প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প নিয়ে পটিয়ায় দুষ্টচক্রী মহলের হরিলুট

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রায়ণ প্রকল্পে ভূমিহীনদের জন্য নির্মাণকৃত ঘর নিয়ে চলছে পটিয়ায় একটি দুশ্চক্রি মহলের হরিলুট। পটিয়া উপজেলায় মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ণ প্রকল্পের ভূমিহীনদের জন্য আশ্রায়ন প্রকল্প নির্মাণে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল নির্মাণনাধীন ঘর গত ৫ জুলাই পরিদর্শন করে অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র ধরা পড়ার কথা শিকার করেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ।

এসময় তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের সমাধানের জন্য বলেন। জানা যায়, ভুমিহীনদের নির্মাণকৃত আশ্রায়ন প্রকল্পে হাইদগাঁও পাহাড়ে ও সাপমারা গুচ্ছগ্রামে ভুমিহীনদের দেয়া ২৩০ টি ঘর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভুমিহীনদের মধ্যে ২০০টি ইতোমধ্যে ভুমি রেজিষ্ট্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে। সরেজমীনে গিয়ে দেখা মিলে ঘরগুলোতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার এবং পরিমাণে কম দেয়ায় ঘরের বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ঘরগুলোতে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করায় এবং ঘরের ছাউনী লোহার এ্যাংগেল দিয়ে করার কথা থাকলেও পাহাড়ী কাট দিয়ে নির্মাণ করায় ঘরে উঠার আগেই ছাউনী নষ্ট হয়ে গেছে। যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এতে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক পরিমাণ টাকাও খরচ করা হয়নি বলে জানা যায়। এছাড়াও বিদ্যুৎ সংযোগসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ভুমিহীনদের জন্য আশ্রায়ন প্রকল্প।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সুপ্তশ্রী সাহা আশ্রয়ণ প্রকল্প কাজটি বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি ‘সকালের সময়’ কে বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে নির্মানাধীন এসব ঘর পেয়েছেন পটিয়ার বিভিন্ন এলাকার মুসলমান, হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ২৩০টি পরিবার। গুচ্ছ গ্রামে নির্মানাধীন ঘরগুলো মান ঠিক রাখার জন্য চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। এদিকে গত ১৩ জুলাই(মঙ্গলবার) হঠাৎ পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুমিনুর রহমান। তিনি বিকেলে উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর এ আশ্রায়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাহাড়ের চূড়ায় খুব সুন্দর ঘর হয়েছে।

এ ঘর গুলোতে সরকারের যে পরিমান বরাদ্দ দিয়েছে এর চেয়ে ভাল ঘর হয়না বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঘর নির্মাণে অনিয়ম দূনীতির বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। তিনি আশ্রায়ন প্রকল্পের বিভিন্ন ঘরে দূর্বত্তের হামলার খবর পেয়ে সরেজমিন তদন্তের জন্য এসেছে বলে জানায়। জানা গেছে, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের পাহাড়ে সাপমারা গুচ্ছগ্রাম ও হাইদগাঁও এলাকায় বর্তমানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছে। শুরুতে উপজেলার আনোয়ারা এলাকার মো. আকবর ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করে। পটিয়ায় যুবলীগ লীগ ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা ঘরগুলো নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে মাহদু ৪০টি, উপজেলা যুবলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক এনাম মজুমদার ৪০টি, জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান ৫০টি, ভাটিখাইন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নাজিম উদ্দীন এর ৩০টি ঘর নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে।

২০০টি ঘর ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং পরের ৩০টি ঘর ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। ঘর নির্মাণ প্রকল্পটি সর্বমহলে প্রশংসিত হলেও নিম্নমানের কাজের কারণে পটিয়াতে ভুমিহীন হিসেবে যারা ঘর পেয়েছেন তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পটিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ভুমিহীন নুরুল ইসলাম ও ৩নং ওয়ার্ডের শামসুল আলমও ঘর পেয়েছেন। এটিতে তার পরিবার বর্তমানে বসবাস করছে। নিম্নমানের কাজের কারণে প্রায় ঘরের ফ্লোর ফেটে গেছে। হস্তান্তরকৃত ঘরগুলোতে উঠার আগেই ফাটল সৃষ্টি এবং ছাল নষ্ট হয়ে গেছে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে। বিষয়টি সরেজমিন তদন্তে যাওয়ার খবর পেয়ে রাতের  তাড়াহুড়া করে আঁধারে ঝষাঝষি করে দেন। এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক এনাম মজুমদার এক প্রশ্নের জবাবে জানান, এই প্রকল্পে কেবল মাত্র আমরা লোকবল সাপ্লাই করেছি। আমরা কোন ঠিকাদার না, আমাদের কোন ঠিকাদারী লাইসেন্স নেই। মূল কাজের দায়িত্বে আছেন উপজেলা প্রশাসন ও পিআইও কর্মকর্তা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ এর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, হ্যা ঠিকাদারের দায়িত্ব আমাদের ছিল। যেখানে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।