ঢাকা মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫

আমিও অগ্নিদগ্ধ 


মশিউর আনন্দ photo মশিউর আনন্দ
প্রকাশিত: ১৮-১২-২০২১ রাত ১২:৩

আমিও অগ্নিদগ্ধ 
    দিলারা হাফিজ,আইসবোট টেরেস, টরন্টো


“কোথায় পালাবে? ছুটবে বা আর কত?
উদাসীন বালি ঢাকবে না পদরেখা”
               সুধীন্দ্রনাথ দত্ত

অগ্নিদগ্ধ মানবতা কি আজ আমাদের 
সকলেরই বন্ধু হতে পারতো না?
কিন্তু যে হয়নি ছেচল্লিশে,এখনো হয় না আর!
পিশাচের দঙ্গল যখন নেচে ওঠে রক্ত উল্লাসে,কিংবা
ক্ষমতার অলি-গলি পথ খোঁজে নানা অজুহাতে।
তখন বিবেক আত্মহত্যা করে, এ কথা কে না জানে?

অন্য কারু না হোক,সে আজ আমার দুঃখদিনের স্বজন।
আত্মার গভীর জলে কাঠখড়ির নৈবেদ্য—
কোথায় শুশ্রূষা হবে তবে,এই অগ্নিদগ্ধের ?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে?
সেখানে তো বন্ধু সামন্তলাল আজো রাত জেগে বসে আছে,
‘সবার উপরে মানুষ সত্য’জেনে।
বাঙালি কবির এই আপ্তবাক্যে আজ ধুলায় লুটায়।

এতকাল বন্ধুকে তো বন্ধু ভাবনায় জেনেছি,
পরম বন্ধুর কি কোনো ধর্ম গোত্র ছিলো?
না আছে?
কোথায় হারালো আমাদের মানিকগঞ্জের মানিক এক, 
সহপাঠী বন্ধু প্রভাস তরফদার?
আমাদের লোভ ও ধর্মান্ধতায় ভীত-সন্ত্রস্ত পিতা
সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে পালিয়েছে রাতের অন্ধকারে।
এই তো গেলো বছর মর্মের বিষাদ চাপতে না পেরে দেশভাগে অবিশ্বাসী বন্ধু আমাদের সুবল বনিক
মস্তিষ্কের রক্ত ক্ষরণে মিশে গেছে এই বাংলার মাটিতে।
অপর বন্ধু প্রথমারায় মণ্ডল একদিন এই মুক্ত চেতনার 
লাল-সবুজ পতাকার দেশ ছেড়ে, জন্মের মাটি ছেড়ে ঢাবির 
জ্ঞানের প্রদীপটুকু সম্বল করে পালিয়েছে দ্রুত।
কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে বিলিয়েছে মানবিক আলো—যদিও মননের প্রদীপ শিখার বিজন বনে 
তার শেষ অগ্নিটুকু জ্বেলে দিয়েছিলো মানব সভ্যতার 
এক আর্তস্বজন ড.আহমদ শরীফ...
এখনো গভীর নিশিথে তার আত্মা কাঁদে 
এই বাংলায় স্বপ্নময় ধুলো-মাটির স্বপ্নে।

ঘোর কৃষ্ণ পক্ষের বিপরীতে আশার প্রদীপ হাতে গলির মোড়ে এখনো কি দাড়িয়ে আছে প্রাণের বন্ধু তাপসী হক,সুনীল কুমার রায়, মনোজ কুমার?
ঝাপসা চোখেও দেখতে পাই এই দুঃসময় পাহারা দেয় আমারই সহপাঠী কবি বন্ধু মাহবুব হাসান,
কথা সাহিত্যিক বন্ধু রেজওয়ান হোসেন সিদ্দিকী,
বন্ধু হাশেম,হাসিনা লিলি,সাঈদা বেগম—নড়বড়ে দেহে 
জাপটে ধরে আছে তারা কেউটের বিষাক্ত ফনা,
মানবতার ঢাল হয়ে আছে পাহাড়ের মতো অটল যেমন।

ভয় করো না বন্ধু,হাতখানি বাড়িয়ে দাও পরাঙ্মুখ প্রেমে
আমরা রয়েছি তো একই আত্মার গভীরে

এমএসএম / এমএসএম