ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

বশেমুরবিপ্রবি: ফিরে দেখা ২০২১


খাদিজা জাহান তান্নি, বশেমুরবিপ্রবি photo খাদিজা জাহান তান্নি, বশেমুরবিপ্রবি
প্রকাশিত: ৩১-১২-২০২১ রাত ১১:৬
চোখের কোণে আতঙ্ক, ঘরবন্দী জীবন, বেচে থাকার আকুতি আর অনিশ্চিত সুন্দর ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে আগমন ঘটেছিলো ২০২১ সালের। মহামারী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় নিস্তব্ধ ছিলো প্রকৃতি। দীর্ঘসময় বন্ধুহীন আড্ডায় রুক্ষতা ধারণ করেছিলো ক্যাম্পাস। আপন গৃহে ফিরে আসার একরাশ প্রতিক্ষায় কাটতো দিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর। অবশেষে অপেক্ষার অবসান। প্রাণ ফিরে পায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২১ এ বশেমুরবিপ্রবির উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি, প্রাপ্তি -অপ্রাপ্তি, আশা- প্রত্যাশা নিয়েই আজকের বিশেষ প্রতিবেদন " বশেমুরবিপ্রবি: ফিরে দেখা ২০২১"।
 
জানুয়ারি-অক্টোবর:
 
মনিটরে বন্দী ক্লাসরুম: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অনলাইনেই চলমান ছিলো বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী নেটওয়ার্ক জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত ছিলো অনলাইন ক্লাসে।
 
মার্চ:
 
অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু: ৮ মার্চ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বশেমুরবিপ্রবির বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ত্রয়ী দাস। ত্রয়ীর সহপাঠীরা জানান, ৬ মার্চ পুজোর প্রদীপ জ্বালানোর সময়ে ত্রয়র শাড়িতে আগুন লাগে। পরবর্তীতে সারা শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে তার শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়। এই অবস্থায় ত্রয়ীকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয় এবং অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ৮ মার্চ ত্রয়ী মৃত্যুবরণ করেন।
 
জুলাই:
 
করোনা আক্রান্ত হয়ে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষকের মৃত্যু: করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন বশেমুরবিপ্রবির সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম খান।
 
অক্টোবর:
 
১৯ মাস পর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর বিশ্ববিদ্যালয়: প্রায় ১৮ মাস পর ৭ অক্টোবর থেকে খুলে দেয়া হয় বশেমুরবিপ্রবির আবাসিক হলসমূহ। দীর্ঘদিন পর হলে ফেরায় শিক্ষার্থীদের ফুল ও উপহার সামগ্রী দিয়ে বরণ করে নেয় হল প্রশাসন। এছাড়া ২১ অক্টোবর থেকে শুরু করা হয় সশরীরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। 
 
সড়ক দুর্ঘটনায় বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষকের মৃত্যু: ১৩ অক্টোবর ঢাকা-পিরোজপুর মহাসড়কের নাজিরপুর থানার কবিরাজবাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মশিউর রহমান। ১৪ অক্টোবর অশ্রুজলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মসিউর রহমানকে চিরবিদায় জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
 
ফি কমানোর দাবিতে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়: ২৮ অক্টোবর বিভিন্ন ফি কমানোর দাবিতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সাথে মুক্ত আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব। দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।
 
নভেম্বর:
 
ক্যাম্পাসে সুপেয় পানির ব্যবস্থা:
বারো বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রিভার-অসমোসিস প্রক্রিয়ায় আবাসিক হল, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের একাধিক স্থানে ব্যবস্থা করা হয়েছে নিরাপদ খাবার পানির।
 
মেডিক্যাল-বিশ্ববিদ্যালয় সংঘর্ষ :
২২ নভেম্বর ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।
 
ডিসেম্বর:
 
সমস্যা সমাধানে ইউজিসির নির্দেশনা: বশেমুরবিপ্রবির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ৮ ডিসেম্বর ইউজিসি কর্তৃক কয়েকটি নির্দেশনা প্রদান করা হয় যার মধ্যে রয়েছে ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন, বিভাগ একীভূতকরণ, প্রস্তাবিত কৃষি অনুষদের অনুমোদন, ইনিস্টিউটসমূহে স্নাতক ডিগ্রী বন্ধ, শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে আসনসংখ্যা কমানো এবং কোটা বাতিলের নির্দেশনা।
 
আসন সংখ্যা অর্ধেক: 
শিক্ষার সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে স্নাতক ভর্তির ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা প্রায় তিন হাজার  থেকে কমিয়ে প্রায় ১৫০৫ করে বশেমুরবিপ্রবি প্রশাসন।
 
সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু:
২৭ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম শুভ। পরবর্তীতে ড্রাইভারের শাস্তি এবং রাইসুলের পরিবারের ক্ষতিপূরণের দাবিতে ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩.০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬.০০ টা পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাস মালিকদের সাথে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দেয় দোলা পরিবহন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও রাইসুলের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ রাইসুলের দুই ভাইয়ের পড়ালেখা ও চাকরির ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়।
 
যা কিছু অর্জন:
 
২০২১ এ বশেমুরবিপ্রবির অর্জনের তালিকায়ও যুক্ত হয়েছে অনেক কিছুই। এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের তালিকায় বশেমুরবিপ্রবির ৭ শিক্ষক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষার্থী, প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন ৭ শিক্ষার্থী। এছাড়া এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিসেও সাফল্যের প্রমাণ রেখেছে বশেমুরবিপ্রবি। প্রথম বাঙ্গালি নারী হিসেবে লবুচে পর্বত জয় করেছেন বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক জয়নাব বিনতে হোসেন, বিএনসিসির সর্বোচ্চ র‍্যাংক পেয়েছেন বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জেলা রোভার সম্পাদক হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মজনুর রশিদ এবং শ্রেষ্ঠ রোভার হন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন হৃদয়, বিভাগীয় আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয় বশেমুরবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটি এবং  মুজিব ১০০ আইডিয়া প্রতিযোগিতায় স্থান পায় বশেমুরবিপ্রবির দুই দল।
 
বিদায় নিচ্ছে ২০২১। সব হিসাব-নিকাশ ভুলে নতুন সূর্য উঁকি দেবে নতুনত্বের বার্তা নিয়ে। প্রবাদে আছে ‘যায় দিন ভালো; আসে দিন মন্দ’। তবে আমরা সেটা চাই না। থাকুক না প্রবাদ প্রবাদের মতো,হোক না বীপরিত কিছু। অতীতের শিক্ষা আমাদের আগামীকে সাজাবে নির্ভুলভাবে। সকল সমস্যা কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা শান্তিময় পরিবেশ, অনেকগুলো প্রাপ্তি , সমৃদ্ধি, ও উন্নয়নের ছোয়া যুক্ত হোক আগামীর সালতামামিতে। নতুন বছর জুড়ে অনেক সফলতা আর অনাবিল আনন্দে কাটুক শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার। বেলাশেষে যেন থাকে আমাদের মনে একরাশ প্রশান্তি।

শাফিন / এমএসএম