কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ
‘স্ট্যাম্পে’ বন বিভাগের সংরক্ষিত জায়গা বিক্রির অভিযোগ
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের কর্মকর্তার যোগসাজশে সংরক্ষিত বনের জায়গা দখল করে নন-জ্যুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও দলিল তৈরির মাধ্যমে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও একটি ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে, বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও ভূমিদস্যু চক্রের সদস্যরা বন বিভাগের জায়গা দখল করে সেখানে ঘর, মার্কেট ও প্লট বানিয়ে রোহিঙ্গা ও সাধারণ মানুষদের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি আসছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভূমিদস্যু চক্রের হাত থেকে সরকারি বনভূমি রক্ষা ও দখলমুক্ত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রধান বন সংরক্ষক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগে রয়েছে, ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম, ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য শাহাব উদ্দিন, ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দু শুক্কুর, ভিলেজার পাড়ার মৃত বদর আমিন হেডম্যানের ছেলে ওবায়দুর রহমান, মধ্য নাপিতখালীর মৃত আব্দুল গণির ছেলে মো. শরীফ, ঈদগাঁও মধ্যম পোকখালীর রমজান আলীর ছেলে মো. ফিরোজ প্রকাশ দালাল ফিরোজসহ ভূমিদস্যু চক্রের সদস্যরা বন বিভাগের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ, মার্কেট নির্মাণ ও প্লট বানিয়ে ৩০০ টাকার নন-জ্যুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও দলিল বানিয়ে কড়া হিসেবে বিক্রি করে এই ভূমিদস্যু চক্র।
এ বিষয়ে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তাকে একাধিকবার অভিযোগ দেয়া হলেও লোকস্বল্পতা ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতার অভাবে ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে বিষয়টি বারবার এড়িয়ে যান বলেও জানানো হয় অভিযোগে।
অভিযোগের স্ট্যাম্পগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আব্দু শুক্কুরের স্ত্রী নাছরিন জাহান রুনা স্বাক্ষরিত ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ফুলছড়ি মৌজার সমিতিপাড়ার বন বিভাগের ৫৬ কড়া জায়গা ইসলামপুর ইউনিয়নের নাপিতখালী এলাকার মৃত শফিউল আলমের ছেলে আবুল কালাম ও চৌফলদন্ডি ইউনিয়নের উত্তর পাড়ার বদিউল আলমের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। সেখানে দলিল লেখক হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন ইউপি সদস্য মো. আব্দু শুক্কুর।
ইসলামপুর নতুন অফিসে জুমনগর এলাকার সোনা আলীর ছেলে মো. সেলিম ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ফুলছড়ি মৌজার উত্তর-পূর্ব জুমনগরের বন বিভাগের জায়গায় ২৬ কড়া বাড়ি ও ভিটাসহ নাপিতখালীর হোছাইন মিস্ত্রির ছেলে ফরিদুল আলমের কাছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
ইসলামপুর উত্তর নাপিতখালীর ইউপি সদস্য শুককুরের পিতা ছাবের আহমদ ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ফুলছড়ী রেঞ্জের নাপিতখালী বিটের ২০০১ সালের পিএফডি বাগানের ১৯নং প্লটটি ইসলামপুরের নাপিতখালী জুমনগর এলাকার ছৈয়দ আলমের ছেলে রমজান আলীকে দুই বছরের জন্য বন্ধক দিয়ে দুই কিস্তিতে ২ লাখ টাকা নেন। সেখানেও দলিল লেখক হিসেবে স্বাক্ষর করছেন ইউপি সদস্য মো. আব্দু শুক্কুর।
ইসলামপুর নাপিতখালী বটতলী জুমনগর এলাকার আবু তাহেরের ছেলে দেলোয়ার হোসাইন মনু তিনশো টাকার স্ট্যাম্পে ফুলছড়ি রেঞ্জ জুমনগর বন বিভাগের ১০ কড়া জায়গা একই এলাকার মো. হানিফ চৌধুরীকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।সেখানেও দলিল লেখক হিসেবে স্বাক্ষর করছেন ইউপি সদস্য মো. আব্দু শুক্কুর।
ইসলামপুর নাপিতখালী বটতলী জুমনগর এলাকার
ছৈয়দ করিমের ছেলে শামসুল আলম একশো টাকার স্ট্যাম্পে ফুলছড়ি বন বিটের জুমনগর এলাকার বন বিভাগের ৬ কড়া জায়গা একই এলাকার মো. হানিফ চৌধুরীর স্ত্রী সাহেদা বেগমের কাছে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুলছড়ি রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকার মোট ভূমির চারভাগের তিনভাগই এই ভূমিদস্যু চক্রের দখলে। কোটি কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ দখলে থাকা এসব বনভূমি উদ্ধার করা দূরে থাক, রহস্যজনক কারণে এই বিষয়টি সামনে এলেই অনেকটা সুকৌশলে এড়িয়ে যান খোদ পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রশাসন ও বনবিভাগের কর্মকর্তারা। টাকার বিনিময়ে তাদেরকে ম্যানেজ করে সংরক্ষিত বনের সরকারি জায়গা মানুষের কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ এই চক্রের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামপুর ইউনিয়ন ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দু শুক্কুর বলেন, আমি বা আমার পরিবারের কেউ বনের জায়গা বিক্রি করিনি। কেউ আমার বা আমকর পরিবারের নাম ব্যাবহার করে বিক্রি করতে পারে। হয়তো আমার বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
জানতে চাইলে ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম জানান, অভিযোগের যদি সত্যতা পান তাহলে আমার বিরুদ্ধে লিখেন সমস্যা নাই বলে মুঠোফোনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি।
বন বিভাগের জায়গা কিভাবে বিক্রি করা যায় জানতে চাইলে ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা ফারুক বাবুল, আমাদের কাছে এই ধরনের কিছু কিছু অভিযোগ আছে। তবে কাগজপত্র হাতে পায়নি। আর এধরনের কাজ তো সম্পূর্ণ অবৈধ। সংরক্ষিত বনভূমির জায়গা তো এভাবে বিক্রি করা যায় না।
এখানে অনেকবছর ধরে ভূমিদস্যুরা বন বিভাগের জায়গা জবরদখল করে আছে। তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলাও করেছি আমরা। দখলদারদের আমরা নোটিশ দিয়েছি। এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছেও এসব বিষয়ে জানিয়েছি। তারা যদি চায় তাহলে উচ্ছেদ করা হবে। দখলবাজরা রাজনৈতিক প্রভাব ও স্থানীয় প্রভাব কাটাতে চায় এইটা স্বাভাবিক বিষয়। তাদের উচ্ছেদের জন্য আমরা জেলা প্রশাসন বরাবর তালিকা পাঠিয়েছি। অনেকবছর ধরে জবরদখলকারীরা বন বিভাগের জায়গা দখল করে আছে। প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে জবরদখলমুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক প্রান্তোষ চন্দ্র রায় বলেন, বন বিভাগের জায়গা স্ট্যাম্প কিংবা দলিলের মাধ্য দমে বিক্রির কোন আইনগত বিধান নেই। ওই এলাকায় যত টাউট বাটপার আছে তারাই স্ট্যাম্প আর দলিল সৃষ্টি করতেছে। আব্দু শুক্কুর সহ একটি চক্রের ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। এসব অনিয়মেন অভিযোগে শুক্কুরের হেডম্যানশিপ আমরা বাতিল করেছি। বনবিভাগের জায়গা বিক্রির কাগজে শুক্কুরের যে স্বাক্ষর রয়েছে সে তার স্বাক্ষর নয় বলে অস্বীকার করেছে। স্ট্যাম্পে তার পরিবারের নাম দেখেছি, তার স্বাক্ষরের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলতেছে। যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, সরকার বনবিভাগের জমি দেখাশোনার জন্য ৪০-৫০ বছর আগে কিছু লোককে ভিলেজার হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলো। কিন্তু কালের আবর্তে এই সময়ে এসে তারা আমাদের জন্য চরম শত্রু হয়ে দাড়িয়েছে। বন ধ্বংসের মূল হাতিয়ার হল এই ভিলেজার গোষ্ঠী। তারা বন বিভাগের জায়গা দখল করে মুরগীর ফার্ম, গরুর ফার্ম, বসত ঘরসহ যে যেভাবে পারে বন বিভাগের জায়গা জবরদখল করে আছে।জবরদখল মুক্ত করার জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় আমরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে কথা বলি। তারা যদি চায় চাই তাহলে আমরা উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করব। উচ্ছেদের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের প্রভাবের মুখোমুখি হতে হয় সবচেয়ে বেশি। আবার অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ মহলের চাপে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়না বলেও জানান তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এমএসএম / জামান
কোন লুটেরা, চাঁদাবাজ ও বল প্রয়োগকারীকে ভোট দেবেন না; গণসংযোগে রাশেদ খান
খানসামা টিটিসিতে ধর্মীয় বৈষম্য–নির্যাতনের অভিযোগ: জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিতে তদন্ত আবেদন
কেরুজ ভোটের দাবীতে আন্দোলনের শুরুর দিনেই দুপক্ষের মারামারি
নওগাঁয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ধলু’র উদ্যোগে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল
কালিগঞ্জ থেকে ভেটখালী পর্যন্ত রাস্তা ৩৪ ফুট প্রশস্ত করার দাবিতে মানববন্ধন
নৈয়াইর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগ প্রত্যাহার
রামগঞ্জে যুবদল কর্মীর ছুরিকাঘাতে বিএনপি কর্মী খুন
ঠাকুরগাঁওয়ের ফকিরপাড়া থেকে মটরসাইকেল চুরি : মামলা
কলাবাড়িয়া ইউনিয়নে দিনব্যাপী গণসংযোগে সরব জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সার
কর্ণফুলী'তে হত্যা'সহ একাধিক মামলার এজাহার ভূক্ত আসামি সাজু হাসান গ্রেপ্তার
শীতের আগমনে লেপ তোষকের ব্যস্ততা; পলাশবাড়ীতে জমে উঠেছে ধুনকরদের শীতের বাজার
কাপ্তাই ১০ আর ই ব্যাটালিয়ন কর্তৃক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান