বাঁশখালীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৯ সদস্যের অনাস্থা
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগে কাথরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইবনে আমিনের বিরুদ্ধে ৯ ইউপি সদস্যের অনাস্থা প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে। গত ১২ জুলাই বিশেষ সাধারণ সভায় এই অনাস্থা প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সভার কার্যপ্রণালী ও সিদ্ধান্তের অনুলিপি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এর অনুলিপি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সরকারের সচিব বরাবরে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা কাথরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়, এতে সরকারি প্রকল্প টিআর, কাবিখা, ইউনিয়ন পরিষদের জমি ও পুকুর (বর্গা) লাগিয়তের টাকা, ২ হাজার ৩'শ জন নতুন ভোটারদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৬শ টাকা উৎকোচ আদায়, ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দের ৮ টি নলকূপ বিনা রেজুলেশনে টাকার বিনিময়ে ইচ্ছে মতো হস্তান্তর করা, জাটকা নিধন প্রতিরোধ কল্পে সমুদ্রে সরকারি নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের জন্যে আসা বরাদ্দের চাল পরিষদ থেকে ঘরে নিয়ে যাওয়া, সড়কের পুরাতন ইট বিক্রির টাকা, কর্মসূচির বরাদ্দে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির টাকা এবং ৪০ দিনব্যাপী সড়ক সংস্কারে কর্মসূচির কাজে শ্রমিক নামীয় মোবাইল সিম কার্ড নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা, ৪ নং ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ইতলী ওয়াজ উদ্দীন সড়কে মাটি ভরাট প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে পাওয়া ১% টাকা আত্মসাৎ, পরিষদের উন্নয়ন তহবিলের নামে ইউপি সদস্য পাখি আকতারসহ ৩ জনের নামে সোনালী ব্যাংক একাউন্ট থেকে পাখি আকতারের নাম কেটে ওই একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা, হালিয়া পাড়া গ্রামে মডেল মাঠ নির্মাণ করার ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ নেওয়া এবং সেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ, জন্ম নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যায়নপত্র ও মৃত্যুসনদ প্রদানসহ ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রম কাথরিয়া বাজারস্থ মান্নানের দোকানে পরিচালনা করে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় এবং ঘূর্ণিঝড় মোখার বরাদ্দের ১ টন চাল আত্মসাৎ করাসহ চেয়ারম্যান ইবনে আমিনের বিরুদ্ধে আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়।
ওই সংক্রান্তে সাধারণ সভায় বিশদ আলোচনা করা হয়, আলোচনা শেষে উপস্থিত ৯জন ইউপি সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে এই অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়, অনাস্থা প্রস্তাবে ১৮টি আত্মসাৎ ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে এই অনাস্থা প্রস্তাবে অনুলিপি দেয়া হয়।
অনাস্থা প্রস্তাবকারী সদস্যরা হলেন-১নং ওয়ার্ডের মো. বাদশা মিয়া, ২ নং ওয়ার্ডের আনোয়ারুল আজিম, ৩ নং ওয়ার্ডের আবু তালেব, ৪ নং ওয়ার্ডের রফিক আহমদ, ৭ নং ওয়ার্ডের মোঃ হুমায়ুন কবির চৌধুরী, ৮ নং ওয়ার্ডের ছৈয়দ আহমদ, ৯ নং ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, ৭, ৮, ৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের পাখি আকতার ও ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডের নিলোয়ারা বেগম। ইউপি সদস্যদের পক্ষে ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী অনাস্থা প্রস্তাবের অনুলিপি বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে, ইউপি সদস্য মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব অনুলিপিতে ১৮ টি অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসময় তিনি আরো বলেন, ইউপি সদস্য বাদশা ও মহিলা মেম্বারের কাছ থেকে খালি স্ট্যাম্প নিয়েছিল চেয়ারম্যান, এবিষয়ে বাদশা মেম্বার বাদী হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গত জানুয়ারি মাসে একটি মামলাও করেছিল। তাছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে চেয়ারম্যান, ইউপি সচিব ও মহিলা মেম্বার পাখি আকতারসহ তিন জনের নামে যৌথ একাউন্ট করা হয়েছে, ওই একাউন্ট থেকে কোন রেজুলেশন ছাড়াই পাখি আকতারের নাম বাদ দিয়ে একাউন্টের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। ওইসব কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছি। ৭.৮.৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা পাখি আকতারের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে যৌথ একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে, কিন্তু একাউন্ট কোন ব্যাংকে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন ব্যাংকে একাউন্ট আছে তা আমি জানিনা। ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি হাসপাতালে আছি, চেয়ারম্যান সাহেব মেম্বারদের সাথে কোন বৈঠক করেনা, ইচ্ছে মতো কাজ করে, আর মেম্বারদের অবমূল্যায়ন করে,তাই আমরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছি।
এই বিষয়ে কাথরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইবনে আমিন জানান, নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহাজাহান চৌধুরী এবং জয়নাব আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে, কয়েকজন ইউপি সদস্য তাদের আত্মীয় হয়, এই সুবাদে ইউপি সদস্যদের জনপ্রতি ৩/৪ লাখ টাকা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে অভিযোগ করাচ্ছে, তবে বিষয়টি অফিসিয়ালভাবে আমি কোন তথ্য পাইনি, আপনারা যেভাবে শুনছেন আমিও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার নিউজ ও ফেইসবুকে দেখেছি। অফিসিয়ালভাবে ডাকা হলে আমি সঠিক তথ্য- উপাত্ত দিয়ে ওইসব বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্র মুলুক অভিযোগের জবাব দিব।
মাঠ ভরাটের বরাদ্দ, একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন, ঘূর্ণিঝড় মোখার চাল আত্মসাৎ ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগের কথা বলছে তা মূলত তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে তাদের স্বার্থসিদ্ধের জন্যে উদ্দেশ্য প্রনোদিত। মাঠ ভরাটের কোন বরাদ্দ পাইনি, ইউএনও সাহেবের কথায় নিজের তহবিল থেকে ওই মাঠ সংস্কারে প্রায় ১৮-১৯ হাজার টাকা খরচ করেছি, ভূমি সংক্রান্তে ১℅ টাকা এবং জমি ও পুকুর লাগিয়তের টাকা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংস্কার করেছি, ইউএনও সাহেব পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মোখার চাউল গুলো পরিষদের কার্যালয়ের গোডাউনে সংরক্ষণ করে রাখতে বলছে, তাই ওই চাউলগুলো এখনো কার্যালয়ে আছে। আর অন্যান্য সব বরাদ্দ ইউপি সদস্যদের কাছে যথাসময়ে হস্তান্তর করেছি, আর ওই বিতরণ ও বরাদ্দ সংক্রান্তে ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনও আছে।
অনাস্থা প্রস্তাবের অনুলিপির সত্যতা নিশ্চিত করে, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদুজ্জামান চৌধুরী জানান, কাথরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইবনে আমিনের বিরুদ্ধে ৯ ইউপি সদস্যের অনাস্থা প্রস্তাব অনুলিপি পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
এমএসএম / এমএসএম
হাদি’র হত্যার প্রতিবাদে বেনাপোলে বিক্ষোভ মিছিল
শেরপুরে অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান: পাঁচ ভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ, জরিমানা ১৭ লাখ টাকা
চাঁদপুরে মাদকবিরোধী ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু
রাঙ্গামাটিতে বিএনপি প্রার্থী দীপেন দেওয়ানের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
ওসমান হাদির মৃত্যুতে গোবিপ্রবি উপাচার্যের শোক
রাণীশংকৈলে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময়
টিকটক ভিডিওকে কেন্দ্র করে গৃহবধূকে হত্যা, স্বামী আটক
হান্নান মাসউদের ৩ সমর্থককে কুপিয়ে জখম, মামলা দায়ের
সাতগাঁও হাইওয়ে থানা বাৎসরিক পরিদর্শন করেন সিলেট রিজিয়ন পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করিম
পটুয়াখালীর গলাচিপায় ভুয়া চিকিৎসক আটক
কুমিল্লায় তিন বাস টার্মিনালে কর্মবিরতি ৪০ সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন মাগুরা-২ আসনের সাবেক এমপির কাজী সালিমুল হক কামাল