ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ড

মালিকপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন শ্রমিক ও নিহতের স্বজনরা


রূপগঞ্জ প্রতিনিধি photo রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯-৭-২০২১ বিকাল ৫:৪৬
নারায়ণগঞ্জের  রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড নামে একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরো ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ জনে। শুক্রবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে হাসেম ফুড কারখানার চতুর্থ তলা থেকে ৪৯টি ম‍ৃতদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 
 
ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া লাশগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। চেনার কোনো উপায় নেই। স্বজনরা চাইলেও লাশ দেখে শনাক্ত করতে পারবেন না। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে অগিকাণ্ডের ঘটনায় দুই নারী স্বপ্না রানী ও মিনা আক্তার নিহত হন। পরে রাত ১১টার দিকে মোরসালিন (২৮) নামে আরো এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এর রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছয়তলা ভবনটির মধ্যে চতুর্থ তলা পর্যন্ত আগুন নির্বাপণ সম্পন্ন হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার আগুন নির্বাপণের কাজ চলছে। আগুন নির্বাপণের পর মোট হতাহতের সংখ্যা বলা যাবে।
 
এদিকে, নিহতদের স্বজনরা কারখানার চারপাশে ভিড় জমিয়েছেন। স্বজনদের আহাজারিতে কারখানার আশপাশে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। আগুন নেভাতে দেরি হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল ও ভাংচুর চালান। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হাসেম ফুডের আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে আনসারদের মারধর করে অস্ত্রাগার থেকে তিনটি শটগান লুট করে নিয়ে যায় বলে জানান উপজেলা আনসারের ইনচার্জ নাছিমা বেগম।
 
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড কারখানায় প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। ছয়তলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচতলার একটি ফ্লোরের কার্টন এবং পলিথিন তৈরির কাজ চলে। সেখান থেকেই হঠাৎ করে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কালো ধো‍ঁয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। একপর্যায়ে শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন।
 
চারতলায় থাকা ৭০-৮০ জন শ্রমিক কাজ করেন। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে চারতলার শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে থাকলে ওই তলার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী কেঁচিগেটে তালা দিয়ে রাখেন। আগুন নিভে যাবে বলে তালা দিয়ে শ্রমিকদের ওই তলাতেই বসিয়ে রাখেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্যান্য তলার শ্রমিকরা অনেকে বের হতে পারলেও চারতলার শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। আগুনের খবর পেয়ে কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন। নিহতের কেউ কেউ মোবাইল ফোনে স্বজনদের সঙ্গে শেষ কথা বলেছেন।
 
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আগুন থেকে বাচঁতে রানী, মিনা আক্তার ও মোরসালিন হক নিহত হন। এছাড়া এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হন। এদের মধ্যে ১০ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকলে কলেজ ও বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
 
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ নূসরাত জাহান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলাম।
 
এদিকে, বেলা ১১টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে ব্যর্থ হলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ও আঞ্চলিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানাসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলরত গাড়িসহ মোট অর্ধশতাধিক গাড়ি, মোটরসাইকেল ভাংচুর করেন।
 
সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হাসেম ফুডের আনসার ক্যাম্পে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এ সময় শ্রমিকরা ক্যাম্পের অস্ত্র অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে তিনটি শটগান লুট করে নেয়। এ সময় শ্রমিকদের হামলায় কাউসার, বিশ্বজিত, ফারুক, মোশরাকুলসহ ৫ আনসার সদস্য আহত হন।
 
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানার ভবনের প্রতিটি তলায় কেমিক্যাল ও কেমিক্যাল মিশ্রিত কাঁচামাল ছিল। এসব কেমিক্যালের কারনে আগুনের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া শ্রমিকদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে কারখানা চলাকালীন মালিকপক্ষ গেটগুলো তালাবদ্ধ করে রাখে। সে কারণেই আগুন লাগার সাথে সাথে শ্রমিকরা বের হতে পারেননি।
 
শ্রমিক ও নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, হাসেম ফুড কারখানাটি অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চলত। কারখানাটিতে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এছাড়া কারখানাটিতে বেশিরভাগই শিশু শ্রমিক কাজ করত। কারখানাটি খাদ্যপণ্যে অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করত। এ কারণেই অতিরিক্ত কেমিক্যালের কারণে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের এত দেরি হয়। কারখানাটির ভবন থেকে বের হতে শ্রমিকদের জন্য কোনো ইমার্জেন্সি এক্সিটের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। নিহত শ্রমিকদের মাঝে বেশিরভাগই শিশু।
 
১২ বছর বয়সী শিশু শ্রমিক বিশাখা রানী ক্ষোভের সূরে বলে, বাবা-মাসহ আমাদের ৫ বোনের সংসার। বেতন-ভাতা ও ওভার টাইম না পাওয়ায় আমরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম। এ কারণে আমরা শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করি। আর এ ক্ষোভেই কারখানা মালিপক্ষ ওই ভবনে আগুন লাগিয়ে আমার মা স্বপ্না রানীসহ অন্য শ্রমিকদের হত্যা করে। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।
 
নিখোঁজ শ্রমিক তাছলিমা আক্তারের বাবা আক্তার হোসেন বলেন, মালিকপক্ষের দোষেই কারখানায় আগুন লাগে। এছাড়া মালিকপক্ষ শ্রমিকদের চারতলায় আটকে রেখে হত্যা করে। আমরা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
 
নিখোঁজ শ্রমিক ওমৃতা আক্তারের (১৭) বোন রোজিনা আক্তার জানান, তার বোন ওমৃতা আক্তার চারতলায় কাজ করছিল। ওমৃতা বলছিল মালিকপক্ষ তাদের আটকেয় রেখে জোর করে ১২ ঘণ্টা ডিউটি করাত। ঘটনার দিনও তারা কেঁচিগেট তালা দিয়ে রাখায় চারতলার কোনো শ্রমিক বের হতে পারেনি। হাসেম ফুড লিমিটেড কারখানাটির যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে সে ভবনটি বিল্ডিং কোড না মেনে করা হয়েছে। অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কারখানাটি পরিচালনা করায় এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
 
কারখানা অন্য শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো পরিশোধ করে না। শ্রমিকরা বেতন চাইলে মালিকপক্ষ তাদের মারধরসহ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি-ধমকি প্রদান করে। কারখানাটিতে দুটি গেট থাকলেও একটি গেট কারখানা কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রাখে। কোনো দুর্ঘটনা হলে শ্রমিকরা দ্রুত বের হতে গেলেও শ্রমিকদের পদদলিত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
 
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য নগদ ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের পরিবারদের নগদ ১০ হাজার টাকার করে দেয়া হবে।
 
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) জিল্লুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হাসেম ফুডে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেন। চারতলা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত ৪৯টি লাশ উদ্ধার করে হয়েছে। লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার আগুন এখনো থেমে থেমে জ্বলছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করার পর বোঝা যাবে হতাহতের সংখ্যা ‍আরো বাড়বে কি-না।
 
ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও হতাহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তসীর গাজী (বীরপ্রতিক) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে হতাহতদের ব্যপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এ ঘটনার ব্যাপারটি তদন্ত কমিটির ওপর ছেড়ে দেয়া হলো। কারখানার অব্যবস্থাপনার কারণে যদি এ ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সে ব্যাপারেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এমএসএম / জামান

তানোর গোদাগাড়ীতে ধানের শীষের মনোনয়নের শীর্ষে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন

নেসকোর উপার ক্ষেপে গিয়ে রাজনৈতিক দেউলিয়াদের কলিজা ছিড়ে রাস্তায় ফেলতে চাইলেন সারজিস

ভোলাহাটে বিএনপি'র ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ

আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদকজয়ী জিহাদের পাশে বিএনপি পরিবার’

ধামইরহাটে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপির উঠান বৈঠক

মোরেলগঞ্জে মহিলা দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

সলঙ্গায় নারী গ্রাম পুলিশের লাশ উদ্ধার

আত্রাইয়ে জামায়াতে ইসলামীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

নবীনগরে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন

চৌগাছার কাকুড়িয়া গ্রামের মহাকালি মন্দির চৌত্রিশ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ আসনে মোহনকে সমর্থন দিলো দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপি

মেহেরপুরে জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে মৃত শ্রমিকদের মৃত ভাতা প্রদান

ভূরুঙ্গামারীতে নদীর বাঁধ নির্মাণের দাবীতে মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে