চীনের উত্থান ও বিশ্ব সম্প্রদায়
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক রাজনীতিতে ফ্রান্স দুর্বল হয়ে যায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিটেনের কাছে এবং ব্রিটেন বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি হয়ে ওঠে এবং সুয়েজ খাল সংকটকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনের ভুল পদক্ষেপ আমেরিকাকে বৈশ্বিক নেতৃত্বে নিয়ে আসে।
করোনা সংকটের ভূরাজনৈতিক প্রভাব এতটাই সুদূরপ্রসারী যে এটি ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র যে অপরিণামদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে, তারই সূত্র ধরে অনেকে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে চীনের উত্থানের কথা ভাবছে।পরিবর্তন বাদীদের পক্ষ থেকে যে দাবিটি প্রধানত তোলা হচ্ছে তা হলো, ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় বৈশ্বিক শৃঙ্খলার নতুন মোড়লের উত্থান তখনই হয়েছে যখন বিশ্বব্যাপী কোনো ইতিহাসের গতি পরিবর্তনকারী ঘটনা মঞ্চস্থ হয়েছে। এই দাবির পেছনে যুক্তি আকারে দেখানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত হেজিমোনিক স্টেবিলিটি তত্ত্ব, তথা নেতৃত্বের স্থিতিশীলতা তত্ত্বের আলোকে রাষ্ট্রসমূহের চারিত্রিক বিশ্লেষণ। তত্ত্বটির মতে, বৈশ্বিক অর্থনীতিক ও রাজনৈতিক শৃঙ্খলাটি মসৃণভাবে চালানোর জন্য আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলায় একটি একক নেতৃত্বের আধিপত্য জরুরি-তবেই শৃঙ্খলাটি স্থিতিশীল থাকবে। আর বর্তমান নেতৃত্বের পতন কিংবা নতুন নেতৃত্বের উত্থান আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় মূলত ক্ষীয়মাণ নেতৃত্বের আক্রমণাত্মক আচরণের কারণে, যেখানে তারা শৃঙ্খলাটিকে সচল রাখতে তাদের যে বিনিয়োগ, তার লাভ বুঝে পেতে চায়, যার আভাস ইতিমধ্যে বিশ্বের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বড় দুই অর্থনীতির বাণিজ্যযুদ্ধ আর করোনাকালে ট্রাম্পের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থায়ন প্রত্যাহারের ঘোষণায়।
বিপরীতে স্বাস্থ্য সংস্থাকে চীন তিন কোটি ডলার অনুদান দেয়। মার্কিন আচরণ যেন তত্ত্বটিরই রূপায়ণ। এ ছাড়া আমেরিকা ক্রমেই মিত্রহীন হয়ে উঠছে, যা স্পষ্টতই দৃশ্যমান হচ্ছে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের সাম্প্রতিক নাটকীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে। আমেরিকা যদি বর্তমান ব্যবস্থার হৃৎপিণ্ড হয়ে থাকে, তবে ইউরোপীয় দেশগুলো এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যারা একসঙ্গে অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা উভয় দিকেই জোটবদ্ধভাবে ব্যবস্থাটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে এই দুর্যোগের সময় ইউরোপের সঙ্গে কোনো পূর্ব-নোটিশ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র বিমান চলাচল প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং তার মিত্রদেরও একাই পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। সম্পর্কের ফাটলের এই বিষয় আরও স্পষ্ট হয় মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে জার্মান প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে, আমাদের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ধারণায় বিশ্বাস করে না। তাই সঙ্গীহীন আমেরিকা যদি আর আগের মতো নেতৃত্বে না থাকে, তবে তা বিস্ময়ের কিছু হবে না। সম্প্রতি জাপানের হিরোশিমায় গত মে মাসে অনুষ্ঠিত হয় জি৭ শীর্ষ সম্মেলন। এ সম্মেলনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দাবি করেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রত্যাশা করছেন তিনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেনের সঙ্গে এ বিষয়ে বেশকিছু দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও সম্পন্ন হয়। জ্যানেট ইয়েলেন শিগগিরই চীন সফরে যাবেন বলেও জানা গেছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও উভয় দেশের মধ্যকার শীতল সম্পর্কের অবসান ঘটেনি। সত্যিকার অর্থে, নতুন করে মার্কিন-চীন শীতল যুদ্ধের সম্ভাবনা আরো ঘনীভূত হচ্ছে। সম্পর্কের বরফ গলার বিষয়টি এখনো সুদূরপরাহত। সম্পর্ক উষ্ণ করার পরিবর্তে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণ, পরিবেষ্টন এবং দমন কৌশল অনুসরণের মাধ্যমে চীনা উদ্বেগ আরো বেড়েছে।
পূর্ববর্তী সম্মেলনের তুলনায় হিরোশিমায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনটি গ্রুপের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। কেননা জি-৭ নেতারা এর আগের সম্মেলন গুলোয় যেসব কথা বলতেন, তার খুব কম অংশই বাস্তব রূপ পেয়েছে। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপ এবং তাদের বন্ধু ও মিত্ররা চীনের বিরুদ্ধে অবস্থানকে আরো স্পষ্ট করেছেন। এ সম্মেলনে জি-৭ জোটের নেতারা চীনকে প্রতিহত করার জন্য তাদের শক্তি একত্র করার পরিকল্পনা করছেন। এছাড়া জি-৭ জোটের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাপান এবারের সম্মেলনে দক্ষিণ বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কেননা উদীয়মান এবং মধ্যম অর্থনীতির দেশগুলোর কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে জি-৭ জোটের চাওয়া চীনা উত্থান প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অন্যদেরও আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে প্ররোচিত করা। সম্ভবত এদের অনেকেই এশিয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে চীনকে দৃঢ়প্রত্যয়ী একটি কর্তৃত্ববাদী, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রীয় শক্তি হিসেবে চিত্রিত করার সঙ্গে একমত হবেন। যদিও ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক পরিচালনার বিষয়ে ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। তবে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে চীনের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে জড়িয়ে আছে। যেহেতু দুই দেশের মধ্যে একটি দীর্ঘ সীমানা রয়েছে, যার বেশির ভাগই বিতর্কিত। সুতরাং ভারত যদি পশ্চিমা দেশগুলোর ঘোষিত মিত্র নাও হয়, তবুও দেশটি নিজেকে একটি স্বাধীন, ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে চীনের তুলনায় পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সমুন্নত রাখবে। কেননা চীন এবং চীনের প্রকৃত মিত্র রাশিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের নিজস্ব স্বার্থ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে আরো বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া মিলে গঠিত কোয়াড একটি প্রতিরক্ষা জোট। এ জোটের সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য চীনের উত্থান প্রতিরোধ করা।
জাপান ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এছাড়া চীনের সঙ্গে উভয় দেশেরই বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের একটি সাধারণ ইতিহাস রয়েছে। জাপান এ শীর্ষ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজালি আসুমানি ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য কিছুটা স্পষ্ট। কেননা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এরই মধ্যে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ বিশ্বের অন্য এক শক্তিধর দেশ হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে ব্রাজিল। বার্তাটি ছিল স্পষ্ট, মস্কো-বেইজিংয়ের দহরম মহরম সম্পর্ক অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের বোঝাপড়ায় প্রভাব রাখছে। কিন্তু সম্মেলনে জি-৭ নেতারা আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন। জি-৭ জোটের চূড়ান্ত বিবৃতিতে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কীভাবে আগামী বছরগুলোয় চীনকে মোকাবেলা ও প্রতিরোধ করবে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে এ বিবৃতিতে চীনের অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা নীতির নিন্দা করা হয়েছে। পাশাপাশি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে চীনা প্রচেষ্টাকে রুখে দিতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারত্বমূলক পদক্ষেপের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এতে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সম্প্রসারণবাদের সমালোচনা করা হয়েছে। এছাড়া তাইওয়ানের ওপর আক্রমণ না করার বিষয়ে চীনের প্রতি স্পষ্ট সতর্কবার্তা জুড়ে দেয়া হয়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে ঝুঁকিমুক্ত করতে পশ্চিমা নেতারা এমন একটি ভাষায় কথা বলেছেন, যা বিচ্ছিন্নতাবাদের তুলনায় কিছুটা কম আক্রমণাত্মক। কিন্তু এটি কূটনৈতিক বক্তব্যের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলো নিয়ন্ত্রণমূলক প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ বিশ্বের দেশগুলোকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে সংযুক্ত রাখার নীতি অনুসরণ করবে। এসব দেশকে চীনের প্রভাববলয় থেকে দূরে রাখতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে জি-৭ জোটের এমন বিবৃতির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চীন। কোয়াডের প্রসারণের পাশাপাশি হিরোশিমায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনটির চীনাবিরোধী বিবৃতি এমন একসময়ে এসেছে, যখন ন্যাটো এশিয়ায় তাদের নিজস্ব কার্যক্রম শুরু করেছে। একই সময়ে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত এইউকেইউএস জোট প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এদিকে পশ্চিমা দেশ ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ ক্রমে তীব্রতর হচ্ছে। জাপান চীনে চিপ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত বিধিনিষেধের তুলনায় যা কম কঠোর নয়। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর চীনা তৎপরতা প্রতিরোধে চীনকে চাপ দিচ্ছে। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিপ নির্মাতা কোম্পানি মাইক্রনের চিপ ক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন। পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রযুক্তিগত ব্যবধান দূর করার ক্ষেত্রে বর্তমানে চাপের মুখে রয়েছে চীন। সুতরাং জি-৭ জোট হয়তো ‘শীতল যুদ্ধ’কে আরো তীব্রতর না করে চীনকে প্রতিহত করতে চেয়েছিল। কিন্তু বেইজিংয়ের ধারণা অনুযায়ী, পশ্চিমা নেতারা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। এখন আগের চেয়েও স্পষ্ট হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃহত্তর পশ্চিমা দেশগুলো চীনের উত্থান রোধে অঙ্গীকারবদ্ধ। যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন কৌশলগত বোঝাপড়া তৈরি না হয়, তবে তারা সংঘাতের পথেই থাকবে। সম্পর্ক যত শীতল হবে, তত গভীর হবে বৈরিতা, তৈরি হবে ভয়ংকর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি।
চীনের উত্থান কিংবা বর্তমান সিস্টেমের ক্ষয়সংক্রান্ত তত্ত্বগুলো নিয়ে যতই মাতামাতি হোক না কেন এদের প্রতি সন্দেহবাদী মানুষও কম নেই এবং অচিরেই যে চীন শীর্ষে আরোহণ করছে না, তাঁরা সেটাও বিশ্বাস করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত বাধা যেমন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফকে কাজে লাগাতে না পারার পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় চীনের সক্ষমতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন।
যদিও বিশ্ব মোড়ল হওয়ার ব্যাপারে বেইজিংয়ের বাসনা গোপন কিছু না এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড-এর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে তারা সে ইচ্ছাই প্রকাশ করেছে, তবে এখনো তারা বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত কি না, সেটা কুয়াশাচ্ছন্ন। ২০০৮-পরবর্তী সময়ে চীনা অর্থনীতি বেশ ভালো করলেও ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তের সামাজিক ও জীবনযাত্রাগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল মেলাতে বেইজিংকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ছাড়া রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কায় ইয়েনের অবমূল্যায়ন করে রাখতে হয়েছে। তাই করোনা-পরবর্তী সময়ে চীনা অর্থনীতি যেখানে এমনিতেই চ্যালেঞ্জের মুখে থাকবে, সেখানে নতুন করে নেতৃত্ব নেওয়ার ব্যাপারে দেশটি কতটুকু প্রস্তুত এবং ইচ্ছুক হবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাছাড়া চীনই কি এখন একমাত্র ভাবনার বিষয় এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, এর সরল উত্তর হলো বিষয়টি অনিশ্চিত। বিশ্ব রাজনীতির ঘটনাসমূহ এতটাই রহস্যময় যে এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা কখনোই সম্ভব নয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র যদি ট্রাম্পের বিচ্ছিন্নতার নীতি অনুসরণ করতে থাকে, তবে চীন বিশ্ব শৃঙ্খলার পরিচালকের আসনের জন্য সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী। অন্যদিকে, চীনের সরকার এই মহামারির প্রথম দিকে নিজেদের নির্লিপ্ত আচরণের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্বস্ত বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, এই বিশাল প্রাণহানি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি উভয়ই এড়ানো যেত, যদি চীনা সরকার ভাইরাসটির সূচনা থেকে এই ব্যাপারে আরও খোলামেলা হতো। সুতরাং, কোভিড-১৯ চীনের জন্য সেই সুযোগ হবে কি না, যার মাধ্যমে তারা বিশ্ব নেতৃত্বের শীর্ষে আসীন হতে পারবে, নাকি বড় ক্ষতির কারণ হিসেবে প্রমাণিত হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক, যুক্তরাজ্য
এমএসএম / এমএসএম