অর্থনৈতিক অগ্রগতির নতুন দিগন্ত মেট্রোরেল
আমাদের দেশের মতো একটি ছোট এবং জনবহুলদেশ মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে অনেক সুবিধা পেতে পারে। মেট্রোরেল প্রতিদিনের যাতায়াতের সময় উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে আনার পাশাপাশি একসঙ্গে প্রচুর সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে চলমান অন্যান্য পরিবহনের মাধ্যমগুলোর ওপরও চাপ কমিয়ে দেবে। এর ফলে বর্তমান যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে। দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই প্রকল্প গুলো বাংলাদেশকে যোগাযোগ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন যুগে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতুর সুফল মানুষ পেতে শুরু করেছে, বাকী প্রকল্প গুলোর সুফল সামনের দিনগুলোতে পাওয়া যাবে।
শহরকেন্দ্রিক মানুষের যাতায়াত সহজ করতে অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করা একটি পরিবহন মেট্রোরেল। এটিতে একইসঙ্গে যেমন অনেকে যাতায়াত করতে পারেন, তেমনি এড়ানো যায় যানজট। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যবহারের দিক থেকে যাত্রীদের পছন্দের তালিকায় এটি অনেকটাই এগিয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ প্রথম উদ্বোধন করলেন মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেলটির ১১.৭৩ কিলোমিটারের যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এটি পিলারের মাধ্যমে মাটির উপরে নির্মাণ করা হয়েছে যাকে বলা হয় ওভারগ্রাউন্ড এলিভ্যাটেড এক্সপ্রেস। এছাড়া অনেক শহরে মাটির নিচ দিয়েও মেট্রোরেল চলাচল করে, যা আন্ডারগ্রাউন্ড, সাবওয়ে বা টিউব নামে পরিচিত। চীনে অবস্থিত সাংহাই মেট্রো পৃথিবীর দীর্ঘতম মেট্রো। ১৯৯৩ সালে ৮৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রো নির্মাণ করা হয়। পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত এই মেট্রোরেলে ৫০৮টি স্টেশন আছে। বছরে প্রায় তিন হাজার ৭০০ কোটি যাত্রী এই মেট্রো ব্যবহার করেন। পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম মেট্রোরেলের তালিকায় আছে চীনের আরেকটি মেট্রো লাইন, বেইজিং মেট্রো।
পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো এই সাবওয়েটি ১৯৭১ সালে উদ্বোধন করা হয়। চীনে এই সাবওয়েটি আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রাগন নামেও পরিচিত। দীর্ঘতম মেট্রোরেলের তালিকায় সপ্তম স্থানে আছে মস্কো মেট্রো। ৩৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোর বর্তমানে স্টেশন সংখ্যা ২২৩টি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই মেট্রো ১৯৩৫ সালে চালু হয়। এই মেট্রোর ‘পার্ক পোবেডি’ স্টেশনটি মাটির ৮৪ মিটার গভীরে অবস্থিত, যা পৃথিবীর তৃতীয় গভীরতম স্টেশন। করোনার প্রথম রোগী শনাক্তের শহর হিসেবে চীনের উহানের নাম অনেকেরই পরিচিত। এই উহান শহরেই আছে দৈর্ঘ্যের দিক থেকে পৃথিবীর অষ্টম দীর্ঘ মেট্রো। ৩৩৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মেট্রোতে ২২৮টি স্টেশন আছে।২০০৪ সালে স্টেশনটির উদ্বোধন হয়। এলিভ্যাটেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড দুইভাবেই এটি পরিচালিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীতে অবস্থিত সোলে মেট্রোপলিটন সাবওয়ে দীর্ঘতম মেট্রোর তালিকায় নবম অবস্থানে রয়েছে। ৩১৯.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সাবওয়ে ১৯৭৪ সালে চালু হয়। এর স্টেশন সংখ্যা ২৯৩টি। মাদ্রিদ মেট্রো বছরে প্রায় ৪৫ কোটি মানুষ মেট্রো ব্যবহার করে থাকে। দশম অবস্থানে থাকা স্পেনের রাজধানীতে অবস্থিত মাদ্রিদ মেট্রোর দৈর্ঘ্য ২৯৪ কিলোমিটার। ৩০২ স্টেশনের এই মেট্রো ১৯১৯ সালে চালু হয়। বছরে প্রায় ৪৫ কোটি মানুষ মেট্রো ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ফ্রান্সের প্যারিস, চীনের তিয়ানজিন ও সিঙ্গাপুর মেট্রো দীর্ঘতম মেট্রোর তালিকার ওপরের দিকে রয়েছে। ১৮৬৩ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে চালু হয় লোকোমোটিভ রেল। লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড নামে পরিচিত এ মেট্রো নেটওয়ার্ক, যা বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো মেট্রোরেল। ১৮৯০ সালে এসে লন্ডন মেট্রোতে যুক্ত হয় ইলেকট্রিক রেল। বর্তমানে লন্ডন মেট্রোর ১১টি লাইন রয়েছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ৪০২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার মাটির নিচে। রয়েছে ২৭০টি স্টেশন। প্রতিদিন যাতায়াত করে ৫৪০টির বেশি ট্রেন। লন্ডন মেট্রোরেলে বছরে প্রায় ১১৭ কোটি মানুষ যাতায়াত করে।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের একটি জাপানের টোকিও মেট্রো রেল। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে মেট্রোরেল চালু হয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে। ২০০২ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেসকো। ১৮৯৬ সালের ডিসেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে মেট্রোরেল চালু হয়। এর দৈর্ঘ্য ছিল ১০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এটি বিশ্বের একমাত্র মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক, যেটি পরবর্তী সময়ে আর বিস্তৃত হয়নি। অর্থাৎ, গ্লাসগো মেট্রোর লাইনের দৈর্ঘ্য একটুও বাড়েনি। বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো লন্ডন মেট্রোরেলে বছরে প্রায় ১১৭ কোটি মানুষ যাতায়াত করে।২০২২ সালে এসে মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণপরিবহনে নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে। তবে বিশ্বে মেট্রোরেল চালু হয়েছে দেড় শ বছরের বেশি সময় আগে। ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৬১টি দেশের দুই শতাধিক শহরে গণপরিবহন হিসেবে মেট্রোরেল চালু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক বোস্টন সাবওয়ে। এটি চালু হয় ১৮৯৭ সালে। এরপর ১৯০৪ সালের অক্টোবরে নিউইয়র্কে চালু হয় মেট্রোরেল। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে মেট্রোরেল চালু হয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে। ২০০২ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেসকো। ১৮৯৬ সালের ডিসেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে মেট্রোরেল চালু হয়। এর দৈর্ঘ্য ছিল ১০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এটি বিশ্বের একমাত্র মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক, যেটি পরবর্তী সময়ে আর বিস্তৃত হয়নি। অর্থাৎ, গ্লাসগো মেট্রোর লাইনের দৈর্ঘ্য একটুও বাড়েনি। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক বোস্টন সাবওয়ে। এটি চালু হয় ১৮৯৭ সালে। এরপর ১৯০৪ সালের অক্টোবরে নিউইয়র্কে চালু হয় মেট্রোরেল। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত তিনটি মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক রয়েছে যথাক্রমে জাপানের টোকিও, চীনের বেইজিং এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে। এর মধ্যে টোকিও সাবওয়ে এশিয়ার প্রথম মেট্রো নেটওয়ার্ক, চালু হয় ১৯২৭ সালে।মিসরের কায়রো,তিউনিসিয়ার তিউনিস, আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স, ইথিওপিয়ার আদ্রিস আবাবা সহ আফ্রিকার কয়েকটি শহরেও মেট্রোরেল চালু রয়েছে।
মেট্রোরেল রেল চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় মেট্রোরেল চালু হয়। এটি ভারতের প্রথম মেট্রো নেটওয়ার্ক। বর্তমানে ২টি লাইন ও ৩৪টি স্টেশন রয়েছে কলকাতা মেট্রোয়। লাইনের মোট দৈর্ঘ্য ৪০ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মেট্রোরেল চালু হয় ২০০২ সালের ডিসেম্বরে। এর ১২টি লাইন রয়েছে। কয়েকটি লাইনের নির্মাণকাজ এখনো চলছে। স্টেশন ২৮৬টি। লাইনের মোট দৈর্ঘ্য ৩৯১ কিলোমিটার। ভারতের সবচেয়ে ব্যস্ততম মেট্রো নেটওয়ার্ক এটি। অন্যদিকে ভারতের বাণিজ্যিক শহর মুম্বাইয়ে মেট্রোরেল চালু হয় ২০১৪ সালের জুনে। দৈর্ঘ্য ৩৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার। স্টেশনের সংখ্যা ৩১। চেন্নাই, পুনে, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, লক্ষ্ণৌসহ ভারতের আরও কয়েকটি শহরে মেট্রোরেল চলাচল করে। পাকিস্তানের একমাত্র মেট্রোরেল রয়েছে লাহোরে। চালু হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। এটির অরেঞ্জ লাইনের দৈর্ঘ্য ২৭ দশমিক ১ কিলোমিটার। স্টেশন রয়েছে ২৬টি। লাহোর মেট্রোয় ব্লু লাইন ও পার্পেল লাইন নামে আরও দুটি লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।এদিকে বাংলাদেশে মেট্রোরেল প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের আগস্টে। অর্থায়ন করছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। বাংলাদেশের প্রথম, স্কাই ট্রেন বা মেট্রোরেল অবশ্যই একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। মেগা প্রকল্পের যুগে একটি অদ্বিতীয় প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পর আমরা পদ্মা সেতু করেছি, যা প্রায় দেড় কিলোমিটার বেশি। কিন্তু পদ্মা সেতু আমরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ নদীতে করেছি এবং নিজেদের অর্থায়নে করেছি, সেদিক থেকে সেটাও ছিল ব্যতিক্রমী। তবে আমাদের স্কাই ট্রেন বা মেট্রোরেল একেবারেই নতুন। স্বাধীনতার পর অবকাঠামোয় প্রথম পদক্ষেপ রাখলাম, যা অর্থনীতির রূপান্তরে বড় ভূমিকা রাখবে, এটা ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী আনা-নেয়া করবে। দিনে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি যাত্রী চলাচল করবে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত।
এটি একটি বিশাল আয়োজন এই অর্থে, এত যাত্রী এত অল্প সময়ে পরিবহন করায় যথেষ্ট সময় বেঁচে যাবে। পাঁচ লাখ যাত্রীর প্রত্যেকের অর্থের সাশ্রয় হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল ক্যাবে আসতে চাইলে ৬০০-৭০০ টাকার কমে কেউ আসতে পারবে না এবং সময়ও প্রচুর ব্যয় হবে। সিএনজি অটোরিকশা নিলেও ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার কমে সম্ভব হবে না, সেখানে ১০০ টাকায় যাতায়াত করা সম্ভব হবে অনেক কম সময়ে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। উদ্বোধন হবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এমআরটি লাইন। বাকিগুলো আগামী এক বছরের মধ্যে চালু হবে। ২০১২ সালে যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়, তখন এটার ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। মেয়াদ কল্পনা করা হয়েছে জুলাই ২০১২ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত। আগামী দেড় বছরে প্রকল্পটি কমলাপুরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা। সেই অর্থে এটি বিশাল অবকাঠামো স্থাপনা। একটা নতুন উন্নত, সর্বশেষ প্রযুক্তি এতে সংযুক্ত রয়েছে। যেমন ধরুন, শব্দ নিরোধক অনেক দেশে, অনেক ব্রিজে থাকে। এখানে নতুন প্রযুক্তিতে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অত্যন্ত অত্যাধুনিক শব্দ নিরোধক ব্যবহার করার ফলে কম্পন কম হবে ও শব্দও খুব একটা শোনা যাবে না। সেই অর্থে এটা নতুন ধরনের প্রযুক্তি। মেট্রো ট্রেন বা স্কাই ট্রেন বিদ্যুতে চলবে। বিদ্যুতে ট্রেন চলাচলও একধরনের প্রথম অভিজ্ঞতা। টিকিটের সিস্টেম হবে আধুনিক। টিকিট না ঢোকালে গেট খুলবে না, টাকা দিলেই টিকিট বেরিয়ে আসবে। দোতলায় টিকিট কাটা হবে, তিনতলায় গিয়ে ট্রেনে চড়তে হবে। এভাবে বিপুল পরিমাণ যাত্রী চলাচলের কারণে যে ফলাফলটা আসবে বা লাভ হবে সেটা কিন্তু অনুমেয়। এই যে পাঁচ লাখ যাত্রীর সময় বেঁচে যাওয়া সেটাকে যদি উৎপাদনশীল কাজে লাগাই তাতে উৎপাদন সংযুক্ত হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল ১০০ টাকায় চলে আসায় পাঁচ লাখ মানুষের অর্থের সাশ্রয় হবে। এমনকি এয়ারকন্ডিশন বাসে এলেও ১৪০ টাকার নিচে আসতে পারবে না।
এই যে অর্থের বড় রকমের সাশ্রয়, সে টাকাটা যদি সে ভোগে ব্যয় করে, তাহলে ভোগব্যয়ের কারণে আমাদের দেশজ আয়ে যুক্ত হবে। ভোগব্যয়ের ফলে উৎপাদন কার্যক্রমে প্রভাব পড়বে, উৎপাদনে অনেকে যুক্ত হবে এবং উৎপাদকরা উৎসাহী হবে পণ্য উৎপাদনে। বেশি পণ্য উৎপাদনের কারণে আমাদের দেশজ আয় বাড়বে। এটা হলো টাকা সাশ্রয় ও ব্যয়ের দিক থেকে। আবার যদি টাকাটা ব্যাংকে রেখে দিই, তাহলে টাকা থেকে দেশের সঞ্চয় তৈরি হবে। পাঁচ লাখ মানুষের দৈনিক সঞ্চয় তৈরি হবে। সঞ্চয় মানেই হলো বিনিয়োগের জন্য পুঁজি তৈরি হওয়া। কর্মসংস্থান, ভোগ ব্যয়, সঞ্চয়, সময় বেঁচে যাবে এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক সিগন্যালে বসে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ মুক্ত হবে। সব মিলিয়ে এর অর্থনৈতিক ফলাফল আমাদের দৃশ্যমানভাবে প্রভাবিত করবে। সব মিলিয়ে এটা আমাদের অর্থনীতিতে ১ শতাংশ বা তার বেশি প্রবৃদ্ধিতে যোগ হবে। এটি অর্থনীতির জন্য একটি সুখকর বার্তা। যানজট আমাদের অর্থনীতির গতি অনেকটাই আটকে রেখেছে। রাস্তা যত সচল হবে, অর্থনীতিও তত গতিশীল হবে। যানজটের অর্থনৈতিক ক্ষতি নিয়ে নানা সময়ে নানান গবেষণা হয়েছে। ২০১৮ সালে পরিচালিত বুয়েটের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকায় যানজটের জন্য বার্ষিক ৪.৪ বিলিয়ন ডলার বাড়তি খরচ হয়। ২০১৭ সালের বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩.৮ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এই কর্মঘণ্টার অর্থমূল্য ধরলে যানজটের কারণে ক্ষতির পরিমাণ আমাদের কল্পনাও ছাড়িয়ে যাবে। গবেষকদের মতে, ঢাকার যানজট ৬০ শতাংশ কমাতে পারলে বাংলাদেশ ২.৬ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হতে পারে। শুধু অর্থমূল্য নয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকা মানুষের মনের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে, উদ্যম কমিয়ে দেয়। পরোক্ষভাবে এই হতোদ্যম জনশক্তিও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মেট্রোরেল চালু হলেই ঢাকার যানজট রাতারাতি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে যানজট নিরসনে এটি একটি কার্যকর পথের যাত্রা। মেট্রোরেলের পরিকল্পিত সবগুলো রুট চালু হলে অবশ্যই তা যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর যানজট সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে পারলে তা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
সুজন / সুজন