একটি বিদ্ধাশ্রম শত বাবা-মায়ের অভিশাপ
আবেগ সৃস্টিকর্তা প্রদত্ত এক ইন্দ্রিয় অনুভতি।জন্মগত ভাবেই প্রতিটি মানুষ আবেগ প্রবন হয়ে থাকে।আবেগের কেন্দ্রবিন্দু শুরু হয় পরিবার থেকেই।একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন জন্মের পর পরি একটি শিশু তার মার কোলে গেলেই শান্ত হয়ে যায় এবং তখন থেকেই সে বুজতে শিখে কে তার বাবা এবং কে তার মা।বাবা মাও স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বড় হয়ে তাকে ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার,পাইলট বানাবে।ছোটবেলা থেকেই বাবা মা আমাদের ভাবে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করে,বড় হয়ে যাওয়ার পরও আমরা তাদের কাছে সেই ছোট বেলার শিশুর মতোই থাকি।কিশোর বয়সেও আমরা অনেক ক্ষেত্রে ভুল করে ফেলি সেই ক্ষেত্রে বাবা মা’ই আমাদের শাসন করে ভুল শুধরে দেয় তবে সময়ের স্রোতের পরিবর্তনের মাদ্ধমে আমাদের মনের আবেগ এবং জ্ঞান নামক বিষয়টির পরিবর্তন হয়ে যায় এবং একই সাথে পরিবর্তন হয় আমাদের মন মানসিকতার।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের পর আমরা প্রবেশ করি বাস্তবতার জগতে।জীবিকা উপার্জনের জন্য প্রতিযোগিতার মতো করে শুরু হয় জীবন যুদ্ধ সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের একটি ভালো চাকরির জন্য এখান সেখানে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। চাকরি হয়ে যাবার পর বিয়ে করে পারিবারিক দায়িত্ত নিতে হয় ।দায়িত্ব পালনের মাদ্ধমেই একজন ব্যাক্তি হয়ে উঠে দায়িত্ববান পুরুষ।এটাই আমাদের সমাজের পুরুষদের সামাজিক বৈশিষ্ট।কিন্তু এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় আবেগের এবং জ্ঞানের ভুল ব্যবহার করে থাকি।কারণ প্রতিটা বাবা মার্ তার সন্তানের কাছে কিছু প্রত্যাশা থাকে কিন্তু দুঃখ হয় তখন বড় হয়ে সেই সন্তান যখন বাবা মার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়।বাবা-মা’দের স্বপ্ন একটাই যে তাদের সন্তান মানুষের মতো মানুষ হবে এবং তাদের প্রতি খেয়াল রাখবে, শুধুএতটুকুই চাওয়া থাকে।কিন্তু আমাদের সমাজের এমন অনেক সন্তান আছে যাদের কাছে বাবা মা বৃদ্ধ বয়সে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়,অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়।
একটা বিষয় ভাবুন যখন আপনি আমি ছোট ছিলাম তখন একটু কান্না করলেই বাবা মা কত উদ্বিগ্ন হয়ে যেত,অসুস্থ হলে রাতের পর রাত নির্ঘুম থেকে আমাদের সুস্থ করে তুলতো।কিন্তু বাবা মা’কে নিয়ে এখনকার দায়িত্ববান সন্তানরা কতটুকুই বা যত্নবান থাকে! এখন পত্র-পত্রিকা খুললেই দেখা যায় অমুক জায়গায় বাবা অথবা মা কে তার সন্তান ঘর থেকে বের করে দিয়েছে বা বৃদ্ধাশ্রমে দিয়েছে।যেই বাবা মা সন্তান কে মানুষ করতে আজীবন পার করে দেয় সেই বাবা মাকেই সন্তানরা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে!! ধিক্কার জানাই সেসব সন্তানকে এমন জঘন্য কাজের জন্য।একবার কল্পনা করুন আপনার সন্তান এখন অনেক ছোট কিন্তু এই সন্তানই বড় হয়ে যদি আপনার সাথে এমন করে তখন আপনার অনুভুতিটা কেমন হবে ?? আপনি তো আপনার সন্তান কে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছেন সে বড় হয়ে আপনার প্রতি দায়িত্ত পালন করবে!! কিন্তু যদি এর বিপরীত হয় ?এটা কল্পনা করতে গিয়ে নিশ্চই আপনি শিহরিত হচ্ছেন!আমাদের দেশে মাতা পিতার প্রতি সরকারি কোনো আইন করেও এর সমাধান হবে না। সন্তানকে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা দিলেই হবে না তার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে তাকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করাও বাবা মার দায়িত্ব যাতে সে সে ছোট বেলা থেকে মাতা পিতার কর্তব্যের প্রতি ওয়াকিবহাল থাকতে পারে এবংবড় হয়েও তা পালন করে।
দেশে শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই কিন্তু প্রকৃত বিবেকবান জ্ঞানী মানুষের অনেক অভাব।আমরা যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে সন্তানকে সমাজে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার অন্ধ প্রতিযোগিতায় মেতে থাকি কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার প্রতি কতটুকুই ভাবি? শিশু অবস্থায় আমরা যেরকম অসহায় ছিলাম বৃদ্ধ বয়সে বাবা মাও সেরকম অসহায় হয়ে পরে কারণ আমাদের বড় করতেই তারা কখন যে বার্ধককে পরিণত হয় তারা নিজেরাই জানে না ।আমাদের সবারই উচিত সবসময় বাবা মার্ প্রতি খেয়াল রাখা সর্ব অবস্থায় ঠিক যেমনটা আমাদের ছোটবেলায় তারা খেয়াল রেখেছিলো।ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বললেও পৃথিবীর সকল ধর্মের মধ্যেই মাতা পিতার প্রতি দায়িত্ত পালনের ব্যাপারে বলা হয়েছে।একজন বাবা মা তখনি স্বার্থক হয় যখন তার সন্তান বড় হয়ে তাদেরকে অবহেলা না করে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে। আর কোনো বাবা মা’র আশ্রয় যাতে বিদ্ধাশ্রম না হয় সেটাই আমাদের প্রত্যাশা কারণ একটি বিদ্ধাশ্রম শত বাবা-মায়ের অভিশাপ
এমএসএম / এমএসএম