মন্তব্য প্রতিবেদন
দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতি ও বদলি: দুর্নীতির ভয়াল থাবায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশের প্রশাসনব্যবস্থা ও সরকারি দপ্তরগুলোতে বর্তমানে যে গভীর দুর্নীতির চিত্র দৃশ্যমান, তার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পদোন্নতি ও বদলি নীতিকে দায়ী করা যায়। রাজনৈতিক দল বা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর প্রতি আনুগত্যকে পুরস্কৃত করার প্রবণতা এখন প্রশাসনিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফল ভয়াবহ—মেধাবী কর্মকর্তা উপেক্ষিত, সততার অবমূল্যায়ন এবং দুর্নীতির জাল সর্বত্র বিস্তৃত।
বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়, দলীয় যোগসূত্র কিংবা ব্যক্তিগত সুপারিশ প্রভাব বিস্তার করছে। অনেক যোগ্য কর্মকর্তা শুধুমাত্র দলীয় ‘ঘনিষ্ঠ’ নন বলে বছরের পর বছর একই পদে পড়ে থাকছেন। অপরদিকে, রাজনৈতিক অনুগত্যের বিনিময়ে অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য ব্যক্তিরা দ্রুত পদোন্নতি পাচ্ছেন, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত হচ্ছেন।
একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে বদলির ক্ষেত্রেও। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির দক্ষতা ও কাজের মানের চেয়ে ‘কার লোক’—এই প্রশ্নই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একজন সৎ ও কর্মনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে তুচ্ছ কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় বদলি করা হয়, আবার দলীয় ঘনিষ্ঠ কেউ শহরের সুবিধাজনক পদে বহাল থাকেন।
এমন অনৈতিক নিয়োগ ও বদলি সংস্কৃতির ফলে দুর্নীতির সুযোগ ও সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়ছে। কর্মকর্তারা মনে করেন, তারা দলীয় ছায়ায় থাকলে জবাবদিহিতার প্রয়োজন নেই। কেউ কেউ তাদের পদমর্যাদা কাজে লাগিয়ে ঘুষ, অবৈধ কমিশন ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজ স্বার্থসিদ্ধিতে লিপ্ত হন। ফলে দেশব্যাপী প্রশাসনিক দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।
দুর্নীতির এই পরিবেশে নীতিনিষ্ঠ কর্মচারীরা হয়ে পড়ছেন কোণঠাসা। তারা চান না এই 'পচন ধরানো' সিস্টেমে অংশ নিতে, আবার চুপ থাকলে উপেক্ষিত হন। এই অবস্থা দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
প্রশাসনের এই অসুস্থ দলীয়করণ ও দুর্নীতির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ। তারা সেবা পাচ্ছেন না, ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি—প্রতিটি খাতে দেখা যাচ্ছে পক্ষপাত ও অনিয়ম। মানুষের রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা কমছে, যা জাতীয় স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি।
সমাধান
পদোন্নতি ও বদলিতে মেধা, সততা ও অভিজ্ঞতাকে প্রধান মানদণ্ড হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে।
একটি স্বচ্ছ ও দলনিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রণয়ন করতে হবে।
স্বাধীন প্রশাসনিক কমিশন ও দুর্নীতি দমন সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তা সে যত বড় কর্মকর্তা বা প্রভাবশালী হোক না কেন।
দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতি ও বদলির এই প্রক্রিয়া দেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে না, বরং প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, বিচারসহ রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। আজ যদি আমরা এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারি, তবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে।
এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও নাগরিক সচেতনতা—দুটোই এখন সময়ের দাবী।
লেখকঃ শাওন হুসাইন
এমএসএম / এমএসএম

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
