ঢাকা বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫

বাংলাদেশ শিল্পকলা ‍একাডেমির অগ্রযাত্রা


নিজস্ব সংবাদদাতা photo নিজস্ব সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ২০-১-২০২২ দুপুর ২:১২

বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে বিকশিত করার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। কালের পরিক্রমায় তার সেই স্বপ্নের শিল্পকলা একাডেমি ফুলে, ফলে আজ সুশােভিত। ঢাকায় একাডেমি চত্বরে জাতীয় নাট্যশালা, জাতীয় চিত্রশালা, জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র, নন্দন মঞ্চসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় প্রতিদিন চলছে শিল্পযজ্ঞ।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এখন ৬৪ জেলা থেকে ৪৯৩ উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে। উপজেলা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণসহ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে। ৭৬টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক নির্মাণ, ১০০টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় নাট্যোৎসব আয়ােজন, ৬৪ জেলায় স্বপ্ন ও দ্রোহের নাটক নির্মাণ ও উৎসব আয়োজন, ৬৪ জেলায় সাহিত্যনির্ভর নাট্য নির্মাণ ও উৎসব আয়ােজন, মূল্যবােধের নাট্যোৎসব নির্মাণ, ঐতিহ্যবাহী নাট্যোৎসব আয়ােজন, ঢাকার মিরপুর, ফরিদপুর, রংপুর বধ্যভূমিতে এবং মেহেরপুরের মুজিবনগরে পরিবেশ থিয়েটার নির্মাণ, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে এবং উয়ারী-বটেশ্বরে প্রত্ননাটক নির্মাণ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়ােজন করায় ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে শিল্প-সংস্কৃতির আলাে প্রজ্বলন করার মহান দায়িত্ব পালন করছে।

১৬ কোটি মানুষের জন্য শিল্প সংস্কৃতির আলাে ছড়িয়ে দেবার লক্ষ্যে ঢাকায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব, জাতীয় ব্যয় সংগীত উৎসব, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উৎসব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব, শিশু চলচ্চিত্র উৎসবসহ জেলায় জেলায় শতাধিক চলচ্চিত্র উৎসব ও জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে আলােচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়ােজন সম্পন্ন হয়েছে। জেলায় জেলায় গড়ে তােলা হয়েছে ফোকলাের সেল, ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠী সেল, চলচ্চিত্র সংসদ, ঢাকায় গড়ে তােলা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কাইভ ও ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল কো-অর্ডিনেশন সেল। যাত্রাশিল্পের নীতিমালা তৈরি এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পুতুলনাট্যে বিশেষ অবদানের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে ‘পুতুলনাট্য পদক'।

ঢাকা আর্ট সামিট, এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল, সার্ক ফোক ডান্স ফ্যাস্টিভাল, এশিয়ান আর্ট ডিরেক্টরস ফোরাম, ঢাকা আর্ট সামিট, সার্ক হ্যান্ডিক্রাফট ভিলেজ, এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল, এশিয়ান থিয়েটার সামিটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আয়োজনেও একাডেমির ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। এছাড়া শিল্পকলায় সারাবছর শিশু, প্রবীণ, অবহেলিত শিশু, প্রতিবন্ধী, অটিষ্টিক এবং ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীদের নিয়ে অনুষ্ঠান আয়ােজনের মহতী কর্মের মাধ্যমে শিল্প সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে আমি মনে করি। কি জাতির দুর্ভাগ্য যে, স্বপ্নদ্রষ্টা তার সেই স্বপ্নের একাডেমির এই বিশাল কর্মকান্ড দেখে যেতে পারেননি। শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে এ দেশের কিছু বিপথগামী মানুষের বুলেটের আঘাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু নিজ বাড়ীতে নির্মমভাবে নিহত হন। আজকের এই দিনে তার এবং তাঁর নিহত পরিবারের সদস্যদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

৩ নভেম্বর কারাগারে বন্দি অবস্থায় নিহত বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর যারা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন সেই ৪ জাতীয় নেতাকে আমি কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্মরণ করি। সংস্কৃতির নানা শাখায় অবিরাম বিচরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকান্ড এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ প্রত্যক্ষ করছে। একাডেমি আয়ােজিত দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী, ত্রিবার্ষিক জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী এবং দ্বিবার্ষিক নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী শিল্পীদের মেধার বিকাশ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সঙ্গীত, নৃত্য, নাটকের ক্ষেত্রে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান, উৎসৰ আয়ােজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সংস্কৃতি পিপাসু মানুষকে করছে উজ্জীবিত এবং অনুপ্রাণিত।

দেশের শিল্পী ও শিল্পের বিকাশ, জেলা থেকে উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমির অবকাঠামাে নির্মাণসহ কার্যক্রমের সূচনা, লােক শিল্পের ঐতিহ্য সংরক্ষণ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শিল্প সংস্কৃতির প্রচার, প্রসার এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিল্পযয় আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি অনন্য অবদান রেখে চলেছে।

আমাদের প্রতীতি জন্মেছে যে, শিল্পীর কদর ছাড়া শিল্পের বিকাশ কোনভাবেই সম্ভব নয়। যে জাতি এটি করেছে সে জাতির শিল্প বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জীবনঘনিষ্ঠ শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসারের লক্ষ্যে শিল্পীদের মূল্যায়নের যে পদক্ষেপ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি গ্রহণ করেছে তা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

জামান / জামান