ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

সাভারে স্বামীর প্রতারণার শিকার স্কুল শিক্ষিকা


আমেদ জীবন, সাভার photo আমেদ জীবন, সাভার
প্রকাশিত: ২৪-২-২০২২ দুপুর ১১:২৯

রাজধানীতে যশোরের চৌগাছা উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত ছানার উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে মো. সিরাজুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয় রংপুর জেলার বদরগঞ্জ থানার সন্তোষপুর আফানের পাড়া গ্রামের মৃত আফান উদ্দিনের মেয়ে বীরফুল বেগমের। বিয়ের পর প্রতারণার শিকার হয়েছেন ওই গৃহবধূ। এ ঘটনায় গৃহবধূর ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সম্প্রতি তালাক প্রদান করেছেন প্রতারক সিরাজুল ইসলাম। আর এই কাণ্ডে তার সহযোগিতায় রয়েছেন একটি চক্র।

কয়েক দিন ধরেই প্রতারণার শিকার হয়ে বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন গৃহবধূ বীরফুল বেগম। তিনি সাভার পৌরসভার ছায়াবীথি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। বীরফুল বেগম সাভারের একটি স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তার প্রতারক স্বামীও একই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। স্ত্রীর বিশ্বস্ততা অর্জনে প্রতারক স্বামী মো. সিরাজুল ইসলামও সাভারের একটি টেইলার্সের দোকানে চাকরি নেন।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বীরফুল বেগমকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন মো. সিরাজুল ইসলাম। ৭ বছর ৭ মাস ২৭ দিন সংসার জীবনে বীরফুল বেগমের বাপের বাড়ির জমি বিক্রির প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ তাকে তালাক দেন।

যশোর জেলার চৌগাছা থানার মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজী ইমাম হোসেন জানান, সিরাজুল ইসলাম ছোটবেলা থেকেই উদ্ভট প্রকৃতির। লেখাপড়ায় পারদর্শী না হলেও ঠাণ্ডা ফুরফুরে কথায় অনেক মেয়ের সর্বনাশ করেছে সে। সিরাজুল ইসলাম বিয়ের আগে এলাকার উঠতি বয়সী মেয়েদের ডিস্টার্ব করার কারণে বিচার-সালিশ হয়। সালিশে তার বাবা ছানার উদ্দিন মণ্ডল সিরাইজযাকে বিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লিখিত মুচলেকায় বাড়িতে নিয়ে যান। তার বাবা মারা যাওয়ার পর সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আল্লাহ যেন তার বাবাকে জান্নাত দান করেন।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল শিক্ষক জানান, সিরাজুল ইসলাম যশোরের মোহাম্মদপুর গ্রামের মাস্টার নামে পরিচিত। তবে আমরা শিক্ষকতা পেশায় থাকলেও আমাদের থেকে তার মাস্টার নামের কদর অনেক বেশি। হাজী ইমাম হোসেনের কথার সূত্র ধরে ওই স্কুল শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকায় তাকে নিয়ে একবার সালিশ হয়। ওই সালিশের পর যশোরের সদর ইউনিয়নের আজিজ কমান্ডারের বোন অন্যের ঘরে সংসার করা অবস্থায় ফুসলে আছিয়া বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। তার ঔরসজাত হাফিজুর রহমান মিলন এবং নীলিমা বেগম নামে দুই সন্তান রয়েছে।

এ ব্যাপারে তার প্রথম স্ত্রী আছিয়া বেগমের আত্মীয় রহিমা বেগমের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমাদের আছিয়া অনেক ভালো মনের মানুষ ছিল। লম্পট সিরাজুল তার জীবনটা খাইল। আরো কয়েক দিন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারত, তবে সিরাজুল তাকে বাঁচতে দেয়নি। কী এমন হয়েছে জানতে চাইলে রহিমা বেগম বলেন, অনেক ঝয়-ঝামেলার পর সিরাজুল আছিয়াকে বিয়ে করে। দুইটা বাচ্চা, বড় ছেলে হাফিজুর রহমান মিলন এবং মেয়ে নীলিমা বেগম হওয়ার পর ঠুনকো বিষয় নিয়ে তালাক দেয় আছিয়াকে।

তালাকের ৬ মাসের মধ্যে রাজশাহীর রোজী বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের ২ বছর সংসার করার পর তাকেও তালাক দেয় সিরাজুল ইসলাম নামের ওই প্রতারক। রোজিকে তালাকের ৩ মাসের মধ্যে আবারো প্রথম স্ত্রী আছিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। ১৯৮৯ সালে আবারো আছিয়ার গর্ভে সন্তান ধারণ করেন সিরাজুল ইসলাম। পরে দিলারা ইসলাম মনিরা নামের আরেক কন্যা সন্তান জন্ম হয়।

এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় সিরাজুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী রাজশাহীর রোজী বেগমের সঙ্গে তিনি জানান, তার প্রথম স্ত্রী ছিল এমনটা জানলে আগে কখনই ওই প্রতারককে বিয়ে করতাম না। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সে আমাকে বিভিন্নভাবে প্রস্তাব পাঠিয়ে আমার পরিবার এবং আমাকে রাজি করায় কিন্তু বিয়ের পর পর তার অস্বাভাবিক চলাফেরা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হলে তার এলাকা যশোরে যাই। খবর পাই তার আগে বিয়ে আছে এবং ওই ঘরে দুই সন্তান রয়েছে। এরপর শুরু হয় ঝগড়া। পরে আমাকে সে জোরপূর্বক তালাক দেয়। আবারও সেই আগের সংসারে মগ্ন থাকে। আল্লাহ ওর বিচার করবে, বলতে বলতে কেঁদে দেন ওই নারী।

প্রথম স্ত্রী আছিয়া বেগমের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে আবারো যোগাযোগ করা হয় আত্মীয় রহিমা বেগমের সাথে। পরবর্তীতে তিনি বলেন, আছিয়া বেগমের মতো নারী ঘরে ঘরে প্রয়োজন। ওর মতো মেয়ে হয় না। কিন্তু লম্পট সিরাজুল ইসলামের মতো স্বামীদের জন্য তাদের ভাগ্য খারাপ হয়। কী আর বলবো.? ২০১৩ সালে ছেলের বউ আমাদের বৌমা মঞ্জুয়ারার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ায় শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম। পরে সংসার টেকানোর জন্য ছেলে ক্ষুব্ধ হলে ছেলের বউয়ের নামে তার নিজস্ব দুই তলা ভবন লিখে দেন। এই দুঃখে তার প্রথম স্ত্রী আছিয়া বেগম স্ট্রোক করে ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর শুক্রবার মারা যান।

এরপর ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০ হাজার টাকার কাবিন মূলে স্বামী পরিত্যক্তা বীরফুল বেগমকে (বিপুল) বিয়ে করেন সিরাজুল ইসলাম নামের ওই ছদ্মবেশী। শুরু হয় সংসার এবং লগ্ন মাধুরীর প্রতারণা। 

প্রতারণার শিকার গৃহবধূ বীরফুল বেগম বলেন, আমি পড়ালেখা করা অবস্থায় এনজিওতে চাকরি নেই। এরপর আমার বিয়ে হয়। সংসার জীবন ও এনজিওতে চাকরি করার সুবাদে যশোর জেলায় বসবাস শুরু করি। সেখানে সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে বাসা ভাড়া নেই। আমার প্রথম স্বামী এক হত্যা মামলায় জড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়।  সেই ঘরে আমার এক পুত্রসন্তান রয়েছে।

আমার দণ্ডিত স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি জেলগেট থেকে আমাকে ফিরিয়ে দেন। দীর্ঘদিন ধরে আমি সন্তানকে নিয়েই চাকরি করে জীবনযাপন করি। একপর্যায়ে  সিরাজুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তার কন্যারা আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমাকে বলে আন্টি আমার মা মারা যাওয়ার পর থেকেই বাবা কেমন যেন হয়ে গেছে। অন্য মেয়েদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে আমাদের ইজ্জত নষ্ট হয়ে যাবে। প্লিজ আমার বাবার জীবনে আপনি স্ত্রী হিসেবে আমাদের আগলে রাখুন। কিছুদিন সময় নেই। তাদের উপর্যুপরি চাপ এবং আমার অসহায়ত্ব, সব দিক চিন্তা করে যথাযথ আইন মেনে সিরাজুল ইসলামকে দ্বিতীয় বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই।

রাজধানীর মিরপুরে সিরাজুলের মেয়ে নীলিমা বেগমের বাসস্থান সংলগ্ন পল্লবীর কাজী আবদুল হোসেন সিদ্দিকীর অফিসে আমাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে ২০ হাজার টাকা কাবিননামায় বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। সেখানেও বীরফুল বেগমের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী তার সিরাজুলের তৃতীয় স্ত্রী হওয়ার কথা।

প্রতিবেদকের হাতে আসা অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর গৃহবধূ বীরফুল বেগমকে তালাক প্রদান করে প্রতারক মো. সিরাজুল ইসলাম। তালাক প্রদানের তিন মাস না পেরোতেই ২ মাস ২২ দিনের মাথায় ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি আরেক স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে বিয়ে করেন সিরাজুল।

তাদের ৭ বছর ৭ মাস ২৭ দিন সংসার চলাকালে ২০১৭ সালের ২৫ জুন রোড এক্সিডেন্ট করে পা ভেঙ্গে দীর্ঘ এক বছর সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। এই সমস্ত চিকিৎসার প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ভার বহন করেন গৃহবধূ বীরফুল বেগম। এতে মন গলে যায় প্রতারক সিরাজুলের, পরে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর যশোরের ৯৬নং মোহাম্মদপুর মৌজার আরএস ৬৩নং খতিয়ানের মালিকের ওয়ারিশসূত্র হিসেবে আরএস ৪০৪নং দাগের ১০ শতক জমি বীরফুল বেগমকে লিখে দেন, দলিল নং ৫৭৩৮/১৮।

এদিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতারক চক্রটি সিরাজুল কর্তৃক বীরফুল বেগমকে দেয়া ওই ১০ শতক জমি পেতে ছেলের বউ মঞ্জুয়ারার চাপে তালাকের ৮ দিনের মাথায় দলিলটি (৫৭৩৮/১৮) বাতিল চেয়ে যশোরের চৌগাছায় সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং - ২৯৪/২১) যা বিচারাধীন। আবার ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর একই ভাবে জমিটি  যেন নামজারি (খারিজ) না করা হয়, যশোরের চৌগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর এমন একটি আবেদনপত্র দেয় প্রতারক মো. সিরাজুল ইসলাম। বিচারক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ন্যায়বিচারের আবেদন জানিয়েছেন প্রতারণার শিকার গৃহবধূ বীরফুল বেগম।

এদিকে বীরফুল বেগম বাদী হয়ে রংপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বদরগঞ্জ আমলি আদালতে প্রতারক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং ২৭/২২)।

অভিযোগের বিষয়ে সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার ওপর অত্যাচারের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে, সে একজন স্ত্রীলোক হয়ে আমাকে শারীরিক অত্যাচারের চরম পর্যায়ে নিয়ে যায়। এজন্য সাভারের বাসার আসবাবপত্র রেখে মিরপুরে মেয়েদের কাছে চলে যাই। তার সাথে এখন আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার দেয়া জমিটুকু আমি নিয়ে নেব। খোরপোষসহ তালাক দিয়ে সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অন্য এক প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করেন।

এমএসএম / জামান

আশুলিয়ার জামগড়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক

অবৈধভাবে কানাডা থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতা বালু পাপ্পির নিরব চাঁদাবাজি

চুয়াডাঙ্গায় বিষাক্ত মদে ছয়জনের প্রাণহানি

মধুখালী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রেসক্লাবের সভাপতি সহ তিনজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

বারহাট্টায় আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

নোয়াখালী সুবর্ণচরে রাস্তায় প্রকাশ্যে যুবককে গলা কেটে হত্যা

টাঙ্গাইলকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবিতে উত্তাল যমুনা সেতু মহাসড়ক

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে জয়পুরহাটে আলোচনা সভা

মাগুরায় আসন্ন কাবাডি ও ক্রিকেট লীগ উপলক্ষে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠিত

পঞ্চগড়ে ঘরে ঘরে জনে জনে কর্মসূচি নিয়ে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির

বিরামপুরে দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

নাচোলে তে-ভাগা আন্দোলনের বীরাঙ্গনা নেত্রী ইলামিত্রের ২৩ তম মৃত্যু বাষিকী পালিত

পিরোজপুরে উদ্দীপনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালন