শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি শিক্ষা বিস্তারের অন্তরায়

আমাদের দেশের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে জাতি উচ্চশিক্ষার প্রত্যাশা ও সফলতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি না থাকার পক্ষে মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল। যদি রাজনীতি করতেই হয়, তবে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুলোকে এগিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। কারণ দেশ সেবার রাজনীতি আর বর্তমান রাজনীতির মধ্যে অনেক ফারাক। সুজা কথায় শিক্ষাঙ্গনে এখন আগের মত দেশ ও জনগণের সেবার রাজনীতি নেই। এখন শুধুই দলীয় ও ক্ষমতার রাজনীতি। যা আমাদের পুরো শিক্ষা সমাজকে কলুষিত করছে।এমনকি এই নোংরা রাজনীতির করণে অকালেই অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীদের জীবন যেতেও দেখা গেছে। তাই এসব ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে আমাদের শিক্ষা বিস্তারের জন্য। তাছাড়া শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি করে ভবিষ্যতে দেশ সেবার রাজনীতি কতটুকু এগিয়ে যাবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে রাজনৈতিক আন্দোলন ও রাজনীতির চর্চায় ছাত্র সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ করা উচিত কি না, তা নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষাঙ্গনে অনভিপ্রেত সন্ত্রাস, হানাহানি, চাঁদাবাজি, মাস্তানি ইত্যাদি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে এটি বন্ধের দাবি তুলেছেন, কিন্তু এ দাবি যে সবাই সমর্থন করছেন তা কিন্তু নয়। যারা সমর্থন করছেন না, তাদের মতে মাথা ব্যথার সমাধান মাথা কেটে ফেলা নয়, ব্যথা সারানো। তাদের অভিমত,দোষ রাজনীতির নয়, রাজনীতির নামে যে মারাত্মক ভাইরাস ছাত্রসমাজকে আক্রান্ত করেছে সেটি নির্মূলই সবার প্রচেষ্টার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই বিতর্কে কারা জয়ী হবেন তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সচেতন নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এমন এক সময় ছিল যখন আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ পড়াশোনাকে তপস্যা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তখনকার কৃষিনির্ভর জীবনযাত্রায় রাজনীতি সাধারণ সমাজের বিষয় ছিল না। রাজনীতির সাথে সম্পর্ক রাখা না রাখা জনজীবনে তেমন প্রভাব ফেলত না।
যদিও বর্তমান সময়ে রাজনীতি বিশ্বের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের আর্থসামাজিক জীবনে এমনকি শিক্ষা-সংস্কৃতি-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও রাজনীতি সর্বব্যাপী প্রভাব ফেলেছে। বিশ শতকের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সময় পৃথিবীজুড়ে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের ভাবাদর্শগত লড়াই বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। পাশাপাশি ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে চলেছে সাম্রাজ্যবাদী শোষণ, নিপীড়ন। পরাধীনতার হাত থেকে মুক্তির লড়াইও চলেছে সমানতালে। ফলে ঔপনিবেশিক ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমাজের সচেতন ও সংগ্রামী অংশ হিসেবে ছাত্রসমাজ রাজনৈতিক সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলনে এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। আজকের বিশ্বের কেবল উন্নয়নশীল দেশের ছাত্ররা রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছেন তা নয়, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানির মতো উন্নত দেশেও ছাত্ররা রাজনৈতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। অবশ্য তাদের সাথে আমাদের ছাত্ররাজনীতির তফাৎ আকাশ-পাতাল। ইংল্যান্ড-আমেরিকায় ছাত্রদের রাজনীতিতে মুখ্য স্থান নিয়েছে যুদ্ধবিরোধী মানবতাবাদী ভূমিকা। ফান্স, ইতালি, জাপানে ছাত্র আন্দোলনের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে সমাজ বিপ্লবের ভাবাদর্শ। আর আমাদের দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় দলগুলো সমাজের অগ্রসর অংশ হিসেবে ছাত্রসমাজকেই ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক ভাবাদর্শ কিংবা স্বার্থের প্রভাব বলয়ে আনতে ছাত্রদের সংগঠিত করে থাকে। ফলে ছাত্রদের এক অংশ ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে, রাজনীতি সচেতন মননশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার পরিবর্তে রাজনৈতিক দলের ক্রীড়নকে পরিণত হচ্ছে। এসব নেতৃত্বে ত্যাগী রাজনীতিবিদের পরিবর্তে সুবিধাবাদী, স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ও ধনীদের প্রাধান্য বেড়ে যাওয়ায় তারা জনগণের মতামতের চেয়ে জবরদস্তিমূলক পথে ক্ষমতা রক্ষা কিংবা দখলে সচেষ্ট। ফলে ছাত্রসমাজ এখন সুস্থ দেশ গঠনমূলক আদর্শবাদী রাজনীতির পথ থেকে অনেকটা বিচ্যুত হয়ে পড়ছে।
ছাত্রদের যেখানে মনোনিবেশ হওয়ার কথা পড়াশোনায় সেখানে নীতিহীন উচ্ছৃঙ্খলতা, অনভিপ্রেত অনাচার, পরীক্ষায় দুর্নীতি, জঘন্য অপরাধপ্রবণতা, বিকৃত ও অশ্লীল অপসংস্কৃতিতে তারা প্রভাবিত হচ্ছে। কোথাও ছাত্ররাজনীতিতে উগ্রবাদকে উসকে দেয়া হচ্ছে। দেশের ক্ষমতাকেন্দ্রিক অস্থির রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব ছাত্রসমাজের মধ্যেও পড়ছে। ফলে ছাত্ররাজনীতির রুচিবিকার ঘটছে। স্বাধীনভাবে দেশব্রতী ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠায় সুস্থ-সবল-উদ্দীপনাময় দিকনির্দেশনা এখন ছাত্রসমাজের সামনে অনুপস্থিত। তাদের শিক্ষা কেবল যেকোনো পন্থায় পরীক্ষা পাসের ও সার্টিফিকেট প্রাপ্তিতে পর্যবসিত হয়েছে। দায়িত্ব ও আনন্দের কাজে দেশ গঠন ও সমাজসেবায় ভূমিকা নেই বললেই চলে। সাংস্কৃতিক চর্চা, গ্রন্থাগার কার্যক্রম, খেলাধুলা, শিক্ষা সফর, নির্মল আনন্দ-বিনোদন ইত্যাদিতে তাদের পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না।এখন দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে বরেণ্য ব্যক্তিদের আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে না। গণমাধ্যমের বদৌলতে মডেল তারকা, স্থূল নাটকের নায়ক-নায়িকা কিংবা অস্ত্রবাজ অ্যাকশন হিরোকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপিত করা হচ্ছে। অ্যারিস্টটল বলেছেন, মানুষমাত্রই রাজনৈতিক জীব। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, পূর্ণবয়স্ক নাগরিকের রাজনৈতিক দায়িত্ব যতটা, অপ্রাপ্তবয়স্কেরও ততটা হবে।একজন নেতার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যতটুকু; একজন অধ্যাপক ও গবেষকের ততটা কিছুতেই নয়। এ দিক থেকে বলা যায়, ছাত্রসমাজের সাধারণ রাজনৈতিক দায়িত্ব থাকলেও প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক দায়িত্ব তেমন নেই। অর্থাৎ তাদের যে রাজনৈতিক সচেতনতা দরকার তা পরোক্ষ। এই সচেনতার মূল লক্ষ্য উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। সেজন্য প্রয়োজন জ্ঞান অর্জন, চরিত্র গঠন, মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীণ উদ্বোধন। দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় সাধন। ছাত্রজীবনের সুস্থ রাজনৈতিক সচেতনতা এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
কিন্তু ছাত্রধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে অসুস্থ, বিকৃত, পঙ্কিল সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক আবর্তে জড়িয়ে অনৈতিক পথে পা বাড়ানো ছাত্রজীবনের কাম্য হতে পারে না। ছাত্রজীবনে প্রত্যক্ষ রাজনীতির চেয়ে যেসব কাজে ছাত্রছাত্রীদের আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণ করা উচিত সেগুলো হলো দুর্গত ও বিপন্ন মানবতার সেবা, জনসেবা, গ্রামোন্নয়ন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, গরিব ও মেহনতি মানুষকে সহায়তা, জনস্বাস্থ্য রক্ষা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, পরিবেশ সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি। ভবিষ্যতে আমাদের ছাত্রসমাজ যেন জাতীয় স্বার্থে দেশপ্রেমিকের মহৎ দায়িত্ব মাথা পেতে নিতে পারে, সেজন্য শক্তি অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গঠনমূলক রাজনীতি সম্পর্কে সচেতনতা অপরিহার্য নয়। কিন্তু জাতীয় জীবনে চরম মুহূর্ত না এলে ছাত্রদের সক্রিয় ও প্রত্যক্ষভাবে দলীয় রাজনীতির আবর্তে জড়িত না হওয়াই ভালো। দেশের কর্ণধার ও রাজনৈতিক নেতাদের কর্তব্য হবে ছাত্রদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করা, দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা। ছাত্ররাজনীতিতে আধিপত্য চর্চার নামে নানা অপকর্মের ঘটনা অনেক আগে থেকেই আমরা দেখছি। বিশেষ করে ক্ষমতার আধিপত্য, বড়াই-লড়াই, হল দখল, সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাটুকারিতা, পকেট নেতা তৈরি, প্রশাসনের অন্যায্য সমর্থন প্রভৃতি কারণে ছাত্র রাজনীতির যথাযথ বিকাশ হচ্ছে না। ছাত্র সংগঠন গুলোর কমিটি গঠনের জন্য এখন যোগ্যতার পাশাপশি চলে লাখ লাখ টাকার রাজনৈতিক বাণিজ্য। এই অপরাজনীতির দাপটে ক্রমেই ছাত্ররাজনীতি হয়ে উঠছে অসৎ ও অশুভ। আর এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ ছাত্রদের ওপর। নেতা নির্বাচনে যেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের কোনো মূল্য নেই, সেহেতু অপতৎপরতা বন্ধ হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। আর এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ন্যায্য দাবি কিংবা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো কোনো সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ওপর চলে জুলুম-অত্যাচারও।
এসব নানাবিধ কারণে বর্তমান সময়ে মেধাবীরা ছাত্ররাজনীতি পরিহার করছে। ফলে ক্রমেই মেধাশূন্য হয়ে উঠছে ছাত্ররাজনীতি। বাংলাদেশে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র রাজনীতির ধরন ও পরিণতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। অথচ শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখে, পড়াশোনা করে বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু অনেক ছাত্রনেতা নামের শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতির নামে চাঁদাবাজি করে। এরা আদর্শের কথা বলে, আবার স্বার্থে আঘাত লাগলে আদর্শ পরিবর্তন করে, অথবা আদর্শের আড়ালে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থেকে আদর্শে থাকার অভিনয় করে। আজ যারা ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে আদর্শের রাজনীতি না করে ক্ষমতা ও আধিপত্যের রাজনীতি করছে তাদের ভবিষ্যত কী। তাদের স্বপ্নই বা কী। তারা কী দেশের বড় রাজনীতিবিদ হতে চায় নাকি মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হতে চায়? অবশ্যই আজকের তরুণদের মধ্যে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি রয়েছে। ইদানীং দেখা যায় হাজার হাজার ছাত্রনেতা যারা রাজনীতি নামের এই মহান পেশা’কে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে যাদের হাতে রয়েছে দামী দামী বিদেশি অস্ত্র কিংবা বড় রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন। অথচ তাদের হাতে থাকা উচিত পাঠ্যবই। কারণ তারাই হলো আগামী দিনের পথপ্রদর্শক। ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলব, অভিভাবকের স্বপ্নকে বড় করে তুলতে আধিপত্যের রাজনীতি পরিহার করে গঠনমূলক রাজনীতির পাশপাশি পড়ালেখা এবং অধ্যবসয়মুখী হন। আজ এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা রাজনীতি করতে এসে নিজের ছাত্রত্বকে বলি দিয়ে সার্টিফিকেট না নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। আবার কেউ কেউ নিজের জীবন উৎসর্গ করে লাশ হয়ে ঘরে ফিরে বাবা-মায়ের কোল ফাঁকা করেছে। ছাত্ররাজনীতি অনেকের জীবনেই হয়েছে অভিশাপ। কিন্তু আশীর্বাদ হয়েছে কয়জনের সেটা আমার জানা নেই। আর এই অভিশাপকে মুক্ত করতে ক্ষমতাসীন সরকারসহ সকল রাজনৈতিক দলকে ছাত্ররাজনীতির সুফল-কুফল বিশ্লেষণ সাপেক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এর প্রয়োগ নিয়ে সুবিবেচনার প্রয়োজন এসেছে।
এমন সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তই বাঁচাতে পারে একজন অভিভাবকের স্বপ্ন, একজন শিক্ষার্থীর জীবন এবং সুন্দর স্বপ্নময় ভবিষ্যতকে। রাজনীতি করলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন মেনে রাজনীতি করুন অন্যতায় পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়ে নিজে গর্বিত হোন, পরিবারকে গৌরবের অংশীদার করুন এবং দেশেকে গৌরবোজ্জ্বল করুন। তবেই জীবন স্বার্থক। গোটা পৃথিবীর কোথাও এখন আর ছাত্ররাজনীতি বলে কোনো বিশেষ ধারণা নেই। আমাদের দেশেও এটি থাকার কোনো বাস্তবতা নেই। কিন্তু আমরা অনেকটাই যেন বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংগঠনের উপস্থিতিকে বড় করে দেখার চেষ্টা করছি। বলা চলে এখন দেশ, জাতি ও বিশ্ব বাস্তবতা সম্পর্কে নতুন চিন্তা করার মতো নেতাও অনেক দলে খুব বেশি দেখা যায় না। একসময় ছাত্রনেতাদের বক্তৃতা শোনার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা সভাস্থলে উপস্থিত না থেকেও করিডরে দাঁড়িয়ে একাগ্রচিত্তে শোনত। তাদের বক্তব্যে দেশ, জাতি এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনীতির অনেক খবরাখবর জানা যেত। এখন সেই চিত্র আশা করা দুরূহ ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ ছাত্রনেতারই লেখাপড়ার সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষীণতর পর্যায়ে চলে গেছে। অথচ ছাত্রছাত্রীদের প্রধান কাজই হচ্ছে লেখাপড়া করা, উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় নিজেদের মেধা-মননে যোগ্য করে তোলা। সেখানে নিয়মিত পড়াশোনা ছাড়া কারোই সনদ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ছাত্রনেতা বলেও কেউ নেই। মেধাবী শিক্ষার্থীর আলাদা পরিচয় বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সেটি শিক্ষা ও গবেষণায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য। এই কৃতী শিক্ষার্থীরাই দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক, গবেষক হিসেবে বিনা তদবিরে নিয়োগ পায়, এরাই দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের স্থান যোগ্যতা বলে লাভ করে। রাজনীতিতেও মেধাবীরাই সমাদৃত হয়। অতএব ছাত্রনেতা বলে যাদের আমরা পরিচিত করছি তারা আসলে নেতৃত্ব দেয়ার কোনো গুণাবলি অর্জন করে না। কারণ নিরবচ্ছিন্ন পড়াশোনা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন।এটি মেধার অপচয়, মানব সম্পদেরও অপচয়। কবে আমরা এই চরম সত্য উপলব্ধি করতে পারব। এমনিতেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক পিছিয়ে আছে। তাই এখনই এর সুস্পষ্ট সমাধান করা অতীব জরুরি। অন্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আশঙ্কাজনকভাবে আরো পিছিয়ে পড়বে।
এমএসএম / এমএসএম

জিনিস যেটা ভালো , দাম তার একটু বেশি

মব জাস্টিসের প্রভাবে বর্তমান বাংলাদেশ

সুস্থ জাতি গঠনে দরকার নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা

রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও একুশে বইমেলা

বিশ্ব জলাভূমি দিবস: টিকে থাকার জন্য জলাভূমি সুরক্ষা এখন সময়ের দাবি

দেবী সরস্বতী: বিদ্যা, জ্ঞান, ও শুভ্রতার বিশুদ্ধ প্রতীক

স্বাস্থ্যসেবায় বায়োকেমিস্টদের অবদান: এক অপরিহার্য দৃষ্টিভঙ্গি

আতঙ্ক আর হতাশার মধ্যেই ট্রাম্পের যাত্রা

কন কনে শীতে অযত্নে -অবহেলায় কাটছে পথশিশুদের জীবন

দাবি আদায়ের প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদ

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ২০২৫: স্থায়ী শান্তির জন্য শেখা

জেন-জির হাত ধরে আগামীর নেতৃত্ব: সম্ভাবনা ও করণীয়
