শান্তিগঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ঘরবাড়ি, নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপক তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। সোমবার (১৭ অক্টোবর) মধ্যরাতে উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের দরগাহপুর ও আসামমুড়া গ্রামে এসব ঘরবাড়ি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন এসব অসহায় মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে এসব পরিবার। 

সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের কবলে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে আছে। যেদিকেই তাকানো যায় শুধুই বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির চিত্র। কোথায়ও গাছগাছালি ভেঙে পড়ে আছে, কোথাও বৈদ্যুতিক তার ঝুলে আছে। যেন এক বিধ্বস্ত এলাকা। ঝড়ে অসহায় মানুষেরা ঘরবাড়ি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাদের একমাত্র বসতঘর তছনছ হয়ে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচেই আছেন তারা। কেউ কেউ কান্না করছেন। আহাজারি করে বলছেন কষ্টের কথা৷

তারা জানান, গতকাল রাতে ব্যাপক ঝড় শুরু হয়। এই ঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ির টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। আবার কারো কারো মাটির বাড়ি ও বাড়ির প্রাচীর ঝড়ে ভেঙে গেছে। এতে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ঘরের টিন ও আসবাবপত্র রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন ১০-১৫ জন৷ অনেকেই এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যারা কিছুটা সচ্ছল তারা ঘরবাড়ি মেরামতের চেষ্টা করছেন। সব মিলিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ওই এলাকার মানুষ। সবাই এখন সরকারি সহায়তার আশায়।

কথা হলে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত রুহেনা খানম বলেম, ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ঝড়ে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব। ঘরে খাবার নেই, থাকার জায়গা নেই। এখন আমি পথের ভিখারি৷ সরকারি সহায়তা না পেলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে রাস্তায় থাকতে হবে।

এভাবে আক্ষেপ করে ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল হেকিম খান ও সিদ্দিকুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে ঝড় শুরু হয়। এরপর ঝড়ের তাণ্ডবে সবকিছু উড়ে গেছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আছি। সরকারের সহায়তা ছাড়া বাঁচা অসম্ভব। 

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন, এসিল্যান্ড সকিনা আক্তার ও পাথারিয়া  ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম। এ সময় তারা তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করেন। 

পাথারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমার ইউনিয়নের শতাধিক ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে৷ এখন তাদের সহায়তা খুবই প্রয়োজন। 

শান্তিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সকিন আক্তার বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাদের তালিকা করা হচ্ছে৷ অতিদ্রুত তাদের সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। 

এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ছুটে এসেছি। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সাথেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।