সংকটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী সংকট দিন দিন বাড়ছে। এ নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে এক ধরণের চাপে। সেই সময়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাবে এক ধরণের হতাশা নেমে এসেছে ক্যাম্পাসগুলোতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তির অনুমতি থাকলেও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
দেশে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থী। এতো সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্য হলেও তারা উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হননি। এদিকে, শিক্ষার্থী না পাওয়ায় একদিকে ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ ঝরে পড়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। দেশে ৪৯টি সরকারি এবং ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ভর্তি কম হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পছন্দের তালিকায় থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এ কারণে শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। যদিও এসব শিক্ষার্থী পাশ ঘোষণার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্প্রিং’ সেমিস্টারে ভর্তি মৌসুম শেষে দ্বিতীয় দফায় ‘সামার’ সেমিস্টারে ভর্তি চলছে। ভর্তি কম হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা আরো বলছেন, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঝরে পড়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে নারী শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আর করোনায় চাকরি, ব্যবসা হারিয়ে অর্থসংকটে পড়া অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের আর উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে ঠিক কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে তা জানা যাবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ গ্রাম থেকে আসে। টিউশনি করে তাদের লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ চলে। করোনায় তাদের টিউশন প্রায় শূন্যের কোঠায়। ফলে এসব শিক্ষার্থী আর রাজধানী বা বিভাগীয় শহরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না। এ কারণে শিক্ষার্থী পাচ্ছেন না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে নামি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, ইস্টওয়েস্ট, আইইউবি, এআইইউবিসহ অন্যান্য নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র একটু ভিন্ন।
প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে চলতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী পেয়েছে মাত্র ৫৭ জন। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থী নেই। তাই সামনের দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য অনিশ্চয়তা ছাড়া আর কিছুই দেখছি না।’ তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৪ হাজার থেকে ২ হাজারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে অন্যান্য সময় ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও এবার ভর্তি হয়েছেন মাত্র ১১২ জন। নর্দান ইউনিভার্সিটিতেও ভর্তির হার কম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির আয়ে। নামি কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পুরোনো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ ও এফডিআর উত্তোলন করে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ব্যয় মেটাচ্ছে। যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের অবস্থা মোটামুটি ভালো হলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছে বিপাকে।
এমএসএম / এমএসএম