ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ প্রাণের অস্তিত্বের পক্ষে হুমকি
পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা বর্তমান পৃথিবীর বহুল আলোচিত বিষয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীতে সুস্থভাবে টিকে থাকতে পরিবেশ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশের অংশ হিসেবে মানুষ পরিবেশ থেকে প্রত্যক্ষ সুফল ভোগ করে। পরিবেশ বিপর্যস্ত হলে অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে। তাই নিজেদের স্বার্থেই মানুষকে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবেশসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিভিত্তিক সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে সমন্বিত মনোভাব একান্ত প্রয়োজন এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো জনসচেতনতা।প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশ মানুষের জীবন ও অস্তিত্বের পক্ষে সহায়ক। নির্মল বাতাস, বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত খাদ্য সুস্থ ও সুন্দরভাবে মানুষকে বাঁচাতে সহায়তা করে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ও মানুষের লাগামহীন দূষণমূলক কর্মের ফলে প্রতিনিয়তই ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি। যেই পরিবেশ মানুষকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে নিজের সবটুকু দিয়ে লালন পালন করছে এই সমাজের মানুষকে, অন্যদিকে সেই মানুষ গুলোই নির্মমভাবে, নির্বিচারে ধ্বংস করছে প্রকৃতি। ফলে প্রকৃতি দিন দিন ব্যাপক ভয়ানক রুপ ধারণ করছে।বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে লাগামহীনভাবে। পৃথিবীর উষ্ণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর জলহাওয়া। শুধু তাই নয়,পরিবেশ দূষণের ফলে জলজ প্রাণীদের জলে থাকতে কষ্ট হয় কারণ তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। উদ্ভিদরা সতেজ থাকতে পারছে না। বন জঙ্গল অবাধে উজাড় হচ্ছে ফলে বাসস্থান সংকটে পড়ছে বন্য প্রানীসমুহ। আর পরিমন্ডলের এই সমস্ত কিছু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অসচেতনতা এবং অপরিকল্পিত পরিকল্পনা পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ। বিশ্বব্যাপী যেসব অসংক্রামক রোগে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে-তার অধিকাংশই বায়ু দূষণজনিত।
গবেষণা বলছে সাম্প্রতিককালে দেশের কয়েকটি শহরে বায়ু দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেখানে বসবাস যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই অতিক্ষুদ্র কণা এতোটাই ক্ষুদ্র যে এটি সহজেই মানুষের চোখ-নাক-মুখ দিয়ে ঢুকে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ফুসফুস, হার্ট, কিডনি লিভার আক্রান্ত করে থাকে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রজনন স্বাস্থ্য। বিশেষ করে গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি, শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে বায়ু দূষণ বড় ধরণের প্রভাব ফেলে। বায়ু দূষণ, সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণের এক ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর। গত বছরে শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইন্সটিটিউট প্রকাশিত সর্বশেষ এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সে বলা হয়েছে যে, বায়ু দূষণের কারণে সারা বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। এছাড়া বায়ু দূষণের ফলে গাছের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া বা সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এর প্রভাব পুরো প্রাণীজগতের ওপর পড়ছে বলে জানা গেছে। এমনকি বায়ু দূষণের কারণে খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে উদ্ভিদ নিজেও বিপদে পড়ে এবং উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল প্রাণীরাও বিপদে পড়ে। এছাড়াও উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। উদ্ভিদের জৈবনিক প্রক্রিয়া ঠিক না থাকলে পৃথিবীতে খাদ্য শৃঙ্খল ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের কারণে বছরে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এর আগেও বায়ুর মানের সূচকে বাংলাদেশ বিশেষত ঢাকা শহর কয়েক দফা সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে উঠে এসেছে।গবেষকরা একে এক ধরণের মানবিক বিপর্যয় বললেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের সমন্বিত, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলারই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। আদর্শ মাত্রার মধ্যে আছে মাত্র ১০টি জেলার বায়ুর মান।
এই অতিরিক্ত বায়ু দূষণের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতাসহ সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর। ক্যাপসের গবেষণায় অতিরিক্ত দূষিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলাদেশের ১৮টি জেলাকে। সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে গাজীপুরে, এরপরেই রয়েছে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ, যেখানে বায়ুতে অতি ক্ষুদ্রকণার মাত্রা বাংলাদেশের আদর্শ মান প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রো গ্রামের চাইতে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি। বিভিন্ন জেলায় বায়ুদূষণ বেশি ও কম হওয়ার কারণ হিসেবে গবেষক দল তাদের পর্যবেক্ষণে দেখেছে যে, শহরে অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ ও সমন্বয়হীনতা। এছাড়া ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।যেসব অঞ্চলে বায়ু দূষণের মাত্রা কম দেখা গিয়েছে সেখানে দেখা গিয়েছে বড় ধরণের কোন প্রকল্পের কাজ বা শহরের প্রাণকেন্দ্রে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বা সংস্কারের কাজ হচ্ছে না। হলেও সংখ্যায় খুব কম। গবেষণায়, সবচেয়ে বেশী বায়ু দূষণ দেখা গেছে মিশ্র এলাকায়। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে বাণিজ্যিক, রাস্তার সংযোগস্থল, আবাসিক, শিল্প এবং সংবেদনশীল এলাকা। এদিক থেকে তুলনামূলক কম দূষণ পরিলক্ষিত হয় গ্রামীণ এলাকায়। গবেষণার তথ্যানুযায়ী উপকূলীয় এলাকার মধ্যে শুধুমাত্র পটুয়াখালীর বায়ুমান ভালো বায়ুর পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত কিন্তু ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার, নোয়াখালী বায়ুদূষণ মাত্রা অনুযায়ী অতিমাত্রার দূষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। পাহাড়ি জেলার অর্থাৎ খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জে অতিমাত্রা থেকে মধ্যম মাত্রার দূষণ দেখা গিয়েছে। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিবেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশই প্রাণের ধারক ও বাহক। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ প্রাণের অস্তিত্বের পক্ষে হুমকি।
মানুষ যেমন তার প্রয়োজনে পরিবেশকে নিজের উপযোগী করছে, ঠিক তেমনি সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিতে মানুষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে প্রাণের অস্তিত্ব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অসচেতনতা এবং অপরিকল্পিত পরিকল্পনা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণ করা সবার নৈতিক দায়িত্ব।প্রতিদিন নানাভাবে পরিবেশকে দূষিত করে চলেছি আমরা। সৃষ্টি করছি জনদুর্ভোগ, সঙ্গে বাড়ছে ডাস্টবিন ব্যবহারে অনীহা। ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলা যেন আমাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বাসস্ট্যান্ডে নোংরা পরিবেশ চোখে পড়ার মতো। নজরদারির অভাবে শহরের রাস্তা বা রাস্তার পাশের ড্রেনগুলোর ভয়ানক অবস্থা। বাসাবাড়ির আঙিনায় ঝোপ-ঝাড়, ময়লাযুক্ত স্থান, ড্রেন পরিষ্কার না করার ফলে মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। ব্যক্তিগত অবহেলার ফলে পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না এদিকে প্লাস্টিক সামগ্রী পরিবেশকে দূষণ করে জলজ, স্থলজ, বনজ এমনকি মানবজাতির স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পলিথিন ব্যাগ, গৃহস্থালির ব্যবহূত প্লাস্টিক, পণ্যের মোড়ক, কসমেটিক্স প্লাস্টিক, পানির জন্য ব্যবহূত প্লাস্টিক বোতলের ব্যাপক ব্যবহার প্রকৃতিকে দূষিত করছে। প্লাস্টিক এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা সহজে পচে না এবং যার পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে প্রচুর সময় লাগে। ফলে পরিবেশের ওপর এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক অপচ্য পদার্থ হওয়ায় বন, জল ও স্থলের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রাণীর বাসস্থান ও খাদ্য গ্রহণে মারাত্মক বাধার সৃষ্টি করছে। এতে করে প্রাণীর জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু প্রাণীর ক্ষেত্রেই নয়, প্লাস্টিক মানবদেহে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে।
এ ছাড়া অনুন্নত যানবাহন ও অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার দরুন ঢাকার বাতাসে প্রতিনিয়ত দূষণ বাড়ছে, সেই সাথে যানবাহনের হর্ন ও মাইকের বিকট শব্দে শব্দদূষণও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। নিষিদ্ধ পলিথিন পচনশীল নয়; তাই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ফলে যত্রতত্র ফেলে দেয়ায় ড্রেন, ম্যানহোল বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্নভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে। চাষাবাদের ক্ষেত্রে সাময়িক ফলন বাড়ানোর তাগিদে জমিতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার এবং সেই সাথে রয়েছে কৃত্রিম কীটনাশকের ব্যাপক প্রয়োগ। এই বিষাক্ত কীটনাশকের ফলে ভূমি ও খাল বিল নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে গাছপালা কেটে ফেলা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাভূমির সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাওয়া দেশের আবহাওয়া বদলে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে অবদান রাখছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এদিকে প্লাস্টিক সামগ্রী পরিবেশকে দূষণ করে জলজ, স্থলজ, বনজ এমনকি মানবজাতির স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পলিথিন ব্যাগ, গৃহস্থালির ব্যবহূত প্লাস্টিক, পণ্যের মোড়ক, কসমেটিক্স প্লাস্টিক, পানির জন্য ব্যবহূত প্লাস্টিক বোতলের ব্যাপক ব্যবহার প্রকৃতিকে দূষিত করছে। প্লাস্টিক এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা সহজে পচে না এবং যার পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে প্রচুর সময় লাগে। ফলে পরিবেশের ওপর এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক অপচ্য পদার্থ হওয়ায় বন, জল ও স্থলের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রাণীর বাসস্থান ও খাদ্য গ্রহণে মারাত্মক বাধার সৃষ্টি করছে। এতে করে প্রাণীর জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে।পরিবেশকে সুস্থ রাখতে গাছের বিকল্প নেই। অধিক বৃক্ষরোপণ ও বনজ সম্পদকে রক্ষা করে বায়ুদূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব। বাস্তুতন্ত্রের যেসব জীব পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, তাদের টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে
সব নীতিমালা প্রণীত রয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন পরিবেশদূষণের হাত থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে পারে।
প্রাণের অস্তিত্বের জন্য পরিবেশের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবুজ,পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বান্ধব বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের বসবাস উপযোগী বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে চাই দূষণমুক্ত পরিবেশ। প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় ভারত ও চীনের পরে বাংলাদেশের অবস্থান। অন্য দিকে বড় শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে বিশ্বে রাজধানী ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। ইন্টার- ন্যাশনাল গ্লোবাল বার্ডেন ডিজিজ প্রজেক্টের প্রতিবেদনে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বায়ুদূষণকে ৪ নম্বরে দেখানো হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৫৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকরী পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বায়ুদূষণে পড়বে বাংলাদেশ।পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিবেশের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। মানুষসহ সব প্রাণের অস্তিত্ব পরিবেশের ওপরই নির্ভরশীল। কারণ পরিবেশই প্রাণের ধারক ও বাহক। তাই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ প্রাণের অস্তিত্বের পক্ষে হুমকি। মানুষ যেমন তার প্রয়োজনে পরিবেশকে নিজের উপযোগী করছে, ঠিক তেমনি সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিতে মানুষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে প্রাণের অস্তিত্ব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অসচেতনতা এবং অপরিকল্পিত পরিকল্পনা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণ করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। কারণ পরিবেশ সংকটের এই দায় সমগ্র মানবজাতির।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা বর্তমান পৃথিবীর বহুল আলোচিত বিষয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীতে সুস্থভাবে টিকে থাকতে পরিবেশ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশের অংশ হিসেবে মানুষ পরিবেশ থেকে প্রত্যক্ষ সুফল ভোগ করে। পরিবেশ বিপর্যস্ত হলে অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে। তাই নিজেদের স্বার্থেই মানুষকে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবেশসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিভিত্তিক সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে সমন্বিত মনোভাব একান্ত প্রয়োজন এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো জনসচেতনতা।প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশ মানুষের জীবন ও অস্তিত্বের পক্ষে সহায়ক। নির্মল বাতাস, বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত খাদ্য সুস্থ ও সুন্দরভাবে মানুষকে বাঁচাতে সহায়তা করে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ও মানুষের লাগামহীন দূষণমূলক কর্মের ফলে প্রতিনিয়তই ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি। যেই পরিবেশ মানুষকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে নিজের সবটুকু দিয়ে লালন পালন করছে এই সমাজের মানুষকে, অন্যদিকে সেই মানুষ গুলোই নির্মমভাবে, নির্বিচারে ধ্বংস করছে প্রকৃতি। ফলে প্রকৃতি দিন দিন ব্যাপক ভয়ানক রুপ ধারণ করছে।বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে লাগামহীনভাবে। পৃথিবীর উষ্ণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর জলহাওয়া। শুধু তাই নয়,পরিবেশ দূষণের ফলে জলজ প্রাণীদের জলে থাকতে কষ্ট হয় কারণ তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। উদ্ভিদরা সতেজ থাকতে পারছে না। বন জঙ্গল অবাধে উজাড় হচ্ছে ফলে বাসস্থান সংকটে পড়ছে বন্য প্রানীসমুহ। আর পরিমন্ডলের এই সমস্ত কিছু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অসচেতনতা এবং অপরিকল্পিত পরিকল্পনা পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ। বিশ্বব্যাপী যেসব অসংক্রামক রোগে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে-তার অধিকাংশই বায়ু দূষণজনিত।
গবেষণা বলছে সাম্প্রতিককালে দেশের কয়েকটি শহরে বায়ু দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেখানে বসবাস যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই অতিক্ষুদ্র কণা এতোটাই ক্ষুদ্র যে এটি সহজেই মানুষের চোখ-নাক-মুখ দিয়ে ঢুকে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ফুসফুস, হার্ট, কিডনি লিভার আক্রান্ত করে থাকে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রজনন স্বাস্থ্য। বিশেষ করে গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি, শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে বায়ু দূষণ বড় ধরণের প্রভাব ফেলে। বায়ু দূষণ, সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণের এক ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর। গত বছরে শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইন্সটিটিউট প্রকাশিত সর্বশেষ এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সে বলা হয়েছে যে, বায়ু দূষণের কারণে সারা বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। এছাড়া বায়ু দূষণের ফলে গাছের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া বা সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এর প্রভাব পুরো প্রাণীজগতের ওপর পড়ছে বলে জানা গেছে। এমনকি বায়ু দূষণের কারণে খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে উদ্ভিদ নিজেও বিপদে পড়ে এবং উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল প্রাণীরাও বিপদে পড়ে। এছাড়াও উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। উদ্ভিদের জৈবনিক প্রক্রিয়া ঠিক না থাকলে পৃথিবীতে খাদ্য শৃঙ্খল ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের কারণে বছরে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এর আগেও বায়ুর মানের সূচকে বাংলাদেশ বিশেষত ঢাকা শহর কয়েক দফা সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে উঠে এসেছে।গবেষকরা একে এক ধরণের মানবিক বিপর্যয় বললেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের সমন্বিত, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলারই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। আদর্শ মাত্রার মধ্যে আছে মাত্র ১০টি জেলার বায়ুর মান।
এই অতিরিক্ত বায়ু দূষণের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতাসহ সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর। ক্যাপসের গবেষণায় অতিরিক্ত দূষিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলাদেশের ১৮টি জেলাকে। সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে গাজীপুরে, এরপরেই রয়েছে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ, যেখানে বায়ুতে অতি ক্ষুদ্রকণার মাত্রা বাংলাদেশের আদর্শ মান প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রো গ্রামের চাইতে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি। বিভিন্ন জেলায় বায়ুদূষণ বেশি ও কম হওয়ার কারণ হিসেবে গবেষক দল তাদের পর্যবেক্ষণে দেখেছে যে, শহরে অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ ও সমন্বয়হীনতা। এছাড়া ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।যেসব অঞ্চলে বায়ু দূষণের মাত্রা কম দেখা গিয়েছে সেখানে দেখা গিয়েছে বড় ধরণের কোন প্রকল্পের কাজ বা শহরের প্রাণকেন্দ্রে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বা সংস্কারের কাজ হচ্ছে না। হলেও সংখ্যায় খুব কম। গবেষণায়, সবচেয়ে বেশী বায়ু দূষণ দেখা গেছে মিশ্র এলাকায়। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে বাণিজ্যিক, রাস্তার সংযোগস্থল, আবাসিক, শিল্প এবং সংবেদনশীল এলাকা। এদিক থেকে তুলনামূলক কম দূষণ পরিলক্ষিত হয় গ্রামীণ এলাকায়। গবেষণার তথ্যানুযায়ী উপকূলীয় এলাকার মধ্যে শুধুমাত্র পটুয়াখালীর বায়ুমান ভালো বায়ুর পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত কিন্তু ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার, নোয়াখালী বায়ুদূষণ মাত্রা অনুযায়ী অতিমাত্রার দূষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। পাহাড়ি জেলার অর্থাৎ খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জে অতিমাত্রা থেকে মধ্যম মাত্রার দূষণ দেখা গিয়েছে। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিবেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশই প্রাণের ধারক ও বাহক। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ প্রাণের অস্তিত্বের পক্ষে হুমকি।
মানুষ যেমন তার প্রয়োজনে পরিবেশকে নিজের উপযোগী করছে, ঠিক তেমনি সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিতে মানুষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে প্রাণের অস্তিত্ব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অসচেতনতা এবং অপরিকল্পিত পরিকল্পনা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণ করা সবার নৈতিক দায়িত্ব।প্রতিদিন নানাভাবে পরিবেশকে দূষিত করে চলেছি আমরা। সৃষ্টি করছি জনদুর্ভোগ, সঙ্গে বাড়ছে ডাস্টবিন ব্যবহারে অনীহা। ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলা যেন আমাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বাসস্ট্যান্ডে নোংরা পরিবেশ চোখে পড়ার মতো। নজরদারির অভাবে শহরের রাস্তা বা রাস্তার পাশের ড্রেনগুলোর ভয়ানক অবস্থা। বাসাবাড়ির আঙিনায় ঝোপ-ঝাড়, ময়লাযুক্ত স্থান, ড্রেন পরিষ্কার না করার ফলে মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। ব্যক্তিগত অবহেলার ফলে পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না এদিকে প্লাস্টিক সামগ্রী পরিবেশকে দূষণ করে জলজ, স্থলজ, বনজ এমনকি মানবজাতির স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পলিথিন ব্যাগ, গৃহস্থালির ব্যবহূত প্লাস্টিক, পণ্যের মোড়ক, কসমেটিক্স প্লাস্টিক, পানির জন্য ব্যবহূত প্লাস্টিক বোতলের ব্যাপক ব্যবহার প্রকৃতিকে দূষিত করছে। প্লাস্টিক এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা সহজে পচে না এবং যার পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে প্রচুর সময় লাগে। ফলে পরিবেশের ওপর এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক অপচ্য পদার্থ হওয়ায় বন, জল ও স্থলের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রাণীর বাসস্থান ও খাদ্য গ্রহণে মারাত্মক বাধার সৃষ্টি করছে। এতে করে প্রাণীর জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু প্রাণীর ক্ষেত্রেই নয়, প্লাস্টিক মানবদেহে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে।
এ ছাড়া অনুন্নত যানবাহন ও অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার দরুন ঢাকার বাতাসে প্রতিনিয়ত দূষণ বাড়ছে, সেই সাথে যানবাহনের হর্ন ও মাইকের বিকট শব্দে শব্দদূষণও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। নিষিদ্ধ পলিথিন পচনশীল নয়; তাই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ফলে যত্রতত্র ফেলে দেয়ায় ড্রেন, ম্যানহোল বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্নভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে। চাষাবাদের ক্ষেত্রে সাময়িক ফলন বাড়ানোর তাগিদে জমিতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার এবং সেই সাথে রয়েছে কৃত্রিম কীটনাশকের ব্যাপক প্রয়োগ। এই বিষাক্ত কীটনাশকের ফলে ভূমি ও খাল বিল নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে গাছপালা কেটে ফেলা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাভূমির সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাওয়া দেশের আবহাওয়া বদলে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে অবদান রাখছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এদিকে প্লাস্টিক সামগ্রী পরিবেশকে দূষণ করে জলজ, স্থলজ, বনজ এমনকি মানবজাতির স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পলিথিন ব্যাগ, গৃহস্থালির ব্যবহূত প্লাস্টিক, পণ্যের মোড়ক, কসমেটিক্স প্লাস্টিক, পানির জন্য ব্যবহূত প্লাস্টিক বোতলের ব্যাপক ব্যবহার প্রকৃতিকে দূষিত করছে। প্লাস্টিক এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা সহজে পচে না এবং যার পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে প্রচুর সময় লাগে। ফলে পরিবেশের ওপর এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক অপচ্য পদার্থ হওয়ায় বন, জল ও স্থলের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রাণীর বাসস্থান ও খাদ্য গ্রহণে মারাত্মক বাধার সৃষ্টি করছে। এতে করে প্রাণীর জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে।পরিবেশকে সুস্থ রাখতে গাছের বিকল্প নেই। অধিক বৃক্ষরোপণ ও বনজ সম্পদকে রক্ষা করে বায়ুদূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব। বাস্তুতন্ত্রের যেসব জীব পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, তাদের টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে সব নীতিমালা প্রণীত রয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন পরিবেশদূষণের হাত থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে পারে।
প্রাণের অস্তিত্বের জন্য পরিবেশের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবুজ,পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বান্ধব বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের বসবাস উপযোগী বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে চাই দূষণমুক্ত পরিবেশ। প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় ভারত ও চীনের পরে বাংলাদেশের অবস্থান। অন্য দিকে বড় শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে বিশ্বে রাজধানী ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। ইন্টার- ন্যাশনাল গ্লোবাল বার্ডেন ডিজিজ প্রজেক্টের প্রতিবেদনে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বায়ুদূষণকে ৪ নম্বরে দেখানো হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৫৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকরী পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বায়ুদূষণে পড়বে বাংলাদেশ।পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিবেশের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। মানুষসহ সব প্রাণের অস্তিত্ব পরিবেশের ওপরই নির্ভরশীল। কারণ পরিবেশই প্রাণের ধারক ও বাহক। তাই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ প্রাণের অস্তিত্বের পক্ষে হুমকি। মানুষ যেমন তার প্রয়োজনে পরিবেশকে নিজের উপযোগী করছে, ঠিক তেমনি সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিতে মানুষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে প্রাণের অস্তিত্ব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অসচেতনতা এবং অপরিকল্পিত পরিকল্পনা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণ করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। কারণ পরিবেশ সংকটের এই দায় সমগ্র মানবজাতির।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
এমএসএম / এমএসএম