সরকারি আইনউদ্দীন কলেজ :মধুখালী ভূখণ্ডের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে হতে অদ্যাবধি কর্মসূত্রে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি আইনউদ্দীন কলেজ বিশেষ হয়ে উঠেছে। এ ভূখণ্ডের সাথে হার্দিক সম্পর্ক কর্মকে ছাপিয়ে নিজস্ব করে তুলেছে। ব্যক্তি থেকে বস্তু এবং সবিশেষ প্রতিষ্ঠান আইনউদ্দীন আহমেদকে করেছে বিশেষ একজন। গত ১৮ জানুয়ারি ২০২২ খ্রি. রোজ বুধবার মধুখালী ভূখণ্ড বিবেচনায় বিশেষ একটি দিন। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদকে কেন্দ্র করে ‘বাঙালিয়ানা’ উৎসবের উচ্চতম মাতম হলো সরকারি আইনউদ্দীন কলেজের বাংলা বিভগে। পিঠা উৎসব শীতকে স্মরণ করালো। আধার ও আধেয় ছিলো বাঙালিয়ানায় ভরা। যে কলাপাতায় বাঙালি উৎসব খাদ্যগ্রহণের আধার ছিলো , তাতেই হলো পিঠা উৎসব।
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন। একইসাথে বৌদ্ধ সহজিয়া অনুসারীদের সাধনভজনসঙ্গীত। সরকারি আইনউদ্দীন কলেজের বাংলা বিভাগে এ ভূখণ্ড বিবেচনায় প্রথমবার হয়ে গেলো চর্যাপদ চর্চা ও পিঠা উৎসব। প্রিয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও সহকর্মীদের আন্তরিক অংশগ্রহণ দিনটিকে বিশেষ করে তুলেছিলো। মান্যবর অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ নাজমুল হকের পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে দিনটি সাহিত্য চর্চা ও সংস্কৃতি চর্চায় ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠান হতে জাতীয় আবেগে পরিণত হয়েছিলো। শিক্ষার্থীদের মুহুর্মুহু আবেগ প্রকাশ বাঙালি সংস্কৃতি প্রকাশের মাধ্যম হয়েছিলো।
চর্যাপদ চর্চা:
সকাল ৯.৩০ মিনিটে অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ নাজমুল হকের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলা বিভাগকে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এরপর চর্যাপদ আবিষ্কারের ইতিহাস বর্ণনা করেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক জনাব মোঃ জহুরুল ইসলাম। চর্যাপদের সমাজচিত্র বর্ণনা করেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও এ কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক জনাব মোঃ বাসার সরোয়ার। চর্যাপদে নারী-জীবন বিষয়ে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক জনাব নাজনীন নাহার। সম্প্রতি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করা ইসলামী শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ আবু ছালেহ চর্যাপদের ভূগোল বিষয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন। সকাল ১১.০০ টা থেকে চর্যাপদ পাঠ, আধুনিক বাংলায় রূপান্তর ও চর্যাপদের অন্তর্নিহিত ভাব প্রকাশ করেন বাংলা বিভাগের শিক্ষকগণ।
১ নম্বর পদ পাঠ, আধুনিক বাংলায় রূপান্তর ও চর্যাপদের অন্তর্নিহিত ভাব প্রকাশ করেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক জনাব নাজনীন নাহার। ৬ ও ৮ নম্বর পদ পাঠ, আধুনিক বাংলায় রূপান্তর ও চর্যাপদের অন্তর্নিহিত ভাব প্রকাশ করেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মোঃ বাসার সরোয়ার। ৭, ১০ ও ৩৩ নম্বর পদ পাঠ, আধুনিক বাংলায় রূপান্তর ও চর্যাপদের অন্তর্নিহিত ভাব প্রকাশ করেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক জনাব মোঃ জহুরুল ইসলাম।
পিঠা উৎসব:
উৎসবের আধার ও আধেয় ছিলো বাঙালিয়ানায় ভরা। চিতই পিঠার সাথে সরিষা ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা ও এ ভূখণ্ডের মানুষের পছন্দের মটরকলাই রান্না শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলকে আকৃষ্ট করে । এর সাথে ছিলো বৈচিত্র্যময় পিঠার সমারোহ। আর আধেয় ছিলো কলা পাতার ব্যবহার। সব মিলিয়ে দিনটি স্বাতন্ত্র্যিক কিছু হয়ে উঠেছিলো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ যুগে একত্রে কোনো আয়োজনে অংশগ্রহণ যখন বিশেষ তাৎপর্যবহ, তখন সরকারি আইনউদ্দীন কলেজের বাংলা বিভাগের এমন আয়োজন এ ভূখণ্ডে বিশেষ সাড়া ফেলেছে। অধ্যক্ষ মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উপস্থিত সকলে একমত হয়েছে।
এমএসএম / এমএসএম