ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

আমি হিজাব বা ধর্মীয় বিষয়ে কোনো কথা বলিনি : আমোদিনী পাল


পত্নীতলা সংবাদদাতা photo পত্নীতলা সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ৯-৪-২০২২ দুপুর ২:২১

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘হিজাব পরার কারণে’ ছাত্রীদের পেটানোর যে অভিযোগ উঠেছে তাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার’ বলছেন সেই শিক্ষিকা। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল বলছেন, স্কুল ইউনিফর্ম নিয়ম না মানায় তিনি কয়েক ছাত্রীকে ‘শাসন’ করেছেন। সেখানে হিজাবের কোনো বিষয় ছিল না।

তার অভিযোগ, স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির ‘বড় সমস্যা আড়াল করতে’ এবং নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন মহল ‘সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক এই ভিত্তিহীন মিথ্যাচার‘ করছে। গত বুধবারের ঘটনার পর আমোদিনী পালকে কারণ দর্শানোর নোটিস (শোকজ) দেয়া হয়েছে। তাকে ৭ দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে বলেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া ঘটনা তদন্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একটি কমিটি করে দিয়েছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠিত ওই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ওই ঘটনা বুধ ও বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নামাভাবে প্রচারিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার আমোদিনী পাল ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। সেখানে শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলমও ছিলেন এবং তিনি ইউনিফর্মের নিয়ম না মানায় ছেলেদের শাসন করেন। তাহলে বদিউল আলমের কথা না বলে হিজাব জড়িয়ে কেবল তার কথা কেন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন আমোদিনী পাল।

শুক্রবার দাউল বারবাকপুর এলাকায় গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে দুই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। একপক্ষের অভিযোগ, হিজাব পরার কারণে ছাত্রীদের পেটানো হয়েছে। অপরপক্ষের দাবি, স্কুলের ইউনিফর্ম না পরায় ছাত্র ও ছাত্রী উভয়েকেই বেত মারা হয়েছে।

কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক অভিযোগ করেন, বুধবার স্কুলে জাতীয় সংগীতের পর সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ও শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ১৮ ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ‘হিজাব পরার কারণে’ গালমন্দ করেন এবং পিটুনি দেন। সন্তানদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে পরদিন সকালে অভিভাবকরা স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। কিন্তু দুই শিক্ষকের কেউ সেদিন স্কুলে যাননি। এ সময় বিক্ষুব্ধরা স্কুলের চেয়ার ভাংচুর করেন।

স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ম্যাডাম এসে আমাকে ও আমার কয়েকজন সহপাঠীকে বলেন, তোমরা হিজাব পরে আসছ কেন? তখন আমরা বলি, স্কুল ড্রেস পরে তারপর হিজাব পরেছি। কয়েকজন হিজাববিহীন ছাত্রীকে দেখিয়ে ম্যাডাম বলেন, এদের মতো করে স্কুলের নিয়ম মেনে আসতে হবে। এই বলে তিনি আমিসহ আরো কয়েকজনকে ছড়ি দিয়ে হাতে-পিঠে মারেন। পরে বাড়ি এসে বিষয়টি আমাদের বাবাকে জানাই।

স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র বলে, আমোদিনী ম্যাডাম সেদিন আমাদের সামনে পাঁচ-ছয়জন ছাত্র এবং ১০-১৫ জন ছাত্রীকে মেরেছেন। সঙ্গে বদিউল আলম স্যারও মেরেছেন।

তবে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বলেছে, হিজাবের জন্য নয়, স্কুল ড্রেস না পরায় ৮ থেকে ১০ জনকে মারা হয়েছে। এখন হয়তো ম্যাডামকে ফাঁসাতে হিজাবের কথা বলা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহাদত হোসেন রতন বলেন, বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষায় মেয়েদের আমোদিনী ম্যাডাম এবং ছেলেদের বদিউল আলম স্যার শাসন করেছেন। এখানে হিজাব নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তার দাবি, স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ কেউ হয়তো এই অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

দাউল বারবাকপুর গ্রামের অভিভাবক আরিফ হোসেন ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

২২ বছর ধরে এ স্কুলে আছেন আমোদিনী পাল, পদোন্নতি পেয়ে তিনি এখন সহকারী প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেছেন, বুধবার রাতে শামীম আহমেদ জয় নামে স্থানীয় একজনের ফেসবুক আইডি থেকে প্রথম এ ধরনের অভিযোগ পোস্ট করা হয়। রাতে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কথা বলেননি। পরে রাতে আবার ওই পোস্ট ডিলিট করে দেন।

‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এসব করা হচ্ছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ের আসার জন্য অনেককে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সেটি শোনেনি। আমি তাদের স্কুল ড্রেস পরে আসার কথা বলি এবং নামমাত্র শাসন করি।

এই শিক্ষক বলেন, স্কুলে ১০ বছর অনেক সমস্যা ছিল, যার ফলে স্কুলে অনেক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এখন প্রধান শিক্ষকের চাকরি শেষের পথে, যার ফলে বিভিন্ন মহল নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অপপ্রচার করছে। যেহেতু আমি হিন্দু শিক্ষক, সেহেতু একটা দাঙ্গা সৃষ্টির উসকানির মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। কমিটির মেজর সমস্যা আড়াল করার জন্য বিনা দোষে আমাকে অপরাধী করার চেষ্টা করছে। আমি হিজাব বা ধর্মীয় বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। এই অপপ্রচার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ বলেন, ঘটনার দিন তিনি অফিসের কাজে রাজশাহী ছিলেন। পরদিন স্কুলে পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রীদের সাথে কথা বলেন। তারা জানায়, ‘হিজাব পরার কারণে’ তাদের মেরেছেন শিক্ষিকা আমোদিনী পাল। আমি বিষয়টি জানার পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করি এবং উনার পরামর্শে ও নির্দেশে সহকারী প্রধান শিক্ষিকাকে শোকজ করা হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনী যে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন, তা ঠিক নয় বলে দাবি করেন প্রধান শিক্ষক।

তিনি বলেন, আমোদিনী পাল আমার সম্পর্কে যা বলেছেন তা ঠিক নয়। আমি কেন আমার সহকর্মীকে ফাঁসাতে যাব? আমরা উভয়েই তো সংখ্যালঘু।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার পুরনো কমিটি ভেঙে সম্প্রতি নতুন আহ্বায়ক কমিটির গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান সুমন বলেন, ঘটনার মাত্র এক দিন আগে আমাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে কমিটির সভায় আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনে সহকারী প্রধান শিক্ষিকাকে ‘শোকজ’ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রোববার তিনি নিজে স্কুলে যাবেন এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হবে।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে ওই এলাকায় যান। তিন বলেন, আমি সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা ওই এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেছি।

মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ওই শিক্ষিকার বাড়িতে পুলিশ পাহারা রাখা হয়েছে। আর ঘটনাটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি আমরা।

এদিকে শুক্রবার (৮ এপ্রিল) ওই শিক্ষিকার একটি ভিডিও বার্তা পুরো ঘটনার বিবরণ দেন এই শিক্ষিকা। এতে তিনি বলেন, স্কুল ড্রেস পরে না আসায় শিক্ষার্থীদের খুবই সামান্য শাসন করা হয়েছে। এর সাথে হিজাবের কোনো দূরতম সম্পর্ক নেই। বিষয়টি নিয়ে এখন ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

ভিডিও বার্তায় আমোদিনী পাল বলেন, ‘আমি অনলাইনে প্রতিবাদ জানাচ্ছি যে, গত ৬/৪/২০২২ রাতে হিজাব পরে বিদ্যালয়ে যাওয়ায় ছাত্রীদের বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে একটি ফেসবুক আইডি থেকে এমন একটা পোস্ট দেয়া হয়। পরে বিভিন্নজন ফেসবুক পোস্টটি ছড়িয়ে দেন, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যাচার। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি ২২ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিবারের মতো কাজ করে আসছি। গত ৬/৪/২০২২ শিক্ষার্থীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বারবার বলার পরও অনেকেই স্কুল ড্রেস না পরেই বিদ্যালয়ে আসে। এ সময় আমি স্কুল ড্রেস নিয়ে শিক্ষার্থীদের বলি ও নামমাত্র শাসন করি।’

ভিডিও বার্তায় আমোদিনী পাল নিজেকে স্কুলের গ্রুপিং কোন্দল ও অপরাজনীতির শিকার বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘১০ বছর ধরে স্কুলে বিভিন্ন সমস্যা ছিল। এসবের সুযোগে বিভিন্ন গ্রুপ সৃষ্টি হয়। এদিকে প্রধান শিক্ষকের চাকরির বয়স শেষ। এ অবস্থায় বিভিন্ন মহল নিজ স্বার্থ উদ্ধারে অপপ্রচার করছে। আমি হিন্দু বলে আমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কমিটি ও প্রতিষ্ঠানের সমস্যা আড়াল করতে আমাকে বিনা দোষে অপরাধী করার চেষ্টা চলছে। আমি হিজাব বা ধর্মীয় বিষয়ে কোনো কথা বলিনি।’

বিষয়টি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার জন্য এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী, সহকর্মীসহ সবার প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শুক্রবার দুপুরে নওগাঁ জেলা শহরের লিটন ব্রিজের পাশে মানববন্ধন করেছে। সেখানে শিক্ষক আমোদিনী পালের বিচারের দাবি তুলেছে তারা।

এমএসএম / জামান

নবীনগরে কৃষকদলের কৃষক সমাবেশ

আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট প্রমাণিত হওয়ায় উশ্যেপ্রু মারমাকে জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে বহিস্কার

মনিংসান কিন্ডার গার্টেন এর বার্ষিক ফল প্রকাশ ও অভিভাবক সমাবেশ

ধামইরহাটে ২শতাধিক শীতার্তদের মাঝে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের শীতবস্ত্র বিতরণ

অভয়নগরে কওমী ইসলামিক স্কুলের বর্ষ সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী

শ্রীপুরে আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত

পটুয়াখালীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও শীতে জনজীবনে চরম ভোগান্তি

মাদারীপুরে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ৬, মহাসড়কে যানজট

বগুড়ায় নকল নবিশদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ

কটিয়াদীতে সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জরুরী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

গাইবান্ধায় প্রিপেইড মিটারে চরম আপত্তি জনগণের, প্রতিরোধের আহ্বান

জয়পুরহাট চিনিকলের আখ মাড়াই শুরু