অপ্রতিরোধ্য শীর্ষ জনপ্রিয়নেতা আব্দুল হাই’ই পঞ্চমবারের মতো এমপি হবেন

আর মাত্র আট মাস পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অথবা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে চলতি বছরের নভেম্বরে। তবে এরইমধ্যে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে চায়। দলটি ইতিমধ্যে তাদের নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছে।

গেল ঈদের আগে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়ন প্রচারের তাগিদ দিয়েছেন। সে হিসেবে কাজও করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনের মাঠে আছে বিএনপি। ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত বিএনপির অবস্থান কি হবে তা সময়ই বলে দেবে।তবে ঝিনাইদহ-১ শৈলকুপা আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের চারবারের নির্বাচিত এমপি পুনরায় আবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী আব্দুল হাই এর প্রচার ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বেড়েছে।

দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে  ঝিনাইদহ(শৈলকুপা)-১ জাতীয় সংসদের ৮১নং আসন।একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে সংসদীয় আসনটি গঠিত। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন দুজন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই৷ তার বিপরীতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আব্দুল হাইয়ের কাছে পরাজিত হন নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার। 

আগামী দ্বাদশ নির্বাচনেও এ আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই এমপি ও অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলছেন স্থানীয়রা। যদিও বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলেই জানিয়ে আসছেন দলটির নেতারা। এদিকে টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুল হাই । ১৯ বছরের বেশি সময়ে তার হাত ধরেই সংসদীয় আসনটির বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ সাধিত হয়েছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সড়ক-অবকাঠামো থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে উন্নয়ন কাজ করেছেন আব্দুল হাই । স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভাষ্য, সব প্রয়োজনে গত চার সংসদের মেয়াদকালে আব্দুল হাইকে পাশে পেয়েছেন তারা। তার হাত ধরেই উন্নয়নের ধারায় বহমান ঝিনাইদহ (শৈলকুপা)-১  সংসদীয় আসন।

আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়ে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময়ে দলের দূর্দিনে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে সংগঠনকে সুসংগঠিত করেছেন এবং জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হামলা, মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। তবু কখনো পিছুপা হইনি তিনি। আব্দুল হাই এমপি শৈলকুপা বাসির গর্ব ও অহংকার। আব্দুল হাই এমপি তৃণমূল থেকে উঠে আসা জীবন্ত কিংবদন্তি মানবিক নেতা, মুজিব আদর্শের রাজপথের পরীক্ষিত অকুতোভয় সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সোনালী অর্জন, ঝিনাইদহ-শৈলকুপা আসন থেকে বারবার নির্বাচিত সাংসদ আব্দুল হাই এমপি ঝিনাইদহ জেলা তথা শৈলকুপা উপজেলার লক্ষ নেতাকর্মীর আশ্রয়স্থল, মানবতার ফেরিওয়ালা। আব্দুল হাই এমপি একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শৈলকুপা গণমানুষের অতি কাছের মানুষ তিনি। নীতি-নৈতিকতা তার অনন্য সম্পদ। আব্দুল হাই এমপি ঝিনাইদহ জেলা ও শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং ঝিনাইদহ জেলা ও শৈলকুপা আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন তিনিই।একজন সৎ ও আদর্শবান রাজনীতিক হিসেবে তিনি এ জেলাতে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আব্দুল হাই একজন দক্ষনেতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সোনার বাংলা বিনির্মাণ তার একমাত্র লক্ষ্য।

আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা ভাবনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝেও। শৈলকুপা ৯নং মনোহারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, এমপি আব্দুল হাই সাহেব ভালো মানুষ। এলাকার জন্য অনেক কাজ করেছেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ সদস্য হিসেবে আব্দুল হাই এর বিকল্প কাউকেও দেখছেন না আলমগীর। শৈলকুপা থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক মতিয়ার রহমান এবং আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদও আব্দুল হাই এমপির বিকল্প দেখছেন না। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, আব্দুল হাই এমপি সাহেব শৈলকুপাতে অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ সব ধরনের উন্নয়ন হয়েছে। তার হাত ধরেই শৈলকুপা এ আসনের চেহারা পাল্টেছে। তার বিকল্প কেউ নাই।

শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান এম.আব্দুল হাকিম আহমেদ বলেন, নেতাকর্মীদের পাশে তাকে সবসময় পাওয়া যায়। ঈদে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করেন।নির্বাচনের আগে শৈলকুপা স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন নজির রয়েছে। শৈলকুপা-১আসনে তেমন কোনো শঙ্কা নির্বাচনকে সামনে রেখে দেখা যাচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম বলেন, দুর্যোগে আওয়ামী লীগ আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ। বর্তমানে আমাদের এখানে এ ধরনের কোনো সমস্যা নাই বা এখন পর্যন্ত অন্যকোন প্রার্থী মাঠে দেখা যাচ্ছে না।আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ। তাকে ঘিরেই নানা ছক কষছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল হাই ২০০১ সাল থেকে এ আসনে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে দলে তিনজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে তার। একজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভিন জামান কল্পনা; বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলাল; আরেকজন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার। শৈলকুপার নির্বাচনী মাঠ গরম করতে শুরু করেছেন একমাত্র আব্দুল হাই এমপি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নিয়ে মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে প্রার্থিতার ঘোষণা না দিলেও মাঝে মধ্যে তারা ঝটিকা মিছিল করে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়।

ঝিনাইদহ-১ শৈলকুপা আসন ১টি পৌরসভা, ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৬ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪৮ জন। এখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে চলছে জোর হিসাব-নিকাশ। আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আব্দুল হাই এমপিই মাঠ পর্যায়ে ভোটারদের নজর আনতে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তবে আগামী নির্বাচনেও পঞ্চমবারের মতো নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের কাছে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ এর চারবারের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই। 

১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসনে অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান (আওয়ামী লীগ), ’৯১ সালে আবদুল ওহাব (বিএনপি), ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আবদুল ওহাব (বিএনপি), ’৯৬ সালের ২ জুনের নির্বাচনে আব্দুল ওহাব (বিএনপি)। এরপর ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত চারটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই। তিনি বর্তমানেও এ আসনটির নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল হাই। তিনি গত বছরের ১৩ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আবারও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দলের উচ্চ পর্যায়ে তার যোগাযোগ ভালো। তিনি পঞ্চমবারের মতো আসনটি থেকে নির্বাচিত হতে মনোনয়ন চাইবেন এবং আবারও পঞ্চমবারের মত তিনিই মনোনয়ন পাবেন তা প্রায় নিশ্চিত। ২০০১ সাল থেকে তিনি এ আসনে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিছুদিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন।বর্তমানে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।

বর্তমানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জানান দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামানের মেয়ে পারভিন জামান কল্পনা। তার বাবা আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি শৈলকুপার দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং কাছেও টানছেন। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলাল মনোনয়নের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার মনোনয়ন চাইবেন। তিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আব্দুল হাইয়ের কাছে পরাজিত হন। 
বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং সহযোগি সংগঠনের কমিটি করাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’

এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আসাদুজ্জামন আসাদ এবং বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওহাব।বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান। এবারও দল নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন বলে আশা রাখেন। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং বিপদে-আপদে পাশে থাকছেন। এদিকে এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির শৈলকুপা উপজেলা কমিটির সভাপতি মনিকা আলম ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান ফুল মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। মনিকা আলম গতবারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।এদিকে ইসলামী আন্দোলন একক প্রার্থী হিসেবে রায়হান উদ্দিনের নাম ঘোষণা করেছে।