মাথায় ছিলো না।অদুরে দাঁড়ানো এক গ্রামবাসী ডেকে বলেছিলেন, "এই আশফাক পরবি তো তুই, সামনে তাকায়া হাঁট"।আট বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ায় হঠাৎই বনেদী অবস্থা থেকে অনেকটা টানা পোড়েন এর মধ্যে পরে যান আশফাক এর মা।কোলে দু বছরের ছোট আরেক টি সন্তান। আটপৌরে মায়ের উলের বুননের দু'আনা আর বাড়ির দরজা বেয়ে লকলকিয়ে উঠে যাওয়া পুই কিংবা লাউয়ের ডগার দুটি কচি পাতা, মাঝে মধ্যে পুকুরের দুইটা জিওল মাছই যখন অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায় তখন নতুন জামা জুতোর কথা তো ভাবতেই পারেননি।
গ্রামের প্রতিবেশী মতিন চাচা প্রথম থেকেই আশফাকের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এক ঈদে তিনি নিজে বাজার থেকে জামা জুতো কিনে দেন যা পরে আশফাক এতোটা মুগ্ধতা ও আনন্দ নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল যেন সে পৃথিবীর বাদশা। হ্যাঁ, এই সামনে হেঁটে চলাটাই জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেভাবে স্কুল মাঠ দাপিয়ে বেরিয়েছে, তেমনই কাচা রাস্তা মাড়িয়ে নৌপথ অতিক্রম করে পাকা রাস্তা, প্লেন পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মসৃন রাস্তার সমান তালে পা রেখেছে।
কখনো কখনো তৈলাক্ত বাঁশের মতো তিন ধাপ এগুনোর পর দুই ধাপ নীচে নেমে যেতে হয়েছে বিভিন্ন বৈরী পরিস্থিতির জন্য।হাল ছাড়েনি, কখনো নিন্দার কাঁটা, কখনো গ্রাম্য রাজনীতির রক্তচক্ষুকে নীরবে পায়ে দলে সামনে এগিয়ে যাওয়াই তার লক্ষ্য হয়েছিল। এই অর্জনের মূল চাবিকাঠি ছিল তার সততা, একনিষ্ঠতা,বিনয়ী মনোভাব। সরু নাকের নাক ফুল না থাকা মায়ের নগ্ন ক্ষতটা যেন দগদগে কষ্ট হয়ে নিজের বুকেই টের পেত।মা'য়ের একাকীত্বকে ছুঁয়ে দিতে না পারলে ও মা বেঁচে থাকা অবধি সম্মান এবং আভিজাত্যের কাঁথায় মুড়িয়ে রাখার চেষ্টা করেছে অনেকটা গর্জনহীন নীরব সমুদ্রের মতোন গভীর ইচ্ছা শক্তি দিয়ে।
বহুকাল পর আশফাক খানের আজ গ্রামের সেই মতিন চাচার কথা মনে পরছে।দু-এক বার হলে ও দু'আনা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, "যা চুলটা কেটে আয়।"
সাইকেলের পেছনে বসিয়ে সারা গ্রাম চক্কর দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "কিরে কেমন লাগলো? "সে অনুভূতি কি ভাষায় প্রকাশ করার মতো ছিল? শুধু এখন ভাবা যায় সেইটুকু অনুভূতি না থাকলে কিশোর বয়স কেমন হয়, তা হয়তো জানাই হতো না।এই ঋণকে তিনি গভীর সুখ সমেত মনে রেখেছেন এবং মতিন চাচার খোঁজ খবর প্রায় তিনি নেন।
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার সাথে ভাবেন মতিন চাচা কে একটা ফোন দিতে হবে।মতিন চাচার পাশের বাড়ির একজন কে ফোন দিলেই তাকে পাওয়া যাবে বলে তিনি হাতের কাছের টেবিলে মোবাইল হাতড়াতে থাকেন, আর বিড়বিড় করে বলতে থাকেন আজকে চোখটা খুব বেশিই ঝাপসা লাগছে,কিছুই দেখা যায় না।
আশফাক খান উপলব্ধি করছেন,তাকে কেউ আস্তে আস্তে ধাক্কাচ্ছে,আর শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তাঁর নাতি মাহিরের কন্ঠ...Grandpa, are you ok? Are you ok?
এমএসএম / এমএসএম

আসছে আরফান হোসাইন রাফির প্রথম কাব্যগ্রন্থ: ‘সুদিন ফিরে আসছে’

বহুরূপী

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে মানিক লাল ঘোষের একগুচ্ছ কবিতা

একুশ ও আমরা

মানিক লাল ঘোষের একগুচ্ছ একুশের ছড়া

অপূর্ব চৌধুরী'র নতুন বই

সাহায্যের হাত বাড়াই

কেমুসাস সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সব্যসাচী লেখক মীর লিয়াকত আলী

একজন নসু চাচা

বলি হচ্ছে টা কী দেশে

জগলুল হায়দার : তরুণ ছড়াকারের ভরসাস্থল

দিকদর্শন প্রকাশনীর সফলতার তিন যুগ

মজার প্রাইমারি স্কুল
Link Copied