তিনদিনের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে

বড়দিনের ছুটিসহ টানা তিনদিনের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে চায়ের রাজধানী দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টগুলোতে।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) জুমার পর সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দলবেঁধে পর্যটকরা প্রকৃতির সাথে মিশে ঘুরাঘুরি করছেন এবং ছবি তুলছেন। এ সময় কয়েকজন বিদেশি পর্যটকও দেখা যায়।
জানা যায়, প্রতি বছর শীতের শুরু থেকেই এখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। একদিকে পর্যটন মৌসুম আর অন্যদিকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনকে কেন্দ্র করে সরকারি বাড়তি একদিন ছুটি যুক্ত হওয়ায় সারা দেশের সকল পর্যটন এলাকাতেই ছুটছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। ব্যতিক্রম ঘটেনি চায়ের রাজ্যেও।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট অঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রথম পছন্দই হচ্ছে শ্রীমঙ্গল। ৯০ ভাগ পর্যটকই শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে রাত্রিযাপন করে থাকেন। বাকি ১০ ভাগ পর্যটক জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় অবস্থান করেন। তারা এখানে অবস্থান করে পুরো জেলার দর্শনীয় স্থান দেখার পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান ঘুরেন।
শ্রীমঙ্গলের আবাসন সংস্থা জানায়, বড়দিন উপলক্ষে পাওয়া ছুটিতে ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ ৯৫% রিজার্ভ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) থেকেই হোটেল রিসোর্টগুলোতে পর্যটকরা অবস্থান করছেন।
তারা আরো জানান, যেকোনো ছুটিতেই পর্যটকদের ভিড় থাকে চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গলে। সবুজ চা বাগান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ শ্রীমঙ্গল।
এখানে যেসব এলাকা পর্যটকরা ঘুরে দেখেন, তা হলো, শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিল, উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের গালিচায় মোড়ানো চা বাগান, খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরি ও ত্রিপুরাদের গ্রাম, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বধ্যভূমি ৭১, শংকর টিলা লেক, ভাডাউড়া লেক, জাগছড়া লেক, ফুলছড়া গারো লাইনের লেক, নিমাই শিববাড়ী, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ফিনলে চা বাগানের ভেতরে ডিনস্টন সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, হরিণছড়া তীর্থ স্থান, হরিণ ছড়া ঝাউবন, বিদ্যাবিল হজম টিলা, নাহারপুঞ্জিতে শতবর্ষ গিরীখাত ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
কমলগঞ্জের মাধবপুর লেক, ধলই চা বাগানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, খাসিয়া পল্লী, হাম হাম জলপ্রপাত, কলাবন, বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর। রাজনগরের কমলা রাণীর দীঘি, কাউয়াদীঘি হাওর ও জলের গ্রাম অন্তেহরি।
এছাড়া মৌলভীবাজার সদরে ৫০০ বছরের প্রাচীন স্থাপত্যের খোজার মসজিদ, বর্ষিজোড়া ইকো পার্ক। জুড়ির সারি সারি কমলা ও আগরের বাগানসহ লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন। কুলাউড়া উপজেলার গগনটিলা, কালাপাহাড়, মূরইছড়া ইকো পার্ক ইত্যাদি।
জানা যায়, মৌলভীবাজার দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, রাঙ্গাউটি রিসোর্ট, বর্ষিজোড়া বাগান বিলাস রিসোর্ট, শ্রীমঙ্গল রাধানগর গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ, চা বোর্ডের টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম, টি হ্যাভেন, লেমন গার্ডেন, বালিশিরা রিসোর্ট, নবেম রিসোর্ট, গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট, হীড বাংলাদেশসহ এখানে প্রায় শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট কাউন্টার ম্যানেজার শাহিন মাহমুদ জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ১২ শতাধিক পর্যটক টিকিট কেটে লাউয়াছড়া বনের ভেতরে প্রবেশ করেছেন। দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি কয়েকজন বিদেশী পর্যটকও রয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকায় যেকোনো ছুটি কিংবা উৎসবে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। মৌললভীবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের বড় অংশ রাত্রি যাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলকে বেছে নেন।
তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার থেকেই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এছাড়া আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল হোটেল-রিসোর্টে আগাম বুকিং হয়ে গেছে ৯০%।
শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে ভাড়া বেশি হওয়ায় পর্যটকরা বিড়ম্বনায় পড়েন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হোটেলের মান অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করেন হোটেল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। আবার কিছু ব্যবসায়ী আছেন মান অনুযায়ী সেবা দেয়া না। বরং বেশি টাকা নিয়ে থাকে। আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি। যাতে পর্যটকরা প্রতারিত না হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ২০০৮ সাল পর্যটন জেলা মৌলভীবাজার হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পর থেকে চাহিদা অনুযায়ী আবাসন গড়ে উঠেনি। রাস্তাঘাটের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ পর্যন্ত যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, তার বেশির ভাগই করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা সব সময় উন্নয়নের গল্প শোনান। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হচ্ছে না।
চা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন টি রিসোর্ট-এর ব্যবস্থাপক শামসুদোহা বলেন, পুরো রিসোর্ট বুকিং হয়ে গেছে। এই মাসে কোনো রুম খালি নেই।
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ’র নির্বাহী অফিসার দিশারী বলেন, বড়দিনের ছুটিতে ইতিমধ্যে আমাদের রিসোর্ট হাউসফুল বুকিং হয়ে গেছে।
শ্রীমঙ্গল জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, পর্যকদের নিরাপত্তা দিতে প্রত্যেকটা স্পটেই আমাদের লোক নিয়োজিত আছে। এছাড়া মোবাইল টিমসহ বিভিন্ন স্পটে স্পটে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে আমি নিজেও মাঠে কাজ করছি।’
শ্রীমঙ্গলস্থ ‘টি ভ্যালীর রেস্টুরেন্ট’র ডিরেক্ট ও স্মার্ট ট্যুরিজমের সত্ত্বাধিকারী স্থানীয় সাংবাদিক এম এ রকিব বলেন, পর্যটকদের সেবা প্রদানে আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের রেস্টুরেন্টে মান সম্পন্ন খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি আগত পর্যটকরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন, সেজন্য হোটেল রিজার্ভেশন, গাইড সার্ভিস ও রেন্ট-এ কারের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করতে আমাদের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নিয়োজিত সিনিয়র ট্যুর গাইড সৈয়দ রিজভী ও সোলেমান হাসিব বলেন, দেশী পর্যটক আসতে শুরু করেছে। তবে বিদেশী পর্যটক কম আসছেন। তিনি বলেন, ‘দু’তিনজন বিদেশী পর্যটকের দেখা মেলেছে শুক্রবারে।’
পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, টানা তিন দিনের ছুটিতে যথেষ্ট পরিমাণ পর্যটক আসছেন। এছাড়া শীতের সময় এমনিতেই পর্যটক বেশি থাকে। বিভিন্ন উৎসবে যে পরিমাণ পর্যটক আসেন, সে পরিমাণ থাকার হোটেল রিসোর্ট এখানে নেই। বেসরকারিভাবে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, সে তুলনায় সরকারিভাবে তেমন কিছুই গড়ে উঠেনি।
তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, সরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা বা সহজে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আমাদের আরো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। আমরা আরো সুন্দরভাবে সাজাতে পারব।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ জাকারিয়া বলেন, পর্যটকদের হয়রানি কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলার প্রতিটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ট্যুরিজম বোর্ড এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে আমরা যোগাযোগ করেছি। একটা সমন্বিত জায়গা তৈরি হয়েছে। ট্যুরিস্টদের জন্য চমৎকার একটা পর্যটন স্পট আমরা সবগুলো ক্ষেত্রে উপহার দিতে পারি।’
প্রীতি / প্রীতি

পিরোজপুরে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস ২০২৫ উদযাপন

বিএনপি সরকার গঠন করলে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় ডিজিটাল মন্দির নির্মাণ করা হবে — খন্দকার নাসিরুল ইসলাম

বকশীগঞ্জে গাছ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু

বাকেরগঞ্জে জাতীয় কন্যা শিশু দিবসে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

চাঁদপুরে ৪৫ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান

গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ জনের পরিবার পেল ২৫ লাখ টাকা

ঈশ্বরদীতে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত

সাটুরিয়ায় জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত

মেহেরপুরে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত

পটুয়াখালীতে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আত্রাইয়ে গোয়ালঘরের তালা ভেঙে ৫ টি গরু চুরি

কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও ডিজিটাল লার্নিং সেন্টার উদ্বোধন
