বরেণ্য কবি আবুল খায়ের-এর কবিতাগুচ্ছ

বরেণ্য কবি আবুল খায়ের-এর কবিতাগুচ্ছ
তোমার প্রেমের ঋণ
চাতকের মতো চেয়ে থাকি
ঘুমের ভিতর তোমায় দেখি।
তোমার হাসির যাদুর বাঁশি
মনটা তাই হয় উদাসী।
চুলের আগায় হাওয়া লেগে
তুফান আসে ভীষণ বেগে।
তোমার চোখে রেখে চোখ
ভুলতে পারবো সকল শোক।
যৌবনের সব নির্যাস দিয়ে
বাজাতে পারো প্রেমের বীণ
জীবন দিয়ে করবো শোধ
তোমার প্রেমের সকল ঋণ।
অর্বাচীনের দেশে
নিজের হৃদয়টা নিজে কুচি কুচি কচু কাটা করে
‘প্রেসার কুকারে’ বসিয়ে জগতের সব আনন্দকে
তুচ্ছ প্রমাণ করে জীবনের সব হিসেব চুকিয়ে
আমি ছুটে চলেছি এক প্রাচীন নগরে
অর্বাচীনের দেশে এক দণ্ড শান্তির প্রত্যাশায়।
প্রাচীন জনপদে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে
খুঁজতে খুঁজতে নিরাশ হয়ে নিরুপায়,
এক অন্তিম চরম সময়ে এক কঙ্কাল এসে
সামনে দাঁড়ালো, মুখ তুলে তাকাতেই
চোখে পড়লো তোমার নিরেট ছায়ামূর্তি
বিল্ডিং ধসে পড়ার পর তোমাকে আর
দেখা যায় নি কোথাও।
বাবার খোঁজে যখন চারিদিকে অন্ধকার দেখছি
তখন তুমি আমার হাতে হাত রেখে বললে
যাও, আর খুঁজতে হবে না
তখন না বুঝলেও এখন বুঝলাম তোমার
সে মিথ্যে আশ^াস কেনো দিয়েছিলে।
আগুনে পুড়ে যাওয়া কঙ্কাল তুমি সভ্যতার সকল
ইতিবৃত্তকে পাশ কাটিয়ে আমার হাতে হাত রেখে
আমাকেই পুড়িয়ে মেরেছো।
কূপমুণ্ডক তুমি, কখনো বুঝবে না সন্তানের আকুতি
হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার চাদরে আবৃত মায়া,
কঠিন সময়কে জলাঞ্জলি দিয়ে
ইট-পাথরের সভ্যতাকে
প্রবঞ্চনার সাগরে নিক্ষেপ করে ছুটে চলা
আমি এক জীবন্ত ফসিল।
যার সন্তান গেছে, সে বুঝে।
কারণ তোমার তো সন্তান নেই
সন্তানের মঙ্গল কামনায় কতো দিন কেটেছে বৃথায়--
তবুও তো আশায় বুক বেঁধে আছি কল্পনার বালুচরে
যদি মেলে নির্মম এ ধরায় এতটুকু ঠাঁই!
অথচ, অথচ তোমরা আমাকেই খুন করলে
ছেলে ধরা সন্দেহে।
জানো, জানো আমিও আসবো তোমার মতো
বিল্ডিং ধসে, আগুনে পুড়ে, চাপাতির কোপে
কেরোসিন বা এসিডে ঝলসানো দেহে
নয়তো কোনো এক সাজানো মিথ্যে মামলার
আসামী হয়ে নিরুদ্দেশ এক অর্বাচীনের দেশে।
ড্রেনের আর্বজনায়
ড্রেনের আর্বজনায় দাঁড়িয়ে
শরীরে সাবানের গন্ধ খুঁজে,
আতসী কাঁচে অন্যের চরিত্র
দেখা, তা বেশ ভালোই বুঝে।
এখানে স্বপ্নে প্রাপ্ত ঔষুধে
সর্বরোগের প্রতিষেধক,
রাস্তার পাশে ত্রিফলা বিছানো
দোকানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা
পশুর হাড়ের পসরা, উৎসুক
জনতার কৌতুহলী চোখ।
অন্যের বিপদে বেশ আয়েশী
কারো সাফল্যে চোখ কপালে তুলে
পারলে জোরে-সোরে কাঁশি।
মনতো উদাসী, প্রেম পিয়াসী
দু’জনে কাছাকাছি বেশ আছি, তবুও
আশার ভেলায় পথ চেয়ে থাকি
সন্দেহে বাসা বাঁধি।
নিজের সাফল্যে কৃতজ্ঞ মন
তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি অকারণ
স্বপ্নে বিভোর স্বচ্ছ জলে ভাসি
ঘুমের ঘোরে চলে দু’হাতে তালি
কারণ আমরা বাঙালি,
অন্যের সাফল্যে আসে কাশি
অসহ্য তবুও হাসি রাশি রাশি।
দীর্ঘশ^াস
সময়ের পাঁজরে বিলীন গোধূলীর যৌবন
বসন্ত দিনের সব অকুণ্ঠ অবগাহন প্রভাতে
অমলিন নীলিমার নীল মুহূর্তে হারায় সুনীল
তোমার পাষাণ হৃদয়ের নিদারুণ কষাঘাতে।
কি হবে দীর্ঘশ^াস আরো দীর্ঘ করে--
নিজের জন্যই কী নিজেকে উজাড়,
যা পারো ধরো শক্ত করে ধরণীর ওপরে
কিছুই কী ছিল না করবার অন্যের তরে?
আমার হৃদয়ের নিযুত আহাজারি
পাহাড়ের কান্না হয়ে ঝরনা বয়ে যায়
তবুও তুমি তোমার নিষ্প্রাণ হাসি
ফণার মতো বিলিয়ে কী সুখ পাও
একবার বলে যাও, শুধু একবার
শুধু একবার।
ভাগ্য বদলের যন্ত্র
গলি থেকে ওঠে আসা রাজপথের সন্ধান পেয়ে
মানুষগুলো ক্যামন করে ভুলে যায়
চিরচেনা গ্রাম আর গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো।
নিয়নবাতির আলোতে ঝলমলে রঙিন
ক্যাসিনোর গুটিতে হাত
দশে বিশ, বিশে চল্লিশ কোটি টাকার হিসেব,
মুহূর্তে ভাগ্যবদল।
ওয়ালে ওয়ালে পোস্টার,
চৌরাস্তার মোড়ে বড় বড় বিলবোর্ড নেতার
আজ কেবলই স্মৃতি, সময়ের ঘূর্ণিপাকে।
ডাস্টবিনের ভাঙা দেয়াল
(ডাস্টবিনে ফেলে রাখা শিশুকে উৎসর্গ করে)
কার ঔরসে পয়দা শিশুর মুচকি হাসি শ্যাওলাতে
কোথায় থেকে ভেসে এসে ওঠলো যে কার তল্লাটে
বেগ-আবেগের প্রণয়লীলা উদয়-অস্ত কার ইশারাতে
ওঠলো যে সুর বেসুরে আজ বাজল যে কার বেহালাতে
জাত বেজাতের দ্বন্দ্ব ভুলে মিষ্টি মধুর ছন্দ তুলে
গা ভাসিয়ে দিলে তুমি বৃষ্টিভেজা কালরাতে।
আবেগের সাথে বিবেকের কভু হয় না কোনো সন্ধি
মানবতার শিকল পায়ে ইজ্জত ক্যান আজ বন্দি।
সন্তান আজ কার কোলে হায়, কার নয়নে নয়ন
বিচারপ্রার্থীর যাপিত জীবন হুমকিতে ক্যান চয়ন।
ডাস্টবিনের ওই খুপড়ি ঘরে খিলখিলিয়ে কে হাসে
হাসি মুখে ফাঁসিতে ঝুলাও একটুখানি ভালোবেসে।
বাবা-মায়ের আদর নেই, জীবনটাও হুমকিতে
দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ করে পারবে না আর দম নিতে
বিশ্ব বিবেক দাফন করে হীরা পান্না চুন্নিতে।
আকাশ বাতাস ভারী ক্যান মরণ বীণ কে বাজায়
কার পাপের তাপে-অভিশাপে কে শাস্তি পায়।
কর্মযজ্ঞে ধর্ম ফেলে মর্ম মূলে অন্ধজনে আলো পায়
অর্থ-অনর্থ ব্যয় ভুলে হিসেবের খাতা রাখ তুলে
অন্যের বাসর সাজিয়ে যায়, তাতেই সে মজা পায়।
কেউ যায় শখে বসে কেউ আবার উল্লাসে
কেউ খেয়ে মজা পায়, কারো জিভে জল আসে
কারো জীবন যায় যায়, কেহ দেখে হেসে বেড়ায়
কেউ মজে উচ্ছ্বাসে, কেউ চোখের জলে ভাসে।
মানবতার সেবার নামে ওঠে তুফান দিন শেষে
ঘুণে ধরা সমাজ যে আজ পঁচন ধরা নির্যাসে।
কান্নায় দেখ পান্না ঝরে খোদার আরস কাঁপল যে
বাপ-দাদার ভিটে-মাটি কোথায় ফেলে আসল যে।
দোহায় লাগে জীবনটাকে মোড়কে দাও বেঁধে
কার এতো হিম্মত যে আজ আমার জন্য কাঁদে--
জীবন আমার হুমকিতে আজ ভালোবাসার ফাঁদে।
বাবা-মায়ের আদর-কদর কে দিবে চুম কপালে
ধিক্কার জানাই ভিক্ষার ঝুলি, ভালোবাসা রুমালে
শান্তি চাই ভ্রান্তি ভুলে ডাস্টবিনের ওই দেওয়ালে
কারো জীবন যাচ্ছে চলে কারো আবার হেয়ালে।
আমার দেশ
এক যে আছে এমন দেশ
রূপের নেইতো শেষ
লতায় পাতায় সবুজে ঘেরা
শ্যামল সেই আবেশ।
রাতের বেলায় জোনাক জ্বলে
দিনে সুর্যের আলো
রাখাল ছেলের বাঁশির সুরে
মনটা করে ভালো।
তৃষ্ণা মেটায় ডাবের পানি
বৃষ্টিতে যায় খরা
অসীম মজা দিনের বেলায়
দল বেঁধে মাছ ধরা।
গায়ের ঘাম ঝরায় কৃষক
ফসল ফলায় মাঠে
দেশ করে সমৃদ্ধি ভাই
সোনালি আঁশ পাটে।
শীতের শোভা কুয়াশা যে
বরষার শোভা বৃষ্টি
বাগানের শোভা গাছগাছালি
জুড়ায় সবার দৃষ্টি।
পুকুর ডোবায় শালুক ফোটে
সূর্য ডুবে নদীর তীরে
সাঁঝের বেলা পাখিরা সব
ফিরে যায় আপন নীড়ে।
পতিতা
নেতারা সব পতিতা, আর পতিতারা শাসক
জনগণ সব কেনা দাস, শীতের লেপ তোষক।
ভদ্রতা নম্রতা ছাড়ো, আমজনতার গুষ্ঠি মারো!
আরো চাই আমি আরো, হোক নিজের পোয়াবারো।
অতি দরদি তুমি অধিপতি, মান্যবর সমাজপতি
কতো কী হয়ে যায় তোমার সামান্য ইশারায়,
তোমার পথ মসৃণ, কে রুখবে তোমায়, সমাজের
চমৎকার সব আবাল, কী করবে সমাজ বাবা দামাল?
ক্ষুধার জ্বালায় তালমাটাল, তাকিয়ে দ্যাখো চক্ষু লাল
চুলোয় হয় না রান্না, বাবুদের হাহাকার নিষ্প্রাণ কান্না
অথচ, অথচ গুদাম ভর্তি মালামাল, খুলতে নিজের
কপাল সিন্ডিকেট দাম বাড়াতেই ওরা বেসামাল।
ঝাড়ুর আঘাতে যাবে ভূত, পেলাম নাতো আজো নিখুঁত
কোনো মায়ের পুত, কোথায় পাবে শান্তির দূত
জ্বালাও পোড়াও চলছে হরদম, নিরাপদ নয় কোনো কদম
মায়া-মমতার কপালে হাত, বেশ্যার দালালের বাজিমাত।
প্রতিবাদের হাত দাও গুঁড়িয়ে, পায়ের নিচে পিষিয়ে থেতলিয়ে
স্তব্ধ করো সব কণ্ঠ, আছে যতো অর্বাচীন ভণ্ড
মাথা হোক সব নত অবনত, সততা, বদান্যতা আজ মৃত।
পুঁজিবাদের দিয়াশলাই, দুনিয়াটা আজ তড়পায় আর তড়পায়--
মানবতার মাথা মুড়িয়ে, দাঁত কেলিয়ে হাসে অভিশাপের
মশাল জ্বালিয়ে, শান্তির পতাকায়, হায়! শান্তির পতাকায়!
লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে ঘোড়া দৌড়ায়, ওরা ঘোড়া দৌড়ায়।
বসন্তের কোকিল
বসন্তের কোকিলরা যখন দল বেঁধে
ঝাঁপিয়ে পড়ে নকল অমৃত সুধায়,
তখন দেহে প্রাণ আছে কী নেই
সেটা কে খবর রাখে।
গামলার তলানিতে জমে থাকা মধুর
অন্বেষণে, ঝাঁকে ঝাঁকে পিপীলিকারা
পা ঢুকিয়ে চেটে খাওয়ার প্রাণান্ত
চেষ্টায় মগ্ন, তখন জীবনের সোপান
খুঁজে সময় নষ্ট করা বোকামী ছাড়া
আর কিছু নয়!
শোষক
শোষক শ্রেণি মিলেমিশে জোঁকের মতো খাচ্ছে চুষে।
দশ টাকার পণ্য শেষে বিক্রি ক্যান তিনশ’ বিশে।
ক্যাসিনোবাজের গুটির তাণ্ডবে হয়েছে পেঁয়াজ কাণ্ড
সোনার কাঠি রূপোর কাঠি যেন মেডিকেলের পর্দা,
বালিশ কাণ্ডে সবাই অন্ধ, মন্দ কাজে কেনো দ্বন্দ্ব
যেভাবে পারো, চাই আরো ভরাট করো নিজের ভাণ্ড।
জন্মদিন
তানভীর আজীমি, এথেন্স, গ্রীস
রাত শেষে শারদ প্রভাতের রক্তিম সূর্য হাসে
বুকের ভিতরে অসীম উষ্ণতা নিয়ে,
জন্মদিনের অঢেল শুভেচ্ছা ও শুভ কামনার ডালি নিয়ে হাতে।
মাতা পিতা আপন শত স্বজন, বন্ধু বান্ধব পরিচিত জন,
শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে দিলো
জীবনের সুরভিত পুঞ্জিভূত ক্ষণ।
জীবনের এই সুন্দর দিবসের উদযাপনে,
আমাদের ভালোবাসা দোয়া ও শুভ কামনা অভিনন্দনে
ভরে থাকুক উত্তীর্ণতায় ভবিষ্যতের উঠোনে,
সুখ সমৃদ্ধি, স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে মঙ্গলময় হোক....দীর্ঘায়ু হোক জীবন,
অনাবিল আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক প্রতিটি মুহুর্ত
মায়ের স্নেহ বাবার আদর প্রেয়সীর ভালোবাসায়,
ভাই বোনদের শ্রদ্ধা ভক্তি আগামীর সব আশায়।
জীবনের এই চলার পথে সুখ সাগরে ভেসে,
আগত অনাহুত কষ্টগুলো সহ্য করে হেসে,
দীর্ঘ দিনের লালন করা স্বপ্নগুলো পাক পূর্ণতা
আনন্দ আর হাসি গানে ভরে থাকুক শূন্যতা।
জীবনের বাধা বিঘ্ন ভেঙে পূরণ হোক সব আশা
পবিত্র এই জন্মদিনে রইলো আমার প্রত্যাশা।
এমএসএম / শাফিন

আসছে আরফান হোসাইন রাফির প্রথম কাব্যগ্রন্থ: ‘সুদিন ফিরে আসছে’

বহুরূপী

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে মানিক লাল ঘোষের একগুচ্ছ কবিতা

একুশ ও আমরা

মানিক লাল ঘোষের একগুচ্ছ একুশের ছড়া

অপূর্ব চৌধুরী'র নতুন বই

সাহায্যের হাত বাড়াই

কেমুসাস সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সব্যসাচী লেখক মীর লিয়াকত আলী

একজন নসু চাচা

বলি হচ্ছে টা কী দেশে

জগলুল হায়দার : তরুণ ছড়াকারের ভরসাস্থল

দিকদর্শন প্রকাশনীর সফলতার তিন যুগ
