পা ফাটাদের নেতা
পারভেজ সাহেব একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ।তার নিখুঁত নেতৃত্ব ও জনমানবের কল্যানের জন্য অল্প বয়াসে এমপি হতে পেরেছেন। তাছাড়া এই প্রথম তার ক্যারিশমাই প্রথম দলীয় এমপি হতে পেরেছেন। এজন্য দলীয় প্রধানও প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ কদর রয়েছে।
এমপি পারভেজ সাহেবের এলাকায় দারিদ্র্যতার নিম্নসীমাতে চোখে পড়ার মতো মানুষ বসবাস করে। এ অঞ্চলে বিগত সময়ে তেমন উন্নতির ছোঁয়া লাগে নি। জনজীবনের জীবনযাত্রার মান উন্নতির জন্য সরাসরি দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে যাবেন। দলের স্থায়ী ঘাঁটি তৈরী করতে হলে উন্নতির বিকল্প নাই।
সফর সঙ্গী হিসাবে পাঁচজন গুরুত্ব নেতা ও সাথে নিলেন জোহাকে।
কিন্তু দলের ভিতরে কেউ কেউ সমালোচনা করছে আর বলছে" কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রধান মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। এলাকার পাঁচজন নেতাকে নিয়েছেন ঠিক আছে। কিন্তু জোহার মতো একেবারে গণ্ড মূর্খকে কি করে করে সফর সঙ্গী হয়।যে কিনা নিজের নামও লিখতে পারে না। আর কোন কিছু পড়তে পারা তো প্রশ্নই উঠে না। তাহলে কি সামনের দিনে জোহা কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে চলেছে?"
পার্টি অফিসে এসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে এমপি পারভেজ সৌজন্যে সাক্ষাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এপর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতারা ও এমপি সাহেব একান্ত কিছু আলোচনার করার জন্য একটা কক্ষে প্রবেশ করলো। পাঁচ নেতা ও জোহা সাহেব পার্টি অফিসের ড্রাইনিং বসে থাকলেন।বিশাল বড় ডাইনিং প্রায় একশতজন বসে আছে। সবাই পত্রিকা পড়তে খুব ব্যস্ত। দেশে যত রকমের পত্রিকা আছে সব এখানে পাওয়া যায়।
জোহা পত্রিকা নিয়ে বসে আছে।কেন যেন মনে হচ্ছে সবাই জোহার দিক তাঁকিয়ে হাসছে। সে অবশ্য একাগ্রচিত্রে পত্রিকার দিকে তাঁকিয়েই আছে। মাঝে মাঝে এলাকার পাঁচ নেতাও মিটমিটে হাসছে।
একঘন্টা পর এমপি পারভেজ চলে আসলেন।জোহার উল্টো করে নিউজপেপার ধরে আছে।এমপি সাহেব নিউজপেপারটা সোজা করে দিলেন আর বললেন এখানের কাজ শেষ। প্রধান মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের জন্য বের হতে হবে।
পার্টি অফিস হতে বের হওয়ার পর এমপি সাহেব জোহাকে বললেন" বেয়াকুফ তুই লেখাপড়া জানিস না। কে বললো তোকে উল্টো করে নিউজপেপার ধরতে। এতে অনেকে মিটমিট করে হাসছিলো। কাদির,জব্বার সাহেব আপনারা পাঁচজন সাথে ছিলেন। এটা দেখবেন না। না আমার মান ইজ্জত আর থাকলো না।"
কাদির ও জব্বার সাহেব বলল" আমরা নিউজপেপার নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এজন্য খেয়াল রাখতে পারি নি।"
জোহা বলল" এমপি সাহেব দেখলাম এখানের সবাই পেপার পড়ছে।আমি যদি না পড়ি, তাহলে আমি মূর্খ এটা বুঝে ফেলবে। এজন্যই পেপার পড়ার ভান করছিলাম।ভুল করে ফেলছি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।"
এমপি পারভেজ বললেন" তুই আর এ বিষয়ে কোন কথা বলবি না।"
এরপর তারা প্রধান মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে এলাকায় ফিরে আসলেন।
জোহার সাহবের মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সবার সাথে মিষ্টি মুখে কথা বলা ও সুখে দুঃখে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে হতে পা ফাটাদের নেতা হিসাবে খেতাব পেয়েছেন।
জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভা করিমগঞ্জ। এখানেই হতেই এমপি সাহেব সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কিছুদিন আগে করিমগঞ্জের সভাপতি মিনারুল সাহেব মারা গেছেন। এজন্য সভাপতি বিনা সংগঠন ভালো চলছে না।তাই এমপি পারভেজ সাহেব গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে বসলেন।কাকে সভাপতি বানানো যায়।
গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে কাদির ও জব্বার সাহেব বললন "শমসেরও মুরাদ এই দুইজনের একজনকে সভাপতি বানালে ভালো হবে। এরা খুব ভালো দলীয় কর্মী। সংগঠন ভালো চালাতে পারবে।"
কিন্তু এমপি পারভেজ সাহেব বললেন "আমার এদের পছন্দ নয়।এলাকার মানুষের সুখে ও দুঃখে থাকেন জোহা সাহেব।সাধারণ মানুষ ও কর্মী, সমর্থকের খুব কা়ছের মানুষ। এজন্য তাকে সবাই পা ফাটাদের নেতা বলে সম্মোধন করে। ওকে ছাড়া আর কাউকে এই পদে ভাবতে পাচ্ছি না।"
গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বললো "কিন্তু ওর মতো গণ্ড মূর্খ্যকে এই পদে বসালে দলের মান ইজ্জতের আর অবশিষ্ট থাকবে না। যেমন কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে উল্টো করে পেপার ধরে যেটা করেছে।"
এমপি সাহেব বললেন" লেখাপড়া জানে না এটা কোন সমস্যা নাই। তবে আপনারা তাদের নাম প্রস্তাব করছেন এদের একটু পরীক্ষা করে দেখি তারপর আপনাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
করিমগঞ্জে প্রচুর হিন্দু বসবাস করে। নেতা হতে হলে হিন্দু ও মুসলিম সবার নেতা হতে হবে।প্রস্তাবকৃত দুই জনকেই হিন্দু বসতির মানুষ নিয়ে একটা জনসভার আয়োজন করতে বলেন। এরপর আমি দেখবো কেমন উপস্থিতি হয়। যদি ভালো উপস্থিতি করতে পারে ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা ফুটে তুলতে পারে। তাহলে ওদের দুইজনের ভিতর হতে একজন সভাপতি হবে।
পরের সপ্তাহে আয়োজনকৃত জনসভাতে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে এমপি সাহেব আসলেন।শমসের ও মুরাদের চোখে মুখে লজ্জার ছাপ ফুটে উঠেছে।বহু টাকা খরচ করেও জনসভাতে মানুষের উপস্থিতি একেবারে কম।
জনসভা শেষ করে এমপি সাহেব গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বললেন" যারা একটা জনসভাতে ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি ঘটাতে পারে না।তাদের নিয়ে কিভাবে সভাপতি পদ নিয়ে ভাবি বলুন তো।"
গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিশেষ করে কাদির ও জব্বার লজ্জা পেয়ে গেলো। মুখ কালো ও লজ্জার ছাপ ফুটে উঠছে।
পনের দিন পর একটা বিশেষ দিবস উপলক্ষে হিন্দু বসতির মানুষ নিয়ে জনসভা ডাকা হয়েছে। জনসভাটা ডেকেছেন জোহা সাহেব। এমপি পারভেজ সাহেব ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা জনসভাতে এসে পুরো অবাক। জনসভাতে প্রচুর মানুষ উপস্থিতি। যেন জায়গাটা কানাই কানাই ভরে গেছে। এমপি সাহেব এমন উপস্থিতি দেখে খুব খুশি হলেন।
দুইদিন পর গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ডাকা হলো। সবাই উপস্থিতি হয়েছেন। এমপি সাহেব বললেন "গত দিনে হিন্দু এলাকাতে জনসভাতে যে পরিমাণ মানুষ সমাবেত হয়েছে। তাতে কে সভাপতি হবার যোগ্য আশা করছি বুঝতে পারছেন। কাদির সাহেব বললেন" জোহা সাহেবের পড়ালেখা নাই।দল চালাতে হলে কিছুটা হলেও তো পড়াশুনা জানা লাগে।"
এমপি পারভেজ সাহেব বললেন" অবশ্যই লাগে। তার জন্য তো আপনারা আছেন।সাধারণ মানুষের কাছে জোহার যে জনপ্রিয়তা আছে এটার জন্য দলীয় ভাবমূর্তি আরো সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলবে। শমসের ও মুরাদকে সভাপতি করতে চাচ্ছি না। মানুষের সাথে তাদের সখ্যতা গড়ে উঠবে না। কারণ হলো তারা সাধারণ মানুষের সাথে হ্যান্ডশেক করলে পিছে গিয়ে হাত মুছে। সাধারণ মানুষের সাথে ভালো করে কথা বলা তো দূরের কথা সুখে ও দুঃখে কাছেই যেতে চাই না। সাধারণ মানুষের গায়ে দুর্গন্ধে কোলাকুলি করলে নাকি তাদের বমি আসে। এজন্য তাদের জনসভাতে মানুষের উপস্থিতি একেবারে কম হয়। তাই দলের ভাবমূর্তি তৈরী জন্য জোহাকেই দলের সভাপতি বানানো হবে। সবাই কি বলেন?"
কাদির ও জব্বাদের আর কিছু বলার ছিলো না। কারণ পা ফাটাদের নেতা হিসাবে সাধারণ মানুষের কাছে জোহার রয়েছে আকাশ চুম্বি জনপ্রিয়তা। সভাপতি হওয়ার জন্য এটাই তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। সবার ঐক্য মতের উপর জোহাকে সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত করা হলো।
লেখক: তালাশ খান, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা।
সুজন / সুজন