খুলনার সাতটি উপজেলাতেই নেই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকঃ ভোগান্তিতে অভিভাবকরা

খুলনার নয়টি উপজেলার মধ্যে সাতটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই নেই কোন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে হাসপাতালগুলোতে মিলছে না শিশুদের সু-চিকিৎসা। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দারিদ্র পরিবারের শিশুদের জেলা শহরে নিয়ে এসে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। অধিকাংশই খরচের ভয়ে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারে রোগ হচ্ছে জটিলতর। এমনকি সুচিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর মুখেও পতিত হচ্ছে অনেকেই।
উপজেলাগুলো থেকে তথ্য নিয়ে জানা যায়, শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় শিশু রোগী বাড়ায় সমস্যা প্রকট হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতেও রোগীর চাপ বাড়ছে। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশির ভাগ শিশু। শহরের সন্নিকটের দুটি উপজেলা বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়ায় শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও কয়রা, পাইকগাছা, তেরখাদা, ফুলতলা, দাকোপ, দিঘলিয়া এবং রূপসাতে দীর্ঘদিন ফাঁকা রয়েছে শিশু কনসালটেন্ট পদটি। ফলে এসব উপজেলায় মেডিকেল অফিসাররা দায়সারা চিকিৎসা দিচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে জেলা শহরের দূরত্ব একশ’ কিলোমিটার। নদী পথে আসতে সময় লাগে ৯/১০ ঘন্টা আর ভাঙাচুরা রাস্তা দিয়ে স্থলপথেও সময় লাগে ৫/৬ ঘন্টা। এ উপজেলার পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ও খাজরা ইউনিয়নের মানুষও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৩ সালে ৫০ শয্যায় রূপান্তরিত হলেও শুরু থেকে শিশু কনসালটেন্ট পদটি ফাঁকা রয়েছে। ফলে শিশুদের সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ।
আশাশুনির একশরা গ্রামের এক শিশুর মায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ডায়রিয়ার কারণে হাসপাতালে নিয়ে আসছি। দু’দিনে কোন উন্নতি হয়নি। মেডিকেল অফিসাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালে কোন শিশু ডাক্তার নেই। সপ্তাহের শুক্রবারে খুলনা সদর হাসপাতাল থেকে একজন শিশু ডাক্তার এসে জায়গীরমহলে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন। প্রচুর ভীড় হয়। এর আগে অসুস্থ হলে ভিজিট দিয়ে তাকে কয়েকবার দেখিয়েছি। এছাড়া অধিকাংশ সময় গ্রামের ডাক্তারদের দেখাই। গরিব মানুষ শহরে চিকিৎসার জন্য নিতে পারিনা। এই হাসপাতালে একটি শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলে দুই উপজেলার মানুষ উপকৃত হবে। নভেম্বর মাসে কয়রা হাসপাতাল থেকে ৮৫০ জন শিশু চিকিৎসা গ্রহণ করেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানান।
কয়রার পশ্চিম দেয়াড়া গ্রামের দিনমজুর তসলিম আহমেদ বলেন, গত শীতে আমার ২ বছর বয়সের ছেলের শ্বাসকষ্ট হয়। সপ্তাহের শুক্রবারে খুলনা থেকে শারাফাত হোসেন নামে এক শিশু ডাক্তার আসেন। তার অপেক্ষায় থেকে গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়াতে থাকি। নির্ধারিত দিনে শারাফাত সাহেবের কাছে নেওয়ার সাথে সাথেই তিনি পাশের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন এবং খুলনায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে হাসপাতালে ভর্তির ৪/৫ ঘন্টার মধ্যে আমার একমাত্র ছেলে মারা যায়। তিনি আরও বলেন,অর্থের অভাবে খুলনাতে ডাক্তার দেখাতে নিতে পারিনি। শিশু ডাক্তার না থাকায় কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও নেইনি। এখন জেনেছি নিউমোনিয়ার সুচিকিৎসা রয়েছে, মনের বুঝ দিতে পারিনা।
একই গ্রামের দিনমজুর হাবিবের স্ত্রী জাহানারা বলেন, তার ছেলে সন্তান জন্মের পর থেকে অসুস্থ। কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে একদিন রেখে খুলনায় রেফার্ড করেন। শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এখনও সুস্থ নয়। ডা. শারাফাত শুক্রবারে কয়রায় আসলে তাকে দেখাচ্ছেন। খরচ মেটাতে হিমসিম খাচ্ছেন তারা।
খুলনা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী পাইকগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও নেই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সেখানেও মেডিকেল অফিসাররা আগত শিশুদের চিকিৎসা প্রদান করেন। সমস্যা জটিল হলে খুলনা মেডিকেলে কলেজ এন্ড হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। জানা যায়, সেখানে শিশু রোগী ভর্তি রয়েছেন ১৯ জন। তন্মোধ্যে ২ জনের ডায়রিয়া, আর বাকীদের শ্বাসকষ্ট । বহি:বিভাগেও শিশুরোগীর ভীড় বেড়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র থেকে জানা যায়।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূরুল হুদা খান বলেন, আমি মনে করি অগ্রবর্তীর তুলনায় দূরবর্তী উপজেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন অনেকটা বেশি। কয়রা থেকে জরুরী রোগী খুলনায় পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। ফলে এখানে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একান্ত প্রয়োজন।
তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার জানান, হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর থেকে সেখানে কোন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেয়া হয়নি। ঠান্ডা জনিত শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ সুফিয়ান বলেন, বহি:বিভাগে রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার বহিঃবিভাগে ৪০ জন ও জরুরী বিভাগ থেকে ১০ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। নভেম্বর মাসে জরুরী বিভাগ ও বহি:বিভাগ মিলে ১৭৮৩ শিশু চিকিৎসা গ্রহণ করেছে।
দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদিব বালা বলেন, সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। বুধবারে দাকোপে শিশু রোগী ভর্তি ছিল ৭ জন। তন্মার্ধে ৩ জন শ্বাসকষ্ট ও ৪ জন ডায়রিয়া। বহিঃবিভাগে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান তিনি।
রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া বেশি দেখা দিচ্ছে। এছাড়া ডায়রিয়ার রোগীও পাওয়া যাচ্ছে।
খুলনা শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, ঠিকমত ডোজ কিংবা নিউমোনিয়ার ধরণ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করতে না পারলে শিশুর মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। পাশ্বাপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়াসহ ররোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে পারে। এজন্য রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়া এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা উচিত নয়।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলে শিশুদের রেফার্ড কমে যাবে। শিশু মৃত্যু রোধে কার্যকারী পদক্ষেপ হবে। হার্ড টু রিচ এলাকা কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছায় শিশু ডাক্তার থাকলে ভোগান্তী অনেকটা কমে আসবে। এসব এলাকা থেকে শিশু রেফার্ডে অভিভাবকদের খুবই ভোগান্তী পেতে হয়। বিশেষ করে কয়রা সবচেয়ে দূরবর্তী উপজেলা, সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একান্ত প্রয়োজন। শুণ্য পদের তালিকা পাঠানো রয়েছে। আশা করছি দ্রুতই এটির সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডা জনিত রোগের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক-নার্স রয়েছে। ঠান্ডা জনিত রোগী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, সব উপজেলাতেই শিশু কনসালটেন্ট জরুরী। তবে সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কনসালটেন্ট পদে পদায়ন দেয়া হয়। শুণ্য পদের তালিকা আমরা বহুবার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কনসালটেন্ট কম থাকায় এখনই পদায়ন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এমএসএম / এমএসএম

ভোলাহাটে বিএনপি'র ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ

আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদকজয়ী জিহাদের পাশে বিএনপি পরিবার’

ধামইরহাটে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপির উঠান বৈঠক

মোরেলগঞ্জে মহিলা দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

সলঙ্গায় নারী গ্রাম পুলিশের লাশ উদ্ধার

আত্রাইয়ে জামায়াতে ইসলামীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

নবীনগরে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন

চৌগাছার কাকুড়িয়া গ্রামের মহাকালি মন্দির চৌত্রিশ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ আসনে মোহনকে সমর্থন দিলো দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপি

মেহেরপুরে জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে মৃত শ্রমিকদের মৃত ভাতা প্রদান

ভূরুঙ্গামারীতে নদীর বাঁধ নির্মাণের দাবীতে মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

নরসিংদীতে সম্মানজনক বেতন ও এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষকদের বিক্ষোভ
