ঢাকা রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বর্ষণমুখর একটি দিনের দুটো কথা!


রুমা বেগম photo রুমা বেগম
প্রকাশিত: ৫-৭-২০২১ বিকাল ৫:২৭
আগামীকাল কলেজে রসায়ন টেস্ট পরীক্ষা। অথচ রাতে আকাশ উজার করে টিনের চালায় রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে।পড়ায় মন বসছে না।কিন্তু টেস্ট পরীক্ষার ২৫% ফাইনালে যে যোগ হবে!
 
আগে থেকে যা পড়া আছে তাই লিখব, ভেবেই সেই গুড়ুম ডাকা আধার কালো রাতে,চারিদিকে সুনসান আর মেঘের গর্জনে চুপচাপ একাকি আহ্লাদী অবসরে বুদ্ধদেব বসুর  একটা রোমান্টিক উপন্যাস পাতলা কাথামুরি  দিয়ে মগ্নতায় ডুবে গেলাম।
 
যথারীতি রাত আনুমানিক  ১২ টায় দরজায় বরের করাঘাতে মগ্নতার ফাকে ঘুমিয়ে পরা  ঘুম থেকে উঠে দরজা খুললাম। বৃষ্টি তখনও অঝোর ধারায় ঝরছে। তারপর প্রতিদিনের মতোই রোমান্টিক মুডে শুরু হয়ে যায় না ফুরানো গল্পের ঝাপি।
 
সকালে আকাশের বিষন্নতা দেখে বর বারবার কলেজে না যাওয়ার জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মত নিষেধ করল।কিন্তু লেখাপড়া পাগল মেয়ে আমি নম্বর কম পাবো, এই ভেবে যাওয়ার জন্য জেদ করলাম।
 
আসলে টিনএজ বয়সে বাস্তব অভিজ্ঞতার ঝুলি তখন  ও ভারী হয়নি। ভেবেছিলাম  কিছুদিন আগেও স্কুলে এমন ঘন কালো মেঘের বর্ষনমুখর দিনে বন্ধুদের সাথে কত উপভোগ্য সময় পার করেছি, ইচ্ছেমতো বৃষ্টিতে লাফালাফি করেছি, ভিজেছি, বৃষ্টির পর ছাদ থেকে গড়িয়ে পরা পানিতে গোসল করেছি। এই  সাতপাচ ভেবে সকলের বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে যাত্রা করলাম ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে ২০০১ সালের কোন এক তারিখে। তখন তো এখনকার মত সহজলভ্য প্রযুক্তি ছিল না যে মূহুর্তের মধ্যে নোটিশ পাব ভারী বর্ষনের কারণে পরীক্ষা স্থগিত!! 
 
রাস্তায় এসে দেখি একটি রিকশা ও নেই। রাতের বৃষ্টিতে রাস্তা কাদাপানিতে একাকার। এক হাতে ছাতা,আরেক হাতে পাজামা কাদাপানি থেকে রক্ষা করে টিপুন কেটে হাটছি। সামনে এগুতেই আমার মত আরেক পড়া পাগল সহপাঠী সিউটি কে দেখে, সাহস নিয়ে দুজন ১৫ মিনিটের রাস্তা ৩০ মিনিটে হেটে স্টেশনে গেলাম।
 
স্টেশনে কোন রিকশা নেই। ঐ সময় সদরঘাট নৌকা পার হয়ে কলেজ যেতাম,ব্রিজ তখনও চালু হয় নি। রাস্তার ২ / ৩ পথিক আমাদের এড়িয়ে এড়িয়ে দেখছে আর হয়তো ভাবছে এই পাগলের পরিবার কত অসচেতন বা হয়তো  অন্য কিছু।
 
অনেকক্ষন পর একটা রিকশা ডাবল ভাড়া দিয়ে নদীর ঘাটে পৌছালাম। ততক্ষণে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। পরীক্ষা ছিল ৩ য় ক্লাসে। নৌকা পার হয়ে সদরঘাটে এসে দেখি রাস্তা পানিতে ডুবানো। অনেক কষ্টে রিক্সায় কলেজে এসে দেখি ২ য় ক্লাসে স্যার , ৬/৭ জন শিক্ষার্থী বসে আছে।
 
পরীক্ষা হবে না! নিম্ন চাপ চলছে, একটুপরে প্রবল ঝড় শুরু হতে পারে,বাসায় চলে যাও! স্যার কথা শেষ করতেই দুজন দৌড়ে বাসায় আসার প্রস্তুতি। একটা রিকশা ও নেই! প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে! দুজন হাটু পানিতে ডুবে কলেজ থেকে হেটে শদর ঘাট! কোন নৌকা নেই! অনেক পরে একটা ট্রলারে জিনজিরামুখী কিছুযাত্রী নিয়ে আসতে দেখে দুজন চিৎকার করে থামিয়ে, জিনজিরা ঘাটে!
 
ঘাটে কোন রিকশা নেই! হাটা শুরু!  প্রচন্ড বাতাস এসে দু পাগল কে আদর করে ছুয়ে যাচ্ছে, সাথে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে কয়েকটি কুকুর দেখে আমরা ভয় পাচ্ছি,কুকুর ও ভয় পাচ্ছে!!
 
কিছদূর আসতেই সত্যিকারের এক পাগল দেখে আমরা দৌড়!  সাথে পাগল ও আমাদের সাথে দৌড়াতে লাগল!! চলছে ৩ জনের দৌড় প্রতিযোগিতা!!  দৌড়ে ব্রিজের কাছাকাছি আসতেই সত্যিকারের পাগল অন্যদিকে দৌড়ের মোড় ঘুরালো, দুই পড়া পাগল হাফ ছেড়ে বাচলাম!! বাকীটা পথ দুজন বুকে ভয় মুখে হাসি,আনন্দ চিৎকার করতে করতে বাড়ি ফেরা! আহা জীবন! ফেলে আসা স্মৃতিময় জীবন!!
 
লেখক, রুমা বেগম, শিক্ষক, পটুয়াখালী সরকারি কলেজ।

এমএসএম / জামান