স্বপ্নের ঘরে দেড়শ পরিবারের বসবাস
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার অসহায় ও দরিদ্র পরিবারগুলো ১৫০টি স্বপ্নের ঘরে বসবাস করলেও অপেক্ষায় রয়েছে আরো ১৫৩টি পরিবার। ওই ঘরগুলোর নির্মাণও প্রায় শেষ পর্যায়ে। নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলেই ঘরগুলো দ্রুত অসহায়দের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। সব সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন খোঁজখবর নিচ্ছে। ব্যক্তি খরচ করে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণসহ বিভিন্ন সহযোগিতাও করে যাচ্ছেন অনেকে। মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়া এসব অসহায় মানুষ ঘরগুলোর গুণগতমান ভালো হওয়ায় অত্যন্ত খুশি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় রূপগঞ্জে মোট ৩০৩টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি পরিবারের জন্য ২ শতক জমি ও ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি টিনশেডের দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্থায়নে মুড়াপাড়া দড়িকান্দি এলাকায় ২০টি ও কাঞ্চনের বিরাব এলাকায় ১৩১টি ঘর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। এছাড়া বিরাব এলাকায় আরো ১০০টি ও আধুরিয়া এলাকায় ৪৫টি ঘরের নির্মাণকাজ চলছে। এছাড়া পূর্বাচলে বিদ্যুৎ দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে একই পরিবারের চারজন নিহতের ঘটনায় বেঁচে ফেরা এক সদস্যকে বিদ্যুৎ বিভাগের অর্থায়নে একটি ঘর করে দেয়া হয়। মাত্র ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা দিয়ে ঘরের নির্মাণের পর ভিটের জন্য ভিটি বালু, বিদ্যুতিক সংযোগ, পয়ঃনিষ্কাশন, পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা করাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ছিল। এ মুহূর্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও মাসকো গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর। পাটমন্ত্রী এ প্রকল্পের জন্য ১০ লাখ টাকা ও আব্দুস সবুর কাঞ্চনে বিরাব এলাকায় ২৩০টি ঘরের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণ করে দেন। ভালোমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করায় ঘরগুলো খুব মজমুত হয়েছে। ঘর নির্মাণ নিয়ে কারো কোরো অভিযোগ নেই।
কথা হয় ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা রুনা বেগমের সঙ্গে। তার স্বামী মারা গেছে বহু আগে। ছিলনা থাকার কোন ঘরবাড়ি। ভিক্ষা করে ও মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ এক ছেলে কাদির হোসেন ও এক মেয়েকে মানুষ করেছেন। বহু কষ্টে মেয়েকে বিয়ে দেন। রুনা বেগমের ছেলে কাদির বিয়ে করার পর তাকে ফেলে রেখে তার পরিবার নিয়ে ঢাকা থাকেন। ছেলে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার পর রুনা বেগম কখনো থেকেছেন মানুষের বাড়ির বারান্দায় আবার কখনো বা মানুষের রান্না ঘরে। ভাবেননি কখনো নিজের জমিতে ঘরে থাকতে পারবেন। নিজের ঘর ও জমি ছিল রুনা বেগম স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রায়ণ প্রকল্পে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো রুনা বেগমের। আশ্রায়ন প্রকল্পের আওয়তায় রুনা বেগম পেয়েছেন নিজের নামে দুই শতক জমি ও একটি টিনসেডের একটি দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর। সাথে রয়েছে একটি গোসলখানা ও টয়লেট। বৈদ্যুতিক সংযোগ ও পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তার এ স্বপ্ন পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। শুধু রুনা বেগম নয় ইউসূফ, সজীমুন (৯০), পঙ্গু শফিকুল আলমসহ ১৫০ টি পরিবার ঘর পেয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ঘর যাদের জন্য ছিল একটি স্বপ্নে ব্যাপার। এছাড়া আরো ১৫৩টি পরিবারের স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় রয়েছে।
কথা হয় আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া শ্রমিক ইউসূফের সঙ্গে তিনি জানান, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। গত ২০ বছর ধরে মুড়াপাড়া নগর এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। তার বাপ দাদার কোন ভিটেমাটি নেই। তিনি মালবাহী জাহাজ থেকে ময়দা, আটা, ডাল উঠানামানোর কাজ করে দৈনিক ৫-৭ টাকা করতে পারেন। কখনো আয় হতো আবার কখনো আয় বন্ধ থাকতো। এ আয় থেকেই সংসার চালানো ও প্রতি মাসে প্রায় ৪ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিতে হতো। কখনো ভাবেন নিজের ঘরে থাকতে পারবেন। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের মতো অনেক অসহায় মানুষকে ঘর দিয়েছেন। এসময় ইউসুফ মিয়া এ ঘটনা গুলোর বর্ণণা দিতে গিয়ে তার চোঁখে পানি চলে আসে। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
কথা হয় বিরাব এলাকায় ঘর পাওয়া হযরত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাবাগো আমি ভিক্ষা কইরা চলি আমার পোলা মাইরারা আমারে দেহে না। আগের রাস্তায় নয়তো মাইনষের বাড়ি বাড়ি থাকতাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ্ নূসরা জাহান বলেন, অসহায়দের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ৩০৩ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরগুলো নির্মাণের সময় আমরা নিজেরা সরেজমিনে থেকে পর্যবেক্ষণ করায় ঘরগুলো খুব মজমুত হয়েছে। তবে, একটি ঘরে সামান্য ত্রুটি দেখা দিলেও তা তাৎক্ষনিক ঠিক করে দেয়া হয়েছে। যারা এখানে থাকছেন আমরা প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজ রাখছি। উপকারভোগীরা অনেক সন্তুষ্ট। পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুইয়া ও মাসকো গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুস সবুরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন। অসহায়দের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে যাতে তারা আত্মকর্মসংস্থান করতে পারেন।
এ সময় পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার জননী। তার মন সাধারণ মানুষের জন্য সব সময় কাঁদে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে যত মানুষকে ঘর দিয়েছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সবার সহযোগিতায় রূপগঞ্জের নির্মিত ঘরগুলো ভালোমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে করায় ঘরগুলো ভালো আছে। এয়াড়া বাকি ঘরগুলো শীগ্রই বুঝিয়ে দেয়া হবে।
এমএসএম / জামান