ইয়াসের প্রভাবে মোড়েলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

একদিকে ইয়াস ও অপরদিকে পূর্ণিমার জোয়ার, দুইয়ে মিলে বুধবার (২৬ মে) বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের পৌর সদরসহ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পৌর সদরের শহররক্ষা বাঁধ উপচে ও উপজেলার বহরবুনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ৩৫ কিলোমিটার কা‍ঁচা-পাকা রাস্তা ও বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম ফসলি জমি, এক হাজার মৎস্য ঘেরসহ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার  হাজার পরিবার। চালিতাবুনিয়া গ্রামের ৪ বছরের শিশু জিনিয়া জোয়ারের পানিতে ডুবে মারা গেছে। বুধবার সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

খো‍ঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদীতীরবর্তী মোড়েলগঞ্জ পৌর সদর, বারইখালী, খাউলিয়া, বহরবুনিয়া, পুটিখালী, তেলিগাতী, পঞ্চকরণ, বলইবুনিয়া ইউনিয়ন। এসব এলাকার অধিকাংশ রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ডুবে গেছে শত শত মৎস্য ঘের। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। 

১নং তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোর্শেদা আক্তার, বারইখালী ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান লাল, ১৫নং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এইচএম মাহমুদ আলী, পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দরু রাজ্জাক মজুমদার, খাউলিয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন, বহরবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিএম রিপন, বলইবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী খান জানান, নদীগর্ভে তাদের প্রায় ২৫-৩০ কি.মি কাঁচা-পাকা রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এ দুই ইউনিয়নের ৮০০ মিটার ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। মোড়েলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা, কাঁঠালতলা, খাউলিয়া, বহরবুনিয়া ও তেলিগাতী ইউনিয়নের  প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রোকোনুজ্জামান জানান, নদীতীরবর্তী সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে প্রায় ৮০০ লোক অবস্থান করছেন। জোয়ারের পানিতে ক্ষয়ক্ষতির খোঁজখবর নিয়ে নিরূপণ করা হবে। 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় জানান, উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩০০ ঘের সম্পূর্ণ ডুবে গিয়ে প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নদীতীরবর্তী বহরবুনিয়া ইউনিয়নের। তবে বাস্তবে ঘের ডুবে গেছে কয়েক হাজার বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিফাত আল মারুফ জানান, লবণাক্ত জোয়ারের পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে ফসলি জমির ক্ষতি হতে পারে। চলতি মৌসুমে রোপা আউশের ১০০ হেক্টর বীজতলা ও ৫০০ হেক্টর সবজি ক্ষেত রয়েছে বলে মাঠপর্যায়ের এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান।

এলাকারা কৃষকরা জানান, জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে রোপা আউশ ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হবে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ক্ষয়ক্ষতি ও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। তবে সরকারিভাবে এখনো কোনো বরাদ্ধ আসেনি বলে তিনি জানান।

বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন উপজেলার গাবতলা সাইক্লোন সেল্টার, কুঠিবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। খোঁজখবর নিয়েছেন দুর্দশাগ্রস্ত অসহায় মানুষের। আশ্বাস দিয়েছেন স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মার্ণের। 

এ সময় তার সাথে ছিলেন- উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাড. তাজিনুর রহমান পলাশ, সদর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা প্রমুখ। 

অপরদিকে ১৬নং খাউলিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আলমঙ্গীর হোসেন পশুরবুনিয়া, বাবুয়ান, সন্ন্যাসী, চালিতাবুনিয়া, চিপা বারইখালী ও খাউলিয়া এলাকার গিয়ে পানিবন্দি মানুষের খোঁজখবর নিয়েছেন।