ঢাকা বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে বিশেষায়িত হাসপাতালের অভাবে বাড়ছে ভোগান্তি


এসএম পিন্টু, চট্টগ্রাম ব্যুরো photo এসএম পিন্টু, চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশিত: ৬-৪-২০২২ দুপুর ১:৪৯

রাজধানী ঢাকার পর চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা করা হলেও এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠী চিকিৎসাসেবায় অনেক পিছিয়ে। চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত পরিমান বিশ^মানের ও বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই। জনসংখ্যার অনুপাতে চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যাও অনেক কম। ফলে সঠিক স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকারের কাছে একাধিক বিশেষায়িত ও বিশ^মানের হাসপাতাল স্থাপনের দাবি বিভিন্ন মহল থেকে ওঠলেও তা আলোর মুখ দেখছে না। বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসতে চাইলেও নানা জটিলতায় তাও ভেস্তে যাচ্ছে। ফলে উন্নত চিকিৎসাসহ ভ্রমণে প্রতি বছর চট্টগ্রাম থেকে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক, মা ও শিশু, কিডনি, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি, মানসিক রোগসহ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামে। এছাড়া চিকিৎসা সেবা নিতে চট্টগ্রামের রোগীদের বিদেশমুখী থেকে ফেরাতে বিশ^মানের বেশ কিছু বিশ^মানের বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপন জরুরি হয়েছে পড়েছে। 

তারা বলছেন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলাসহ নগর ও উপজেলা মিলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোক বসবাস করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বৃত্তি দিয়ে তারা বলেন, প্রতি হাজার মানুষের বিপরীতে শয্যা থাকতে হবে ৩ দশমিক ৫টি। তবে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর এলাকায় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে মাত্র  ১৫৩টি। যা চট্টগ্রামে হাসপাতালগুলোতে থাকা শয্যা সংখ্যা অবিশ^াস্য অপ্রতুল।

 চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে চট্টগ্রামের অবস্থান দ্বিতীয়। তারপরও চিকিৎসা সেবায় অনেকটা পিয়েছে রয়েছে চট্টগ্রাম। বিভাগের একমাত্র বৃহৎ সরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ৫০০ শয্যার অবকাঠামোতে একের পর এক শয্যা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ১৩১৩ তে পৌঁছেছে। বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে রোগীরা সরকারি এ হাসপাতালে আসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৩১৩ শষ্যা হলেও প্রতিদিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকে গড়ে ২৮শ  রোগী। এছাড়া আউটডোরে চিকিৎসা নেন কয়েক হাজার রোগী। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি হন। এতে হিমশিম খান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রয়েছে মাত্র ১২ শয্যার আইসিইউ। বিশেষায়িত হাসপাতাল না থাকার কারণে চমেক হাসপাতালে রোগীর এই অত্যধিক চাপ।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘আমাদের পাঁচ শ বেডের হাসপাতাল। ১৩১৩ শয্যার অনুমোদন আছে খাবার আর বরাদ্দের জন্য। কিন্তু এখানে রোগী পাবেন তিন হাজার। স্থানের স্বল্পতার জন্য রোগী ফ্লোরে, বারান্দায় এমনকি সিঁড়িতে পর্যন্ত রেখেছি। 
বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবার প্রায় ৬৩% চিকিৎসা বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত প্রদান করছে। সরকারি হাসপাতালে শয্যাসংকট, জনবলের অপ্রতুলতার কারণে মানুষের বেসরকারি হাসপাতালের প্রতি উৎসাহ বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা। কিন্তু অনেকগুলো মানসম্মত নয়। চট্টগ্রামে একদিকে যেমন পাঁচ তারকাবিশিষ্ট বিলাসবহুল হাসপাতাল রয়েছে, তেমনই রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ নিম্নমানের ক্লিনিক।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর এলাকায় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৫৩টি। এরমধ্যে শুধু চট্টগ্রাম মহানগরেই ৯৩টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া হাটহাজারীতে ১০টি, মিরসরাইয়ে ৮টি, ফটিকছড়িতে ৭টি, লোহাগাড়ায় ৬টি, সীতাকুণ্ড ও সাতকানিয়ায় ৫টি, পটিয়ায় ৪টি, রাঙঙ্গুনিয়া, রাউজান, বাঁশখালী ও চন্দনাইশে ৩টি, বোয়ালখালী, আনোয়ারা এবং সন্দ্বীপে ২টি করে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।  
এসব হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে মেলে নিম্নমানের চিকিৎসা সেবা। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত দুর্বলতাও রয়েছে। বেশিরভাগ হাসপাতালে নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ও আইসিইউ। এছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ভালোমানের যন্ত্রপাতি না থাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ রিঅ্যাজেন্ট ব্যবহারে পাওয়া যায় ক্রুটিযুক্ত ডায়াগনসিস রিপোর্ট।  
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতাল পরিচালনায় মানসম্মত চিকিৎসক ও দক্ষ জনবল না থাকায় চিকিৎসার মানোন্নয়ন করা যাচ্ছে না। তাছাড়া অর্থ উপার্জন মুখ্য হওয়ায় রোগী-চিকিৎসকের সম্পর্ক ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কে পরিণত হয়েছে।  এসব হাসপাতাল উন্নত হলে চিকিৎসা সেবা নিতে রোগীকে বিদেশমুখি হতে হবে না।  
বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রামে কয়েকটি বিশেষায়িত ও বিশ^মানের হাসপাতাল খুবই জরুরি। সময়ক্ষেপণ না করে জরুরিভিত্তিতে বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল করলে এই অঞ্চলের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে না।বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. মজিবুল হক খান বলেন, দেশ স্বাধীনের এতো বছর পরও একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল চট্টগ্রামে না থাকাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। 

চট্টগ্রাম থেকে বিদেশে চিকিৎসা সেবা দিতে কাজ করে এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উন্নত চিকিৎসাসহ ভ্রমণে প্রতি বছর চট্টগ্রাম থেকে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে হাজার  কোটি টাকা। তারা বলেন, দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণির কিছু মানুষ বিদেশে যাবেই। তবে উচ্চমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের বিদেশগামিতা কমাতে হলে দেশে বেসরকারি খাতে হাসপাতাল সৃষ্টি এবং সেবার মান বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হতে হবে। একটু উদ্যোগী হলে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে দেশেই মানুষ উন্নতমানের আধুনিক চিকিৎসা পাবে, যা রোগীদের বিদেশগামিতা কমাতে সহায়তা করবে। 

সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশের  প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ জন অবহিতকরণ’ সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, চিকিৎসা খাতে প্রতি বছর বিদেশে চলে যাচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। আমাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা যদি ভালো হতো, উন্নত হতো, তাহলে এত টাকা বিদেশে চলে যেত না। এই টাকা ধরে রাখতে হলে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করতে হবে।চমেক হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান বলেন, চট্টগ্রামে আরো হাসপাতাল যে কতো প্রয়োজন চট্টগ্রাম মেডিকেলে গেলে তা বুঝা যায়। চট্টগ্রাম বিভাগের এমন কোনো জায়গা নেই যেখান থেকে রোগী আসছে না। কিন্তু রোগীর অধিক চাপের কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া কষ্ট হয়ে যায়।

 চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় সাড়ে তিন কোটি জনসংখ্যা হলেও পর্যাপ্ত হাসপাতালের অভাবে এই অঞ্চলের মানুষকে অন্যত্র যেতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে রোগীর যে চাপ তা কমানোর জন্য এই মুহূর্তে অন্তত ৪/৫টি বিশেষায়িত ও বিশ^মানের হাসপাতাল প্রয়োজন। 
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবার মান ঠিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়ে কাজের অগ্রগতি রয়েছে। এরমধ্যে শিশু হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল, বার্ন ইনস্টিটিউট এবং আগ্রাবাদ-হালিশহর এলাকায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একটি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামিতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে যেতে পারবো। সীমিত সম্পদের মধ্যে কিভাবে রোগীদের ভালো সেবা দেওয়া যায় সেই চেষ্টা  আমাদের রয়েছে।  

এমএসএম / এমএসএম

থামছেই না ছড়াও, দখল করে ভবন নির্মাণ কাজ

বাঁশখালীতে রিক্সা চালক শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটির বার্ষিক সাধারণ সভা

নোয়াখালীতে যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ সভা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ -২ এ,ধানের শীষের কান্ডারী ইঞ্জি: মাসুদ'কে চায় সাধারণ মানুষ ও বিএনপি'র নেতাকর্মীরা

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জুয়েলের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ

কাউনিয়ায় মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টায় পিতা পুলিশের হাতে

বাঁশখালীতে জমি বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত, গ্রেপ্তার-৩

নন্দীগ্রামে সিএনজি চালককে অপহরণ ও মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

সুবর্ণচরে আশার আলো সমাজ কল্যাণ সংগঠনের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি

সহকারী এটর্নি জেনারেল হলেন পেকুয়ার কেএম সাইফুল ইসলাম

৭ই নভেম্বর উদযাপন ও খন্দকার নাসিরের মনোনয়ন এর দাবিতে মধুখালী বিএনপির জরুরী সভা

ভোলা-১ আসনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে বিজেপি, নির্বাচনি প্রচার ও র‍্যালী অনুষ্ঠিত

বগুড়ায় চালককে হত্যা করে অটোরিক্সা ছিনতাই