রূপগঞ্জের চনপাড়া রণক্ষেত্র, হামলা ভাংচুর লুটপাট : আহত অর্ধশত
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপের মাঝে তিন দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় গ্রুপের সন্ত্রাসীরা বিপুল পরিমাণ গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। নিরীহ মানুষের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে কপুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে একটি পিস্তলসহ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এছাড়া ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুরে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র (বস্তি) এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের (বস্তি) ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বজলু, জয়নাল আবেদীন, শাহিন ওরফে সিটি শাহিন, রাজা ও নাজমার নেতৃত্বে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসা, হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অপরাধ চলে আসছিল। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে এসবের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বজলুর রহমান বজলু ও জয়নাল আবেদীন গ্রুপের সঙ্গে শাহিন ওরফে সিটি শাহিন, রাজা, নাজমা গ্রুপের বিরোধ চলছে।
গত রোববার (৪ জুলাই) রাত ৯টার দিকে উভয় গ্রুপের লোকজন রামদা, চাপাতি, তলোয়ার, বল্লম, ছামুরাই, চাইনিজ কুড়াল, ছুড়িসহ বিভিন্ন অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে উভয় গ্রুপের লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন। এছাড়া উভয় গ্রুপের অন্তত ২৩ জন আহত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৭২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। এ ঘটনায় পুলিশ মামুন ও নাঈম নামের ওই দুজনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক পরেশ বাগচি বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, এ ঘটনার পর সোমবার রাত ১১টার দিকে এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে দ্বিতীয় দফায় ফের উভয় গ্রুপের সন্ত্রাসীরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিপুল পরিমান ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। সন্ত্রাসীরা ইয়াছিন, নুর ইসলাম, ইতি, লিটন, জাব্বার, সাইফুলসহ অন্তত ৩০ জনের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাংচুর করে লুটপাট করে। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে শরীফ নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় অল্পসংখ্যক পুলিশ সদস্য থাকায় পুলিশ চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। মঙ্গলবার ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে সংঘর্ষের ঘটনা।
পরে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে দুই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তৃতীয় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে র্যাব, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), থানা পুলিশের সমন্বয়ে দেড় শতাধিক আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় একটি পিস্তল ও ১০টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধারসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করের আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
বিকেল সাড়ে ৫টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উভয় গ্রুপের মাঝে উত্তেজনা চলছে। যে কোনো সময় আবারো সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আবির হোসেন বলেন, চনপাড়া একটি বৃহত্তর বস্তি। এখানে ঝামেলা বা উত্তেজনা হলে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। আমরা গত কয়েক দিন ধরেই দুই গ্রুপের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। আজ আমরা সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে ৬ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার ও পিস্তলসহ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছি। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এমএসএম / জামান