চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে রোগীর আন্তরিকতা আবশ্যক

সরকারি হাসপাতালে গেলে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যায়, এমন ধারণা পোষণ করেন অনেকেই। আর এটিই যেন এ দেশের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ বাস্তবতা। সরকারি হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা-আবর্জনাময় পরিবেশ, চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলা, অপ্রতুল চিকিৎসা সরঞ্জাম, নিরাপত্তাহীনতা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ না থাকার কারণে বেসরকারিভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষ। আর সেখানে ব্যতিক্রম ঢাকা জেলার শিল্পনগরী খ্যাত সাভার উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্স বিপুল জনগোষ্ঠীর একটি হাসপাতাল। এ এলাকায় চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের প্রতি আস্হা ফিরেছে বেশিরভাগ মানুষের।
দেশের অন্যান্য হাসপাতালের মতো অনেক সমস্যায় জর্জরিত ছিল সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০০২ সালে এ হাসপাতালটি ৩৩শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখনো জনবল মেলেনি। ফলে জরুরি অনেক অস্ত্রোপচার ব্যাহত হচ্ছে। এ হাসপাতালটি নিজ উপজেলার এবং বহিগত অনেক এলাকা থেকে আগত অন্তত ত্রিশ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম অবহেলা ও প্রয়োজনীয় লোকবলসহ বেশ কিছু যন্ত্রপাতির অভাবে ভোগান্তির শেষ ছিলনা চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। সামান্য অসুস্থ্য হলেও দেখা গেছে রোগীকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হতো।
কিন্ত বর্তমান প্রতিকুল পরিস্হিত কাটিয়ে অন্যান্য জেলা সদরের সাথে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের লক্ষে ১০০ শষ্যায় উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক বলে মনে করেন স্হানীয় জনগন। ১৩ টি বিভাগের কনসাল্টেন্টের পদ পুরুন করে সেবা দানে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্টত্ব অর্জন করেছে। এমনকি বাংলাদেশে প্রথম ১৪ ই জুন ২০২৩ সালে হাসপাতালটিতে ইকোকার্ডয়োগ্রাম চালুর মাধ্যমে স্হানীয় গরীর এবং অসহায় রোগীদের সেবা পাবার নতুন দ্বার উন্মোচন হল। যা বাংলাদেশের প্রথম উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্স ইকোকার্ডয়োগ্রাম পাবার পথ উন্মোচন করল। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্হ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার মোঃ সায়েমুল হুদার কাছে তার অনুভুতি জানতে চাইলে তিনি বলেন রোগীরা ভাল সেবা পাবে এটা আমাদের কাছে পেশাগতভাবেই চাই। পাশাপাশি মানবিকতার দিকবিবেচনা করে বলতে পারি চিকিৎসকের প্রতি রোগীদেরও কর্তব্য আছে যে সেবা নেবার মানসিকতা এবং বাস্তবতাকে মেনে চিকিৎসকের সহাযোগিতা করা। চিকিৎসকরা আমাদের দেশের কৃতি সন্তান নিজেদের আসে পাশে ছিল না তেমন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাজার। ফলে চিকিৎসক ও নার্সরা হাসপাতালটিতে বেশি দিন থাকতে চাইতেন না। বর্তমান রোগীদের চাহিদা পুরুনে হাসপাতাল ১০০ শয্যায় উন্নীত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুধী সমাজ, সরকারি কর্মকর্তা ও এলাকার সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে সেটিই সম্ভব করে তুলেছেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সায়েমুল হুদা।
এছাড়া তার তিক্ত অভিঙ্গতা ব্যক্ত করে বলেন সবধরনের সেবা দানের বিভিন্ন বিভাগে কনসালটেন্ট,রোগ নির্ণয়নের আধুনিক যন্ত্রপাতি লোকোবল বাড়ালেও রোগীর মানসিকতা চিকিৎসক এবং হাসপাতালের প্রতি যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন। আন্তরিকতার অভাব থাকলে সব সুযোগ সুবিধা থাকা সত্তেও প্রকৃত চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার গ্লানি বয়ে আনতে পারে। এই কারনে রোগীদেরকে চিকিৎসকের প্রতি আন্তরিকতা প্রয়োজন।চিকিৎসা সেবায় বাড়তি যুক্ত হওয়া ইকুকার্ডিয়াম করতে আসা ব্যবসায়ী মোঃ মুনসুর হোসেন এবং স্বপন বলেন আমরা কার্ডিয়াক রোগী হওয়ায় কম খরচে ইকো করনের মধ্যে দিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে পেরে ভাল লাগছে। কার্ডয়াক কনসালটেন্ট ডাঃ আশরাফুল ইসলাম কে বর্তমান ইকোকার্ডয়ামের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দিতে অনুভুতি ব্যক্ত করে বলেন যে, বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হলেও কম খরচে রোগীদের ইকো করতে পেরে মানসিকভাবে তৃপ্তি পাচ্ছি।কার্ডিয়াক কনসালটেন্ট ডাঃ আশরাফুল ইসলাম (আরিফ) আরো বলেন চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা রোগ নির্ণয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি সন্তোষ প্রকাশ করি। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ডাঃ মো.মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা এই হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র ৪ বছরে বদলে গেছে হাসপাতালের চিত্র। হাসপাতালের ভেতর-বাইরের পরিবেশ এখন ঝকঝকে। সুবিশাল এ হাসপাতালের পরিবেশ পরিস্কার রাখতে সরকারীভাবে মাত্র একজন পরিচ্ছন্নকর্মী কর্মরত থাকলেও তিনি স্থানীয়দের সহায়তায় আরো দু'জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করেছেন। চারপাশে বিভিন্ন ফুলের বাগান, ফলজ ও ভেষজ গাছের বাগান করে হাসপাতালটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছেন।
রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা স্বজনদের সময় কাটানোর জন্য লাগানো হয়েছে একটি অপক্ষামান ছাউনি বানানো হয়েছে। যেখানে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রদশর্নের ব্যবস্থা রয়েছে। রোগীর স্বজনদের সাইকেল-মোটর সাইকেল রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে গ্যারেজ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। বেসরকারি সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় হাসপাতালের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়েছে এনআইসিইউ, ফো কর্ণার, কিডস কর্ণার, স্কিনিং কর্ণার, স্যাম, ইনসিনারেশন (ময়লা আবর্জনা দহন চুল্লি) ও নিরাপদ খাবার পানির ইউনিট। পরিশেষে সকল সুযোগ সুবিধার মুল লক্ষ চিকিৎসক এবং রোগীদের সেতু বন্ধনই চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে।
হাসপাতালের পরিবেশ শিশু বান্ধব করতে গড়ে তোলা হয়েছে আইএমসিআই ও পুষ্টি কর্ণার। এখানে ০-৫ বছর বয়সী শিশুদের ওজন, উচ্চতা মেপে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। মায়ের শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করতে এই কর্ণারের দেয়ালে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ব্যানার। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আশা অপেক্ষমান নারীদের সুবিধার্থে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে যেখানে নারীরা তাদের সন্তানদের দুগ্ধপান করাতে পারেন। আন্তর্জাতিক উন্নয়ণ সংস্থা ওয়াটার এইড এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায়, এসকেএস ফাউন্ডেশনের মাঠপর্যায়ের বাস্তবায়িত ওয়াশ প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় এই ধরণের পরিবর্তন আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ওয়াশ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি উদ্যোগ গ্রহন করা হয় স্বাস্থ্য সুরক্ষার। যা চৌগাছা মডেলের অনুরুপ।
উল্লেখ্য যে, ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা.জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য সেবার এক অভূতপুর্ণ পরিবর্তন আনেন যা দেশে ও দেশের বাইরে সাভার মডেল হিসেবে সমাদৃত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ডা. মো. সায়েমুল হুদা এর পরামর্শে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে একটি মডেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ার নিমিত্তে চিকিৎসক, নার্স রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, এনজিও কর্মীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে নিয়ে মতবিনিময় এর মাধ্যমে একটি সল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করেন।
বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার প্রচেষ্টায় মার্চ মাসের শুরু থেকে অর্থোপেডিকস এর মাইনর অপারেশনগুলো শুরু হয়েছে। সিজারিয়ান সেকশনের অপারেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
দীর্ঘদিন থেকে ডেন্টাল ডাক্তার থাকলেও ছিল না ডেন্টাল ইউনিটের চিকিৎসা সামগ্রী। বর্তমানে সাভার উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় ডেন্টাল ইউনিটের চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে নিয়মিত মুখ ও দাঁতের চিকিৎসা করা হচ্ছে।এখানে ভায়া সেন্টারের মাধ্যমে ৩০ বছর বা তদুর্দ্ধ মহিলাদের জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও স্কিনিং টেস্ট করা হয় এবং মায়েদের গর্ভকালীন (এএনসি) ও গর্ভপরবর্তী (পিএনসি) সেবা প্রদান করা হয়। রয়েছে স্বল্প খরচে এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে রোগী পরিবহন সুবিধা। সম্প্রতি ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম সেবা যুক্ত হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের আর জেলা শহরে গিয়ে হয়রানি হতে হয় না।
উল্লেখ্য, ডা. মো.সায়েমুল হুদা জনগনের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সাভার উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবার এক অভূতপূর্ণ পরিবর্তন এনেছেন।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃসাইদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন অন্তত বহির্বিভাগে সাড়ে ১০০০/১২০০শত ও আন্ত:বিভাগে ৯০/১০০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এখানে রয়েছে আলট্রা সাউন্ড, ডিজিটালএক্স-রে, প্যাথলজিক্যাল যাবতীয় রোগ নিরুপন সুবিধাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলমান।
এই চলমান সেবার গতিকে ত্বরানিত করার জন্য রোগীদের বাস্তবতা বুজতে সহায়তা করার লক্ষে প্রয়োজন হাসপাতালটি ১০০ উন্নীত করার বিষয়ে স্বাস্হ্য বিভাগকে গুরুত্ব দেওয়া। এবং উপজেলা হিসাবে ৫৫ লক্ষ জনগনের জন্য আনুপাতিক ঢ় মেডিসিনের বরাদ্ধ বাড়ানো। এছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন। যাতে রোগীদের অসন্তোস দুরীকরনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এমএসএম / এমএসএম

ভূঞাপুরে টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন সভা

রাণীশংকৈলে পুলিশের ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত

সবুজে ঢেকে যাক কালকিনি: পরিবেশ রক্ষায় আনসার-ভিডিপি’র অঙ্গীকার

অভয়নগরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা

শ্রীমঙ্গলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত -১

তানোরে ব্যাক ডেট ও জালিয়াতি নিয়োগের তদন্তে হাজির হননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে স্কুল শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন

চট্টগ্রামে নেক্সাস ফেস্ট-২০২৫ সম্পন্ন

পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হবে: জামায়াতের অধ্যাপক মজিবুর রহমান

শ্রীপুরে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা

অনার্সের খাতা দেখেন কলেজ হোস্টেলের গার্ড !

মানিকগঞ্জে ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারী আটক
