ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না কক্সবাজার এলএ শাখায়
দফায় দফায় কক্সবাজার ভূমি অধিকগ্রহণ শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা ঘুষের নগদ টাকাসহ গ্রেফতার হলেও থামছে না ঘুষ বাণিজ্য। ঘুষ ছাড়া যেন কোন ফাইলই নড়ে না কক্সবাজার ভূমি অধিকগ্রহণ শাখায়। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, এল এ শাখার অফিসের ভিতরে ও বাইরে রয়েছে একাধিক দালাল চক্র। এসব দালাল চক্রের মাধ্যমে ঘুষ না দিলে কোন কাজই করেন না এলএ শাখার সার্ভেয়ার ও অন্যান্য কর্মকর্তারা।
যদিও কক্সবাজার ভূমি অধিকগ্রহণ শাখার দেয়ালে বিভিন্ন ফেস্টুনে লিখা রয়েছে ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের জন্য কেউ কোন ঘুষ, কমিশন বা বকশিশ দাবী করলে সাথে সাথে এলও-১, এলও-২, এলও-৩, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করুন প্রয়োজনে পরিচয় গোপন রাখা হবে।
তবে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ তার উল্টো। তাদের দাবী দেয়ালের ফেস্টুনে এসব নীতিকথা ও অভিযোগর কথা লিখা থাকলেও ফোন রিসিভ করেন না কেউ। এমনকি অফিসে উক্ত কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করা যেন সোনার হরিণ। দিনের পর দিন বসে থেকেও মিলে না কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ।
অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার টেকনাফ সেন্টমার্টিনে বিজিবি সদস্যদের জন্য বিওপি কমপ্লেক্স ও তিনটি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের জন্য ব্যাক্তিমালিকানাধীন জমি অধিকগ্রহণ করেন কক্সবাজার ভূমি অধিকগ্রহণ শাখা। অধিকগ্রহনের ক্ষতিপূরণের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার চেক দ্রুত করে দেওয়ার জন্য সেন্টমার্টিনের এক দালালের মাধ্যমে জমির মালিক মোঃ আলম শাহীনের কাছ থেকে ১৬ পার্সেন্ট অর্থাৎ ৫৫ লাখ টাকা ঘুষ নেন দালাল সেন্টিমার্টিনের ইউপি সদস্য মোঃ ছৈয়দ আলম এলএ শাখা-২ এর সার্ভেয়ার মোঃ সায়েদুল ইসলাম। যার একটি ভিডিও এবং অডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
ভূক্তভোগী জমির মালিক মোঃ আলম শাহীন জানান, এলএ শাখায় একযোগে ২২ কর্মকর্তা বদলী হওয়ার পর সার্ভেয়ারের সাথে চেকের ব্যাপারে যোগাযোগ করেও কোন সুরাহা পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য দালাল মোঃ ছৈয়দ আলমের সাথে যোগাযোগ করে এলএ শাখার বর্তমান সার্ভেয়ার মোঃ সায়েদুলের সাথে জমি অধিকগ্রহণের ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকার চেক পাওয়ার জন্য ১৬ পার্সেন্ট অর্থাৎ ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকায় মৌখিকভাবে চুক্তি হয়। পরে চেকের টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের জমির মালিকদের একাউন্টে জমা হলে এক ভাগ টাকা ইউপি সদস্য দালাল মোঃ ছৈয়দ আলম নেন বাকী কমিশনের টাকা আলম শাহীন নিজেই সার্ভেয়ার সায়েদুলের বাজারঘাটা এ.আর.সি টাওয়ারের বাসায় বুঝিয়ে দেন বলে জানান তিনি। টাকা বুঝে নেওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজও এসেছে প্রতিবেদকের হাতে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের জসিম উদ্দিন নামের এক ভূক্তভোগী জানান, কক্সবাজার সদরের ঝিলংঝা মৌজার ১৩৭৯২, ১৭৭৭৩, ১৭৭৬০,১৩৭৮৪ ও ১৩৭৬১ দাগের ১৪৬,১৩৬,১৩৩, ১৩৪ রোয়েদাদ নম্বরের ৬০ শতক জমি রেললাইনের জন্য জমি অধিকগ্রহণ করা হয়। যার এল এ মামলা নং ৪/২০১৬-১৭। জসিমের অভিযোগ, এই দাগ ও রোয়েদাদ নাম্বারগুলো ভূল হওয়ায় বিএস সংশোধনী করার জন্য ২০১৮ সালে মামলা করা হয়। যার মামলা নং ৩৪৯/১৮। মামলায় আসামী করা হয় আব্দুল জব্বার, আব্দুল সাত্তার, রহিম উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও জালাল উদ্দিন।
জসিমের দাবী, জেলা যুগ্ম ১ম আদালতে মামলা চলমান থাকায় উল্ল্যেখিত খতিয়ান ও দাগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যাতে মামলা সমাধান না হওয়ার আগে অধিকগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা কেউ তুলতে না পারে। অভিযোগ আছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভূমি অধিকগ্রহণ শাখা-১ এর সার্ভেয়ার মোঃ মহিউদ্দিন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ের মামলার আসামী জব্বার, রহিম উদ্দিন, জসিম উদ্দিনের, জালাল উদ্দিন ও সাত্তার গংদের ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের চেক তুলে নেন। জসিমের দাবী এত অভিযোগ, মামলা ও নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এলএ শাখার কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মামলার আসামীর ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দিতে পারেন আমার জানা নাই। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এছাড়াও, এর আগে একই জমি ক্ষতিপূরনের চেক দ্রুত করে দিবে বলে জমির মালিক মোঃ আলম শাহীনের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা মৌখিক চুক্তি করেন এলএ শাখার তৎকালীন সার্ভেয়ার শরিফুল ইসলাম। প্রথমধাপে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে কক্সবাজার বাহারছড়ার ভাড়া বাসায় জমির মালিকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নেন মোঃ শরিফুল ইসলাম। যার একটি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
এর কিছুদিন পর ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৩ লাখ টাকাসহ আটক করে কারাগারে পাঠানো কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে। এরপর সার্ভেয়ার শরিফুল ইসলাম সহ একযোগে এলএ শাখার ২২ কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়। সার্ভেয়ার মোঃ শরিফুল ইসলামকে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়। সার্ভেয়ার মোঃ শরিফুল ইসলাম বদলী হওয়ার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ-২ শাখায় তার স্থলে সার্ভেয়ার হিসেবে যোগ দেন মোঃ সায়েদুল। সায়েদুল যোগ দেওয়ার পর আবারো সক্রিয় হয় দালাল চক্র ও কমিশন বাণিজ্য।
এরপর ক্ষতিপূরণের চেক নতুন সার্ভেয়ার ৫৫ লাখ টাকা দেওয়ার পরে ক্ষুব্ধ হয়ে বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে কর্মরত সার্ভেয়ার মোঃ শরিফুল ইসলামের কাছ থেকে ঘুষের ৫ লাখ টাকা ফেরতের জন্য যোগাযোগ করেন জমির মালিক মোঃ আলম শাহীনের ওই আত্মীয়। প্রথমে টাকা দিতে অসম্মতি জানালে মিডিয়া ও প্রশাসনের সহযোগীতা নিবে জানালে ঘুষের ৫০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে ফেরত দেন মোঃ শরিফুল ইসলাম। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ঘুষের বাকী টাকা দিবে বললেও তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বলে দাবী করেন তিনি।
জানতে চাইলে কক্সবাজার এলএ শাখা-২ এর সার্ভেয়ার মোঃ সায়েদুল ইসলাম এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার তিনমাস পাস পরে কেন এসব কথা আসতেছে জানতে চেয়ে উল্টো প্রশ্ন করে বসেন তিনি। এরপর ভূক্তভোগী মোঃ আলম শাহীন ও ইউপি সদস্য দালাল মোঃ ছৈয়দ আলমকেও ফোন করে সতর্ক করে দেন বলেও জানা যায়।
জানতে চাইলে কক্সবাজার এল শাখার সার্ভেয়ার মোঃ মহিউদ্দিন বলেন আমি আগে ১নং শাখায় ছিলাম বর্তমানে ৩নং শাখায় আছি, অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা চলমান রয়েছে বা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নাই। এছাড়া আমি চাইলে তো চেক দিতে পারিনা আমাদের ভূমি অধিকগ্রহণ কর্মকর্তার নির্দেশেই তো আমরা ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান করেছি। ভূমি অধিকগ্রহণ কর্মকর্তা যেভাবে বলেছে সেভাবে করেছি। এখানে আমার কোন দোষ নেই। আর আমি তো মানুষ আমার ভূল হতেই পারে।
ঘুষের টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে সার্ভেয়ার মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, আমি যখন কক্সবাজার কর্মরত ছিলাম তখন অনেকের সাথে সম্পর্ক ছিল। টাকা নেওয়ার যে ভিডিওটা পেয়েছেন সেইটা সত্যি নয়। এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। ঘুষ না নিলে বিকাশে ৫০ হাজার টাকা কেন ফেরত দিয়েছেন জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
জানতে চাইলে কক্সবাজার ভূমি অধিকগ্রহণ কর্মকর্তা (গ্রুপ-২) সুভাশীষ চাকমাকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয় সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে কক্সবাজার ভূমি অধিকগ্রহণ কর্মকর্তা (গ্রুপ-১) রাবেয়া আসফার সায়মা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের জন্য কেউ কোন ঘুষ, কমিশন বা বকশিশ দাবী করলে সাথে সাথে এলও-১, এলও-২, এলও-৩, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে। তাছাড়া দ্রুত সেবা ও হয়রাণী থেকে বাঁচতে এলএ শাখার সামনে বুথ করা হয়েছে। গ্রাহক চাইলে বুথে বসে কর্মকর্তাদের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারবে। তারপরেও যদি সমাধান না হয় জেলা প্রশাসকের দরজা সব সময় খোলা। যেকোন সময় চাইলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।
তিনি আরো জানান, মামলা চলমান বা নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও ক্ষতিপূরণের চেক প্রদানের ব্যাপারে আমকর জনা নেই। ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কোন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যদি কমিশন বাণিজ্য বা কোন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তদন্তপূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএসএম / এমএসএম
কোন লুটেরা, চাঁদাবাজ ও বল প্রয়োগকারীকে ভোট দেবেন না; গণসংযোগে রাশেদ খান
খানসামা টিটিসিতে ধর্মীয় বৈষম্য–নির্যাতনের অভিযোগ: জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিতে তদন্ত আবেদন
কেরুজ ভোটের দাবীতে আন্দোলনের শুরুর দিনেই দুপক্ষের মারামারি
নওগাঁয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ধলু’র উদ্যোগে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল
কালিগঞ্জ থেকে ভেটখালী পর্যন্ত রাস্তা ৩৪ ফুট প্রশস্ত করার দাবিতে মানববন্ধন
নৈয়াইর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগ প্রত্যাহার
রামগঞ্জে যুবদল কর্মীর ছুরিকাঘাতে বিএনপি কর্মী খুন
ঠাকুরগাঁওয়ের ফকিরপাড়া থেকে মটরসাইকেল চুরি : মামলা
কলাবাড়িয়া ইউনিয়নে দিনব্যাপী গণসংযোগে সরব জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সার
কর্ণফুলী'তে হত্যা'সহ একাধিক মামলার এজাহার ভূক্ত আসামি সাজু হাসান গ্রেপ্তার
শীতের আগমনে লেপ তোষকের ব্যস্ততা; পলাশবাড়ীতে জমে উঠেছে ধুনকরদের শীতের বাজার
কাপ্তাই ১০ আর ই ব্যাটালিয়ন কর্তৃক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান