যে মৃত শহরে জীবিত মানুষের ভীড় জমে

১২ বছর আগের কথা , আমি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করি । সমাজ বইয়ে আমি একটা ছবি দেখতে পাই । ছবি টা এমন ছিল দুই পাশে সাড়ি সাড়ি পুরনো দালান , মাঝখানের রাস্তা দিয়ে একটা রিকশা যাচ্ছে ও একটা বিড়াল রাস্তা পার হচ্ছে। আমি তখন ভাবতে লাগলাম এটা কেমন জায়গা? এত সুন্দর কারুকার্যের দালান অথচ রাস্তায় মানুষের আনাগোনা নেই আর দালাল গুলি এত পুরাতন কেন ?তখন ছবির নিচে নাম দেখতে পেলাম, লেখা আছে "ঐতিহাসিক পানাম নগরী " ।
বিস্তারিত পড়ে স্বচক্ষে দেখার খুব ইচ্ছে জাগল ।
আস্তে আস্তে স্কুল কলেজের গণ্ডি পার হয়ে গেলেও আমার অবস্থান থেকে পানাম সিটির মধ্য ভাগের রাস্তা টুকু আর পার হতে পার হতে পারি নাই।
অবশেষে গত (২৫ ফেব্রুয়ারি )শনিবার সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির কর্তৃক আয়োজিত "সতিকসাস"এর সভাপতি সাব্বির হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বি হোসেন এর নেতৃত্বে 'স্বস্তির ফুরসত' নামক সোনারগাঁও ( লোকশিল্প জাদুঘর ও পানাম সিটি) ভ্রমণ এর আয়োজনে অংশগ্রহণ করে শনিবার সকাল ৮ টার সময় তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বাসে রওয়ানা হই । যাত্রাপথের সময় টুকু কাটে গাড়ির ভিতরে বিনোদনের আর হৈ হৈললার মধ্যে দিয়ই । প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ পর আমরা 'লোকশিল্প জাদুঘরের' পৌঁছাই এবং ভিতরে প্রবেশ করি ।
ভিতরে নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল সেখানে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে খুব সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে । একে একে সব কিছু দেখার পর আমরা পাশের একটা মাঠে চলে গেলাম সবাই । সেখানে ক্রিকেট, ফুটবল ,সহ আরো অনেক খেলার আয়োজন করা হয়।খেলার পর দুপুরের খাবার শেষ করে আমাদের বাকী কার্যক্রম সেরে আমরা রওনা হই পানাম সিটির উদ্দেশ্যে ।
লোকশিল্প জাদুঘর থেকে পানাম সিটির দুরত্ব দশ মিনিটের মত হাটার পথ ।
আমরা ৪.৩০ /৫.০০ দিকে সেই ঐতিহাসিক "পানাম নগরীতে" প্রবেশ করলাম। ভিতরের প্রবেশ করতেই চোখের সামনে দেখা মিলল সারি সারি নান্দনিক সৌন্দর্য ও বিশেষ কারুকার্য দ্বারা নির্মিত শত শত বছরের ঐতিহ্য ধারন করে থাকা সেই পুরাতন নগরীর এক একটা দালান। দেখতে দেখতে সামনে এগুচ্ছি।
প্রতিটা দালান কারুকার্যের দিক থেকে একটা আরেকটার থেকে কম নয়। শত শত বছরের পুরনো এই নগরীটা হাজারও মানুষের সৃতি ধারন করে যৌবন বিহীন বার্ধক্য নিয়ে এখনও টিকে আছে ।
একটা প্রবাত আছে ,'হাতি মৃত হলেও লাক্ষ টাকা ' ঠিক তেমনি এই মৃত্যু নগরীর প্রতিটা দালান আজও পর্যন্ত তাদের বার্ধক্যের রুপ আর ঐতিহাসিক সৃতি নিয়ে মানুষ কে আকর্ষন করছে ।
আমি যখন এই নগরীর প্রতিটা দালানের সামনে দিয়ে হাটছিলাম তখন আমার মনে হল আজ থেকে প্রায় ৪৫০ বছর আগে এই শহরের বসবাস করা নাগরিক গণ এই পথ দিয়ে হেটেছে, এই দালান গুলির ভিতরেই তারা বসবাস করত । পাশের ছোট মাঠ গুলোতে হয়ত তারা বিকেল বেলায় তাদের বাচ্চাদের নিয়ে খেলা করত ,গল্প করত কিন্ত আজ মাঠ টা পরে আছে তবে সেই মানুষ গুলি নেই । দালান গুলির দিকে তাকালেই শান্ত হয়ে মন ভাবে এই দালান গুলির ভেতরটাতে একটা সময় সন্ধ্যা নামলেই আলোকিত হয়ে উঠত মূল্যবান লাইটের রঙ বেরঙের আলোতেকিন্ত কালের পরিবর্তনে এখন আর সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলছে না ।
কি জানি শেষ কবে কে এই দালান গুলিতে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালেছিল আর শেষ কারাইবা বসবাস করেছে এখানে । পুকুর গুলো অপরিচর্যায় ভুগতে ভুগতে রোগা হয়ে আছে , প্রতিটা ঘাট ভেঙে গেছে । অথচ এই পুকুর গুলি প্রতিদিন এখানকার মানুষ ব্যবহার করত । এখনও মানুষ সেখানে যায় ঘাট গুলিতে বসে প্রতিনিয়তই তারাও দেখে পুকুর টা পরিচ্ছন্ন হীন, কিন্ত তাদের কাছে পুকুর আর পুকুরের কাছে তারা অপরিচিত । এই সব আমাদের অনেক কিছুই শিখায় ।পানাম সিটিতে হাটলে এইসব ইতিহাস মনে পরবেই .. ।
উল্লেখ্য , ১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনাগাঁওয়ে। পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীপথে বিলেত থেকে আসতো বিলাতি থানকাপড়, দেশ থেকে যেতো মসলিন। শীতলক্ষ্যা আর মেঘনার ঘাটে প্রতিদিনই ভিড়তো পালতোলা নৌকা। প্রায় ঐসময়ই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইউরোপীয় অনুপ্রেরণায় নতুন ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠে পানাম নগরী। পরবর্তিতে এই ইংরেজরা এখানে নীল বাণিজ্য বসায়।
শহরটিতে ঔপনিবেশিক ধাঁচের দোতলা এবং একতলা বাড়ি রয়েছে প্রচুর। যার বেশিরভাগ বাড়িই ঊনবিংশ শতাব্দির । মূলত পানাম ছিলো বাংলার সে সময়কার ধনী ব্যবসায়ীদের বসতক্ষেত্র। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ছিলো ঢাকা-কলকাতা জুড়ে। তারাই গড়ে তোলেন এই নগর।
পানাম নগর পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি। প্রাচীন সোনারগাঁওয়ে বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় । বাংলার স্বাধীন রাজা ঈসা খাঁর পদচারণা ছিলো এই নগরীতে। সুলতানী আমল থেকে এখানে বিকশিত ছিলো বাংলার সংস্কৃতি।
এমএসএম / এমএসএম

ফেসবুক ছিল বিনোদনের জায়গা, এখন আয়ের মূল উৎস

তোমাদের মৃত্যুর দায় আমরা এড়াতে পারি না

সুফি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার ১ যুগ পার করল সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন

ব্যতিক্রমী ধারার আলো নেভার পথে

টেকসই কৃষির জন্য চাই জৈব বালাইনাশক

ঈদযাত্রা হোক দুর্ঘটনামুক্ত

রমজানে ভ্রমণে যে বিষয় মেনে চলা জরুরি

সুস্থ থাকার জন্য কেমন পানির ফিল্টার নির্বাচন করবেন

সাপের ক্ষিদে মেটাতে পাখিশূন্য দ্বীপ

একদিনের ট্যুরেই ঘুরে আসুন চীনামাটির পাহাড়ে

আধ্যাত্মিকর যাত্রা পথে সুফি মেডিটেশন এর গুরুত্ব

খাজা ওসমান ফারুকীর কুরআন দর্শন
