মিরপুর বাঙলা কলেজের ৪ বিঘা জমি বেদখল
রাজধানী মিরপুরে অবস্থিত বাঙলা কলেজের ৪ বিঘা জমি দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা হলেও মিরপুর ১৪ আসনের উপনির্বাচন সামনে রেখে আলোচনাটি সামনে এসছে। জানা যায়, সদ্য প্রয়াত এমপি আসলামুল হকের সময়ই এই কলেজের চার বিঘা জমি বেদখল হয়েছে। এ নিযে কলেজের ছাত্র শিক্ষকসহ শুভাকাঙ্খিদেও মাঝে এক ধরণের উত্তেজনাও রয়েছে।
জানা যায়, বর্তমান অধ্যক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভূমি রক্ষা কমিটি গঠন এবং কমিটিকে শক্তিশালী করে কলেজের জমি নির্দিষ্ট করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কলেজের জমি নির্দিষ্ঠ করে দীর্ঘদিনের অরক্ষিত সীমানায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। তবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের পরে কলেজের সীমানার ভেতরেই ৮ শতাংশ জমি নিজের স্ত্রী'র বলে দাবি করেন, কলেজের সাবেক শিক্ষক ও সাবেক ভূমি রক্ষা কমিটির প্রধান প্রফেসর স্বপন কুমার পাল। বেকে বসেন অধ্যক্ষ, কলেজের জমি সে কিছুতেই দিতে নারাজ সাবেক এই ভূমি কমিটির প্রধানকে।
ফলাফল, সাবেক এই শিক্ষক আদালতে মামলা করে দেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। যে মামলা বর্তমানে চলমান। এই বিষয়ে বর্তমান ভূমি কমিটির প্রধান প্রফেসর গোলাম রাব্বানী দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, স্বপন স্যার আমাদেরকে বসে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেছিলেন। তার অনুরোধে আমরা এক টেবিলে বসে ছিলাম। কিন্তু বসার পূর্বেই তিনি আদালতে মামলা ঢুঁকে দেন, যে কারণে আর বিষয়টি বসে সমাধান হয় নি। আমরাও আদালতে কাগজপত্র জমা দিয়েছি, বাকিটা আদালত রায় দিবে। স্বপন কুমার পাল ওই জমিতে রেসট্রিকশন দেওয়ার জন্য আদালতে একটি আবেদন করেছিলেন, যেন ওই জমিতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আদালত সেটি নাকচ করে দিয়েছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে দখলদারিত্বের আরো ভয়াবহ চিত্র।কলেজের জমি নিজের স্ত্রী'র নামে দলিল করে দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি। বরং কলেজের আশেপাশের যে সকল জমিগুলো বে-দখল হয়েছে তার প্রায় সবটাই প্রফেসর মকফুর হোসেন অধ্যক্ষ থাকাকালীন এবং প্রফেসর স্বপন কুমার পাল ভূমি কমিটির প্রধান থাকাকালীন সময়ে। বর্তমানে কলেজের পিঁছনে একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণাধিন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটিও দখল হয়েছে তাদের সময়ই। প্রফেসর মকফুর হোসেন এবং প্রফেসর স্বপন কুমার পালের ওই নির্মাণাধিন ভবনে ফ্লাট আছে বলেও জানা যায়।
এছাড়াও ওই সময়ে কলেজে কর্মরত, একাধিক শিক্ষকের ওই ভবনে ফ্লাট আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই বিষয়ে স্বপন কুমার পালের সাথে আমাদের বিস্তারিত কথা হয় কলেজের পেটের ভিতরে আপনার স্ত্রী'র নামে ৮ শতাংশ জমি এলো কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দৈনিক সকালের সময়কে জানান, এক ব্যক্তির কাছ থেকে তার স্ত্রী ওই জমি কিনে নিয়েছেন। কলেজের জমি নিজের স্ত্রী'র নামে কিভাবে কিনলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বপন কুমার পাল বলেন, ওটা কলেজের জমি নয়। আবুল কালাম আজাদ এবং তার কয়েকজন সহকারীর কাজ থেকে ওই জমি আমার স্ত্রী ২০১৬ সালে ক্রয় করে। এবং আমি স্বজ্ঞানেই ওই জমি কিনেছি ওটা অস্বীকার করার কিংবা লুকোচুরির কিছু নেই। আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে কলেজের জমি দখল হওয়ার দায়, আপনি এড়াতে পারেন কি -না? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বপন কুমার পাল বলেন, আমি শতভাগ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি দায়িত্ব নিয়ে দেখি ওখানে ৮০ শতাংশ জমি কলেজের নয়, বাইরের। তাই আমি ওই জমি ছেড়ে দিয়ে কলেজের সম্পত্তি নির্দিষ্ঠ করেছি। তার মানে আপনি কলেজের দখলে থাকা জমি অন্যকে বুঝিয়ে দিয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি কাউকে বুঝিয়ে দেই নি, আমি শুধু কলেজের জমি নির্দিষ্ট করেছি। ওটা কলেজের জমি নয়, শিক্ষার্থীরা তো যতদূর দেখা যায় সবই মনে করে বাঙলা কলেজের ;আসলে জানতে হবে কতটুকু সম্পত্তি কলেজের। ওই জমি তাহলে কাদের এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বপন কুমার পাল বলেন, ওই জমি টোলার বাগের নাসির সাহেব ও তার সংগঠন কিনে নিয়েছেন।ওই সংগঠনে পুলিশের কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা ও সরকারী কয়েকজন হাই অফিসার ও আছেন। শোনাযায় ,অনেক শিক্ষকের ওই ভবনে ফ্লাট আছে, এই বিষয়ে আপনি কিছু জানেন কি -না। উত্তরে স্বপন কুমার পাল নিজের ফ্লাট থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমিও জানি কয়েকজন শিক্ষকের ওই ভবনে ফ্লাট আছে কিন্তু কাদের আছে তা জানি না। যাদের আছে তারা কিনে নিয়েছেন আমার জমি না থাকলে হয়ত আমিও ওখানে ফ্লাট কিনতাম। এ বিষয়ে বর্তমান ভূমি কমিটির প্রধান প্রফেসর গোলাম রাব্বানী দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, কাদের ফ্লাট আছে আমি জানি না৷ তবে আমিও শুনেছি ওই ভবনে একাধিক শিক্ষকের ফ্লাট থাকার কথা।তোমরা খুঁজে দেখতে পারো। আর ওই ১০ তলার যায়গা আমাদের দাবি করার মতো পর্যাপ্ত দলিলপত্র এই মূহুর্তে আমাদের হাতে নেই তবে আমরা ওটা নিয়েও কাজ শুরু করেছি। এই বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, , আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে ভূমি কমিটিকে শক্তিশালী করে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে দীর্ঘদিনের অরক্ষিত সীমানায় বাউন্ডারি ওয়াল করেছি। এটা করতে গিয়ে আমি নিজে মামলা খেয়েছি। স্বপন কুমার পাল আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। সেই মামলায় আমাকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। তবে যত যা কিছুই হোক আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে কলেজের এক ইঞ্জি জমিও কাউকে দখল করতে দিবো না।
বিভিন্ন সময়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও তা তেমন কার্যকর হয় নি। কয়েকদিন শোরগোল এরপর সবাই অদৃশ্য কারণে থেমে গেছে। এই বিষয়ে বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন পলাশ দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে নতুন যে এমপি মহোদয় আসছেন তার কাছে আমাদের দাবি থাকবে, কলেজের বেদখল হওয়া জমিগুলো উদ্ধার করে দিবেন এবং ভবিষ্যত এ যেন দখল না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন।
মাঃ খাইরুল ইসলাম নামে আর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের জমি সম্পূর্ণ দখলমুক্ত চাই এবং সেই সাথে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনটিকে আবাসিক হল হিসেবে চাই। হাবিবুর রহমান নামে আর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা গর্বিত যে আমরা বাংলার ঐতিহ্য বহনকারী বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী কিন্তু কষ্ট হয় যখন দেখি ভূমিদস্যুর দল, একটি সরকারি কলেজের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে। ঢাকা ১৪ আসনের অনাগত সংসদ সদস্যের কাছে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর পক্ষ হতে জোরালো দাবি যেন অনতিবিলম্ব কলেজের জায়গা হতে এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা করেন।
এমএসএম / এমএসএম
বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতির ওপর ছাত্রদলের হামলা
বুয়েটের ধর্ষক শ্রীশান্ত রায়ের বিচারের দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন
সব লোকে কয় কী জাত সংসারে: গবিতে লালনের স্মরণোৎসব
বিশ্ব ডিম দিবসে বাকৃবিতে ১০ হাজার ডিম বিতরণ
আলোর মেলা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে: দীপাবলির রাতে প্রদীপের গল্প
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে বর্ষা-মাহির
জবি ছাত্রদল নেতা খুনে ক্ষোভ, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস স্থগিত ও দুই দিনের শোক ঘোষণা
অগ্নি দুর্ঘটনা: শিক্ষক-কর্মচারীদের সতর্ক থাকতে বলল মাউশি
বর্ষা মাহিরের প্রেমের বলি জবি ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ
জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী আটক
'ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড' শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও উপহার সামগ্রী দিল জবি শিবির
মতামতবিহীন মতবিনিময় সভায় পবিপ্রবিতে ইউজিসি চেয়ারম্যান: সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাধা
‘সি আর আবরার, আর নেই দরকার’ স্লোগানে শিক্ষকদের পতাকা মিছিল
Link Copied