ঢাকা শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রিপ্রেজেনটিভদের দখলে


হৃদয় মাহমুদ রানা, মানিকগঞ্জ photo হৃদয় মাহমুদ রানা, মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১-৬-২০২৩ দুপুর ৪:৫৭

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল ৮টা বাজে। ডাক্তার চেম্বারে নেই। কেউ আসলেন সাড়ে ৯ টায় আবার কেউ আসলেন সাড়ে ১০ টায়। হাসপাতালে প্রবেশ পথে সাদা কালো গাড়ি ঢুকতে দেখলেই ছুটে যান রিপ্রেজেন্টিভরা ওইসব ডাক্তারের চেম্বারে। কার আগে কে উপঢৌকন ও স্যাম্পুল দিবে এ নিয়ে শুরু হয় প্রতিয়োগিতা।  

রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৩৫ জন যুবক শার্ট প্যান্ট ও ট্রাই পরে সাড়িবদ্বভাবে দাড়িয়ে আছেন সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেটের ভেতর। প্রতি যুবকের হাতে একটি করে স্মার্ট ফোন। ডাক্তার আসার সাথে সাথেই ঢুকে পড়েন ডাক্তারের চেম্বারে। এসময় ভোর থেকে শত শত নারী রোগীরা ডাক্তার দেখানোর জন্য দাড়িয়ে আছে লাইনে। আবার অনেক রোগী পায়ের জুতা রেখে সিরিয়াল দিয়ে রেখেছেন টিকিট কাটার জন্য।

সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, বহিঃ বিভাগে সকাল ৮ থেকে বেলা ২ টা পযর্ন্ত ডাক্তাররা রোগী দেখার কথা। মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফাতেমা আক্তার, ডাঃ জান্নাতুল ফাতেমা, ডাঃ এনামুল হোসেন ও ডাঃ মমতাজ আক্তার। এসব ডাক্তাররা যথা সময়ে না আসার কারণে রোগী ও রিপ্রেজেন্টিভরা পুরো হাসপাতাল দখলে নিয়ে নেয়। ভোর থেকেই শত শত রোগীরা ৫ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে গাইনি, শিশু বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন, চক্ষু সার্জন ও ডেন্টাল সার্জনরা এবং ডাইবেটিকসসহ প্রতিদিন রোগী দেখে থাকেন। এসব ডাক্তারারা শুরুতেই রোগী না দেখে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভদের ঔষধের স্যাম্পুল ও উপঢৌকন নিতে ব্যস্ত সময় পার করেন।

এদিকে বাহিরে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ানো রোগীরা তীব্র গরমে চেঁচামেচি শুরু করলেও ডাক্তারদের কানে পৌছায় না। তারা রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে নেয়। ডাক্তারদের সাথে রিপ্রেজেন্টিভদের আদান প্রদানের কাজ শেষ করে রোগী দেখা শুরু করেন। এসময় রিপ্রেজেন্টিভরা ডাক্তার চেম্বারের পাশে দাড়িয়ে থেকে ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন রোগীদের হাত থেকে জোড় করে নিয়ে মোবাইলে ছবি তোলে প্রেসক্রিপশনের। এসব প্রেসক্রিপশনের ছবি বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির ইমেইল বা ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেন। রিপ্রেজেন্টিভরা দেখেন তাদের কোম্পানির ঔষধ ডাক্তার লিখছেন কিনা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডাক্তাররা লোভে পড়ে হাসপাতালের সরকারি ঔষধ লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধ লিখে দেন। এমনকি রিপ্রেজেন্টিভরা ডাক্তারের কাছে বসে ঔষধ লেখাচ্ছেন। বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধ বোগীদের না দিতে পারলে কাউন্টারে এসে গালিগালাজ করেন। রোগীরা বলেন ডাক্তার লিখেছে ঔষধ দিবেন না কেন? ওই কর্মকর্তা আরো জানায়, রিপ্রেজেন্টিভরা হাসপাতালের ভেতর প্রবেশ করে ডাক্তার দিয়ে তাদের ঔষধ লিখিয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি করছে। তারা রোগীদের কাছ থেকে জোড় পূর্বক প্রেসক্রিপশন নিয়ে মোবাইলে ধারণ করে কোম্পানিতে পাঠিয়ে দেন। কারন সুবিধা নিয়ে ডাক্তাররা তাদের ঔষধ লিখছেন বলে জানায়। 
রোববার সকালে কথা হয় সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর সাথে। এসব রোগীর মধ্যে রোগী তাসবিয়া বেগম,আ. হালিম মিয়া,জমিরন বেওয়া ও আমেনা বেগম জানান, হাসপাতালের ডাক্তাররা সরকারি ঔষধ না লিখে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির ঔষধ লিখে দিচ্ছে। আমরা গরীব মানুষ বলেইতো সরকারি ডাক্তার ও সরকারি ওষধ নিতে হাসপাতালে আসি। কিন্তু ফার্মেসী কাউন্টারে প্রেক্রসিপশন দেওয়ার পর বলে বাহির থেকে এ ঔষধ কিনে নিতে হবে। এর কারণ জানতে চাইলে রোগীরা বলেন, ঔষধ কোম্পানির লোকজন ডাক্তারদের টাকা পয়সা ও স্যাম্পুল দেয়। হাসপাতালে আসা রোগীরা অভিযোগ করেন, রিপ্রেজেন্টিভদের ভিড়ে রোগীরাই ডাক্তার দেখাতে পারে না। রোগীরা এসব রিপ্রেজেন্টিভদের কিছু বললে তারা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মোঃ মামুন উর রশিদ নাকি রিপ্রেজেন্টিভদের ভেতরে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। এই কর্মকর্তা নাকি রিপ্রেজেন্টিভদের মোটরসাইকেল রাখার জন্য হাসপাতালের গেটের ভেতরে একটি গ্যারেজ করে দিয়েছে রিপ্রেজেন্টিভদের টাকায়।

 সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাস্টিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রোগীদের সাথে প্রতিদিনই ঔষধ নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। প্রেসক্রিপশনে লেখা ঔষধ দিতে না পারায় এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ডাক্তাররা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির ঔষধ প্রেসক্রিপশন করার কারণে রোগীদের সাথে আমাদের বাক বিকন্ডা হচ্ছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, একাধিক ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভ বলেন, কেউ মাসোহারা, ত্রৈমাসিক, ষানার্ষিক ও কেউ বছরে চুক্তি হয় ডাক্তারদের সাথে। তাদের ঔষধের স্যাম্পুল ও উপঢৌকন দিয়েই প্রেসক্রিপশন করাতে হয়। এসব উপঢৌকন ও স্যাম্পুল না দিলে ডাক্তাররা ঔষধ লিখে না। আবার অনেক ছোট কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভ তাদের মাসের বেতনের টাকা দিয়ে ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন করিয়ে থাকে। তারা জানায়, প্রতিমাসের টার্গেট পূরণ করতে না পারলে চাকুরি থাকবে না। এজন্য সপ্তাহে দুদিন ভিজিট করার জন্য অনুমতি দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. মানুন উর রশিদ রিপ্রেজেন্টিভ ও ডাক্তারদের সাথে সপ্তাহে দুদিন ভিজিট করার অনুমতির কথা স্কীকার করে বলেন, একটি নিদিষ্ট একটি সময় দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে তারা ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করতে পারবেন। কিন্তু রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, এ দৃশ্য সারা বাংলাদেশেই রয়েছে। তিনি বলেন সকাল ৮ টা থেকে রোগী দেখার কথা থাকলেও ডাক্তাররা রোগী দেখেন বেলা ১০ টার পর থেকে।

এমএসএম / এমএসএম

কালীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় গরুর মৃত্যু

বেনাপোলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে চলছে সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন

শার্শায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ নিবন্ধনে উদ্বুদ্ধকরণ

পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ বাকেরগঞ্জ বাসী

সীমান্তে রোহিঙ্গা পারাপারে সক্রিয় পাচঁ পাচারকারী আটক

রিকশাচালকের ছেলে রতন স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত

বিদ্যালয়ের মূল্যবান গাছ কম দামে বিক্রির অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে

গোমস্তাপুরে বিএনপি নেতা মাসুদের গণসংযোগ

টাঙ্গাইলে নিউ ধলেশ্বরী নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের ভাঙনে ৪০ পরিবার নিঃস্ব

কুড়িগ্রামে দুধকুমার নদীতে ডুবে বৃদ্ধা নিখোঁজ

পাঁচবিবিতে কৃষকের বাড়ী ভস্মীভূত, শত্রুতার আগুন নাকি, শর্ট সার্কিট ?

ঝিনাইদহ সূর্যের হাসি ক্লিনিকে বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

মিরসরাইয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় বাবা ও মেয়ে দুজন নিহত