ধূসর কুয়াশায় ক্যাম্পাসে শীতের আমেজ

‘সকাল বেলায় শিশির ভেজা ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে, হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায় শরীর উঠে শিরশিরিয়ে’ কবি সুফিয়া কামালের এই কবিতার লাইন দুটোতে যেন মিশে আছে এই অপরূপ বাংলার প্রকৃতি। ধূসর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে যে যার মতো ছুটছে তার গন্তব্যে। উঁচু উঁচু গগনচুম্বী গাছের ডাল-পাতা ভেদ করে চলছে সূর্যকিরণের উঁকিঝুঁকি। আবার ক্ষণে ক্ষণে এক পশলা বৃষ্টি বাড়িয়ে দেয় শীতের আমেজ। ঠিক এমন চিত্রের দেখা মিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে।
বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ হলেও রাজশাহী, রংপুর যেন শীতের রাজধানী। হাড় কাঁপা শীতে সবার গায়ে উষ্ণ পোশাক জড়ানো, গাছে গাছে পাতা ঝড়ার উৎসব, ঘাসের ডগায় ডগায় শিশিরের আঁকিবুঁকিতে যেন শীতের চরম মুগ্ধতা অনুভূত হয়। এ ধরনের বৈশিষ্ট্য ছাড়া যেমন শীতকে কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনি বন্ধুদের সাথে আড্ডার ফাঁকে গরম গরম চা, ভাপা পিঠা আর সুর-বেসুরো কণ্ঠে এলোমেলো লিরিকের গান ছাড়াও ক্যাম্পাস জীবনে পূর্ণতা আসে না।
হেমন্তের স্নিগ্ধতা পেরিয়ে শীতের এই মৌসুমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেতেছে শীতের আমেজে। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা মিলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে কাঠ পোড়ানো আগুনকে ঘিরে বসে গানের আসর, অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে নেমে যায় শাটলের প্রতিযোগিতায়, কুয়াশায় চাঁদর মুড়িয়ে মধ্যরাতে ঘুরে বেড়ানোসহ তাদের পাওয়া যায় বিভিন্ন আঙ্গিকে। চলতে থাকে ভার্সিটির লোগো ও নাম সংবলিত হুডি বানানোর ধুম, চলে ভ্রমণের নানা পরিকল্পনা। এমন শীতে ক্যাম্পাসের ছাউনিবেষ্টিত দোকানে বসে চায়ের সঙ্গে বিস্কুট, হাসি-ঠাট্টা, আলোচান-সমালোচনার দিগন্তে ছুটে গিয়ে হঠাৎ ভিন্ন প্রসঙ্গে মোড় ঘুরা ইত্যাদি নানান চিত্র।
এদিকে ঘাস আর গমের ডগায় সোনালি রোদ লেগে ঝলমল করা শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে খেজুর গুড়ের নানান পিঠার কথা। কুয়াশার আবরণে ঢাকা বিস্তৃর্ণ ধানের মাঠ, শিশির ভেজা পথঘাট আর পাখির কলতানে মুখর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রান্তর।
৭৫৩ একরের সবুজে ঘেরা এই ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বর, প্যারিস রোড, বুদ্ধিজীবী চত্বর, আমতলাসহ পুরো ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা দেখে মনে হতে পারে এ শহর যেন এক স্বর্গ। কুয়াশার আভাস ছাড়িয়ে ভোরের রক্তিম সূর্য যখন পুর্ব আকাশে উঁকি দেয়, ঠিক তখনি সোনালি রোদের রঙচটা আলোয় শিশির জমা ঘাসগুলো চিকচিক করে ওঠে। শীতের সকালে খোলা মাঠের উপর শিশিরে সিক্ত ঘাস গুলোর নুয়ে পড়ার দৃশ্য, শিল্পীর রং-তুলি দিয়ে আঁকা ছবিকেও হার মানাবে। ভোরের এই মুগ্ধতা উপলব্ধি করতে উষ্ণ কম্বল ত্যাগ করে অনেকেই দল বেঁধে নেমে আসেন রাস্তায়।
এ ঋতুতে ক্যাম্পাসের রঙ-বেরঙের ফুল যেন সবার মন কাঁড়ে। গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, অ্যাস্টার, কসমস, জিনিয়া, সিলভিয়া, গাঁদাসহ নানান প্রজাতির ফুলের সৌরভে মুখরিত হয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি অঙ্গন। ক্যাম্পাসের এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটির দিনে ছুটে আসেন শত শত দর্শনার্থী। শীতের রুক্ষ আর শুষ্ক প্রকৃতির নাকি রঙ-রূপ হীন! অথচ প্রকৃতির প্রাচুর্যতায় ভরপুর এ ক্যাম্পাসটিতে রূপ লাবণ্যের কোনো ঘাটতি হয় না কখনোই। শীতে ক্যাম্পাসটির প্রকৃতি ও পরিবেশ সেঁজে ওঠে অন্যরকম সাঁজে।
শিক্ষার্থীরাও বেশ উচ্ছ্বাস আর আনন্দ নিয়েই উপভোগ করে প্রকৃতির এই শীতল অনুভূতি। টুকিটাকিতে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী রানা রায় বললেন, ‘সকালের মৃদুমন্দ নির্মল বাতাস আর কুয়াশা জড়ানো হিমেল হাওয়ার স্পর্শে অতৃপ্ত হৃদয় মুহূর্তেই তৃপ্ত হয়ে যায়। শীত যদিও সবার জন্য একটু কষ্টকর। তবুও ক্যাম্পাসে শীতের আমেজ ভালোই লাগছে।’
দুপুর পেরিয়ে বিকেল হলে ক্যাম্পাসে ঢল নামে নানামুখী মানুষের। পাখির কলরবে মাতোয়ারা হয়ে যায় শান্ত বিকেল। এদিকে সন্ধ্যা হলেই বাহারি পিঠার গন্ধে মৌ মৌ করে পশ্চিমপাড়া। হাঁটলে মনে হবে ছোট-খাটো পিঠার উৎসব। আর শীতের এই পিঠার স্বাদ নিতে সারাক্ষণ দোকানগুলোতে যেন ভিড় লেগেই থাকে। কেউবা দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পিঠা খাওয়া নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুঁটি শুরু হয়ে যায়। মাঝে মাঝে কে কয়টা পিঠা খাবে, তা নিয়েও হয়ে যায় প্রতিযোগিতা।
ক্যাম্পাসের ছোট্ট এই পিঠার দোকানগুলোতে বন্ধুরা মিলে যখন একসঙ্গে পিঠা খাওয়া হয়, তখন ক্ষণিকের জন্য মনে পড়ে যায় চুলার ধারে বসে মায়ের হাতের গরম গরম পিঠা খাওয়ার কথা। তাই হয়তো পরিবার-পরিজন থেকে শত শত মাইল দূরের ক্যাম্পাসই যেন হয়ে উঠেছে আরেকটা পরিবার।
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমদ বলেন, ’সন্ধ্যায় কুয়াশায় মোড়ানো এই শীতের সকালে গরম কাপড় জড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য। ক্যাম্পাসে শীতের পরিবেশ বেশ উপভোগ করি। রাস্তার পাশের ফুল গাছ আর পুকুর ভরা লাল শাপলা আমাকে মুগ্ধ করে।’
ষড়ঋতুর এই বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষার্থীরা এক শীতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করে, আবার কোন এক শীতে পড়াশোনা শেষে ফিরে যায় পরবর্তী গন্তব্য খুঁজতে। সময়ের পরিক্রমায় প্রতি বছর শীত আসবে, পরিযায়ী পাখি আসবে, কুয়াশা আসবে, রাস্তার মোড়ে পিঠার দোকান বসবে কিন্তু ক্যাম্পাসে কাটানো শীতের মুহূর্ত একটা নির্দিষ্ট সময় পর আর ছোঁয়া যাবে না।
শাফিন / শাফিন

ফেসবুক ছিল বিনোদনের জায়গা, এখন আয়ের মূল উৎস

তোমাদের মৃত্যুর দায় আমরা এড়াতে পারি না

সুফি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার ১ যুগ পার করল সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন

ব্যতিক্রমী ধারার আলো নেভার পথে

টেকসই কৃষির জন্য চাই জৈব বালাইনাশক

ঈদযাত্রা হোক দুর্ঘটনামুক্ত

রমজানে ভ্রমণে যে বিষয় মেনে চলা জরুরি

সুস্থ থাকার জন্য কেমন পানির ফিল্টার নির্বাচন করবেন

সাপের ক্ষিদে মেটাতে পাখিশূন্য দ্বীপ

একদিনের ট্যুরেই ঘুরে আসুন চীনামাটির পাহাড়ে

আধ্যাত্মিকর যাত্রা পথে সুফি মেডিটেশন এর গুরুত্ব

খাজা ওসমান ফারুকীর কুরআন দর্শন
