নগর উন্নয়ন ও নাগরিক পরিষেবা
গত কয়েক দশকে ঢাকা শহর যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। স্বাধীনতা পরবর্তীতে নতুন দেশের রাজনীতি হিসেবে আবির্ভুত হওয়া, দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ এবং সেই সাথে নতুন কর্মসংস্থান এর কারনে প্রচুরপরিমানে গ্রাম থেকে মানুষের শহরে আগমন, অপরিকল্পিতভাবে শহরের বিভিন্ন ভূমি ব্যবহার সব একত্রিত হয়ে এবং অসমভাবে ঢাকা শহরের কলেবর বৃদ্ধির পিছনে কাজ করেছে।
এই বৃদ্ধির সাথে অব্যবহিত ভাবেই কমেছে জলজ এবং সবুজ ভূমি। সবুজায়নের কথা বললেই এর পরিবেশগত দিকটাই সবার কাছে মূখ্য মনে হয় আর এই কারনে একটি শহরের অর্থনীতিতে যারা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে সেই ব্যবসায়ী এবং শিল্প পতিদের কাছে সবুজায়ন এর গুরুত্ব তেমন পাওয়া যায় না। কিন্তু শহরে সবুজায়ন যে আর্থ-সামাজিক দিকেও একটা গতিশীল ভূমিকা রাখতে পারে তা আমরা হয়তো অনেকেই চিন্তা করিনি। বিভিন্ন গবেষনালব্ধ ফলাফল থেকে শহরে সবুজায়নের অর্থনৈতিক দিক সম্পর্কে জানা যায়, তবে আলোচনা আর দীর্ঘ করার অভিপ্রায় না থাকায় সে সম্পর্কে গভীরে আর গেলাম না। শহরের জন্যে বাঞ্ছনীয় নীতি হিসেবে যদি শহর কর্তৃপক্ষ যদি বিভিন্ন ধরনের স্থাপনার জন্যে গ্রীন প্লট রেশিও এর মান বাধ্যতা মূলক করে দেয় তাহলে এ দেশে ল্যান্ডস্কেপ ইন্ডাস্ট্রি নামক এক ধরনের শিল্পের বিকাশ ঘটবে। সেই সাথে এই শিল্প যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে তেমনি মূদ্রাবাজারেও টাকার প্রবাহ বাড়াবে। পৃথিবীর বিভিন্ন অতি ঘনত্বের শহরগুলোতে এই শিল্প একটি বিকাশময় অর্থনৈতিক খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার, কর্মসংস্থান সমস্যা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ব্যাপক দারিদ্র্য, পরিবহন সমস্যা, আবাসন সমস্যা, পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, জলাবদ্ধতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশ বিপন্নতা ও দূষণ সমস্যা, আইন-শৃঙ্খলা ও সামাজিক নিরাপত্তা সমস্যা। খালগুলো দখল হয়ে গেছে। আর বুড়িগঙ্গা শেষ হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ বিধ্বংসী উন্নয়ন ও ঠুনকো শিল্পায়নে।
এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অব্যবস্থা, উদাসীনতা, অযোগ্যতা এবং দুর্নীতির ফলে রাজধানীর এ অবস্থা হয়েছে। নগর কর্তৃপক্ষের ও বিভিন্ন সংস্থার উদাসীনতার কারণে ঢাকার এই অবস্থা। বহু বছরের বহু দশকের অমনোযোগের কারণে, অবহেলার কারণে, অপরিকল্পনার কারণে। সত্যিকার গরজ নেই, প্রচেষ্টাও নেই। মহানগরের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও ব্যবস্থা- পনার সম্পৃক্ত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। সম্পদের সীমাবদ্ধতা, সার্বিক ব্যবস্থা- পনার দুর্বলতা এবং নাগরিক সচেতনতার ঘাটতি।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সামগ্রিকভাবে প্রয়োজন কর্মতৎপরতা, কর্মদক্ষতা ও অর্থসংস্থান বৃদ্ধি। অবকাঠা- মোর অপর্যাপ্ততার জন্যই যে ঢাকার অনাবাস যোগ্য পরিচিতি পেয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নির্দিষ্ট হয়েছে দুর্নীতি ও অর্থায়ন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা প্রয়োজন। শহরের গণ পরিবহনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর শক্তি কমিউটার ট্রেন যা ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে যাওয়া-আসার জন্য প্রয়োজন ব্যয়, নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য পরিবহন সেবা প্রদানে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সড়ক দুর্ঘটনা ঢাকাসহ সমগ্র দেশের রাস্তাগুলোয় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যার থেকে মুক্তির জন্য বহুমুখী ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম চালকদের শিক্ষা, ড্রাইভিং দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা, লাগামহীন মুনাফার পেছনে মালিকদের ছুটে চলার প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করা, প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ; ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ; পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য জেব্রা-ক্রসিং ও ফুটব্রিজসহ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ।যে ধরনের ভৌত-অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার অপর্যাপ্ততা ঢাকাকে অনাবাসযোগ্য করে তুলেছে তার মধ্যে অন্যতম নিষ্কাশন এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নগরজীবনের জন্য যথাযথ আবাসস্থলের অভাব।
এছাড়াও পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের অপর্যাপ্ততা ও দুর্লভ্যতা, উন্নতমানের পাবলিক টয়লেট ও স্যানিটেশনের অপর্যাপ্ততা, বায়ুদূষণসহ নানা ধরনের দূষণ ও খোলা জায়গা, পার্ক ও খেলাধুলার মাঠের অভাব। অবকাঠামো সরবরাহে নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি। সেবার জন্য মূল্য নির্ধারণে ঢালাও ভর্তুকির পরিবর্তে ক্রস ভর্তুকি অর্থাৎ আয় অনুসারে স্বল্প আয়ের নাগরিকের জন্য সেবামূল্য হবে কম আর বেশি আয়ের নাগরিকের জন্য বেশি। এ নীতির কিছু প্রয়োগ রয়েছে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহে, যা অনুসরণ করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের নগরবাসীর জন্য নাগরিক পরিষেবা সুলভ মূল্যে বা ক্রয় করার সামর্থ্যের মধ্যে আনার ব্যবস্থা করা যায়। তবে কোনো সেবাই বিনামূল্যে বা সেবা প্রদানের ব্যয়ের কম মূল্য দেয়ার নীতি বহনযোগ্য নয়। নির্মিত অবকাঠামো ও পরিবেশ ছাড়া শহর-নগর হয় না। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না দুনিয়াজুড়েই শহর-নগর গড়ে ওঠে কিছু অন্তর্নিহিত অবস্থানগত বা ভৌগোলিক সুবিধার জন্য। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিতি তাই ঢাকার বড় পরিচিতি। প্রাকৃতিক দিক থেকে ঢাকার প্রয়োজন ও সৌন্দর্য একমাত্র বুড়িগঙ্গা ছিল না। মালার মতো ঢাকার চারিদিকে আরো রয়েছে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু, ধলেশ্বরী। এ নদীগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে যোগাযোগেও বড় ভূমিকা রাখে। বর্জ্য ও শিল্প বর্জ্যপানি নিষ্কাশনে বিবেকহীন ব্যবহারের মাধ্যমে চারদিকের এ নদীগুলোকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। ঢাকা নগরের আরেক বড় সম্পদ ছিল খাল, তাও প্রায় সবই হারিয়ে গেছে উন্নয়নের যাত্রাপথে। দারিদ্র্য মোচনে নিম্ন আয়ের ওরা প্রধানত যুক্ত হয় ইনফর্মাল কার্যক্রমে, শ্রমিকের কাজ করে ২৩%; বাসস্থান অত্যন্ত নিম্নমানের, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ; পরিবারের কোনো-না-কোনো সদস্য মাসে একবার হলেও অসুস্থ থাকেন। এ দরিদ্র জনগোষ্ঠী মূলত গ্রামের দরিদ্র মানুষ থেকে অভিবাসনের মাধ্যমে উঠে আসা শ্রমশক্তি। যেসব সেক্টরে এরা কাজ করে তার মধ্যে প্রধান নির্মাণ, পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও গৃহকর্ম।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা তরুণ মহিলারা তৈরি পোশাক শিল্পে নিয়োজিত হয়ে নগর দরিদ্র ও বস্তিবাসীর সংখ্যা স্ফীত করে তুলেছে। এসব স্বল্প বেতনের কাজও যারা পায় না তাদের জন্য অবারিত কর্মক্ষেত্র অনানুষ্ঠানিক খাতের নানা রকমের কাজ যা হতে পারে টোকাইর, রিকশা চালানোর, রাস্তায় বসে বা দাঁড়িয়ে নানা ধরনের দ্রব্যের বিক্রেতা ও মেরামতের কাজ। ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে পত্রিকা বিক্রি থেকে শুরু করে বোতলজাত পানি ও নানা ধরনের ক্ষুদ্র নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এসব অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রমে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্ত হয়েছে সুকান্তের রানারের মতো নানা ধরনের ডেলিভারি কাজে নিয়োজিত তরুণ ও শিক্ষিত শ্রমশক্তি। কাজের, শ্রমের ও নিয়োগের ধরনের পার্থক্য থাকলেও যা এ লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষের সাধারণ বৈশিষ্ট্য বা সবার জন্য প্রযোজ্য তা হলো: কাজটি ও তার থেকে পাওয়া মজুরি বা আয়ের অনিশ্চয়তা, অসুস্থতাজনিত কারণে কাজে না যেতে পারলে মজুরি না পাওয়া বা আয় করতে না পারা এবং দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসার কারণে স্বল্প আয় বা মজুরি থেকেও গ্রামে ফেলে আসা বাবা-মা, স্ত্রী-স্বামী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য টাকা পাঠানো। এসব দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতায় খরচ কমায় বস্তিতে যত সম্ভব অল্প ভাড়া দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে। খাওয়া খরচ যতটা সম্ভব কমিয়ে ও সুস্থ থাকার জন্য খরচপাতি বাদ দিয়ে। অধিকারহীনতা ও অসহায়ত্ব নগর দারিদ্র্যের আরেকটি দিক। শ্রমের অবদানের মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসে, নগরায়ণের সার্বিক ব্যয় হ্রাসে, গ্রামীণ শ্রম সরবরাহ কমিয়ে গ্রামীণ মজুরি বৃদ্ধিতে, স্বল্প দামে নগরবাসীর নানা সেবা পাওয়ায়। কিন্তু এসবই হয় নিজেদের কল্যাণের বিনিময়ে, এমনকি সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল কমিয়ে। যেসব পেশা বা কাজে নগর দরিদ্ররা নিয়োজিত বা জড়িত যেমন টোকাই, রিকশাওয়ালা, পরিবহন কর্মী, নির্মাণ শ্রমিক-এদের সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল জাতীয় গড় আয়ুষ্কাল থেকে কম হয় যা গড় হিসাবের বদৌলতে অজানা থেকে যায়।
যারা বিত্তবান তাদের জন্য সরকার কিছু না করলেও চলে। পক্ষান্তরে নগর দরিদ্রের জন্য সরকারের ভূমিকা প্রয়োজন কর্মসংস্থানে, শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা ও কারিগরি সহায়তার ব্যবস্থা করে ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হস্তক্ষেপ প্রয়োজন নগর দরিদ্রের সন্তানদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য। তা না করা হলে নগর দরিদ্রের সন্তানও হবে নগর দরিদ্র-এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে হস্তান্তর হবে দারিদ্র্য। নগর দারিদ্র্য সমাধানে পেশাগত অধিকার নিশ্চিত করা। যেমন- অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রমে বাধা না দেয়া, নিয়মিত হয়রানি বন্ধ করা, চাঁদা তুলতে না দেয়া ও উচ্ছেদ কর্মকাণ্ড পরিহার করা ন্যূনতম নৈতিক দায়িত্ব।
বস্তি হলো শহর-দরিদ্রের আবাসন সমস্যার সমাধান, কেননা অন্য কোনো পদ্ধতিতে দরিদ্ররা আবাসন সমস্যার সমাধান করতে পারে না, সরকার বা প্রাইভেট সেক্টর দরিদ্র নগরবাসীর আবাসন সমস্যার সমাধান করতে সাধারণত উদ্যোগী হয় না। অর্থনীতির যুক্তি অনুসারেও বস্তি হলো নগর দরিদ্র মানুষের থাকার জায়গা বা বাসস্থানের জন্য খরচ ন্যূনতম রাখার একটি প্রধান উপায়। কিন্তু এর ফলে যে ধরনের জীবনধারণ তাদের করতে হয় তা অস্বাস্থ্যকর ও অমানবিক। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাম্প্রতিক নিবন্ধে ঢাকা নগরের আবাসিক সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে এভাবে; ঢাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বস্তিতে বসবাস করে। ঘিঞ্জি ঘর ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাদের থাকতে হয়। পানি, বিদ্যুৎসহ মৌলিক নানা সেবা নিয়ে তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়।বস্তিবাসীর প্রান্তিক অবস্থার কারণ মৌলিক নগরীয় সেবাগুলো শুধু স্থাবর সম্পদের বৈধ মালিকদের কাছেই সরবরাহ ও সম্প্রসারণের সরকারি নীতির এ ভ্রান্ত পরিবর্তে বস্তিতে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ব্যবহারের অধিকার প্রদানের তার অভিমত অর্থনৈতিক যুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সামগ্রিক ভিত্তিতে বস্তি সমস্যা সমাধানে অনেক উপায় আছে।
পক্ষান্তরে শহর-নগর মানুষকে স্বপ্ন দেখায় অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য। যে নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে শহর-নগর গড়ে উঠেছে তা একদিকে যেমন বিভিন্ন ধরনের অসমতার সৃষ্টি করেছে তেমনি গ্রামকে পরিবর্তিত করে চলেছে শহর-নগরের আলোকে! এভাবেই গ্রাম-নগরের পার্থক্য কমে আসছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো চলে আসা প্রক্রিয়ায় যে অর্থনৈতিক অসমতা, মানব বসতির ধরন ও পরিবেশ বিধ্বংসী প্রক্রিয়া চলছে তা নগরায়ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে দেশব্যাপী দুর্ঘটনায় বিকলাঙ্গ বা মৃত্যু। আয়ের সন্ধানে এসে বস্তিতে অমানুষিক জীবন যাপন, ১০-১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করেও বাসা ভাড়া-খাওয়া-ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে না পারা; গুরুতর অসুস্থ হয়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা। এসব দুর্দশা নগর, নগরায়ণ ও নগর পরিকল্পনা নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের মধ্যে একটা অসহায়ত্ব বোধ সৃষ্টি করে। সুতরাং নগরায়ণ, ঢাকাকে বাসোপযোগী করা, নগর দারিদ্র্য ও বস্তি সমস্যার সমাধানে এ সম্পদকে কাজে লাগাতে পারে আমাদের নগর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো। সবুজের মাধ্যমে যে শহরের পরিবেষ্ঠিত পরিবেশ এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে কংক্রিটময় শহরে বাসযোগ্যতা আনা সম্ভব সেটা বুঝে বাধ্যতামূলক সবুজ নীতি গ্রহণ করা উচিত। যদিও, ঢাকা শহরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনেক ইমারত গড়ে উঠেছে এবং বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক কারনে এই ইমারত গুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজঊক বেশিরভাগ সময় অপারঙ্গম। কিন্তু এই ইমারত বা ভবনগুলোর বিরুদ্ধে লঘু জরিমা্না স্বরুপ বাধ্যতামূলক গ্রীনপ্লট রেশিও অর্জনমাত্রা ঠিক করে দিতে হবে এবং কমিউনিটি লেভেলেও সবুজায়নে তাদের অর্থনৈতিক এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়দায়িত্ব নিতে হবে। এইরকম সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা নিঃসন্দেহে ঢাকা শহরকে বিশ্বের দরবারে যেমন একটি মডেল শহর হিসেবে উপস্থাপন করবে তেমনি ঢাকা’র আভ্যন্তরীন পরিবেশেরও যথেষ্ঠ উন্নতি লক্ষ্য করা যাবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
প্রীতি / প্রীতি